somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এইসব দিন এইসব রাত্রি

১৭ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রিয় হোষ্টেল শামসুদ্দীন ছেড়ে দিচ্ছি। আজকেই শেষরাত আমার এই ১০৫ নং এর নিভৃত রুমে। মেডিকেলে এসেই উঠেছিলাম এই হোষ্টেলে। আজ ফোর্থ ইয়ারের শেষের দিকে এসে ছাড়ছি। মনে হচ্ছে যেন নতুন কোন শহরে মুভ করছি, সবকিছু প্যাক করবো একটু পর। এতদিনে শেকড় গজিয়ে গেছে, সেটা উপড়ে ফেলতে হবে।
আমাদের এখানকার নিয়মটা একটু ভিন্ন অন্য অনেকজায়গার চেয়ে। প্রতি বছর আমাদের শিফট করতে হয়। কিন্তু শামসুদ্দিন হোষ্টেল বাকীগুলোর তুলনায় বেশ বড় হওয়ায় এখানেই তিনবার শিফট করতে হয়। প্রথমত ভর্তি হয়েই একটা গ্রুপ এখানে এসে বড়ভাইদের সাথে উঠে পড়ে, কিছুদিন সময়লাগে নিজেদের রুম পেতে। নিজরুমে উঠার পর প্রথম প্রফেশনাল এর আগে আরেকবার। এবং তিননম্বরটা ফোর্থ ইয়ারের শেষের দিকে। তাই এ হোষ্টেলের জল-বাতাসই হয়ে উঠে আইটেম-কার্ড আর টার্মদের মতই ধ্রুব, আস্বাদন ছাড়া গতিক নেই।
মনে আছে, প্রথমদিন যখন এখানে আসি তখন হোষ্টেল দেখে মাথায় বাজ পড়লো, ইয়া খোদা, এই জায়গায় থাকবো ক্যামনে। ব্রিটিশ আমলের সারি সারি একতলা রুম, দেখে মনে হয় বিরাট কোন স্কুল। এগুলার নাম ব্লক। একেবারে পিছনে তিনতলা একটা ভবন। সেখানে তখন আমাদের চেয়ে তিনবছরের সিনিয়র ভাইরা বসবাস করে। ব্লকের বাথরুমগুলা আবার আলাদা জায়গায়। তাই রাতবিরেতে বিশেষ করে বৃষ্টির দিনগুলোতে প্রাকৃতিক কর্ম সাধনটা বড় বেশি প্রাকৃতিক হয়ে দাঁড়ায়।
পাশেই ডক্টরস কলোনী, আর মিনিট পাঁচেক হাঁটা দূরত্বে শাহজালাল মাজার। রাত দুইটা তিনটার দিকে ক্ষুধা লাগলে ( লাগতেই হবে) মাজারই ভরসা। সেখানে সারারাত দোকানপাট খোলা থাকে। মাজারে শতশত ভাসমান মানুষ, তারা বাঁধানো মেঝেতে নাক ডাকিয়ে ঘুম লাগায়, কেউ উশখুশ করে-গাঞ্জার পুরিয়া হয়তো শেষের দিকে, বৃহ:পতিবার রাতগুলো আবার বেশ রমরমা থাকে, জমে থাকে সারা রাত। আমরা কয়েকজন পরোটা খেতে যাই, সাথে ডাল-ডিম-সবজি, একেবারে সকালের নাস্তাসহ।
অনেক স্মৃতি... আড্ডা, বিটলামী, পরীক্ষার সময়কার দু:খের দিনগুলো আর প্রচুর ফ্রিসময়ের বিরহের দিনগুলা, (সামান্য চাপের দিনগুলাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতামতে আনন্দের),ব্যস্ততা আর আইলসামীর সময়গুলো সব জমে আছে এখানে।
তা থাকুক। সত্যি কথা বলতে শেকড়টা উপড়ে ফেলতেই বেশি ভাল লাগছে। একজায়গায় বেশিদিন থাকাটা হয়তো ভাল না। শেকড়টাই শিকল হয়ে দাঁড়ায়।
তবে ১০৫ নং এ রুমের কথা মনে থাকবে। আমার প্রথম স্বেচ্ছা নির্বাসন-পুরোপুরি একা থাকা। সিঙ্গেল রুম, তারউপর রুমটা যেন হোষ্টেল থেকে বিচ্ছিন্ন, হোষ্টেলের এ পাশটা ছিল একটু বেশি নিরিবিলি। আমি উঠবার আগে প্রায় বছরদুয়েক সিল করা ছিল রুমটা। কারন আর কিছুই না, এখানে আগে যে ছিল সে সুইসাইড করে। তারপর থেকে বন্ধ থাকে রুমটা, পরপর দুব্যাচ চলে যায়, তারা কেউ স্বস্তিবোধ করে না সুইসাইড করা সিঙ্গেল রুমে উঠতে।
রুমটা বহুদিন পর খুলে ঢুকে আমার ভারী পছন্দ হয়ে যায়। দেয়ালে সেই সিনিয়র ভাইয়ের নামসহ কয়েকটা পোষ্টার এখনো ঝুলছে। হোষ্টেল মামাকে দিয়ে রুম পরিষ্কার করানোর সময় বলে দিলাম পোষ্টারগুলো যেন সে না খুলে। পোষ্টার গুলো যেন এক একটা এপিটাফ। সেগুলো উপড়াতে সায় দিল না মন।
তার নাম ছিল দুর্জয়। ঘটনা আর কিছু না, টিপিক্যাল বিরহ, নারীপ্রেম। কোন এক সহপাঠীনির প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া, কিন্তু তার হৃদয় জয় করাটা তার নামের মতই দুর্জেয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলাফল স্বরুপ সে ভুলে যায় তার চারপাশের বাকী সব বন্ধন, ভুলে যায় তার নিম্নবিত্ত পরিবারের কথা,ভুলে যায় তার মা পিঠা বিক্রি করে তাকে মানুষ করেছে। ফার্মাকোলজির বিদ্যাখাটিয়ে যথাসম্ভব কম যন্ত্রনাময় কিংবা কাপুরুষ মৃত্যুর কম্বিনেশনটা বের করে সেটা প্রয়োগ করে নিজের উপর। আর অমর কিংবা মহান প্রেম কাহিনীর জন্য ওত পেতে থাকা আমাদের সদাসচেতন রোমান্টিক জনসাধারণ আফসোস করে ‘আহা’ প্রেমের মরা জলে ডোবে না।
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×