somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন : ছবির দেশ কবিতার দেশ- ৩ (এ্যা জার্নি বাই ট্রেন)

০১ লা নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২য় পর্ব : Click This Link

প্যারিস রওনা হবার দু্ই দিন পূর্বে সেখানে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাসরত(বর্তমানে ওখানকার সিটিজেন) আমার বন্ধুকে ফোন করে আমাদের ট্রেনের সময়সূচী বললাম।আমরা যে ট্রেনের টিকেট বুকিং দিয়েছি সেটা(ইউরোস্টার) ইউরোপের দ্রতগতির ট্রেন।এর গতিবেগ ঘণ্টায় একশ ছিয়াশি মাইল এবং লন্ডন থেকে প্যারিস পৌছুতে সময় নেয় দুই ঘন্টা পনের মিনিট।সুতরাং আমরা লন্ডন ছেড়ে যাব সকাল নয় টায় আর ওখানে পৌছাব সোয়া এগারটায়,ওদের সাথে সময়ের পার্থক্য এক ঘণ্টা এসব হিসাব করে আমি তাকে স্টেশনে উপস্হিত থাকতে বললাম ঠিক সোয়া বারটায়(কারন এখানে কোন দূর্ঘটনা না হলে সময়ের হেরফের হবেনা অর্থাৎ আমাদের ট্রেন ঠিক ওখানকার সোয়া বারটায় পৌছাবে সেটা আমি মোটামুটি নিশ্চিত)ওখানে যে স্টেশনে ট্রেন থামবে সেটার নাম -Gare Du Nord যার অর্থ Park of North কিন্তু বাংলাদেশী যারা ওখানে আছে তারা ওটাকে ''গার্দুন'' বলে সম্ভবত ওদের ভাষায় মানে ফ্রেন্চ এ। আমি যখন ফোনে বলি ''আমরা গারে ডু নরড্ স্টেশনে নামব তখন সে বলে -''ওকে ওকে ঐটা গার্দুন স্টেশন আমার বাসার কাছেই।''

সেদিন সকাল আটটায় আমরা বাসা থেকে রওনা দিলাম ।টিউবে(এখানকার পাতালট্রেন -প্যারিসে ওরা বলে মেট্রো ) ইণ্টারন্যাশনাল স্টেশনে পৌছাতে বিশ মিনিটের মত লাগে।সেদিনের আবহাওয়া ও ছিল চমৎকার,রৌদ্রকরোজ্জ্বল ।এরা এটাকে বলে সামার ওয়েদার।টিউব থেকে বের হয়ে উপরে উঠলেই ইণ্টারন্যাশাল স্টেশন কিংস ক্রস সেণ্ট প্যানক্রাস ( নবনির্মিত এবং নির্মানশৈলী আধুনিক)।এখানে আর একটা কথা বলে রাখি কুচ কুচ হোতা হ্যায় ছবিতে শাহরুখ আর কাজল এর স্টেশনে বিদায় নেয়ার দৃশ্যটি এই স্টেশনে চিত্রায়িত হয়েছিল। যাক,সিকিউরিটি চেকিং শেষে ভিতরে যাচ্ছি আমরা এমন সময় শুনি পেছন থেকে কে যেন ডাকছে।ফিরে দেখি মহিলা সিকিউরিটি অফিসার হাতে ক্যামকর্ডার নিয়ে আসছে।হাসানের হাতে ছিল ওটা।পাসপোর্ট আর টিকেট বের করার সময় সিকিউরিটি চেকিং- কাউন্টারে রেখেছিল, আর মনে নেই..ফেলে এসেছিল। অফিসারকে মেনি মেনি থ্যাংকস বললাম; জবাবে মুচকি হেসে উনি এনজয় ইউর জার্নি বলে চলে গেলেন।এরপর ইমিগ্রেশন কাউণ্টার।ওখানে জাস্ট পাসপোর্ট আর টিকেট নিয়ে একটু দেখেই সিল মেরে ফেরত দিল।আরো বিশ মিনিট বাকী আমাদের যাত্রা শুরু।কয়েন ঢুকিয়ে কফি নিলাম দু,কাপ।আমরা লাউন্জে বসে কফি খেলাম।দেখলাম ট্রেনের যাত্রী অনেক তার মধ্যে সাবকনটিনেন্ট এর লোকজন নেহায়েত কম নয়। লাউন্জটাও সুপরিসর, হালকা লাইটিং এ বেশ ভালো লাগছে ভেতরটা।পাঁচ মিনিট পর এলিভেটর ও্য়ে খুলে দিল আমরা কিউতে দাড়ালাম ।ট্রেনে উঠে সিট নাম্বার মিলিয়ে বসে ভাবতে লাগলাম যাক! অবশেষে আমরা যাচ্ছি।

ট্রেন জার্নি আমার কাছে বরাবরই আকর্ষণীয়।দেশে ঢাকা -চট্টগ্রাম সূবর্ণ এক্সপ্রেস এ অনেকবার যাতায়াত করেছি।ট্রেন ঠিক নয়টায় চলতে শুরু করল তার আগে ইংরেজি ফ্রেন্চ দু ভাষায় যাত্রা শুভ হোক ধরণের ঘোষনা পাঠ করা হল।ধীরে ধীরে আমাদের ট্রেনটি শহর পেরিয়ে ছোট ছোট পাহাড় আর বিস্তীর্ণ সমতলভূমির উপর দিয়ে ছুটে চলল।অনেক উইন্ডমিল আর ফার্মহাউজ চোখে পড়ল। অবশ্য ট্রেনের এ দ্রুতবেগে ছুটে চলাটা ভেতর হতে অনুভব করা যাচ্ছিল না কারণ ট্রেনে ঝাঁকুনি নেই বললে চলে।
''ধুর !!! ঝিক ঝিক শব্দ আর ঝাঁকুনি না থাকলে এটা আবার কিসের ট্রেন জার্নি''- হাসানকে বললাম আমি।ভালো না লাগলেও আমরা প্রতীক্ষায় রইলাম ট্রেন কখন ইংলিশ টানেলে ঢুকবে।সকালে শুধু ডিম-রুটি আর চা দিয়ে নাস্তা করেছিলাম.।খিদে লেগেছে সুতরাং খেতে হবে বলে হাটা শুরু করলাম।দুই বগি পর খাবারের বগি মিলল..স্যান্ডউইচ আর কফি অর্ডার করে অপেক্ষা করছি আর এসময় ট্রেন ও ইংলিশ টানেলে ঢুকল।

আমরা স্যান্ডউইচ খাচ্ছি আর অন্ধকার টানেলে ট্রেন ছুটছে..ভিতরের আলো মাঝে মাঝে টানেলের গায়ে রিফ্লেক্স হচ্ছে..তখন আমরা বুঝতে পারছিলাম কি দ্রুতগতিতে ইংলিশ টানেল অতিক্রম করছি...আমাদের মাথার উপরে সেই জলরাশি- ইংলিশ চ্যানেল , যা সাতরে পার হয়েছিলেন বাংলার সেই ব্রজেন।অন্য ধরণের এক অনুভুতি হচ্ছিল আমাদের দুজনের মধ্যে...দীর্ঘক্ষণ দুজনেই রইলাম চুপচাপ। টানেল হতে বের হয়ে আমরা ফ্রান্স ভুখন্ডে প্রবেশ করলাম।অবশেষে নির্ধারিত সময়ের দু মিনিট আগে আমরা পৌছালাম ''গার্দুন'' ..প্যারিস এ.. Gare Du Nord....ট্রেন টার্মিনালে ঢোকার আগ মুহূর্তে যথারীতি ঘোষিকা ফ্রেন্চ এবং ইংরেজিতে ''সু-স্বাগতম'' জানাল।টার্মিনালে নেমেই হাসানের প্রথম মন্তব্য হল.'' স্টেশনটা বিশাল বাট ঐতিহ্যবাহী''। স্টেশনটা আয়তনে বিশাল কিন্তু সর্বত্রই পুরাতন স্হাপত্যরীতির ছাপ সুস্পষ্ট।কোনরকম চেকফেক ছাড়াই আমরা টার্মিনাল হতে ক্যানপি লাউন্জে ঢুকলাম...ব্যাগেজ রেখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি..হঠাৎ দেখি সামনে বন্ধু ইমন দাড়িয়ে,বুকে জড়িয়ে ধরে বলল সেই আট বছর আগে দেখেছিলাম তোকে...কেমন আছিস দোস্ত? দোতলায় কফিশপে বসে কফি খাচ্ছিল সে..দুর থেকে আমাদের দেখে নেমে এসেছে আমরা খেয়াল করিনি.।.আমি বললাম..কি রে তুই তো অনেক মোটকু হয়ে গেছিস...।


চলবে.....।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:১৩
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×