somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহী হামহাম নামা ( চ্রম সিরিয়াস ভ্রমণ কাহিনী)

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পত্রিকা, ব্লগ এবং ‘আমি কি আর কিছুরে ডরাই’ টাইপ ফ্রেন্ডগো জ্বালায় এমন অবস্থা যে হামহাম নামক নবআবিষ্কৃত ঝরনাখানা না দেখিলে নিজের জাত নিয়া টানাটানি পড়ার সম্ভাবনা পার্সেন্ট স্কেলে স্ফুটনাঙ্কের কাছাকাছি।তাই শেষমেষ কোন এক শুক্রবারের বিলাসী ও আরামদায়ক জীবনকে উৎসর্গের মত মহান কোন ডিসিশনে উপনীত হইতে হল। সবমিলায়া বারজন, ম্যাক্সিমামই আইলসা টাইপ, ছুটির দিনগুলাতে কে কারচে বেশি ঘুমাইতে পারে এই কনটেস্টই আমাদের সবচে প্রিয় কনটেস্ট (আমার র‌্যাংকিং বরাবরাই প্রথম দিকে)।


তাহলে দেখা যাক কীভাবে যেতে হবে হাম-হাম
হামহাম হল রাজকান্দি বনের গভীরে ( আসলেই গভীরে) একটি জায়গা। জায়গা না বলে ঝরনা বলা উচিত, ঝরনাটার সাইজ বেশ বড়, বিশেষ করে মাধবকুন্ডের সাথে যদি তুলনা করি তাহলে বেশ ওয়াইড,হাইটে অবশ্য কম।রাজকান্দি হল মৌলভীবাজারে। আমরা প্রথমে গেলাম শ্রীমঙ্গল, শ্রীমঙ্গল কেন গেলাম প্রথমে? সেইটা জানি না,এইটাই মনে হয় নিয়ম।শ্রীমঙ্গল থেকে আমরা লেগুনা টাইপ একটা জীপ নিলাম,এইটা করে কলাবাগান পর্যন্ত যেতে হবে।কিন্তু ভানুগাছা থেকে আমরা আবার গাড়ি চেন্জ করলাম।ভানুগাছা থেকে যেতে হবে চাম্পরায় নামক জায়গায়, কারন সেটা কলাবাগান আর ভানুগাছার মাঝখানে, তারমানে সেখানে না গিয়ে উপায় নেই।আবার, কলাবাগান কিন্তু কোন বাগান নয়,কলাগাছ একটু বাড়াবাড়ি রকমের বেশি এজন্যই মনে হয় এই নাম,সেটা রাজকান্দির এন্ট্রি, তারমানে আমরা যাব আসলে হামহাম, তারজন্য যেতে হবে কলাবাগান আর কলাবাগান যাওয়ার জন্য আমাদের যেতে হবে চাম্পরাই, আর চাম্পরাই যেতে হলে ভানুগাছা হয়ে যেতে হবে, কিন্তু গাড়ি কিন্তু নিতে হবে শ্রীমঙ্গল থেকে।আমরা কিন্তু যাব হামহাম।হামহাম জায়গাটা কিন্তু মৌলভীবাজার।কিন্তু শ্রীমঙ্গল আমরা প্রথম কেন গেলাম?
নাহ! তালগোল পাকায়া ফেললাম, যাক ব্যাপার না।
( কোন ট্যুরে গেলে আমি কখনো আয়োজকদের ধারে কাছে থাকি না, তাই কিভাবে যেতে হবে ব্যাপারগুলো আমার কাছে ঘোলাটে থাকে, সবাই যেহেতু কীভাবে যেতে হবে টাইপ কিছু ভ্রমণ কাহিনীতে অ্যাড করে দেয় তাই আমিই বা বাদ যাব ক্যান? /:) )

তাহলে রাজকান্দি থেকে শুরু করি। রাজকান্দি নামটা সুন্দর। রাজহাস শুনলেই যেমন মুখে লালা এসে যায়, হাসজাতির ভিতরে ওদের রোষ্টই সবচে বড় সেটা ভেবে, তেমনি রাজকান্দি নাম শুনে মনটা ভাল হয়ে গেল।আমরা এগুলাম। আমাদের অনেকে স্যান্ডেল স্থানীয় এক বাড়িতে জমা দিয়ে হাটা শুরু করলো। আমি ভাবলাম-স্যান্ডেল ছাড়া ক্যামনে হাঁটুম ৬ ঘন্টা,স্যান্ডেল সহই হাটা দিলাম। কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম, স্যান্ডেলটা আনছি একমাত্র-খালি হাতটাতে সেগুলা ধইরা রাখার জন্য।অন্য হাতটায় গাইড মামা একটা বাঁশের কঞ্চি ধরায়া দিয়া বলছে, ইহাকে হাতছাড়া করিছেন তো মরিছেন। অনুবাদ: বাশ ব্যতীত বাঁশ খাইবেন।


তাই স্যান্ডেলের মায়া ছাড়তে হল, এক শৈলপ্রপাতে হঠাৎ একপাটি ভাইসা গেল, অন্যপাটিকে সেইটার অনুগামী করাইলাম। এবং হাসিমুখে অন্যদের দিকে তাকায়া বললাম, উই নিড স্যাক্রিফাইস টু ডু সামথিং গ্রেট! হা গাইজ!


রাস্তার প্রকৃত বর্ণনা দিতে গেলে লোকে বলবে, ভীতু কোনহানকার, ট্রাকিং করতে গেছে।তাই কমায়া দেই,রাস্তা খুবই সুন্দর,প্রশস্ত এবং নিরাপদ।হাঁটতে গেলে মনে হয়, এই রাস্তায় হাঁটার জন্যই তো আমি জন্মেছিলাম (নিন্দুকে বলবে-মরার জন্য, ওতে কান দিবেন না)। পুরা পথ খুবই মোলায়েম, জায়গায় জায়গায় পা দিলেই তাই হাটু পর্যন্ত দেবে যায়। আগের দিন বৃষ্টি হওয়ায় আরো বেশি নরম হয়েছে মাটি। জায়গায় জায়গায় গ্যাপ, সেখানে দুইটা বাঁশ রাখা,পথপ্রদর্শক বললেন, বাঁশে পা দিবেন না, পিছলা হইয়া আছে,লাফ দেন। শেষ কবে লং জাম্পে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করছিলাম মনে নাই, তবে তার কথায় কনভিন্সড না হয়ে পারলাম না।
একটু পর শুরু হল ঝিরি পথ, এইটা অপেক্ষাকৃত ভালো, পানির মধ্যে হাঁটতে খারাপ লাগার কথা না।পানিতে পাথর বিছানো, পাথরের চোখা কোনাগুলো ম্যাক্সিমামই আমাদের জুতাছাড়া পাগুলোকে বরণ করে রাখার জন্য রেডি হয়ে ছিল, জুতা না থাকায় তাই আমরা খুশি হয়ে উঠলাম। পুরো পথ জুড়েই ছোটখাট জোকেরা ওত পেতে ছিল, এইসব অবশ্য আমলে না নেয়াই ভালো।


সামনে হঠাৎ হুল্লোড় শুইনা মনে হইল, হামহাম মনে হয় আইসাই গেলাম। তারপর দেখি একটা শৈলপ্রপাত।পানির স্পিড দারুন ( এখানেই জুতা স্যাক্রিফাইসটা করেছিলাম)
সেই পানিতে সামান্য উল্লাস করতে যাইয়াই আছাড় খাইলাম। কে যেন বলেছিল- আছাড়ই ট্র্যাকিংএর সবচে আকাঙ্খিত এডিবল থিং। কিন্তু একটা কারনে ভাবিত হইয়া গেলাম।কারন এটা আমার প্রথম আছাড় ছিল না, নরম মাটিতে স্যান্ডেল আটকে খানিক আগে আরেকটা আছাড় খেয়েছিলাম।তাই কিছুদিন আগে পড়া পাওলো কোয়েলহোর আলকেমিস্টের একটা ডায়লগ মনে পড়ে গেল ‘Everything that happens once can never happen again. But everything that happens twice will surely happen a third time’
( এবং হ্যা, সবমিলায়া তিনটা আছাড়ই খাইলাম, থার্ডটাও আরেক শৈলপ্রপাতে লাফ-ঝাপ করার সময়)
মাকাম টিলাটাও মনোরম, সুন্দর পিচ্ছিল, বাঁশগাছে পরিপূর্ণ, নরম কাঁদাময় ( না বানান ঠিকই আছে, চন্দ্রবিন্দই হবে),বাঁশের গোড়া ধরে ধরে এগুতে হয়। আমাদের এক ফ্রেন্ডের সামনে সড়াৎ করে একটা সাপ পড়লো উপড় থেকে, সাপগুলো মিশুক টাইপ না, তাই অন্যপথে চলে গেল। তাতে অবশ্য আমাদের ফ্রেন্ড কেন জানি খুশিই হল।


মাকাম টিলার অল্টারনেটিভ একটা পথ আছে। সেইটা জানার পর আমরা গাইড মামারে বললাম, ধুর মিয়া, অন্য পথ থাকতে এই পথে আনলা কি মনে কইরা!
ফেরার সময় অবশ্য আমরা সেই অল্টারনেটিভ পথে আইসা মামার লগে আরেক দফা চিল্লাচিল্লি করলাম, মিয়া এই পথ যে মাকাম টিলার যে দশগুন বেশি বড় আর বিপজ্জনক এইটা কইবা না।


মামায় তাতে মাইন্ড খাইলো না, কারন প্রতিদিন সে এইসব শুনে, দুইটা পথই যাতে তার অধীনস্তরা দেখতে পারে এইটাই তার মূলমন্ত্র।


যাইহোক, অবশেষে হঠাৎ ভীষণ আওয়াজ শোনা শুরু করলাম, সাথে মানুষজনের হৈ হুল্লোড়,বুঝলাম ‘আমরা চরম সত্যের অতি নিকটবর্তী’। আরেকটা বাঁক পেড়ুতেই দুপাশের দুই পাহাড়ি পথ সরে গেল, আর সামনে বিশাল সে প্রপাত-জলসহ প্রপাতধরনীতল-সে ধারালো ধারায় আমরা আপ্লুত, অশ্রুসিক্ত,মীনক্ষোভাকুল কুবলয় ( ধুর ইমোশনাল হয়া যাইতেছি)
যাইহোক, মূলকথা তিনঘন্টা হাঁটার পর যা লাভ করিলাম তাহা কহতব্য নয়, দর্শনতব্যই কেবল।
তাই বর্ণনা বাড়াইলাম না।


আশা করি আমার লেখা যথেষ্ট কনভিন্সিং হইছে,আমার লেখা পড়ে আপামর জনসাধারণ উদ্বুদ্ধ হইবেন হামহাম জয় করতঃ আনন্দযাপনে।

যারা এখনো কনভিন্সড হন নাই, তারা তাহলে কী জন্য যাইবেন, তা বলি

আপনারা হামহাম ভিসিট ( মতান্তরে জয় )করিয়া আসিলে-
-ফেসবুকে একখান স্ট্যাটাস ফালাইতে পারবেন ‘ ঘুইরা আসলাম হামহাম, OMG, what a beauty’
-আমার মত একখানা অ্যালবাম আপলোড করতে পারবেন( ফেসবুকে করেছি;) )
-হামহাম কীভাবে যাইতে হবে এ বিষয়ে সংখ্যালঘু পরামর্শদাতাদের একজন হওয়ার বিরল সম্মাননা লাভ করতে পারবেন
-দুর্গম পথ কোন বিষয় হইলো-টাইপ ডায়লগ দিতে পারবেন,যদিও আপনার পায়ের ব্যথা, মশার আর জোকের কামড়ের দাগ তখনো সারেনি

আর যারা ইতোমধ্যে ঘুরে আসছেন, তারা অন্যদের কাছে এমন একটা ভাব ধরবেন যে ‘জীবনে সৌন্দর্য উপভোগই মুখ্য,তাহা পাইবার জন্য খাদের ধারের পিছলা পথ কোন বিষয় না’

সর্বশেষ, যে রিপোর্টটির কল্যানে হামহাম এত জনপ্রিয়, সেই নকশার রিপোর্ট, বিশেষত নারী জাতির কাছে যথেষ্ট আকর্ষনীয় জায়গা,রিপোর্টে বর্ষাকালেও বেশ নিরাপদভাবে হামহামকে উপস্থাপন করা হয়েছে,সেই প্রসঙ্গে বলি,অনির্ভরযোগ্য সূত্রে খোঁজ পেলাম রিপোর্টার নিজে সেখানে যান নাই। লোকমুখে শুনে এবং অন্যের ধার করা ছবি দিয়ে সে রিপোর্টটা করেছে!
খুবই ভাল লাগলো জেনে, নানা জনে তাকে গালি দিলেও আমি বলবো, তিনি আইলসা বাঙালি জাতিকে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় বানাইতে চেয়েছেন। তারে ভালা পাইলাম, মরা কাঠের কসম!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৫৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×