খায়রুল আহসান ভাই আমার সর্বশেষ লেখাটিতে একটি মন্তব্য করেছিলেন: “শেষের কয়েকটি লাইন বাদে বাকি লেখাটা উপভোগ্য হয়েছে।” মন্তব্যটি আমার খুব ভালো লেগেছে। এর কারণটা পরে বলবো। একজন লেখক হিসেবে আমার প্রতিটি লেখাই আমার কাছে মূল্যবান এবং আমি মনে করি প্রতিটা লেখাতেই আমি আমার বেস্ট এফোর্টটা দেই। তাই বলে আমি এটা কখনোই মনে করি না যে, আমার লেখা সমালোচনার উর্ধ্বে, এটা এত উপরের লেখা যে, এটা নিয়ে কেউ ভিন্নমত পোষণ করতে পারবে না, এটাকে সবার ভালো বলতে হবে, খারাপ তো বলাই যাবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজের কাজের উপর সমালোচনা ‘শুনতে’ পারি, সমালোচকের উপর পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে। আমার লেখালিখি, ফিল্ম বানানো, নাটকের নির্দেশনা এই সব কাজে যদি বিন্দুমাত্র কিছু অর্জন থেকে থাকে তবে চুপচাপ সমালোচনা ‘শোনা’র একটি অবদান আছে। সমালোচনা গ্রহণ বা বর্জন সেটা আমার বা যে কোন ¯্রষ্টার নিজস্ব ব্যাপার, সশ্রদ্ধে সমালোচনা শোনার সামর্থ সব সৃজনশীল মানুষের থাকা উচিৎ।
এবার আসি খাইরুল ভাইয়ের মন্তব্যে। আমার লেখার শেষের লাইনগুলো তার ভালো লাগেনি, এটা জেনে আমার কাছে ভালো লেগেছে। তার মন্তব্য আমার কাছে ভালো লেগেছে তার মন্তব্যের দ্বিতীয় অংশের কারণে। আমার মনে হয়, ব্লগে যারা মন্তব্য করেন তাদের খাইরুল ভাইয়ের কাছ থেকে শিখার আছে। দ্বিতীয় অংশে তিনি লিখেছেন, “অন্তত: আমার কাছে তাই মনে হলো।” এই কথার মাধ্যমে তিনি এটা যে একান্ত তার ব্যক্তিগত মতামত এবং লেখকের বা অন্য কোন পাঠকের দ্বিমত থাকাই স্বাভাবিক- তার স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। একজন মানুষের মতামত প্রদানের ধরণ থেকে তার বোধবুদ্ধি ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ব্লগে আমার বয়স বয়স মাত্র ১৫ দিন। তবে আমার প্রথম বই (একমাত্র প্রকাশিত বই) প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬-তে। আমার সম্পাদিত প্রথম লিটল ম্যাগ প্রকাশিত হয়েছে তারও অনেক আগে। লেখালিখিটা চললেও জীবিকার তাগিদে এখন এসব থেকে দূরে। আমার এক বন্ধুর বুদ্ধিতে ব্লগে আসা। লেখালিখিটাও কন্টিনিউ হলো, পাশাপাশি লেখা মানুষকে পড়ানোও গেল। এই ১৫ দিনে আমি শুধু খাইরুল ভাইয়ের মতো পাঠকই পাইনি। কিছু পাঠক (ব্লগার) পেয়েছি, যারা সৃজনশীল সমালোচনা করাতো দূরে থাক, কেবল খোঁচা মারতে পটু। কোন কারণ ছাড়া খোঁচা মারেন এনারা। আগেই বলেছি, সমালোচনা আমি শ্রদ্ধার সাথে শুনি বা গ্রহণ করি, যতটা বিনয়ের সাথে আমি সমালোচনা গ্রহণ করি, ততটা দুর্বিনিত ভাবেই আমি খোঁচার জবাব দিতে পারি। সমস্যা হলো এতে পরিবেশ নষ্ট হয়। গত দুই-তিন দিন পুরো ব্লগজুড়ে এমনই একটা পরিস্থিতি গেছে। তবে বুঝতে পেরেছি ঘটনা ব্লগে আমার জন্মের আগে থেকেই শুরু। যাই হোক, যে বা যারা খোঁচা মেরেছেন, তাদের খোঁচা এত বেশি মাত্রায় ভোঁতা, এর মধ্যে আমি বুদ্ধির কোন ছাপ পাইনি, গোঁড়ামি ছাড়া। গোঁড়ামির সাথে বুদ্ধিবৃত্তির কোন সম্পর্কই নেই। একজন মানুষের খোঁচানোর ধরণ থেকেও তার ব্যক্তিত্ব ও বোধবুদ্ধির দৌড় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এদের খোঁচা মারার ধরণ দেখে এদেরকে আমার সক্রেটিসের ভাষায় চতুর্থ স্তরের জ্ঞানী মনে হয়েছে, ‘এরা জানে না যে, এরা জানে না।’ এই ধরনের জ্ঞানী আপনি আপনার চারপাশে অনেক পাবেন, আমি এদেরকে মূখর মূর্খ বলে ডাকি। কারণ এরা নিজেদের মূর্খতা নিয়ে এত বেশি আত্মবিশ্বাসী যে, যত্রতত্র তার প্রচারে অতি মাত্রায় মূখর হয়ে থাকে।
সৃষ্টিকর্তার কাছে ধন্যবাদ, কারণ আমি জানি যে, আমি জানি না।
একটা লেখার সাথে আপনার মতামতের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক, এখানে কারোর উপরই ওহী নাজিল হয় না। সুতরাং মতভেদ থাকবেই। আপনি কেন একমত না সেটা ‘যৌক্তিকভাবে’ জানানোর অধিকার আপনার আছে। এটাই স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার। কোন যুক্তি তর্কের ধার না ধরে আপনি যদি ভোঁতা ছুরি দিয়ে কেবল খোঁচাখুঁচিই করে যান, তাহলে এটা হয় স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকারের অপব্যবহার। তখন বুঝা গেলো এই অধিকার ধারণ করার যোগ্যতাই আপনি রাখেন না। স্বাধীনতার সম্মান রক্ষা করতে না পারলে সেটা তো হরণ হবেই।
ব্লগে আমার বয়স মাত্র ১৫ দিন। ছোট মুখে একটা বড় কথা বলি- “মূখর মূর্খ হয়েন না। অন্তত সাবালক হোন।”
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২১ রাত ১২:২৩