somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামোয়ার আর অষ্টম আশ্চর্য আামি

২৮ শে অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘদিন পর এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল ফোনে.. এটা সেটা অনেক কিছুর পর আমি বললাম লেখালেখি কেমন চলছে?সেই বলল সামোয়ারে আসতে..ওখানেই সে লেখে। আমি বললাম সামোয়ার জিনিসটি কি? পত্রিকা? সে বলে .'আরে না'. আমি বললাম তয় এইডা কি জিনিস?খায় না পরে ? সে তো আমার কথা শুনে মনে হল অষ্টম আশ্চর্যের খোঁজ সে পেয়ে গেছে..আমিই সেই অষ্টম আশ্চর্য..কারণ সামোয়ার কি আমি জানিনা.।আসলেই তার এরকম ভাবার কারণ আছে....কারণটা একটু ব্যাখ্যা করি..

পাবলিক সার্ভেণ্ট হিসাবে ঢাকার অদুরে ছিমছাম নিরিবিলি মুন্সীগণ্জ জেলা সদরে আমার প্রথম নিয়োগ।শহুরে পাখি আমি।বিচরণ কোলাহলময় পরিবেশে।হঠাৎ করে সেই চিরচেনা পরিবেশ ছেড়ে নতুন জায়গায় অষ্টপ্রহর কর্মক্ষেত্র আর বাসা,বাসা আর কর্মক্ষেত্র..হাফিয়ে উঠেছিলাম প্রায়...আস্তে আস্তে সেই পরিবেশটাই ভাল লাগতে লাগল...লোকজনের সাথে পরিচিতি আর হৃদ্যতার ঊর্ধ্বমাত্রার সাথে সাথে ঐ ছোট্ট জেলা শহরটি আমার কেমন জানি আপন মনে হতে লাগল..অনেক আপন।তো সেই ভাললাগাটা ঝাঁকিয়ে উঠার আগেই সাত মাসের মাথায় বদলি ঢাকায়..অনেকটা আকস্মিক ভাবে।আমি যারপরনাই হতাশ...আবার সেই যান্ত্রিক ..কোলাহলময় পরিবেশ...চিরচেনা যানজট...।
ঢাকায় যেদিন যোগদান করলাম সেইদিনই কলিগ হিসাবে পেলাম উপরোল্লিখিত বন্ধুটিকে...দিলখোলা..রসিক..আর সাহিত্যনুরাগী.।অফিসশেষে বিকালে তার বাসায় নিয়ে গেলেন ভাবীর সাথে পরিচয় আর ডালভাত খাওয়ানোর অভিলাষে।

বসার ঘরটা ছিমছাম...বেতের সোফা...একপাশে বইয়ের বিশাল র‌্যাক..সারিসারি বই...সংগ্রহে রুচির চাপ...একপাশে দেখলাম স্তুপীকৃত যাযাদি বিশেষ সংখ্যা..অনেকগুলু।আমি বললাম আপনি ও যাযাদি পড়েন?বললেন শুধু পড়তাম না...লিখতাম ও। এখন পড়িনা।আমি বললাম ,আমি শুধু পাঠক ছিলাম...লিখিনি কোনদিন।তিনি হইহই করে উঠলেন ,কেন কেন? আমি ব্যাখ্যা করলাম..এভাবে....

আমি তখন এইচ এস সি দিয়েছি।অবসর কাটে ঘুরে ফিরে, আড্ডায় আর বাঁদরামি করে।সেই সময় এক আপুর কাছ থেকে যাযাদির একটা বিশেষ সংখ্যা পাই।নাম ছিল গোঁফ সংখ্যা...লেখাগুলু পড়ে আমি আভিভুত..এরপর প্রতিটি সংখ্যাই শুধু পড়তামই না ..গিলতাম গোগ্রাসে।প্রতিবার যাযাদি লেখা আহ্বান করত..আর আমি খাতা কলম নিয়ে বসে পড়তাম লিখতে..কিন্তু আমার এই অনুর্বর মস্তিষ্ক হতে লেখা বের হ্য় না।সব লেখা গলা পর্যন্ত এসে কেমন করে জানি আটকে যেত..তারপর দেখতে দেখতে মঙ্গলবার এসে পরত..আমি বাসার কাছে রাস্তার মোড়ের আবুলের চায়ের দোকানে বসে তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকতাম - কখন হকার আসবে(বাসায় যে হকার পত্রিকা দিত সে আসত একটু দেরিতে)..তো সেই বিশেষ সংখ্যা পেয়েই পড়তে শুরু করতাম দাড়িকমা সহ...তেমনি ছিল উম্মাদনা।প্রতিটা লেখাই পড়ে মনে হত এটা আমারি লেখা এবং আমি এরকম ই লিখতে চেয়েছিলাম। তো আমার কলিগকে বললাম লেখালেখি আমাকে দিয়ে হয়নি,হবেওনা ।..আমার অবস্থা শরৎবাবুর শ্রীকান্তের মত..সাহস দেখাতে গিয়ে শ্রীকান্ত হাতে লণ্ঠন নিয়ে শশ্মানে গিয়েছিলেন ..ভীতিকর অবস্থাটা সামলে উঠে আঁধারের রূপ দেখে আক্ষেপ করে বলেছিলেন অনেকটা এভাবেই -.'আমি কবি নই..কাব্যদেবী আমার সহায় নয়...মনের ভাবকে যদি কবিতায় রূপ দিতে পারিতাম তাহলে আজিকার এই অমাবশ্যা রাত্রিতে শশ্মানস্হলে দাঁড়াইয়া আঁধারের যে রূপ আমি প্রত্যক্ষ করিলাম তাহার সৌর্ন্দয্য কাব্যে বর্ণনা করিতাম'...আমি ও তার মত করে বলি লেখালেখির দেবী আমার সহায় নন,লেখালেখি আমায় দিয়ে হবে না..আমি লিখতে পারিনা...শুধু পড়ি...পাঠক আমি পাঠক...।
ধন্যবাদ সেই বন্ধুটিকে যে এই ব্লগিং সাইটের খোঁজ আমায় দিয়েছিলেন এবং আমাকে অষ্টম আশ্চর্য হিসাবে পরিগণিত করেছিলেন..কারণ আমি একজন পাঠক। পড়তেই অভ্যস্ত..পড়ি আর বলি; আহ্ ! কত সুন্দর লিখেছে।গত পনের দিন ভিজিটর হয়ে শুধু ব্লগে ঢুকে পড়েছি।অনেক ব্লগার..কত বিচিত্র লেখা..আমি আভিভুত। ব্লগার 'নুশেরার' বাবাকে নিয়ে লিখা আর 'প্রত্যুৎপন্নমতি' এর মাকে নিয়ে লেখা 'আমার মায়ের সাতটি মিথ্যা কথা' এই লেখাদুটি আমাকে অশ্রুসিক্ত করেছে.. এই আমি সুদুর প্রবাস থেকে বারবার ফিরে গেছি অতীতে স্নেহময়ী মায়ের কাছে কঠিন-কোমল বাবার কাছে।
গতকাল ব্লগে যোগদানের পর এটা আমার প্রথম লেখা(শুধু এই ব্লগেই নয় এযাবৎকালে)..প্রিন্টার থেকে কি-বোর্ড লে-আউট নিয়ে পাশে রেখে লিখেছি।অনেকটা ইচ্ছেকরেই এই লেখায় যুক্তবর্ণ বেশি লিখতে চেষ্টা করেছি যাতে অভ্যস্ত হতে পারি সহজেই..প্রথম সৃষ্টি তাই তার বেদনা তো থাকবে।জানিনা প্রকাশিত হবে কিনা।যদি হয় ব্লগারদের কাছে প্রথম লেখার ভুলত্রুটি মন্তব্যে প্রতিফলিত করার অনুরোধ রইল।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ২:৪৯
১০টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×