আমরা যমপুরীতে গিয়া উপস্থিত হইলাম। যম দরবার করিয়া সিংহাসনে বসিয়া আছেন। পাশে স্তূপাকার খাতাপত্রের সহিত চিত্রগুপ্ত, সম্মুখে ডাঙ্গস হাতে ভীষণমূর্ত্তি যমদূতের পাল। আমাদের দুই জনকে যমদূতেরা সেই রাজসভায় হাজির করিল।
প্রথমে অপর একটি লোকটীর বিচার আরম্ভ হইল। চিত্রগুপ্ত তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,
“তোমার নাম?”
সে উত্তর করিল, “আমার নাম বৃন্দাবন গুঁই।”
তাহার পর কোথায় নিবাস, কি জাতি প্রভৃতি জিজ্ঞাসা করিয়া, খাতাপত্র দেখিয়া যমকে চিত্রগুপ্ত বলিলেন,
“মহাশয়! এ লোকটী অতি ধার্ম্মিক, অতি পুণ্যবান। পৃথিবীতে থাকিয়া এ বারো মাসে তেরো পার্ব্বণ করিত, দীন-দুঃখীর প্রতি সর্ব্বদা দয়া করিত, সত্য ও পরোপকার ইহার ব্রত ছিল, তবে...’ ‘তবে?’
চিত্রগুপ্ত বলিল, ‘লোকটি জিবদ্দশায় ব্লগে লিখিয়াছিল!’
যমের সব্ব্ শরীর শিহরিয়া উঠিল। তিনি বলিলেন,
“সর্ব্বনাশ! করিয়াছ কি! ব্লগ লিখিয়াছ। ওরে! এই মুহূর্তে ইহাকে রৌরব নরকে নিক্ষেপ কর। ইহার পূর্ব্বপুরুষ, যাহারা স্বর্গে আছে, তাহাদিগকেও সেই নরকে নিক্ষেপ কর। পরে ইহার বংশধরগণের চৌদ্দ পুরুষ পর্য্যন্তও সেই নরকে যাইবে। চিত্রগুপ্ত! আমার এই আদেশ তোমার খাতায় লিখিয়া রাখ।”
যমের এই বিচার দেখিয়া আমি তো অবাক। এইবার আমার বিচার! কিন্তু আমার বিচার আরম্ভ হইতে না হইতে আমি উচ্চৈঃস্বরে বলিলাম,
“মহারাজ! আমি কখনও ব্লগ লিখি নাই।”
আমার কথায় যম চমৎকৃত হইলেন।
হর্ষোৎফুললোচনে তিনি বলিলেন “সাধু! সাধু! এই লোকটী ব্লগ লিখে নাই। সাধু! সাধু! এই মহাত্মার শুভাগমনে আমার যমালয় পবিত্র হইল। যমনীকে শীঘ্র শঙ্খ বাজাইতে বল। যমকন্যাদিগকে পুষ্প বৃষ্টি করিতে বল। বিশ্বকর্ম্মাকে ডাকিয়া আন, ভূঃ ভূবঃ স্বঃ মহঃ জনঃ তপঃ সত্যলোক পারে ধ্রুব লোকের উপরে এই মহাত্মার জন্য মন্দাকিনী-কলকলিত, পারিজাত-পরিশোভিত, কোকিল-কুহরিত, অপ্সরাপদ-নূপুর- ঝুন-ঝুনিত হীরা-মাণিক-খচিত নূতন একটী স্বর্গ নির্ম্মাণ করিতে বল।”
( ডমুর চরিত, ৪র্থ পরিচ্ছেদ, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, ঈষৎ চেঞ্জিত )