somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডয়েচল্যান্ডের কচড়া: জাতীয় উন্নয়নের রূপকল্পে বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গ। [ষোল]

২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জার্মান নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাসের ঢাকা সফরের ছবি। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে পুরান ঢাকার গলিতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন গুন্টার গ্রাস৷

এই লেখায় রাজনৈতিক বায়াসনেস থাকতে পারে, যেহেতু মানুষ মাত্রই থাকে। যাইহোক, গ্রহণ কিংবা বর্জনের দায়িত্ব পাঠকের, এর জন্য লেখক দায়ী নয়।
-
নোবেলজয়ী জার্মান লেখক গুন্টার গ্রাস ঢাকায় এসেছিলেন, গিয়েছিলেন কলকাতায়ও। ঢাকা-কলকাতা ঘুরে লেখেছিলেন 'শো ইয়োর টঙ্গস', জার্মান ভাষায় Zunge zeigen. হিন্দু ধর্মের দেবী কালীকে মেটাফোর বা রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এই বইয়ে। বইটি পড়তে শুরু করলেও শেষ করিনি।
গুন্টার গ্রাসের ঢাকা ভ্রমণ নিয়ে 'গুন্টার গ্রাসের ঢাকা আবিষ্কার' নামে গোটা একটি বই লিখেছেন নাসির আলী মামুন। লিটারেচারে ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চের পর সবচেয়ে বেশি নোবেল পেয়েছে জার্মানভাষী সাহিত্যিকেরা এবং জার্মান সাহিত্যে গত শতাব্দীর শেষ নোবেলজয়ী ছিলেন গুন্টার গ্রাস। গত সামারে ঘুরতে গিয়েছিলাম গুন্টার গ্রাসের শহর লুবেক। জার্মানির যে বিষয়টি আমার ভালো লাগে সেটি এই বিকেন্দ্রীকরণ। বাংলাদেশে ঢাকার বাইরে বুদ্ধিজীবী সমাজ খুঁজে পাওয়া মুশকিল৷ বাংলাদেশের সবাই ঢাকায় আবদ্ধ, সুষম উন্নয়ন হবে কী করে? আবার সুষম সুযোগ-সুবিধা নেই বলেই সবাই ঢাকায় থাকে।

গুন্টার গ্রাসের বিখ্যাত উপন্যাস দ্যা টিন ড্রাম, যা অস্কার ম্যাটজিরাথ নামের এক বামন ছেলের কাহিনী। এটা নিয়ে একটা মুভিও (১৮+) হয়েছে, চাইলে দেখতে পারেন। গুন্টার গ্রাস হিমলারের সাথে সুভাষ চন্দ্র বসুর হাত মেলানোর ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যেন বিষয়টা খুবই লোমহর্ষক। সুভাষ চন্দ্র বসু স্বাধীন ভারতে হিরো বনে গেলেও জার্মানিতে হিমলার হয়েছেন ভিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছিল, নতুন জার্মানি গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন গুন্টার গ্রাসের মতো বুদ্ধিজীবীরা, ইয়োর্গেন হাবারমাস (Jürgen Habermas) মতো দার্শনিকেরা।

প্রশ্ন হলো স্বাধীন বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতিগত বেহাল দশা হলো কেন? অন্যতম কারণ হতে পারে বাংলাদেশের হাজারেরও উপর বুদ্ধিজীবীকে মাত্র একদিনে মেরে ফেলা!
এ্যাডলফ হিটলার ফেড্রিক নিৎসের মতো দার্শনিকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, একজন হিটলার মূলত তৎকালীন ইউরোপের ধ্বংসবাদী দর্শন দ্বারাই একজন ফুয়েরার হয়ে উঠেছিলেন।
হিটলার ছিলেন মূলত অস্ট্রিয়ান নাগরিক, পরবর্তীতে তিনি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২৯ সালের ইকোনমিক ডিপ্রেশন হিটলারের ক্ষমতা আসার পথ সুগম করেছিল। আর হিটলারের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর একে একে বহু ইন্টেলেকচুয়াল জার্মানি ছেড়ে নির্বাসনে যেতে থাকেন, যার মধ্যে রয়েছেন থিওডর অ্যাডর্নো, ম্যাক্স হরখাইমারের মতো দার্শনিকেরা।
জার্মান টেলিভিশন ডয়েচে ভেলে ইয়োর্গেন হাবারমাসকে নতুন জার্মানিতে ক্রিটিকাল আলোচনার পথপ্রদর্শক হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যিনি জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরে ১৯২৯ সালে ইকোনমিক রেসিশনের বছর জন্মেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের তরুণ হাবারমাস আধুনিক জার্মানির রোডম্যাপ তৈরিতে কাজ করেছেন।

জার্মানি এঙ্গেলা মার্কেলের মতো একজন চান্সেলর পেয়েছে, যদিও বাংলাদেশ পায়নি৷ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা বাংলাদেশের গতিপ্রকৃতি ভবিষ্যৎ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বরাবরই স্বৈরাচারী কাঠামোর কবলে পড়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিই শেষ কথা। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ইন্টেলেকচুয়ালরা কোথায়?

আমি বিএনপির রাজনীতি করি না, যদিও প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক-আহমদ ছফা-সলিমুল্লাহ খাঁনকে রাজনীতির মেরুকরণের বাইরের সিলসিলা মনে করি।
আহমদ ছফা একবার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন। খালেদা জিয়ার পিএস আহমদ ছফাকে চিনতে পারেননি। পরবর্তী খালেদা জিয়া ফোন করার পর ছফা বলেছিলেন, ''ম্যাডাম, কী সব অশিক্ষিত পিএস টিএস রাখেন আহমদ ছফার নাম জানে না''। বেগম জিয়া হেসে জবাব দিয়েছিলেন, ''আমি নিজে অশিক্ষিত; শিক্ষিত মানুষ পাব কোথায়। আপনারা কেউ তো এগিয়ে আসছেন না?'' কেউ-ই কী কখনও এগিয়ে আসেনি?
শেখ মুজিবুর রহমানও চেষ্টা করে, তৈরিও করেছিলেন সোভিয়েত আদলের রোডম্যাপ। সত্তরের পরে সোভিয়েতের ভাঙন শুরু হয়, এক সময়ের বাম রাজনীতি করা কবি আল মাহমুদ তখনই বুঝতে পেরেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন আর টিকবে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান নিজেদেরকে বাইরের পৃথিবী থেকে পিছিয়ে পড়া জাতি হিসেবে আবিষ্কার করলো। আর তাই জাপান নিজেদের কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে দেওয়ার সিন্ধান্ত গ্রহণ করলো।
কবি আল মাহমুদ জামাআতের রাজনীতিতে আকর্ষণ বোধ করেন। আমাদের ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের প্রিয়পাত্র ছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনীতি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছিলেন। ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশে হেনস্তা হলেও তার সোশ্যাল বিজনেস মডেল নিয়ে ইউরোপ থেকে নর্থ আমেরিকার শহরগুলোতে সেমিনার হয় পুঁজিবাদের ড্রব্যাকগুলো কমানোর নিমিত্তে।
অথচ ডক্টর মুহম্মদ ইউনুস কিংবা আহমদ ছফা একজন ইয়োর্গেন হাবারমাস হয়ে উঠতে পারেননি।

সংযুক্তি:
জার্মানির অনেক শহরের আবাসিক এলাকার রোডগুলো বেশ পুরনো, বহু বছর ধরে শুধু রিপিয়ার করে চলছে। বহু জায়গায় গেলে মনে হবে এ যেন পূর্ব ইউরোপের কোন এক দেশ। ইউরোপের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও জার্মানির এই অবস্থা কেন? কোথায় জার্মানি টাকা ঢালছে?
জার্মানির জিডিপির নয় শতাংশের উপরে শিক্ষাখাতে খরচ করে। গত কয়েক বছরে ১১.৭-১৩.২ শতাংশ পর্যন্ত খরচ করেছে হেলথ কেয়ারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ শিক্ষাখাতে খরচ করে জিডিপির মাত্র দুই শতাংশ, চিকিৎসায় প্রায় আড়াই শতাংশ।

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে শিক্ষা কিংবা হেলথকেয়ারের চাইতে মহাকাশে সৌন্দর্যবর্ধক(!) স্যাটেলাইট পাঠানো, সেতু কিংবা পাওয়ার প্লান্ট বানানো অনেক বেশি জরুরি। পাঠকের দায়িত্ব এর কারণ খুঁজে বের করা।
১৬ই আগস্ট, ২০২৩
জিগেন, জার্মানি

অন্যান্য পর্বসমূহ:

নয়: ডয়েচল্যান্ডের কড়চা: ওয়েস্ট ও বাঙালি জীবনের পার্থক্য, আমার ভাববার অবসর

চৌদ্দ: ডয়েচল্যান্ডের কড়চা: আমাদের ক্ষমা চাইবার ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাঁচফোড়ন।

বিশ: ডয়েচল্যান্ডের কড়চা: কলা যুদ্ধ


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ৩:১৮
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×