somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিনদেশী মেঘদল আর এক কিশোর মন

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় সারাটা দিন ঘরে বসে বসে বোর হচ্ছি। আর মন খারাপ করে আছি অবুঝ এক নবকিশোরের মতো। উইকএন্ড বলে আজ দিনটা অবশ্য একটু বেলা করেই শুরু হয়েছে। শীতের সকালে ঘুম ভাংগার পরও লেপ মুড়ি দিয়ে বিছানায় কুঁকড়ে পড়েছিলাম অনেকক্ষন। সিডি প্লেয়ারে রবিশংকর বাবুও সেতার বাজিয়ে বাজিয়ে প্রায় চেতনাহীন করে ফেলে রাখলেন আরো কিছুক্ষন। শেষে বিছানা ছেড়ে যখন উঠে বসি ততক্ষনে ঘড়িও চঞ্চল হয়ে উঠেছ- সেতারের বোলের মতো।

ছেলেটাকে নিয়ে ওর মা বের হয়েছে একটু ঘুরে বেড়াতে। কিছু টুকটাক শপিং আর ফেরার পথে লোকাল লাইব্রেরী থেকে দু'একটা বই তুলে নিয়ে আসতে যা সময় লাগে। কিন্তু এতেই সকাল গড়িয়ে এখন প্রায় দুপুর-বিকেল। আপাতত বাসায় আমি তাই একা।

হাতে একমগ কালো কফি আর আধখানা টোস্ট নিয়ে এসে বসলাম সিটিং রুমে । জানালা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি বাইরে বেশ বাতাস বইছে। তবে রোদের দেখা মধ্য জানুয়ারীর এই মেঘ-দুপুরে না করাই ভালো। তারপরও দেখি একজোড়া বুড়ো-বুড়ি হেঁটে বেড়াচ্ছে পরমানন্দে। হাতে হাত রেখে, নিশ্চিন্তে। বাইসাইকেল চেপে হুল্লোড় করতে করতে একপাল পিচ্চি-কাচ্চাও মজা লুটছে আজ স্কুল ছুটির দিনটার।পাশের বাড়ীর কুকুরটাও মনে হয় বাদ যায়নি। নাহলে অকারনেই চেঁচিয়ে মরছে কেন আজ কে জানে।

কফিটা শেষ করে আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। উইকএন্ডে ঘরের অনেক কাজ জমে থাকে, কিন্তু সেগুলো করতে একদম মন টানছে না আজ। গাড়ীটায় স্ক্রীনওয়াশ রিফিল করতে হবে, বৃষ্টি হলেই উপরের রুমে স্কাইলাইটটা দিয়ে পানি পড়ছে বেশ কিছুদিন- কি হলো দেখতে হবে, ওয়াশিং মেশিনটাও বেগড়বাই করছে ইদানিং। কত কি! কিন্তু আলসেমী চেপে বসে আছে সকাল থেকে । কিছু্ই করতে ইচ্ছে করছে না ।

টিভিটা খুলে বসলাম কিছুক্ষন। খবরের কি ঘোরপ্যাঁচ আজকাল! আর মিথ্যের কি বেসাতি। চ্যানেল ঘুরিয়েও মন মতো কিছু পেলাম না দেখার। এত্তো কার্টুন চ্যানেল! ছেলেটা আজকাল কার্টুন দেখছে বড় বেশী। এতো বেশী ভালো না। লেটারবক্সে চিঠি ফেলে কলিংবেলে টুংটাং করে চলে গেলো পোস্টম্যান। গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি বা টেলিফোন বিলই হবে।

আনমনে দোতলার শোবার ঘরেই চলে এলাম আবার। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ে আকাশ জোড়া মেঘের দল। এখানে মেঘগুলো সব বড্ড বিশ্রী। নিস্তেজ আধোকালো রং ধরে আকাশের একপ্রান্ত জুড়ে থমকে বসে থাকে সারাদিন। বড় একঘেয়ে, বড় আবেদনহীন। প্রায়ই এরকম শীতের দিনগুলোতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার কেবলি মনে হয় 'এ কি দেশে এসে পড়লাম আমি' ! কোথায় সেই আমার দেশের মতো দম আটকানো বৈশাখী কালো মেঘের সারি, মাতাল ঝড়ো বাতাস আর মেঘ ফুঁড়ে বের হয়ে আসা নরম রোদের ফালি। গুমোট বিকেলের বাতাসে হিম হিম অনুরণন তুলে ঝেপে আসা কালবোশেখীর অস্থির প্রতীক্ষার সময়টুকুর তুলনাই বা এদেশে কোথায় পাব। এখানে বৈশাখে বৃষ্টিরা কাঁদে না। কাঁচা আমের মুকুল কিংবা কচি বাঁশপাতার সোঁদা গন্ধ বুকে বয়ে দুপুরের ঘুম ভাঙ্গায় না। এরা সবাই ঘুমঘোরে ক্ষণ গোণে নিস্তব্ধ কোনো পড়ন্ত বেলার।

মনে পড়ে ছেলেবেলা প্রতিবছর নানাবাড়ী যেতাম আম-কাঁঠালের গরম এলেই। কি যে আনন্দ আর কি যে উচ্ছলতা ছিলো সেই দিনগুলোর। হঠাৎ কোনোদিন বিকেলবেলা আকাশ অন্ধকার করে ঝড় উঠতো। বাতাসের ঘূর্ণীতে ঝরা পাতার দল ছুটে চলতো উঠোনের এদিক-ওদিক। নানীর বকুনি আর মায়ের চোখ এড়িয়ে ছেলেমেয়েরা ছুটে যেতাম পুকুরপাড়ে বড় আম গাছটার তলায়। কাঁটাঝাড় আর ভাঙ্গা শিমুলের ডালপালা মাড়িয়ে দু'একটা আম কুড়োবার আগেই আকাশের সানকি ভেঙ্গে নেমে আসতো টুপটাপ বৃষ্টি। অভিমানী শিশুর দৃষ্টি নিয়ে আকাশে তাকিয়ে তখন শুধু বলতাম 'যা বৃষ্টি যা'।

সব দেখেশুনে স্মৃতিকাতর আমি ঝিম মেরে থাকি। ভিনদেশী এই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি অপলক। মেঘে ঢাকা তার প্রতিটা কোণ আমাকে বৃথাই প্রলুব্ধ করে ঘর ছাড়ার। তীব্র বাতাসে গাছপালা সব তির তির শব্দ করে যায়। ঝরে পড়া শুকনো ম্যাপললিফের পাতারা উড়ে এসে হাতে পায়ে কেমন যেনো এক মিনতি জানায়। তবু আমার মন কেন যে আনন্দে ভরে উঠে না! কেন শুধু মনে হয়- এসব কিছুই আমার নয়। এই ভূমি, এই আকাশ আর মেঘদল সব যেন শুধু এক মায়ার জগৎ। কাছে টানে, জড়িয়ে ধরে। তবু ভালোবাসা জাগায় না। করুণ, বিষন্ন সব মেঘেরা বাস করে এদেশে। বিষন্ন কিশোরেরাও।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×