somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃ ত্যু রে খা

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প থ না ট ক
মৃ ত্যু রে খা

অসংখ্য খবর চারপাশে। সংবাদপত্র ঠাসা খবরে খবরে -
কিন্তু কোনো খবরই সুখবর নয়। কোনো ছবিই সুখের ছবি নয়।
প্রতিদিন্ যেনো একই খবর একই ছবি, শুধু স্থানকাল পাল্টে ফিরে আসে পত্রিকার পাতায়।
সব আবেগ তখন ভোঁতা হয়ে শুধু একই আবেগের চূড়ান্তে ধাবমান মানুষ। কি হবে?...

চ রি ত্র লি পি..........................
১. মানিক-পত্রিকা বিক্রেতা- বয়স - ১৬/১৯.....
২. পাগলা-ব্যর্থ এবং ভারসাম্যহীন মানুষ-বয়স- ৩৫/৪০.....
৩. পাঠক-১-ছাল নাই কুত্তার বাঘরাজ নাম ধরনের মানুষ..বয়স- ২৫/৩০...
৪. পাঠক-২-বেকার জীবন গেলো বয়ে-বয়স- ২৫/৩০
৫. পাঠক-৩-রাজনৈতিক আচরণসমৃদ্ধ- বয়স-২৫/৩০
৬. লোকটি-দেশের বর্তমান সামগ্রিক পরিস্থিতি-৪০/৪৫
৭. ভিক্ষুক-ভন্ড জ্ঞানপাপী -৪০/৪৫
৮. কোরাস-জনগণ

পত্রিকার হকার গরম খবর শুনিয়ে যায়।
কোরাস এসে পত্রিকা নিয়ে যার যার মত বসে পড়ে।
পাঠক -১ : প্রযুক্তির আরো একধাপ এগিয়ে। আইটি শেখার সুবর্ণ সুযোগ। একটা চান্স নিমু নাকি?
পাঠক -২: চিকন স্বাস্থ্য মোটা আর মোটা স্বাস্থ্য চিকন করিয়া থাকি। চলিয়া আসুন, ১৪ বাই এতো...লম্বা হউন বা বেঁটে হউন। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে আপনাকে জিরাফের মতন লম্বা অথবা বানরের মতন বেঁটে করিয়া দেওয়া হইবে। গ্যারান্টি একশত ভাগ। পাখী ভাইরে জিগাস করতে হইবো কতটুক হইলে কতটুক যৌতুক মিলবো। বিয়ার বাজার এখন বড়ই চাঙ্গা।
পাঠক -৩ : পাইছি এইবার পাইছি। শুধু আপনার কি চাই- এইটুকু বলিলেই যে জ্যোতিষী গড় গড় করিয়া বলিয়া দিতে পারিবেন আপনার গ্রহ-নক্ষত্র, ভালো-মন্দ, ডান-বাম, উপর-নীচ- তিনি হলেন এই সময়ের শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষী জ্যোতিষরাজ-
সবাই : জ্যোতিষরাজ জ্যোতিষরাজ।
এসময় বিরক্ত পত্রিকা হকার ছুটে আসে।
হকার : এ ভাই, আপনেরা পাইছেনডা কি? প্রত্যেকদিন আইসা বিনা পয়সায় খবর পইড়া কাগজটা নষ্ট কইরা রাইখা যান?
পাঠক -১: এ ব্যাডা পত্রিকা কিননের টেকা কি তর বাবায় দিয়া যাইবো?
হকার : টেকা নাই তো পত্রিকা পড়েন ক্যান?
পাঠক - ২ : রাগ করিস না বাপ, দুই টাকার বাদাম কিনা দিমুনে।
পাঠক - ৩ : যতগুলি পত্রিকা এই পর্যন্ত পড়ছি সবগুলির টাকা তরে একবারে দিয়া দিমু। খালি চাকরিডা পাইয়া লই।
পত্রিকা বিক্রেতা গজ গজ করতে করতে চলে যায়
হকার: হ, আর পাইছেন চাকরি, পাচ বছর ধইরাইতো খুজতাছেন দেখতাছি।
আবার তিনজন পত্রিকা পড়ায় মনোযোগী হয়।
পাঠক -১: এক শিশুর তিন মাথা। অমুক জেলার অমক গ্রামে ফেচু মিয়ার স্ত্রী তিন মাথাওয়ালা সন্তান প্রসব করেছে। এই আজব ঘটনা দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ফেচু মিয়ার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে।
মন্তব্যকারী: আগের জন্মে ফেচু মিয়া মনে হয় ডাইনোসর আছিলো। যাউক টিকেট বেইচা ইনকাম হইবো ভালো।
কোরাস-২ : প্রেম করার অপরাধে জরিনা খাতুনকে ফতোয়ার মাধ্যমে দুইশত বেত্রাঘাত করলেন অমুক গ্রামের ইমাম অমুক অমুক।
মন্তব্যকারী : হায়রে প্রেম হায়রে ভালোবাসা।
পাঠক -৩ : ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে যৌনাচার, যৌনবিকৃতি।
মন্তব্যকারী : এইটা হইলো মুক্ত বিশ্বের মুক্ত হাওয়া।
পাঠক -১ঃ মহাসড়কে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে সকল যাত্রী নিহত। সহস্রাধিক যাত্রীসহ মেঘনায় লঞ্চ ডুবি।
মন্তব্যকারী : এই দুনিয়ার পথে ঘাটে কে কার হিসাব রাখে।
পাঠক -২ : আমেরিকান ব্যবসায়ীর বেলুনে বিশ্বভ্রমণের প্রস্তুতি।
মন্তব্যকারী : দিনকাল যা দেখতাছি, পাতাল ভ্রমণের প্রস্তুতিটা সাইরা ফালামু না কি?
পাঠক -৩ : একখান ভালো কাম হইছে। পরিবেশ রক্ষায় পুরনো যানবাহন নিষিদ্ধ ঘোষণা।
মন্তব্যকারী : তবে সার, আসল খবর হইলো গাড়ী প্রতি এতো টাকা দিলি সব ঠিক।
পাঠক-১ : বুড়িগঙ্গা দখল এখনও চলছে।
মন্তব্যকারী : কথাটা তো আর খামাখা হয় নাই। জোর যার মুল্লুক তার।
পাঠক -২ : হা হা হা টিভি নাটকের করুণ হাল্
মন্তব্যকারী : অভদ্রা বর্ষাকাল ।
পাঠক -৩ : বিশিষ্ট ব্যবসায় অমুক চান ব্যাংকের মাধ্যমে তিনশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও।
মন্তব্যকারী : বাপের ব্যাটা একখান ।
পাঠক -১ : মাত্র দুইটি টাকার জন্য খুন হলো একজন মহব্বত মিয়া।
মন্তব্যকারী : জানের ছদগা।
পাঠক -২ : পরীক্ষায় পাস না করায় আত্মহত্যা ।
মন্তব্যকারী : বোকা বোকা। আসল জায়গা চিনলো না।
পাঠক -৩ : দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিম্নমুখী।
মন্তব্যকারী : উর্দ্ধমুখী আছিলো কবে? সব ব্যাটা চোর।
পাঠক -১ : এই ব্যাটা তুই আমারে কি কইলি ?
পাঠক -৩ : কই, কিছু কই নাই তো!
পাঠক -২ : আরে ব্যাডা আমি নিজের কানে শুনছি।
পাঠক -৩ : এই তো আমাগো দোষ । কইমু এক শুনুম আর এক।
পাঠক -১ : চুপ ব্যাটা, ধানাই ফানাই করস ? রাখ তরে বুঝাইতাছি। জানস আমি কে ?
পাঠক -২ : জানস?
পাঠক -৩ : কোনো মন্ত্রীর আত্মীয় কিংবা কোনো এমপির চামচা কিংবা কোনো আমলার ভাতিজা। কোনো লাভ নাই।
কোরাস : কোনো লাভ নাই।
পাঠক -৩ : কোনো লোকসানও নাই । ওই রকম দুই চাইরখান এহন সবারই আছে। আমি কে, এইটা শুনলে তো তুমি ফিট হইয়া পইড়া যাইবা। হা - হা - হা
পাঠক -১ : কি কইলি হারামজাদা ? আয় আয় ...
পাঠক-২ : আয় আয়
কোরাস : আয় আয় ....
পাঠক -৩ : যাহ্ যাহ্, ভ্যাজাইল্যা যত্তোসব ।
পাঠক -১ : তুই ভ্যাজাইল্যা।
পাঠক -২ : তুই ভ্যাজাইল্যা । ভাব নিয়া চলবা আর সারাদিন খালি এর কি হইলো, অর কি হইলো। অরে খোঁচা মারো এর গুতা মারো । আকামের ঢেঁকি ।
পাঠক -১ : এই ব্যাডা, তুই নিজে কি ?
পাঠক -২ : হে-ই, খুুব খেয়াল কইরা, নিজেরটা চিন্তা করো আগে।
পাঠক -৩ : খুব চিন্তা করছি, শান্তি পাইলাম না। একটু নিরিবিলি পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাইতে-
এ সময় বাঁশি বাজিয়ে এক পাগল ঢোকে ।
পাগলা : হুঁশিয়ার-খুব খেয়াল কইরা। এইখানে বোমা মারল কে ? বোমা মারল কে ?
কোরাস : বো-মা !
সবাই ভয় পেয়ে খুঁজতে থাকে।
পাগলা : বোমা ঠিক না, বোমার মতন। বোমার মতন আওয়াজটা করল কে ? এ্যাই বোমার মতন আওয়াজটা করল কে ?
পাঠক -১ : তোমার বাপে ।
পাঠক -২ : তোমার খালু ।
পাঠক -৩ : তোমার মামু ।
পাগলা : হায় হায় রে, কি হইলো-কিছুই চিনলাম না। এত আত্মীয়স্বজন থাকতে আমার না খাইয়া থাকতে হয়। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়।
পাঠক -১ : এই ব্যাটা, তুই কে রে ? নতুন আমদানী মনে হয়?
পাঠক -২ : তুই কে ?
পাঠক -৩ : কে তুই ?
কোরাস : কে তুই ?
পাগলা : আমি ? আমি এই এলাকার দারোয়ান, না চৌকিদার, না-না শিরিংখলা রক্ষা...
পাঠক -১ : বুঝছি, ফো ফট্টি ।
পাঠক -২ :তার ছিড়া ।
পাঠক -৩: পাগল । সাপলুডু খেলছে বিধাতার সঙ্গে---
পাগলা : ও-ই মিয়ারা সাবধান, সাবধান । আমারে পাগল কইবেন না। আই এ্যাম থাট্টি সিক্স ্ইয়ার ওল্ড ইন মাল্টি সার্ভিসম্যান- বলতে চাও কি করছি-আই ক্যান সে, যে কোথায় আমি এর মইদ্যে সার্ভিস করি নাই। কিন্তু জীবনে কিছুই করতে পারি নাই। এই যে সবার বুকে থাপ্পড় দিয়া কইতে পারি নো বডি চার্জ মী যে, কি করি নাই। কেউ আমারে পাগল কইতে সাহস পায় নাই । কথা একটু বেশি কই । আর কোনো কাম হয় না বইল্যা ধান্দা কইরা খাই । তাই বইলা-
কোরাস : ধান্দা ?
পাগলা : সোজা জিনিস । খালি রগটা চিন্যা, একটা কথা খালি জায়গা মতন লাইগা গেলে ব্যস ।
পাঠক -১: ওরে আমার তালের পাগল রে ।
পাঠক -২: চান্স মোহাম্মদ ।
পাঠক : ফোর টুয়েন্টি ।
পাগলা : এই কথাবার্তা সাবধানে কইয়েন কইলাম । বেশি না কলমের একটা খোঁচা দিমু, আপনেরা নাই হইয়া যাইবেন। আমার একটা নখের সমানও তো আপনেরা কেউ না। কন তো দেখি, কয় মগ পানি দিলে এক কেজি দুধ হইবো ? কন তো দেখি রাস্তা বানানোর টাকা কেমনে হজম করতে হয় ?
কেউ কোনো উত্তর না দিয়ে পড়ায় মনোযোগী হয় ।
পাঠক -১: দেখছো নাকি কারবার! আবারো এসিড নিক্ষেপের ঘটনা বাড়ছে । খবরে প্রকাশ...
পাগলা: অরা ভুল লেখছে ।
পাঠক -২: কি !
পাঠক -৩: তুমি বলতে চাও এসিড এখন আর নিক্ষেপ হয় না ?
পাগলা : হায়রে হায় কলিকালের লোকজন কথাও বোঝে না।
সবাই:তাইলে ভুলটা কি ?
পাগলা:এসিড নিক্ষিপের ঘটনা কমছে কবে ? বাড়তে তো আছেই ।
আবার সবাই পড়ায় মন দেয় ।
পাঠক -২: রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে । কযেকটি মোড়ে গণছিনতাই ।
পাগলা: বা বা বা- বাঘের বাচ্চা সব। কামটা মন্দ না। অল্প খাটনি, পুরা লাভ । তার উপর সবার মধ্যে একতা বাড়ছে। আইজকাল সবই গণহারে ঘটে, গণ ছিনতাই, গণ ডাকাতি, গণবিবাহ, পাবলিক জাগছে রে জাগছে হা হা হা...বাপরে বাপ বাপরে বাপ, ওই মিয়া অমন তালগাছের মতন দুলতাছেন ক্যান ? ঘটনা কি? গণধর্ষণের শিকার হইছেন? এই দিকে-এই দিকে আসেন। ফিফটি ফোর -সিক্সটি ফোর-এইখানে আসলে পাইবেন সব খবর। আসেন আসেন।
একজন ক্লান্ত মানুষ হাঁপাতে হাঁপাতে ঢোকে।
লোকটা: ভাই কি কইলেন ? এইখানে সব খবর মিলে ? এইটা কোন থানা?
পাগলা:আপনে একটা কানা। দেহেন না এইডা পাবলিক প্লেস?
লোকটা: আর কত দেখুৃম কন। দেখতে দেখতে এমন অবস্থা যে এখন নিজেরেই নিজে বিশ্বাস করতে ভয় হয়।
পাগলা: তাইলে অন্যেরে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।
লোকচা : ধুর ধুুর ধুর এখন জমানা পাল্টাইয়া গেছে, এখন বিশ্বাসে সকলি নিঃস্ব তর্কে রাজ্য লাভ মানে গায়ের জোরে। বিশ্বাস কইরা আসতে আসতে আমি সব হারাইলাম। প্রথমে বিশ্বাস করলাম সমাজের গণ্যমান্য লোকেগো। তারা আমার সম্পদ কাইরা নিলো। তারপর বিশ্বাস করলাম দেশের নেতাগো, তারা আমার শান্তি কাইরা নিল।
কোরাস :শান্তি কাইড়া নিলো?
লোকটা :এখন আমি খুঁইজা বেড়াই। জনে জনে দুয়ারে দুয়ারে ঘরে ঘরে। নাই । নাইরে ।
পাগলা : হা হা হা .. ওরে নাই নাই নাই রে এ ফুলে আর মধু নাই ।
যদি মধু থাকিত ভ্রমর আসিত বসিত ফুলেরও গায়
এ ফুলে আর মধু নাই।।
ও ফুল ফুটিল যখনি জুটিল তখনি দলে দলে ভোমরায় রে
ওরে মধু খেয়ে তারা হয়ে দিশেহারা
পলাইলো কে কোথায় রে।।
লোকটি চিন্তিত হয়ে বসে থাকে । পাগলাটা বিড় বিড় করে ঘুরতে থাকে । পাঠকরা পত্রিকায় মনোযোগী হয়। লোকটা হঠাৎ শব্দ তুলে হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করে। পাগরলাটা সবার কাছে গিয়ে -
পাগলা: কান্দে ক্যান ? কান্দে ক্যান? আমি জিগাই কান্দে ক্যান?
সবাই : কান্দেন ক্যান ?
লোকটা:নাই...
সবাই: কে নাই ?
লোকটা: আমার লক্ষী নাই ।
সবাই: কই গ্যাছে ?
লোকটা: আমার মানিক নাই ।
সবাই: কই গ্যাছে ?
লোকটা: জানি না । আমার লক্ষী পড়তে গেছিলো ইস্কুলে । আমার মানিক খেলতে গেছিলো মাঠে । আর ফিরে নাই। আর ফিরা আসে নাই। দিন আসে দিন যায়। রাইত আসে রাইত যায়। লক্ষী-মানিকের মা কথা কইতে পারে নাই । খুঁজতে খুঁজতে আমি দিশাহারা।
পাঠক -১:থানায় গেছিলেন ?
পাঠক -২: হাসপাতালে ?
পাঠক -৩:ষ্টেশনে, টার্মিনালে ?
লোকটা: মানুষের সাধ্য যতোটুকু, সেই সাধ্যের মধ্যে আমার সাধ্য যতটুকু-আমি খুঁজি। আমার অন্তরের টান-লক্ষী, মানিক ।
পাগলা: লক্ষী ! মানিক!
চিন্তিত পাঠকবৃন্দ । হকার মানিক দৌড়ে ঢোকে ।
মানিক: ডাকে কে ? কে ডাকে ?
পাগলা: আমি ! মনা পাগলা।
মানিক: ক্যান ? আমার নামে কি মধু মাখা আছে নাকি ?
পাগলা: রসমালাইয়ের রস লাগানো আছে। ডাকলেই মনে হয়....
মানিক: যত্তোসব পাগল ছাগল ।
পাগলা: এই ব্যাডা , আমারে পাগল কইবি না। আই অ্যাম....
মানিক : ঘোড়ার আন্ডা । ভাগো এইহান থিকা । রাস্তার ধারে এইসব চলবো না । এই মিয়ারা বন্ধ করেন। দ্যান, আমার পত্রিকা দ্যান।
পাঠক -১: আমার পরাণের ভাই, তুই এমন করিস না। চাকরির পাতাটা একটু দেইখা লই ।
পাঠক -২: তুইও স্বৈরাচারের মতন করিস না ।
পাঠক -৩: পরথম পাতাটাই তো পড়লাম ।
লোকটি : বাইজানেরা, দেহেন তো আমার লক্ষী-মানিকের কোনো খবর আছে নাকি ?
মানিক: আমারে খুজতাছেন ক্যান ?
পাগলা: তরে পেরসিডেন্ট বানাইবো ।
লোকটি: তোমার নামও বুঝি মানিক ? তোমার বুঝি কেউ নাই ?
মানিক: এইডা কেমুন কথা কন ? সবই তো দেখি আমার আপনার জন । তয় যারা জন্ম দিছিলো তারা কেউ বাইচা নাই, আর থাকলেও হেগো কোনো সংবাদ নাই ।
পাগলা: আহা হা, কি সুন্দর কথা কইলি। আয় আয় আমার কোলে আয়।
মানিক: ওই মিয়া, পাগলামীর একটা সীমা আছে।
পাগলা:হায় রে জমানা । কারে কি কইবেন । ভালো কথা কইলেও মনে করে পাগল। যা বাপ নিজের কাম কর গা।
মানিক:আমার কাম শেষ
পাগলা:তাইলে তুইও একটা কাগজ নিয়া বইসা পড়।
মানিক: হ্যাহ্ আমার জানি আর কাম নাই যত্তোসব।
মানিক বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে যায়।
লোকটি: ভাইজানেরা, কোনো সংবাদ পাইলেন ? আমার কোনো সংবাদ পাইলেন ?
পাঠক -১: পাইলাম মানে, সরেস খবর ।
পাঠক -২: বিনোদনে ভরপুর ।
পাঠক -৩:জবর খবর-রঙিন পাতা রঙিন বিনোদন।
লোকটি : কি ?
পাঠক -১: সালমান খান নতুন গাড়ি কিনলেন ।
পাঠক -২: মাহি করিমের নতুন দাঁত গজিয়েছে ।
পাঠক -৩: শাবনুরের ব্রেসিয়ারের হুকে জং ধরেছে ।
পাঠক -১: তৌকির আহম্মদ জুতায় নতুন রং লাগিয়েছেন ।
পাঠক -২: জাহিদ হাসান এই প্রথম বিড়ি খেলেন ।
পাঠক -৩: খলনায়ক ডিপজল গালাগালির ডিকশনারি তৈরিতে ব্যস্ত । নতুন ছবি ঘাড় ত্যাড়া মাথা ন্যাড়া । ‘ফায়ার’ বাংলা ছবির মাইলস্টোন।
পাগলা শরীর চুলকাতে থাকে আর শব্দ করতে থাকে।
লোকটি: কি হইলো ভাই ?
পাগলা:এইসব খবর পত্রিকায় ছাপে ? খবর শুইনা তো আমার চুলকানি উইঠা গেছে। পত্রিকা অফিসে খবর দ্যান । জলদি চাপাইয়া দেউক। পাগলা মনার চুলকানি হয়েছে।
এ সময় মানিক পত্রিকা হাতে দৌড়ে আসে ।
মানিক:হায় হায়রে, দেখছেন অবস্থা ? তিরিশজন শিশুসহ পাচারকারী গ্রেপ্তার।
লোকটি: কই দেহি দেহি !
পত্রিকা ভালো মত দেখে হতাশ হয়ে ফিরিয়ে দেয় ।
লোকটি: নাহ, নাই । আমার মানিক আমার লক্ষী ।
পাঠক -১: বিবাহে ব্যর্থ হইয়া প্রেমিকার ছোট ভাই-বোনকে অপহরণ ।
লোকটি: কই দেখি ?
পত্রিকাটা ভালো করে দেখে ফেরৎ দেয়।
লোকটি: নাহ ।
পাঠক -২: আপন ভাইকে জিম্মি করিয়া মুক্তিপণ দাবী । নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত খবরে...
পাঠক -৩:শিশু অপহরণের ঘটনা বাড়ছে।
লোকটা আবার কাঁদতে থাকে।
পাগলা: কান্দেন ক্যান ?
সবাই : কান্দেন ক্যান ?
মানিক: মনে হয় ক্ষুধা লাগছে ।
লোকটা চিৎকার করে
লোকটা:ক্ষুধা লাগছে, জন্মের ক্ষুধা, মউতের ক্ষুধা। সব্বেনাশের ক্ষুধা ।
পাঠক -১: ছোলা খান ।
লোকটি: না ।
পাঠক -২:মুড়ি খাইবেন।
লোকটি: না ।
পাঠক -৩: আচ্ছা কলা খান ।
লোকটি: না ।
পাগলা: হা হা হা, মানুষ খান
সবাই :হ মানুষ খান ।
লোকটি: না ।
পাগলা: হা হা হা, মানুষ খান....হা হা হা, এইটা হয় কোনোদিন ?
কোরাস: হয় । নেশা খাবি খা ? মাথা খাবি খা? নাইলে, মানুষ খা।
পাগলা: শোনো মিয়ারা, কথা একদম ঠিক কোনো ভুল নাই মানুষ পারে না এমন কাম নাই, এই যে শোনো-
চড়াই পাখি খায় না কলাই
ময়না সরষে খায় না । না না না না।।
ছাগ পেটেতে হয় না রে বাঘ শিমুল পায় না পুজা,
মুখপোড়া হনুমান পায় পুষ্পচন্দন শিয়াল হয়রে রাজা
পশূপাখী ঠিকই আছে, মানুষ চেনা যায় না।।
প্রথম অন্তরা শেষ হতেই-
সবাই : পৃথিবীর পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে । বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এভাবে যদি মানুষ...
পাঠক -১: এসিড নিক্ষেপে ঝলসে যাচ্ছে অসংখ্য মুখ, প্রতিরোধ নেই। রাজশাহী থেকে আমাদের...
পাঠক -২: ধর্ষণ এখন নিত্য ঘটনা-প্রতিকার নেই। গত কয়েক বছরের তুলনায়...
পাঠক -৩: রাজনৈতিক জোচ্চুরি আর অস্থিরতায় ভেঙ্গে পড়ছে সামাজিক কাঠামো। সম্প্রতি এক গবেষণায় প্রকাশ যে...
মানিক: রাজনীতিতে পেশী শক্তির প্রভাব বাড়ছে বাড়ছে বাড়ছে...
পাগলা: সৃষ্টির সেরা এই না মানুষ
কোরান পাকে কয়,
আশরাফুল মখলুকাত বলে
ফেরেশতা সেজদা দেয়।
কিন্তু এখন-
এই মানুষের কর্ম দেখে ।
ধড়ে প্রাণ থাকে না । না না না না না ।
পাঠক -১:প্রকাশ্য জনসভায় নেতারা সাংবাদিক হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। গতকাল খুলনায় জনসভায়...
পাঠক -২: সামাজিক অস্থিরতায় শিশু নারী নির্যাতন বাড়ার আশঙ্কা।
পাঠক -৩: রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতার কুফলে শিশু হত্যা আরো বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
মানিক:পৃথিবী ফিরে যাচ্ছে আবার প্রাগৈতিহাসিক যুগে।
পাগল: নারী আর শিশু হত্যা এককথায় সভ্যতার হত্যা।
লোকটি: আমি আমার মানিকরে ডাকি। কেউ কোনো কথা কয় না। কোনো জবাব দেয় না।কেউ জানে না। কারো মুখে শব্দ নাই । মুখ নিচা কইরা সব চইলা যায় এদিক ওদিক। যারে ভালো মনে কইরা দুইটা কথা কইতে যাই, সে-ই বুকে ছুরি মারতে চায়। কোথাও কি মানুষ নাই?
পাগলা: ময়না যেদিন সরষে খাবে বুঝলা বাবারা
ময়না যেদিন সরষে খাবে চড়াই খাবে কলাই
সে যুগে থাকবে না মানুষ আমি অধম বলে যাই
এর বেশি আর একটা কথা খবরদার বাড়াস না।।
সবাই :অপহরণকারীরা হত্যা করেছে মানিককে ।
সবাই :গণধর্ষণের শিকার লক্ষী আত্মহত্যা করেছে।
সবাই : আমরা কোথায় যাবো? মৃত্যুরেখায় দাড়িয়ে আছি আমরা সবাই। কোথায় যাবো?

(চিৎকার করে কাঁদতে থাকে লোকটি)

চলমান.................................



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন নবীর আবির্ভাব!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪০



গত ২৫ ডিসেম্বর প্রবল বন্যায় পৃথিবী ধ্বংস হবার কথা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ঘনার এক স্বঘোষীত নবী। বন্যার হাত থেকে ভক্তদের বাঁচাতে নূহ নবীর মত নৌকা বানাতে ভক্তদের কাছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×