somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণিতের বিশ্বলড়াই-এ আমাদের বন্ধুরা

৩০ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও) শুধু বিশ্বের গণিত প্রিয় শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগীতাই নয়, বরং তাদের মিলনমেলাও বটে। প্রতিবছর বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মূল প্রতিযোগীতার পর বাকী সময়টা কেটে যায়, ঘুরে বেড়ানো এবং একে অপরের সাথে পরিচয়ের মধ্য দিয়ে।

প্রতিবছর সাধারণত সব দেশের প্রতিযোগীদের একই ভেন্যুতে রখা হয়। কিন্তু এবছর ৫টি ভেন্যুতে শিক্ষার্থীদের রাখার ফলে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সাথে বন্ধুত্বের সুযোগ কিছুটা কম ছিল। তবে তারপরও, বাইরে ঘুরে বেড়ানো এবং পার্টির সময়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সাথে আমাদের দেখা করার সুযোগ হয়।

আমাদের গণিত দলকে রাখা হয় স্পেনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিডাড অতোনোমা ডি মাদ্রিদের লুইস ভিভেস নামের ডর্মেটরিতে। এখানে আমাদের সাথে আরও ১৩ টি দেশের প্রতিযোগীরা ছিল ।

স্পেনে এসে পৌছাতেই আমাদের পরিচয় হয় আমাদের গাইডের সাথে। আমাদের দলের গাইড ছিলেন আলভা মেইরো। গণিতে প্রথমবর্ষে অধ্যয়নরত, চরম ছটফটে স্বভাবের আলভাকে আমরা সবাই শুরুতেই পছন্দ করে ফেলি।

লুইস ভিভেসে পৌছে আমরা দেখতে পেলাম যে আমাদের দলের নায়েল ভাইকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজনের সাথে থাকতে হবে। তাই আমরা শুরুতেই তাদের সাথে আমাদের পরিচয় সেরে নিলাম। আমাদের সাথে একই ডর্মেটরিতে ছিল- চীন, ইরান, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদিআরব, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়াসহ আরও বেশকিছু দল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এবার আমারা যে বাসে চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি সেখানে ছিল, চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়ার মত শক্তিশালী দল। ফলে তাদেরকে খুব কাছ থেকে দেখার এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার সুযোগ আমরা এবার বেশ ভালভাবে পেয়েছি ।

আইএমও-তে সবার সাথে বন্ধুত্ব করার সুযোগ পাওয়া যায় সুভেনিয়র দেবার সময়। কিন্তু, ৫টি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় দলগুলোকে রাখার ফলে সুভেনিয়র দিতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়। তারপরও, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ক্রোয়েশিয়া, ইরান, জাপান, বসনিয়া, ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, দক্ষিন আফ্রিকা, ভিয়েতনামসহ আরও অনেক দলের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। তাছাড়া গতবছরের আইএমও-তে ছিল এরকম অনেকের সাথে আমাদের আবার দেখা হয়।

এবারের আইএমওতে আমাদেরকে সবসময় সঙ্গ দিয়েছে আমাদের গাইডরা। স্পেনের সবাই খুবই আমুদে স্বভাবের। ফলে গাইডরাই সব আসর মাতিয়ে রেখেছিল। তবে গাইডদের মধ্যে আমাদের সবার সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন সিনিয়র গাইড রাফা। তাঁর অসাধারণ ধৈর্য এবং হাসি-খুশি ব্যবহার আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করেছে।

তবে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগীদের সাথে পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল তাদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা। অধিকাংশ ভাল দলের সাথে কথা বলে তাদের পরিকল্পনা এবং প্রশিক্ষণের কথা জানার পর আমাদের অবস্থা ভাবলে কিছুটা হতাশ হতে হয়। এমনকি, অনেক দেশেরই গণিতের জন্য আলাদা স্কুল আছে। তারপরও এটা ভেবে ভাল লাগে যে প্রতিবছর আমাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে এবং নতুন দল হলেও অনেক দলের চেয়ে আমাদের অবস্থান উপরে।

এবার আইএমও-তে আমার দেখা সবচেয়ে অসাধারণ মেধাবী প্রতিযোগী হল চীনের ৪২ পাওয়া প্রতিযোগী জিও সেং মু। তাঁর মতে, আইএমও-তে ভাল করতে হলে প্রয়োজন অসাধারণ আত্মবিশ্বাস, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং কঠোর পরিশ্রম। তাই আমাদের সবার আশা, এই উপদেশ মেনে, আমরা আগামীতে আরও ভাল ফলাফল করে গণিতের বিশ্বলড়াই থেকে দেশের জন্য আরও সম্মান বয়ে নিয়ে আসতে পারব।

*লেখাটি প্রথম আলোতে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড নিয়ে প্রকাশিত বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।
**ছবি : চীনের গণিত দলের সাথে। (চীনারা এবার প্রথম হয়েছে)
***আরও ছবি পাওয়া যাবে এখানে : http://picasaweb.google.co.uk/moonmathpi469
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১:০৪
১৩টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×