Some people sell happiness while they don’t taste any of it.
সাতমসজিদ রোডে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সময় রাত ১০ টা। অনেক দিন পর একটা বড়সড় ছুটির দেখা মিলেছে, রোজার ঈদের ছুটি। বগুড়া থেকে আসার সময় কতকিছু প্লান করে এসেছিলাম, কিন্তু বাসায় আসারর পর খালি বিছানায় শুয়ে বসে থাকা ছাড়া আর তেমন কোন কাজ হয়নি। বাইরে বের হতে ইচ্ছে করছিল না কেন জানি। এটা আমার কাছে নতুন না, প্রায়ই এমন হয়। মাঝেমাঝে মনে হয় বয়স হবার আগেই বুড়ো হয়ে গেছি।
ঈদের পরদিন সায়মন ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করল আমি কোথায়। একরকম কমান্ডই দিয়ে দিল যেন এর পরদিন বিকাল পাঁচটায় ধানমন্ডি চলে যাই। সবকিছু উপেক্ষা করা গেলেও কমান্ড উপেক্ষা করা সম্ভব না। মাথার মধ্যে কেমন যেন গেঁথে গেছে বিষয়টা। কাজেই পরদিন বিকাল পাঁচটায় আমাকে রবীন্দ্র সরোবরের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল। সেখানে পোলাপানের সাথে দেখা হল, তারপর আমরা খেতে গেলাম ধানমন্ডি বারো নাম্বারে, সেখান থেকে বের হতে হতে রাত ১০টা। বের হতেই দেখা কাজলের সাথে।
বড়জোর পাঁচ-ছয় বছর হবে ছেলেটার বয়স। পরনে একটা গোলাপি টি-শার্ট, আর একটা জীর্ণ থ্রি-কোয়ার্টার। রাজধানীর অসংখ্য জীবন-যোদ্ধার কাতারের একজন সৈনিক। কাজল কিছু বলছিল না, শুধু একবার আমার শার্টের হাতাটা টান দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ওয়ালেটটা বের করার জন্য পকেটে হাত দিলাম। না, বেলি ফুলের মালা কিনব সে জন্য না, ছেলেটার শুকনা মুখ দেখে খারাপ লাগছিল এজন্য। দশ টাকার একটা নোট বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম।
একটা মালা পনের টাকা।
মালা লাগবে না, তুই এমনিই রাখ।
না-না পনের টাকা।
অনেক খুঁজেও ওয়ালেট থেকে আর ভাংতি পাওয়া গেল না। ছেলেটার সাথে গল্প জমানোর চেষ্টা করলাম। বাড়ি কোথায়, বাবা-মা কি করে এগুলো। যেটুকু জানতে পারলাম তা হল – ছেলেটার নাম কাজল। বাসা মোহাম্মদপুরের ওদিকে, মা’র সাথে থাকে।
মা কি করে?
বাসায় কাজ করে।
বাবা?
নাই।
ভাই-বোন?
নাই।
স্কুলে পড়িস?
প্রশ্নটা করতেই ছেলেটা আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যে আমার বুকটা ভেঙে গেল একদম। চলে আসার সময় ওর হাতে দশটা টাকা ধরিয়ে দিলাম এই বলে যে, আমার কাছে তো এখন আর টাকা নাই, তুই এই দশ টাকা রাখ। আমি কালকে এসে বাকি পাঁচ টাকা দিয়ে যাব। মালাটাও তখনই নিব, ঠিক আছে?
চলে আসতে আসতে পিছনে ফিরে তাকালাম একবার। কাজল আরেকটা ছেলের কাছে গিয়ে তার শার্টের হাতা ধরে টানছে। ঘরে হয়তো মা অপেক্ষা করছে কখন ফিরবে ও, হয়তো আমার মত আরো কয়েকজনের কাছে এভাবে বেলি ফুল বিক্রি করে সেই টাকাটা দিয়ে আজকে রাতের খাবার হবে ওদের। কিংবা হয়তোবা মালাগুলো বিক্রি হবে না, আজ রাতেও না খেয়ে থাকতে হবে ওদের। খিদেয় চোখ বুজে আসবে, শুধু অভুক্ত মাথার কাছে বেলি ফুলের মালা গুলোর সুবাস ভরিয়ে রাখবে ওর ঝাপসা পৃথিবীটাকে।
ভালো থাকুক কাজল, ভালো থাকুক পৃথিবী।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:১৮