সিভিলিয়ান ও সেনার মৃত্যুর মিছিলে যথাক্রমে প্যালেস্টাইন ও ইউক্রেন এগিয়ে থাকলেও গেল তিন বছরে আফ্রিকায় সাতটি ক্যু হয়েছে। থমাস সাংকারার দেশ বুরকিনা ফাসোয় ক্যু হয়েছে দুইবার।
মালি থেকে জাতিসংঘের পিস কিংপিং মিশনকে এক্সপেল করা হয়েছে। বুরুন্ডি, ইরিত্রিয়া, চাদ এবং সুদান জাতিসংঘের পিস কিংপিং মিলিটারিকে বের হয়ে যেতে আর্জি জানিয়েছে।
দশকের পর দশক ধরে চলা জাতিসংঘের মিশনগুলো ফেইল করেছে আফ্রিকায়। সাধারণ মানুষ নিজেদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে হতাহতের এই ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। আর এই অস্থিরতায় ইন্ধন দিয়েছে রাশিয়া ও চীন। কেননা পুরো পৃথিবীটাই সাম্রাজ্যবাদীদের রণক্ষেত্র।
নতুন সরকারগুলো জনগণের সমর্থন পাচ্ছে ও নব্য কলোনিয়াল দেন-দরবারে বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। নাইজারের প্রতি কেজি ইউরেনিয়াম মাত্র ০.৮ ইউরো মূল্যে কিনে নিতো ফ্রান্স, আজ সেই ইউরেনিয়াম ২০০ ইউরো মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে রয়টার্স খবর প্রকাশ করেছে, এতে না-কি সরকারগুলোর কোন হাত নেই!
বুরকিনা ফাসোর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম ত্রাওরে (Ibrahim Traoré) ফ্রেঞ্চকে বুকরকিনা ফাসোর অফিশিয়াল লেঙ্গুয়েজের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এই সেই বুরকিনা ফাসো, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় সৎ মানুষের দেশ। যেখানে থমাস সাংকারা জন্মেছিলেন, কলোনিয়াল ফ্রান্সের মদদে যাকে ক্ষমতাচ্যুত করে হত্যা করা হয়। কলোনিয়াল হিস্ট্রির কারণে মরক্কোসহ আফ্রিকার বহু দেশে বাচ্চাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে ফ্রেঞ্চ শেখানো হয়, যদিও পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের অনেককেই আবার ইংরেজি শিখে নিতে হয়।
বর্তমান সময়ের অনেকেই মনে করেন আফ্রিকা জ্ঞানবিজ্ঞান কিংবা সভ্যতার বিকাশে তেমন ভূমিকা রাখেনি, কেননা তারা মূলত ইউরোপের তৈরি আফ্রিকার বিকৃত ইতিহাস পড়েছেন। ইজিপ্টকে বাদ দিলেও মধ্যযুগে মানসা মুসার অধীনে থাকা মালি সাম্রাজ্যকে তারা ভুলে গেছেন, ভুলে গেছেন খেলাফতের অধীনে থাকা মরক্কো, আলজেরিয়া সহ বিস্তৃর্ণ সমৃদ্ধ অঞ্চলের কথা। ইবনে খালদুন কিংবা ইবনে বতুতার মতো মহারথীকেও তারা স্মরণে রাখতে চান না। যারা জন্মেছেন এই আফ্রিকারই একান্ত মরু অঞ্চলে।
আফ্রিকা জাগছে, আফ্রিকা জাগছে সকল শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে। আসছে সময় আমরা নতুন এক আফ্রিকা দেখবার অপেক্ষা করছি। যদিও তার সাথে অপেক্ষা করছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর কূটকৌশল।
ইবনে খালদুন তার আল মুকাদ্দিমা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, অপেক্ষাকৃত বর্বর ও যাযাবর জাতিগুলোর থেকে সভ্যতার ক্রমবিকাশের কথা৷ সেক্ষেত্রে আফ্রিকা কিংবা আফগানিস্তান নতুন সভ্যতার রচনা করবে বলে মনে করি। বলা বাহুল্য নয়, ছোট ছোট গোত্রে বসবাসকারী মঙ্গল কিংবা আরবরা খুবই অল্পসময়ের মধ্যে পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। কঠিন সময় বরাবরই শক্তিশালী মানুষ তৈরি করে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৭:৫২