somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৬ )

০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর লেখা পল্লী-সমাজ পর্ব ১

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ২)

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৩ )

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৪ )
শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৫ )

বাহিরে এইমাত্র শ্রাদ্ধ শেষ হইয়া গিয়াছে । আসন হইতে উঠিয়া রমেশ অভ্যাগতদিগের সহিত পরিচিত হইবার চেষ্টা করিতেছে বাড়ির ভিতরে আহারের জন্য পাতা পাতিবার আয়োজন হইতেছে এমন সময় একটা গোলমাল হাকাহাকি শুনিয়া রমেশ ব্যস্ত হইয়া ভিতরে আসিয়া উপস্থিত হইল । সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই আসিল । ভিতরে রন্ধনশালার কপাটের একপাশে একটি পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের বিধবা মেয়ে জড়সড় হইয়া পিছন ফিরিয়া দাড়াইয়া আছে এবং আর একটি প্রৌঢ়া রমণী তাহাকে আগলাইয়া দাড়াইয়া ক্রোধে চোখ মুখ রক্তবর্ণ করিয়া চীৎকারে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বাহির করিতেছে । বিবাদ বাধিয়াছে পরাণ হালদারের সহিত। রমেশকে দেখিবামাত্র প্রৌঢ়া চেচাইয়া প্রশ্ন করিল হা বাবা তুমি গাঁয়ের একজন জমিদার বলি যত দোষ কি এই ক্ষেন্তি বামনির মেয়ের ? মাথার ওপর আমাদের কেউ নেই বলে কি যতবার খুশি শাস্তি দেবে ? গোবিন্দকে দেখিয়াই কহিল ঐ উনি মুখুয্যেবাড়ির গাছ পিতিষ্ঠের সময় জরিমানা বলে ইস্কুলের নামে দশ টাকা আমার কাছে আদায় করেন নি কি ? গাঁয়ের ষোল আনা শেতলা পুজোর জন্যে দুজোড়া পাঠার দাম ধরে নেন নি কি? তবে ? কতবার ঐ এক কথা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে চান শুনি ? রমেশ ব্যাপারটা কি কিছুতেই বুঝিতে পারিল না । গোবিন্দ গাঙ্গুলী বসিয়াছিল মীমাংসা করিতে উঠিয়া দাঁড়াইল । একবার রমেশের দিকে একবার প্রৌঢ়ার দিকে চাহিয়া গম্ভীর গলায় কহিলেন যদি আমার নামটাই করলে ক্ষ্যান্তমাসি তবে সত্যি কথা বলি বাছা । খাতিরে কথা কইবার লোক এই গোবিন্দ গাঙ্গুলী নয় সে দেশসুদ্ধ লোক জানে । তোমার মেয়ের প্রাশ্চিত্যও হয়েচে সামাজিক জরিমানাও আমরা করেছি সব মানি । কিন্তু তাকে যজ্ঞিতে কাঠি দিতে ত আমরা হুকুম দিইনি । মরলে ওকে পোড়াতে আমরা কাঁধ দেব । কিন্তু ক্ষ্যান্তমাসি চীৎকার করিয়া উঠিল । বলে তোমার নিজের মেয়েকে কাঁধে করে পুড়িয়ে এসো বাছা আমার মেয়ের ভাবনা তোমাকে ভাবতে হবে না । বলি হা গোবিন্দ নিজের গায়ে হাত দিয়ে কি কথা কও না ? তোমার ছোটভাজ যে ওই ভাড়ারঘরে বসে পান সাজচে সে ত আর বছর মাস দেড়েক ধরে কোন কাশীবাস করে অমন হলদে রোগা শলতেটির মত হয়ে ফিরে এসেছিল শুনি ? সে বড়লোকের বড় কথা বুঝি ? বেশি ঘাঁটিয়ো না বাপু আমি সব জারিজুরি ভেঙ্গে দিতে পারি । আমরাও ছেলেমেয়ে পেটে ধরেচি আমরা চিনতে পারি । আমাদের চোখে ধুলো দেওয়া যায় না ।গোবিন্দ ক্ষ্যাপার মত ঝাপাইয়া পড়িল তবে রে হারামজাদা মাগী কিন্তু হারামজাদা মাগী একটুও ভয় পাইল না বরং এক পা আগাইয়া আসিয়া হাত মুখ ঘুরাইয়া কহিল মারবি নাকি রে ? ক্ষেন্তি বামনিকে ঘাটালে ঠক বাছতে গাঁ উজোড় হয়ে যাবে তা বলে দিচ্চি । আমার মেয়ে ত রান্নাঘরে ঢুকতে যায়নি দোরগোড়ায় আসতে না আসতে হালদার ঠাকুরপো যে খামকা অপমান করে বসলো বলি তার বেয়ানের তাতি অপবাদ ছিল না কি ? আমি তো আর আজকের নই গো বলি আরও বলব না এতেই হবে ? রমেশ কাঠ হইয়া দাড়াইয়া রহিল । ভৈরব আচার্য ব্যস্ত হইয়া ক্ষ্যান্তর হাতটা প্রায় ধরিয়া ফেলিয়া সানুনয়ে কহিল এতেই হবে মাসি আর কাজ নেই । নে সুকুমারী ওঠ মা চল বাছা আমার সঙ্গে ও ঘরে গিয়ে বসবি চল । পরাণ হালদার চাদর কাঁধে লইয়া সোজা খাড়া হইয়া উঠিয়া বলিল এই বেশ্যে মাগীদের বাড়ি থেকে একেবারে তাড়িয়ে না দিলে এখানে আমি জলগ্রহণ করব না তা বলে দিচ্চি । গোবিন্দ কালীচরণ তোমাদের মামাকে চাও তো উঠে এসো বলচি । বেণী ঘোষাল যে তখন বলেছিল মামা যেয়ো না ওখানে এমন সব খানকী নটীর কাণ্ডকারখানা জানলে কি জাতজন্ম খোয়াতে এ বাড়ির চৌকাঠ মাড়াই ? কালী উঠে এসো । মাতুলের পুনপুন আহ্বানেও কিন্তু কালীচরণ ঘাড় হেট করিয়া বসিয়া রহিল । সে পাটের ব্যবসা করে । বছর চারেক পূর্বে কলিকাতাবাসী তাহার এক গণ্যমান্য খরিদ্দার বন্ধু তাহার বিধবা ছোট ভগ্নীটিকে লইয়া প্রস্থান করিয়াছিল ঘটনাটি গোপন ছিল না । হঠাৎ শ্বশুরবাড়ি যাওয়া এবং তথা হইতে তীর্থযাত্রা ইত্যাদি প্রসঙ্গে কিছুদিন চাপা ছিল মাত্র । পাছে এই দুর্ঘটনার ইতিহাস এত লোকের সমক্ষে আবার উঠিয়া পড়ে এই ভয়ে কালী মুখ তুলিতে পারিল না । কিন্তু গোবিন্দের গায়ের জ্বালা আদৌ কমে নাই । সে আবার উঠিয়া দাঁড়াইয়া জোর গলায় কহিল যে যাই বলুক না কেন এ অঞ্চলে সমাজপতি হলেন বেণী ঘোষাল পরাণ হালদার আর যদু মুখুজ্যেমশায়ের কন্যা । তাদের আমরা তো কেউ ফেলতে পারব না । রমেশ বাবাজী সমাজের অমতে এই দুটো মাগীকে কেন বাড়ি ঢুকতে দিয়েচেন তার জবাব না দিলে আমরা এখানে জলটুকু পর্যন্ত মুখে দিতে পারব না ।
দেখিতে দেখিতে পাঁচ সাত দশজন চাদর কাঁধে ফেলিয়া একে একে উঠিয়া দাঁড়াইল । ইহারা পাড়া গাঁয়ের লোক সামাজিক ব্যাপারে কোথায় কোন চাল সর্বাপেক্ষা লাভজনক ইহা তাহাদের অবিদিত নহে । নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণ সজ্জনেরা যাহারা যা খুশি বলিতে লাগিল । ভৈরব এবং দীনু ভট্যচায কাঁদ কাঁদ হইয়া বার বার ক্ষ্যান্তমাসি ও তাহার মেয়ের একবার গাঙ্গুলী একবার হালদার মহাশয়ের হাতে পায়ে ধরিবার উপক্রম করিতে লাগিল চারিদিক হইতে সমস্ত অনুষ্ঠান ও ক্রিয়া কর্ম যেন লণ্ডভণ্ড হইবার সূচনা প্রকাশ করিল । কিন্তু রমেশ একটি কথা কহিতে পারিল না । একে ক্ষুধায় তৃষ্ণায় নিতান্ত কাতর তাহাতে অকস্মাৎ এই অভাবনীয় কাণ্ড । সে পাংশুমুখে কেমন যেন একরকম হতবুদ্ধির মত স্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিল । রমেশ অকস্মাৎ একমুহূর্তে সমস্ত লোকের সচকিত দৃষ্টি এক হইয়া বিশ্বেশ্বরীর মুখের উপর গিয়া পড়িল । তিনি ভাঁড়ার হইতে বাহির হইয়া কপাটের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইয়া ছিলেন । তাহার মাথার উপর আঁচল ছিল কিন্তু মুখখানি অনাবৃত । রমেশ দেখিল জ্যাঠাইমা আপনিই কখন আসিয়াছেন তাহাকে ত্যাগ করেন নাই । বাহিরের লোক দেখিল ইনিই বিশ্বেশ্বরী ইনিই ঘোষাল বাড়ির গিন্নীমা । পল্লীগ্রামে শহরের কড়া পর্দা নাই । তত্রাচ বিশ্বেশ্বরী বড়বাড়ির বধূ বলিয়াই হোক কিংবা অন্য যে কোন কারণেই হোক যথেষ্ট বয়সপ্রাপ্তিসত্ত্বেও সাধারণত কাহারো সাক্ষাতে বাহির হইতেন না । সুতরাং সকলেই বড় বিস্মিত হইল । যাহারা শুধু শুনিয়াছিল কিন্তু ইতিপূর্বে কখনো চোখে দেখে নাই তাহারা তাহার আশ্চর্য চোখ দুটির পানে চাহিয়া একেবারে অবাক হইয়া গেল । বোধ করি তিনি হঠাৎ ক্রোধবশেই বাহির হইয়া পড়িয়াছিলেন । সকলে মুখ তুলিবামাত্রই তিনি তৎক্ষণাৎ থামের পার্শ্বে সরিয়া গেলেন । সুস্পষ্ট তীব্র আহ্বানে রমেশের বিহ্বলতা ঘুচিয়া গেল । সে সম্মুখে অগ্রসর হইয়া আসিল । জ্যাঠাইমা আড়াল হইতে তেমনি সুস্পষ্ট উচ্চকণ্ঠে বলিলেন গাঙ্গুলীমশায়কে ভয় দেখাতে মানা করে দে রমেশ । আর হালদারমশায়কে আমার নাম করে বল যে আমি সবাইকে আদর করে বাড়িতে ডেকে এনেচি । সুকুমারীকে অপমান করবার তার কোন প্রয়োজন ছিল না । আমার কাজ কর্মের বাড়িতে হাকাহাকি গালিগালাজ করতে আমি নিষেধ করচি । যার অসুবিধে হবে তিনি আর কোথাও গিয়ে বসুন । বড়গিন্নীর কড়া হুকুম সকলে নিজের কানে শুনিতে পাইল । রমেশের মুখ ফুটিয়া বলিতে হইল না হইলে সে পারিত না । ইহার ফল কি হইল তাহা সে দাঁড়াইয়া দেখিতেও পারিল না । জ্যাঠাইমাকে সমস্ত দায়িত্ব নিজের মাথায় লইতে দেখিয়া সে কোনমতে চোখের জল চাপিয়া দ্রুতপদে একটা ঘরে গিয়া ঢুকিল তৎক্ষণাৎ তাহার দুই চোখ ছাপাইয়া দরদর করিয়া জল গড়াইয়া পড়িতে লাগিল । আজ সারাদিন সে নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল কে আসিল না আসিল তাহার খোজ লইতে পারে নাই । কিন্তু আর যেই আসুক জ্যাঠাইমা যে আসিতে পারেন ইহা তাহার সুদূর কল্পনার অতীত ছিল । যাহারা উঠিয়া দাঁড়াইয়াছিল তাহারা আস্তে আস্তে বসিয়া পড়িল । শুধু গোবিন্দ গাঙ্গুলী ও পরাণ হালদার আড়ষ্ট হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল । কে একজন তাহাদিগকে উদ্দেশ করিয়া ভিড়ের ভিতর হইতে অস্ফুটে কহিল বসে পড় না খুড়ো ? ষোলখানা লুচি চারজোড়া সন্দেশ কে কোথায় খাইয়ে দাইয়ে সঙ্গে দেয় বাবা । পরাণ হালদার ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল । কিন্তু আশ্চর্য গোবিন্দ গাঙ্গুলী সত্যই বসিয়া পড়িল । তবে মুখখানা সে বরাবর ভারী করিয়া রাখিল এবং আহারের জন্য পাতা পড়িলে তত্ত্বাবধানের ছুতা করিয়া সকলের সঙ্গে পঙ্ক্তি ভোজনে উপবেশন করিল না । যাহারা তাহার এই ব্যবহার লক্ষ্য করিল তাহারা সকলেই মনে মনে বুঝিল গোবিন্দ সহজে কাহাকেও নিষ্কৃতি দিবে না । অতপর আর কোন গোলযোগ ঘটিল না । ব্রাহ্মণেরা যাহা ভোজন করিলেন তাহা চোখে না দেখিলে প্রত্যয় করা শক্ত এবং প্রত্যেকেই খুদি পটল, ন্যাড়া, বুড়ি প্রভৃতি বাটীর অনুপস্থিত বালকবালিকার নাম করিয়া যাহা বাঁধিয়া লইলেন তাহাও যৎকিঞ্চিৎ নহে । সন্ধ্যার পর কাজ কর্ম প্রায় সারা হইয়া গিয়াছে । রমেশ সদর দরজার বাহিরে একটা পেয়ারাগাছের তলায় অন্যমনস্কের মত দাঁড়াইয়াছিল । মনটা তাহার ভাল ছিল না । দেখিল দীনু ভট্টাচার্য ছেলেদের লইয়া লুচি মণ্ডার গুরুভারে ঝুকিয়া পড়িয়া একরূপ অলক্ষ্যে বাহির হইয়া যাইতেছে । সর্বপ্রথমে খেদির নজর পড়ায় সে অপরাধীর মত থতমত খাইয়া দাঁড়াইয়া পড়িয়া শুষ্ককণ্ঠে কহিল বাবা বাবু দাঁড়িয়ে সবাই যেন একটু জড়সড় হইয়া পড়িল । ছোট মেয়েটির এই একটি কথা হইতেই রমেশ সমস্ত ইতিহাসটা বুঝিতে পারিল পলাইবার পথ থাকিলে সে নিজেই পলাইত । কিন্তু সে উপায় ছিল না বলিয়া আগাইয়া আসিয়া সহাস্যে কহিল খেদি এ সব কার জন্যে নিয়ে যাচ্ছিস রে? তাহাদের ছোট বড় পুঁটুলিগুলির ঠিক সদুত্তর খেদি দিতে পারিবে না আশঙ্কা করিয়া দীনু নিজেই একটুখানি শুষ্কভাবে হাসিয়া বলিল পাড়ার ছোটলোকদের ছেলেপিলেরা আছে তো বাবা এটো কাটাগুলো নিয়ে গেলে তাদের দুখানা চারখানা দিতে পারব । সে যাই হোক বাবা কেন যে দেশসুদ্ধ লোক ওকে গিন্নীমা বলে ডাকে তা আজ বুঝলুম ।

রমেশ তাহার কোন উত্তর না করিয়া সঙ্গে সঙ্গে ফটকের ধার পর্যন্ত আসিয়া হঠাৎ প্রশ্ন করিল আচ্ছা ভটচায্যমশাই আপনি তো এদিকের সমস্তই জানেন এ গাঁয়ে এত রেষারেষি কেন বলতে পারেন ? দীনু মুখে একটা আওয়াজ করিয়া বার দুই ঘাড় নাড়িয়া বলিল হায় রে বাবাজী আমাদের কুয়াপুর তো পদে আছে । যে কাণ্ড এ কদিন ধরে খেদির মামার বাড়িতে দেখে এলুম । বিশ ঘর বামুন কায়েতের বাস নেই । গাঁয়ের মধ্যে কিন্ত চারটে দল । হরনাথ বিশ্বেস দুটো বিলিতি আমড়া পেড়েছিল বলে তার আপনার ভাগ্নেকে জেলে দিয়ে তবে ছাড়লে । সমস্ত গ্রামেই বাবা এই রকম তা ছাড়া মামলায় মামলায় একেবারে শতচ্ছিদ্র । খেদি হরিধনের হাতটা একবার বদলে নে মা । রমেশ আবার জিজ্ঞাসা করিল এর কি কোন প্রতিকার নেই ভটচায্যমশাই ? প্রতিকার আর কি করে হবে বাবা এ যে ঘোর কলি । ভট্টাচার্য একটা নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল তবে একটা কথা বলতে পারি বাবাজী। আমি ভিক্ষে সিক্ষে করতে অনেক জায়গাতেই ত যাই অনেকে অনুগ্রহ করেন । আমি বেশ দেখেচি তোমাদের ছেলেছোকরাদের দয়াধর্ম আছে নেই কেবল বুড়ো ব্যাটাদের । এরা একটু বাগে পেলে আর একজনের গলায় পা দিয়ে জিভ বার না করে আর ছেড়ে দেয় না । বলিয়া দীনু যেমন ভঙ্গি করিয়া জিভ বাহির করিয়া দেখাইল তাহাতে রমেশ হাসিয়া ফেলিল। দীনু কিন্তু হাসিতে যোগ দিল না কহিল হাসির কথা নয় বাবাজী অতি সত্য কথা । আমি নিজেও প্রাচীন হয়েচি কিন্ত তুমি যে অন্ধকারে অনেকদূর এগিয়ে এলে বাবাজী । তা হোক ভুট্যচায্যমশাই আপনি বলুন । কি আর বলব বাবা পাড়াগা মাত্রই এই রকম। এই গোবিন্দ গাঙ্গুলী এ ব্যাটার পাপের কথা মুখে আনলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় । ক্ষ্যান্তিবামনি ত আর মিথ্যে বলেনি কিন্তু সবাই ওকে ভয় করে । জাল করতে মিথ্যে সাক্ষী মিথ্যে মোকদ্দমা সাজাতে ওর জুড়ি নেই । বেণীবাবু হাতধরা কাজেই কেউ একটি কথা কইতে সাহস করে না বরঞ্চ ও ই পাঁচজনের জাত মেরে বেড়ায় । রমেশ অনেকক্ষণ পর্যন্ত আর কোন প্রশ্ন না করিয়া চুপ করিয়া সঙ্গে সঙ্গে চলিতে লাগিল । রাগে তাহার সর্বাঙ্গ জ্বালা করিতেছিল । দীনু নিজেই বলিতে লাগিল এই আমার কথা তুমি দেখে নিও বাবা ক্ষ্যান্তিবামনি সহজে নিস্তার পাবে না । গোবিন্দ গাঙ্গুলী পরাণ হালদার দু দুটো ভীমরুলের চাকে খোচা দেওয়া কি সহজ কথা । কিন্তু যাই বল বাবা মাগীর সাহস আছে । আর সাহস থাকবে নাই বা কেন ? মুড়ি বেচে খায় সব ঘরে যাতায়াত করে সকলের সব কথা টের পায় । ওকে ঘাঁটালে কেলেঙ্কারীর সীমা পরিসীমা থাকবে না তা বলে দিচ্চি । অনাচার আর কোন ঘরে নেই বল ? বেণীবাবুকেও রমেশ সভয়ে বাধা দিয়া বলিল থাক বড়দার কথার আর কাজ নেই । দীনু অপ্রতিভ হইয়া উঠিল। কহিল থাক বাবা আমি দুঃখী মানুষ কারো কথায় আমার কাজ নেই । কেউ যদি বেণীবাবুর কানে তুলে দেয় তো আমার ঘরে আগুন রমেশ আবার বাধা দিয়া কহিল ভটচায্যি মশায় আপনার বাড়ী কি আরো দূরে ?
না বাবা বেশী দূর নয় । এই বাঁধের পাশেই আমার কুঁড়ে কোন দিন যদি আসব বই কি নিশ্চয় আসব বলিয়া রমেশ ফিরিতে উদ্যত হইয়া কহিল আবার কাল সকালেই তো দেখা হবে কিন্তু তার পরেও মাঝে মাঝে পায়ের ধুলো দেবেন । বলিয়া রমেশ ফিরিয়া গেল। দীর্ঘজীবী হও বাপের মত হও । বলিয়া দীনু ভটচায অন্তরের ভিতর হইতে আশীর্ব্বচন বাহির করিয়া ছেলেপুলে লইয়া চলিয়া গেল ।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:১৪
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×