somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজকুমার বিলু,কালু আর গিলু’র রোমাঞ্চকর অভিযান ২

২১ শে মে, ২০১২ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্ব
আস্তাবলে চোখবুজে কালু এক থেকে বিশ পর্যন্ত গুনছিল।
আর গিলু পড়িমড়ি করে খুঁজছিল, কোথায় লুকানো যায়। আস্তাবলটা বিশাল, এ মাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত দেখতে চাইলে চোখ ঘষে খড়ের গাদায় উঠে তাকাতে হয়।

গোনা শেষ হলে কালু চোখ খুলল।
একবার ভালো মত তাকাতেই দেখতে পেল গিলুটা কোথায় লুকিয়ে আছে।
গিলু টা কী বোকা! ভাবা যায়! কালু মনে মনে বলল।
এমন একটা খুটির আড়ালে দাড়িয়েছে যে খুটিটা কেবল ওর শুড়টা ঢেকে রেখেছে।
ভারী বোকা! আবারও কালু মনে মনে বলল।
আবার কেমন ছেলেমানুষ, চট করে ধরে ফেললে মন খারাপ করবে। সারাদিন হয়তো আর কথাই বলবে না।
কালু পুরো আস্তাবল মিছেমিছে দুইবার ঘুরে আসলো। তারপর হঠাৎ করে এসে গিলুর শুড় পেচিয়ে ধরলো।
পেয়েছি!
কিন্তু তাতেও গিলুর খুব মন খারাপ হল। চোখ ছল ছল করে উঠলো।

এমন ছিচকাদুনে হাতি আমি কোনদিন দেখিনি। কালু বিরক্ত হয়ে বলল।

এমন সময় রাজকুমার বিলু এসে হাজির হল আস্তাবলে।
তুই আবার ওকে তাড়াতাড়ি ধরে ফেলেছিস?
তাড়াতাড়ি কই, দুইপাক ঘুরে এসে ধরেছি। কালু বিরক্ত হয়ে বলল।
তারচেয়ে এই লুকোচুরি খেলা বন্ধ কর রোজ রোজ। অন্যকিছু খেলতে পারিস না।
ওই তো! রোজ রোজ খেলতে চায়, আমি কি আর.. কালু অপরাধীর মত গলা করে বলে...এমন ছেলেমানুষ যে কী বলবো!

ছেলেমানুষ? হুম, তাইতো দেখছি। এটার বয়স কত হল রে?
এবার দুইয়ে পড়েছে।
ভাবা যায়, দুই বছরের একটা হাতি আমাদের কে ছাড়িয়ে গেছে, কত বড় হয়েছে দেখেছিস!
হুম, তাতো বটেই।
ওর শিং গজাবে কবে?
কার?
ক্যানো গিলুর।
শুনে কালু একদফা হেসে নেয়।
বিলু বিরক্ত হয়।
হাতির আবার শিং! বিলু হাসতে থাকে।
আমি ঢেড় ঢেড় শিংঅলা হাতি দেখেছি, বিলু এবার রেগেমেগে বলে।
কবে দেখেছিস, নিশ্চয়ই তোর ভারী জামাটা গায়ে দিয়ে যখন ওই বাজে নরম নরম গদিতে ঘুমাচ্ছিলি?
মোটেও না! বিলু এবার ইতস্তত করে, তবে ওদের শিংগুলো বাকীদের মত না মানছি। কেমন যেন নীচের দিকে নামানো।

সেটা শুনে শুধু কালু না, গিলুও কেমন বিচ্ছিরি করে হাসতে থাকে।
তারপরে কোনমতে হাসি থামিয়ে বলে, ওটা দাঁত।
দাঁত?
ওটাকে বলে গজদন্ত। হাতি ঘোড়ার কখনো শিং হয় দেখেছিস?
কে বলল তোকে দাঁত, মুখের বাইরে বেড়িয়ে আছে এমন দাঁত কখনো দেখেছিস, তাছাড়া এত লম্বা। বিশ্বাস হয় না আমার।
বিশ্বাস না করলে নাই। তারচেয়ে চল খেলি।
না না, খেলতে আসি নাই। জল্লাদ সোলেমান চাচার কালকে গর্দান নেয়া হচ্ছে শুনেছিস?
হ্যাঁ, শুনেছি। বিরাট ঝামেলা হয়ে গেল!
কেন?
প্রতি সপ্তাহে উনি আমাদের বাড়িতে একদিন নেমতন্নে আসেন। বাবা দাওয়াত করে নিয়ে আসেন। আর প্রতিবার বলেন, এইবারই শেষ, আর কোনদিন হারামীটাকে দাওয়াত করবো না!
ক্যান?
প্রথম দিন এসে সোলেমান চাচা যে গল্প শুরু করেছিলেন সেটা এখনো শেষ হয় নাই। কয় পর্ব কে জানে! সেটা শোনার লোভেই প্রতিসপ্তাহে বাবা তাকে ধরে নিয়ে আসেন। বাবা বলেন, গল্পটা শেষ হলেই এ বাড়িতে তার আসা বন্ধ। সপ্তায় সপ্তায় এক বাড়তি খরচ!
সকাল থেকে বাবা কারাগারের দরজায় দাড়িয়ে আছে। গল্পের শেষটা সে জানতে চায়। আর সোলেমান চাচাও এমন, তার গর্দান নেয়া হবে শুনে মুখে কুলুপ এটে বসে আছে।
তাহলে তো সমস্যা, তোর বাবা না পাগল হয়ে যায় শেষমেষ।
হু, তাইতো ভাবছি।
কিছুএকটা করা দরকার, কী বলিস? হঠাৎ বিলু বলে।
ক্যান?
না মানে, গল্পের শেষ জানাটা তো জরুরী।
কোনটার? আমাদের যেটা বলতেন?
ধুর, সেটা কি আমি শুনেছি। আমি যেটা শুনেছি সেটার শেষও তো জানতে পারলাম না। বিলু মনমরা হয়ে বলে।
চিন্তার বিষয়!

তারপর রাজকুমার বিলু, কালু আর দাঁতছাড়া গিলু ভাবতে বসলো কী করা যায়। ভাবতে ভাবতে মাথায় একশ একটা বুদ্ধি এল। একটা রেখে বাকী একশটাই গিলু ওর শুর নেড়ে উড়িয়ে দিল।
সেই বুদ্ধিমত কাজ করতে প্রস্তুত হয়ে নিল বিলু, কালু আর গিলু।



*****


পরদিন সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাজকারাগারের এক দঙ্গল পাইকপেয়াদা রাতের গভীরে পালিয়েছে, পালিয়েছে একদঙ্গল বন্দী, পালিয়েছে রাজদরবারের দাস-দাসী,কর্মচারী আরেক দঙ্গল। এরা সবাই সোলেমানের গল্প শুনিয়ে। আর তাদের সাথে পালিয়েছে জল্লাদ সোলেমান, জল্লাদগিরির কুড়ালটা ফেলে।
আরও জানা গেল সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না সহিসের ছেলে কালুকে, আর দুইবছরের দাঁতছাড়া গিলুকে আর রাজকুমার বিলুকে।
রাজপুরীতে শোকের মাতম উঠলো। কান্নাকাটি করলো সোলেমানের আরও যত শুনিয়ে ছিল তারা, যারা পালাতে পারে নাই কিংবা ব্যাপারটা মাথায় আসে নাই যাদের।

ওদিকে রানীমা পুত্র বিলুর জন্য সকাল থেকে তারস্বরে চেচাচ্ছে, সেই চেচানিতে রাজা আর মন্ত্রী দুজনারই মাথা ধরে গেল। রাজা ক্ষেপে গিয়ে যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই গর্দান নিয়ে নেয়ার হুকুম দিচ্ছে, কিন্তু জল্লাদ না থাকায় ব্যাপারটা নিয়ে কেউ ভাবছে না।
বিশাল সৈন্যসামন্ত নিয়ে রাজা তখন নিজেই বের হলেন পুত্রের সন্ধানে।
রাজপুরীতে নি:স্তবদ্ধতা নেমে এল। নেমে এল অন্ধকার।

ঠিক এইক্ষণটিরই অপেক্ষা করছিলেন একজন বহুদিন ধরে।
কনকপুরের রাজপুরীতে এসে থামলো এক ঘোড়ার গাড়ি, জেল্লা ভারী, মিশমিশে কালো দুই তাগড়াই ঘোড়া সমেত।
নামল এক থুত্থুরে বুড়ো, হাতে একটা চারপেয়ে লাঠি।




****
এত দেরি করলি ক্যান?
রাজকুমার ছুটতে ছুটতে কালুকে প্রশ্ন করে।
এই...এই গিলুটার জন্যই তো, কোন টাইমটেব্যল নাই। এত গুরুত্বপূর্ন অভিযান, আর কিনা ...
আর কি?
পায়ের নখ নাকি বড় হয়ে গেছে সেটা কেটে দিতে বলল।
ও কি আসলেই বলে?
বলেই তো, সবাই ব্যাপারটা ধরতে পারে না এই যা!
আর তুইও দিলি? বুঝাতে পারলি না।
এমন ছিচকাদুনে কি বলবো, না দিয়ে উপায় ছিল না।

বিলুরা যখন কারাগারের কাছে পৌঁছলো তখন সেটা খা খা করছে। পাইক পেয়াদা কয়েদী কেউ নেই।
গেল কই?
ওরা ভিতরে গিয়ে দেখে একজন মাত্র শিকল পড়া বন্দী এখনও আছে।

দাও খুলে দাও, সাত রাজার ধনের খবর দেব!
বন্দী লোভ দেখায়। শেকলের চাবিটা পড়ে আছে খানিক দূরেই, ওরা চাইলেই খুলে দিতে পারে। কিন্তু ওরা ভ্রুক্ষেপ করলো না।
দাও না সোনার ছেলেরা, বেঙ্গমা বেঙ্গমী’র সোনার পালক দেব...
তাতেও কাজ হয় না, ওরা বেড়িয়ে পড়ে।
-এখানে আর কিছু নেই। সবাই পালিয়েছে।

খুলে দে এক্ষুনি, নইলে দুটোকে ধরে এমন আচ্ছামত প্যাদাবো যে সারাজীবন মনে রাখবি, কোটর থেকে চোখ তুলে নেব, মাথার চুল কামিয়ে গোবর লেপে দেব আরো অনেক কিছু করবো যেগুলো খুব ভয়ংকর বলে দিচ্ছি!! পেছন থেকে চ্যাচাতে থাকে বন্দী।
তাই শুনে বিলু আর কালু কাঁপতে কাঁপতে এসে চাবি দিয়ে বন্দীকে শিকল খুলে দিল।

বন্দী ছাড়া পেয়ে ঝটকা মেরে দাঁড়াল,
এখন কেমন? পালি না তো, সাত রাজার ধন আর বেঙ্গমা বেঙ্গমীর পালক, আগের বার খুললে ঠিকই তো বড়লোক হতে পারতি খুব!
-তারচেয়ে বলো সোলেমান চাচা কই গেছে? বিলু বলে উঠে।
হারামীটাকে তো আমারো দরকার। লাস্ট দুই পর্ব এখনো বাকী। পেলে হয় একবার। পেদিয়ে দুইপর্ব আদায় করবো। মনে হয় বনের দিকে গেছে। ওদিকে গিয়ে দেখতে পারিস!

কারাগারের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল এক ঘোড়ার গাড়ি, বাহারী ভারী। কালু এটা জোগাড় করে রেখেছিল আস্তাবল থেকে। পাইক পেয়াদাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে, তাদের সবাইকে মেরে এটাতে চেপেই সোলেমান চাচাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে এই ছিল ওদের ফন্দি। কিন্তু হতাশার ব্যাপার হল, ওরা আসবার আগেই পাইক পেয়াদা সব পালিয়েছে এবং সোলেমানকেও সাথে করে নিয়ে নিয়ে গেছে।
অত:পর আর কী করা, ওরাও বনের দিকে ঘোড়ার গাড়ি সমেত ছুট লাগালো। বন্দীও চলল ওদের সাথে। বন্দীর মনে কী ফন্দি কে জানে, কিন্তু ওকে না নিয়েও বিলুদের উপায় নেই।

একরাশ ধুলো উড়িয়ে মাটির রাস্তা ধরে ঘোড়ার গাড়ি ছুটে চলছে বনের দিকে, আকাশে মস্ত চাঁদ উঠেছে। গাড়ির লাগাম ধরে বন্দী আনন্দে গেয়ে উঠলো-
♪ বহুদিন পর গাইছি আমি গান,
শুনিস তোরা নইলে কাটবো কান,
আজকে ফেলছি বনের বাতাসে দম
ফ্রিদম! ফ্রিদম! ♫
বন্দীর ঘরঘরে গলায় গান শুনে ওরা শিউরে উঠলো। কিন্তু আনন্দ বড় সংক্রামক, ওদেরও হঠাৎ মনে হল এতদিন ওরা বন্দী ছিল, আজ ছাড়া পেয়েছে।
ওরাও তাই খানিক পরে গলা মেলাল-
আজকে ফেলছি বনের বাতাসে দম
ফ্রিদম! ফ্রিদম! ♪

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১২ রাত ১১:১০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×