ফার্মগেটে যখন ভর্তি কোচিং করতাম তখন ক্যালকুলেটর চাপতাম আর হিসাব করতাম কত পাইলে বুয়েটে চান্স হবে। সারাদিন পড়াশোনা করতাম আর ক্লান্তি আসলে বুয়েটকে স্বপ্ন দেখতাম। এটা অনেকটা আবেগের অংশ বিশেষ হয়ে যায়।
অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হল। না বলা কিছু কথা বলার সাহস সন্চার হলো মনে। ওহ্ আগেই বলে রাখি রিমি(ছন্মনাম) চান্স পেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ। আতেল মেয়ে মেডিকেলে পাবে বৈ কি?
কলেজ লাইফে একই স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। ঠিক তখনই যেন নিজেকে হারালাম সীমাহীন অন্তরালে। পড়ার চাপে এতদিন অবদমিত থাকলেও এখন ঠেকায় কে? ফেসবুকের কল্যাণে অতি সহজেই যোগাযোগ করলাম। কিছুদিনের মধ্যেই গড়ে উঠলো উষ্ণ সখ্যতা। সে সখ্যতার উষ্ণতা যেন হৃদয়ের ভাবাবেগকে একেবারে চুড়ায় উঠিয়ে ক্ষান্ত হলো.....। টি.এস.সি.....ক্যাফেটেরিয়া.....রেস্টুরেন্ট আরো অনেক কিছু।
এভাবেই চললো বছর তিনেক। হাসি-খুশি, মান-অভিমান, রাগ-অনুরাগে সিক্ত যখন জীবন ঠিক তখনই রিমির বাসা থেকে ওকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগার মত অবস্থা। ঢাকা মেডিক্যালে ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী যাহা তাহা পাত্র হলেতো আর চলে না। পাত্র বুয়েট থেকে গ্রাজুয়েট করে সিংগাপুরের নাস এ এম.এস, পি.এইড.ডি কম্প্লিট করে ওখানেই লেকচারার হিসাবে কর্মরত। এমন পাত্র কি লাখে একটা মেলে!
কয়েক বন্ধু মিলে হলের ছাদে কিছু পানীয়ের স্বাদে ব্যস্ত। এমন সময় রিমি ফোন দিল আমাকে।
-হ্যালো কৈ তুমি?
-এই....তো.....হলেই আছি! কি খবর মাই হার্ট? হাউ ডু ইড ডু নাও?
-ন্যাকামী রাখ! সিরিয়াস ব্যাপার।
-কি ব্যাপার বলে ফেল না....।
-আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
-কার সাথে? কবে? ইনভাটেশন কার্ড দিবা না'কি?
-দুষ্টুমী রাখো....। আগামীকাল দুপুরে ক্যাম্পাসে থেকো। জরুরী ব্যাপার।
-ঠিক আছে আরকি চিপায়(বুয়েটের আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের সম্পত্তি) আমাকে পাবে।
আরকি চিপায় কথা হলো ঠিকই। অনেক অনভূতি আবেগ শেয়ারও হলো। সাথে প্রতিজ্ঞা হলো এক সাথে থাকার, একাকার হলো ভালবাসার শিহরণ।
হয়তো ও চেয়েছিল কথা রাখতে, হয়তো বাবা-মার চাপের মুখে ভাঙ্গতে হয়েছিল সেই প্রতিজ্ঞা। হয়তো সে এখনো আমায় ভাবে নিরালায়, হয়তো দুজনে এখনো হারাই অসীম সীমানায়।
মানুষের কিছু স্বপ্ন থাকে যা শুধু স্বপ্নই থেকে যায়। হয়তো একদিন আমিও বাবা-মা এর কথা এড়াতে পারবো না, হয়তো আমিও প্রতিজ্ঞার কথা ভূলে যেতে পারবো, ভূলে থাকতে পারবো বুকে জমানো কষ্টগুলোকে।