somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো শৈশব

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টুকরো শৈশবঃ
১। টিভি জিনিসটার সাথে যখন পরিচয় ঘটে তখনো নিম্ন –মধ্যবিত্ত আমাদের ঘরে টিভি আসে নাই । টেলিভিশন ( টিভি ) দেখার জায়গা ছিল আমার তৎকালীন জানে –জিগার বন্ধু ( সামনের বাসায় তিনতলায় থাকতো ) এর বাসা আর আমাদের খালাতো- মামা এর বাসা। ( মামাদের বাসায় ই প্রথম ভি সি পি দেখি এবং ওই সময় ওখানে অনেক রাতে হিন্দি সিনেমা দেখতে দেখতে কার্পেটেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম । কষ্ট একেবারে বিফলে যায় নাই - কোন টিচার এবং কারো সাহায্য ছাড়াই কেমনে কেমনে যেন হিন্দি শিখা ফালাইসি ) ।
কিছু পরে আমাদের বাসায় টি ভি ও ফ্রিজ দুইটা ই আসে একসাথে (ডাবল ধামাকা )! এ যেন একদিনে দুই ঈদ , এক আকাশে দুই চাঁদ । এর নেপথ্য ছিলেন আমার বড় ভাই । প্রতি মাসেই নিয়ম করে দেশ থেকে আব্বার কাছে চিঠি পাঠানো হতো । আম্মার চিঠির সাথে আমাদের তিন পিচ্চির নানা আবদারে ভরা তিনটা বাচ্চা চিঠিও যেত একই খামে ।( চিঠি লিখতে ভালো লাগতো না বলে আমার চিঠি খুব বেশি বড় হতো না । তবে তার মধ্যেই চাওয়া-পাওয়ার দড়ি-টানাটানি ঠিক ই করে নিতাম )। সেরকম ই এক বাচ্চা চিঠিতে আমার বড় ভাই আচ্ছা এক আব্দার করে বসেন - আব্বা আমার জন্য “টিবি” আর “ফিরি” পাঠাইবেন । (!! আব্বা ঠিক ই বুঝেছেন যে তার বড় পোলা সুদূর আরব আমিরাত থেকে বসার পিড়ি [আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় “পিড়ি” কে ফিরি বলে] আনার আব্দার করে নাই ! )
তো একদিন সত্যি ই “ফিরি” আর “টিবি” এসে হাজির !
যেহেতু বড় ভাইয়ের আব্দার জয়যুক্ত হয়েছে তাই এই দুই বস্তু নিয়া তার মাতব্বারি ও সয়ে নিতে হল ।

প্রথম প্রথম তো ফ্রিজ ধরাই যেত না !এখন আশ্চর্য লাগে, কিতু সত্যি সত্যি তখন ফ্রিজে তালা লাগিয়ে রাখা হত ! পড়ে আস্তে আস্তে ফ্রিজ তালাবিহিন ই থাকতে লাগলো আর নিয়ম কানুন ও শিথিল হল । তবু - দরজা এমনে খুলবি না , এত জোরে লাগাবি না , এতক্ষণ ফ্রিজ খুইলা রাখবি না , বিদ্যুৎ গেলে গা ফ্রিজ খুলবি না ( তাহলে নাকি গ্যাস চইলা যাইব ! ) এই সব উপদেশ প্রায় ই শুনতে হইত । ফ্রিজ পরিস্কার করার পুরা কাজ এর ভার ছিল একমাত্র মা ও বড় ভাই এর ( পাছে আমরা কখন কি নষ্ট করি ! ) ।
তারপরও ফাকে ফাকে নানা এক্সপেরিমেন্ট এর চেষ্টা অব্যহত রাখতাম। ফ্রিজ এর টেম্পারেচার রেগুলাটর ঘুরানো ছিল এর মধ্যে অন্যতম , আর চান্স বুইঝা বিদ্যুৎ না থাকা অবস্থাতেও ফ্রিজ খুইলা পানি আর বরফ বাইর করা তো ছিল রুটিন কাজ । তবে সবচেয়ে ভালো লাগতো – দুপুর বেলা সবাই শুয়ে থাকলে আস্তে উঠে ফ্রিজে দরজার রাখা কন্ডেন্সড মিল্ক এর ডিব্বা হাল্কা করতে ।
টি ভি আসার পর খেলাধুলার পর প্রধান বিনোদনের উৎস হয়ে যায় । এটা ছোটবেলায় পড়ালেখার বারোটা বাজানোর জন্য দায়ি । কারন এর কিছু দিন পর টি ভি এর অনুষঙ্গ ভি সি পি ও এসে যায় বাসায় ; ফলে প্রায় রাতেই( বিশেষ করে বৃহস্পতিবার ) মামা, মা আর আমরা ভাই বোনেরা মিলে চান্দা তুলে ছবি দেখা শুরু হল । পাড়ার মোড়ে তখন একটাই ভিডিও সেন্টার । একদিন ছবি আনতে গিয়ে দেখি – দোকানি যে ক্যসেট ই দেখায় , তাই কমন পরতাসে ( অর্থাৎ আগেই দেখেছি ! )। শেষে আগে দেখা একটা সিনেমা ই আবার নিয়ে এলাম ! ( ওই সেন্টার এর সব ক্যসেট আমরা ভাড়া করে দেখে ফেলছি !) বাবা কয়েকটা মাস্টার প্রিন্ট ( সেটা কি জানি না ) হিন্দি ও বাংলা মুভির ক্যসেট এনেছিল – ওগুলো অনুরোধের আসরে এর জন্য ওর জন্য কতবার যে চলল তার কোন হিসেব নেই ।
সবচেয়ে বেশি হিট করেছিল মনে হয় – “বেদের মেয়ে জোছনা” । সামনের বাসার কাজের মহিলা , সামনের বস্তিবাসি থেকে শুরু করে যে কেউ ভাড়া করে ক্যসেট নিয়ে চলে আসতো । আমি চালিয়ে দিয়ে সামনের মাঠে খেলতে চলে যেতাম । আর আমাদের টি ভি রুম ভরে ও সামনের বারান্দা আর রাস্তায় দর্শক উপচে পরত ।
পরে আস্তে আস্তে অনেকের বাসায় ই টি ভি আসায় এই ভীড় কমে যায় । তবে শুক্রবার এ জানালা দিয়ে রিক্সাওয়ালারা উকি মেরে বাংলা ছবি দেখে নিতো ।
আরও পরে মামা বিদেশ থেকে গ্রামের জন্য টি ভি আনেন । পাশাপাশি দুই টি ভি ছেড়ে দিয়ে তুলনা করতাম - ছবিতে কোন বৈষম্য দেখা যায় কিনা !
টি ভি এর জন্য ও অনেক নিয়ম কানুন হয় । প্রথমত টি ভি এর জন্য শক্ত কাঠের এক বক্স তৈরি করা হয় যার ডালা টেনে তালা ( ড্রয়ারে যেমন তালা থাকে তেমন ) মেরে রাখা যেত । তালার চাবি থাকতো আম্মার কাছে । আমাদের তালা খোলা ও ডালা তোলার অধিকার ছিল সীমিত । টি ভি চালু করা , ভলিউম কমান , চ্যানেল বদলানর জন্য ঢাউস সাউজের রিমোট ব্যবহার করতে হতো । টি ভি এর গায়ে যে বাটন গুলা আছে ওগুলোতে হাত দেয়া নিষেধ ছিল ( ওগুলো টিপলে নাকি টি ভি নষ্ট হয়ে যাবে ! )। টি ভি রিমোট দিয়ে বন্ধ না করে ভুলে মেইন সুইচ অফ করা বা প্লাগ টেনে খুলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা মোটামুটি ট্যাবু এর পর্যায়ে ছিল । আর রিমোট হাত থেকে ফেলে দিলে সবাই এক যোগে কোরাসে হা হা করে উঠত । আর কখন অতি ইঞ্জিনিয়ারিং করে যদি অটো সার্চ দিয়া চ্যানেল উল্টা পাল্টা কইরা দিতাম তাইলে শনি অতি নিকটে আইসা পড়তো ।
টি ভি নিয়ে নানা ফ্যান্টাসি ও ছিল সরল মনে ( সব এই মুহূর্তে মনে নাই )- এই মুহূর্তে যেটা মনে পড়ছে – “manimal” সিরিজ ( নায়ক বিভিন্ন প্রাণীতে রুপান্তরিত হতে পারে ) দেখে সেই নায়ক এর মতো হতে চেয়েছিলাম ।
আর আমার বোন মনে করত – আমরা যেমন টি ভি এর ভিতর এর লোকদের দেখি , তেমনি ওরা ও আমাদের দেখে । তাই সে সাজু গুজু করে টি ভি দেখতে বসত !

টি ভি এর বাক্সটা নিয়ে ও একটা কাহিনী আছে । এটা যখন কিছুটা পুরনো হয়ে যায় তখন এটাকে শীতের কাথা বালিশ রাখার জন্য ব্যবহার করা হতো । তো একদিন চোর- পলান্তিস খেলতে গিয়ে আমি ওই বাক্সের মধ্য ঢুঁকে কাঁথা মুড়ি দিয়ে লুকিয়ে থাকলাম । এদিকে আমার বোন- ভাইরা খুঁজেই পেলনা । আর আমি শীতের আমেজে এমন ঘুম দিলাম যে উঠতে সন্ধ্যা ! এদিকে আমি হারিয়ে গেছি না ছেলে- ধরা ধরে নিয়ে গেছে এই গবেষণা চলতে চলতে থানা – পুলিশ হয় হয় করছে
২। ছোটবেলায় মনে হয় কিছুটা হাবা-হাসমত ই ছিলাম ( এখন যে আইনস্টাইন হইয়া গেসি তাও না) । অনেক কিসুই বুঝতাম না , নিজের মনের মতো একটা কিসু ভাইবা নিতাম । যেমন বাসায় টি ভি আনার পর খবরে প্রায় ই শুনতাম - অমুকে আর তমুকে' মদ্ִ বিনিময় করেছেন । শুইনা 'টাস্কিত্ִ হইয়া যাইতাম ( তখন তো আর টাস্কিত শব্দটা ছিলো না , তাই তখন মনে হয় ' ভোম্বল ' হইতাম ) । কয় কি মদ ! আমরা তো ওইটা হারাম জানি ! আর সেইটা কিনা প্রকাশ্যে বিনিময় করসে , আবার খবরেও দেখায় ! তাইলে কি বড় মানুষেরা মদ বিনিময় করলে কোন দোষ নাই। লজ্জায় ভয়ে কোনদিন কাউরে জিগাইতেও পারি নাই। বহুত বছর মনে খুঁত খুঁত করার পর অবশেষ বুঝসি - ওইটা 'মদ্ִ না , ' মত্ִ
৩। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ( সুন্নাতে খৎনার অনুষ্ঠান ও হতে পারে ঠিক খেয়াল নাই) প্রথম একটি অদ্ভুত পানীয় দেখলাম যা আগে দেখি নাই । সবাই দেখলাম জগ থেকে ঢাইলা নিয়া খাইতাসে । নিজে নিজেই কেন জানি মনে কইরা নিলাম - এইটা ই সেই বহুল কান্খিত ' মদ্ִ ! আজ যখন পাইসি প্রাণ ভইরা খামু। কিন্তু ' মদ্ִ এর জগটি একটু দুরে হওয়ায় নাগাল পাচ্ছলাম না । এদিকে দেখি বড়রা ঢেলে ঢেলে প্রায় শেষ করে ফেলতেসে । আমি সাধের 'মদ্ִ শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে আর তর সইতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠলা- ' আমি মদ খাবো , আমাকে ও দাও ' ।
এখনো বিয়ে বাড়িতে গেলে 'মদ্ִ আমার প্রিয় পানীয় তবে সেটার নাম এখন ' বোরহানী'।
৪। ক্লাসে একদিন দুষ্টামি করতেসিলাম আর মিচকি মিচকি হাসতাসিলাম । ম্যাডাম এর চোখা পড়ায় ম্যডাম কয় - হোয়াই আর ইউ লাফিং । বাকি শব্দগুলা কমন পরলেও লাফিং শব্দটা তখনো জানতাম না । মনে মনে কইলাম - লে বাব্বা , ম্যডাম কয় কি , আমি তো জায়গাতেই বইয়া আছি আর ম্যডাম কয় - লাফাই কেন?!।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:২৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×