আজকের দিনটা শুরু হল মৃত্যু সংবাদ দিয়ে, এরচেয়ে বাজে ভাবে কি দিন শুরু হতে পারে!
সকাল বেলা সন্ধানী'র তরফ থেকে সুনামগঞ্জে যাওয়ার কথা ছিল শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্দেশ্যে, সেটা ক্যান্সেল হল কারন যারা আামাদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন, সে সংগঠনের সভাপতি রাত্রে আচমকা মরে গেল।
তার খানিক পরেই শুনলাম প্রিয় ব্লগার, ইমন জুবায়েরও মারা গেছেন গত রাত্রে!!
স্তব্ধ হয়ে রইলাম অনেকক্ষণ। ইমন জুবায়েরের সাথে আমার কখনো সরাসরি কথা... হয়নি, কিন্তু তার সাথে বহুবার যোগাযোগ হয়েছে। আমার এক উপন্যাসে বাহাইজম নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি তার সাহায্য নিয়েছিলাম, আলোচনা করেছি সেটা নিয়ে। এসব টপিক নিয়ে আলোচনা করার মত খুব বেশি মানুষ নেই বাংলা ব্লগে।
আমরা যারা ব্লগিংয়ের সাথে অল্প-বিস্তরও জড়িত, তারা সবাই জানি ইমন জুবায়ের ছিলেন সাধু-সন্ত টাইপ মানুষ, তার জীবনের একমাত্র আনন্দই হয়তো ছিল লেখালেখি , আর কী বিচিত্র পরিসর তার লেখার, যেন তিনি এক জ্যান্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। আমার আর তার ব্লগিংয়ের বয়স কাছাকাছি, অথচ যে সময়ে আমি দিয়েছি ১০০ এরও কম পোষ্ট, সে সময়ে তিনি লিখেছেন পুরো ১৫০০ পোষ্ট!! তিনি কেমন মানুষ ছিলেন জানি না, মনে আছে তার একসময়কার প্রোফাইলে লেখা ছিল, "সত্যসন্ধ, নির্লিপ্ত আর একা" কথাগুলো আমাকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে আমি আমার বন্ধুদের প্রায়ই বলতাম, সত্যসন্ধ হও, নির্লিপ্ত হও। পরে জেনেছি এগুলো শুধু শুধু কথা না, তিনি আসলেই তাই ছিলেন, ব্যক্তি জীবনে ছিলেন ভীষণ নির্মোহ, ছিলেন চিরকুমার।
তার লেখা ব্লাকের অভিমান গানটা আমাকে আজীবন মুগ্ধ করে রেখেছে-
স্বগত লগ্নে জমাট স্তব্দতা
ঘুম পেলে ক্ষতি কি?
তোমার চোখে গভীর বিশ্বাস
হারালে ক্ষতি কি?
কেবলি অভিমানের রাত
তবে কেন প্রতীক্ষা?
ক্ষয়া চোখে ভুলের বিন্যাস
নিভু স্বপ্নের বাতিটা।
আমাকে তুমি জাগিয়ে একা কেন ঘুমালে?
আমাকে এড়িয়ে তোমার আকাশে কবে ফুল ঝরেছে বল!
অভিমানকে এত দারুনভাবে বলতে পেরেছেন কে কবে?
প্রিয় ইমন ভাই, জানি না কোন অভিমান ছিল কিনা আপনার, আপনি ছিলেন নগরঋষি, ঋষিদের অভিমান থাকে না। কিন্তু আপনাকে যারা চিনতো, জানতো সবাই আজ ভীষণ অভিমান করেছে আপনার উপর।
ভীষণ অভিমান!!