somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাটক : বুমেরাং

২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বুমেরাং................................
প্রত্নতত্ত্ব শব্দের অর্থ অতি পুরাতন বা প্রাচীন। আর প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন হলো প্রাচীনকালের জিনিসপত্র, মুদ্রা, অট্টালিকা, স্থাপত্য, গহনা, ধাতব অস্ত্র ইত্যাদি। প্রত্নতত্ত্বের সমষ্টিগত অর্থ হলো পুরাতন বিষয়ক জ্ঞান। প্রচলিত ধারণায়, বস্তুগত নিদর্শনের ভিত্তিতে অতীত পুনঃনির্মাণ করার বিজ্ঞানকেই প্রত্নতত্ত্ব বলে চিহ্নিত করা হয়। এটি কেবল বস্তুগত নিদর্শন অর্থাৎ প্রামাণ্য তথ্য নিয়ে কাজ করে এবং তার সাথে মানুষের জীবনধারার সম্পর্ক নির্ণয় করে। আমাদের এই প্রত্নতাত্তিক গল্পটি বাংলাদেশের কোনো এক প্রাচীন জনপদের ঘটনা। প্রত্নতত্ত্ববিদরা যেখানে খুঁজে পেয়েছে কয়েক হাজার বছর আগের একটি সুবিশাল প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন। তারই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে সেখানে। খুঁড়তে খুঁড়তে একসময় এই নিদর্শনের মাঝখানে একটি অদ্ভুত আকৃতির ঘর সবার নজর কাড়ে। অনেক প্রশ্ন দলনেতা প্রত্নতত্ত্ববিদ তারেকের মনে উঁকি দেয়। কি আছে এই ঘরের ভেতর? অন্য কোনো স্থাপত্যের সাথে এর মিল নেই কেন? কেউ বলে মসজিদ, কেউ বলে মন্দির কেউ ভাবে ভিনগ্রহের কোনো কিছু, কেউ বলে প্রাচীনকালের রত্নভান্ডার। সিদ্ধান্ত হয় রাতের বেলা শুরু হবে এর খনন কাজ। অনেক রাতে নানান শঙ্কা আশঙ্কার ভেতর দিয়ে ঘরটির পুরনো দরজাটি অনেক পরিশ্রম করে খুলে ভেতরে খনন করা হয়। ঘরের ভেতরে গিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ তারেক বের করে আনে অদ্ভুত দর্শন এক যন্ত্র। উপস্থিত সবার মনে নানান কৌতুহল তৈরি হয় যন্ত্রটাকে ঘিরে। কিন্তু কেউ বুঝে উঠতে পারে না আসলে জিনিসটা কি? যন্ত্রটির এক পাশে পাওয়া যায় একটি প্রাচীন গ্রন্থ। কিন্তু সে ভাষা সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ভাষা গবেষক তারেক তার পাঠোদ্ধার করে। হাজার বছর আগে এক বিজ্ঞানী এই যন্ত্রটি তৈরি করেছেন। এটি একটি টাইম মেশিন। সেই বিজ্ঞানী এটিতে করে সময় অতিক্রম করে ঘুরে বেড়িয়েছেন। টাইম মেশিন নিয়ে গবেষণা করার জন্যই একটি নির্জন জায়গার সন্ধানে তিনি এইখানে এসেছিলেন। তার নাম বিজ্ঞানী ইলতুমি। বহু জায়গা খুঁজতে খুঁজতে তিনি নির্জন প্রান্তরে এই রাজবাড়িটি আবিষ্কার করেন। এই বাড়িটির বয়স তখনই তিন হাজার বছর। বিজ্ঞানী ইলতুমি আবিষ্কার করেন এই অঞ্চলটিতে একসময় লোক সমাগম ছিল। তিনি তার টাইম মেশিন নিয়ে গবেষণার কাজে লেগে পড়েন এবং সফল হন। তার প্রথম ভ্রমণই ছিল এই রাজবাড়ির আগে এখানে কি ছিল সেই সময়ে বিচরণ। সেখানে দেখতে পান মর্মান্তিক এক ঘটনা। কিছু বর্ণনার পর তাতে লেখা আছে। এই টাইম মেশিনটি যত হাজার বছর পরই কেউ আবিষ্কার করুক না কেন এই মেশিনটি একমাত্র সেই ব্যক্তিই সচল করতে পারবে যিনি সৎ এবং বিশ্বাসী মানুষ। নাহলে এটা কোনো কাজ করবে না। সে আসলেই সৎ কিনা সেটা বোঝার জন্যও একটি মেশিন আছে সাথে। অতঃপর ডাকা হলো ওই অঞ্চলের দুইজন বড় মাপের তথাকথিত সৎ ব্যবসায়ীদের। একজন আক্কাস আলী এবং আরেকজন নিতাই রায়। কিন্তু তাদের দ্বারা যন্ত্রটি কিছুতেই সচল হয় না। উল্টো মেশিনের কারণে তারা তাদের সব অপকর্ম ফাঁস করে দেয়। সবাই বোঝে এরা ধর্ম এবং নীতির কথা বললেও আদতে তারা ভণ্ড। ব্যর্থ হয়ে একসময় সবাই বিদায় নেয়। ভোর রাতে প্রত্নতত্ত্ববিদ তারেক একা একা গভীর মনোযোগে দেখছিলো যন্ত্রটি। যন্ত্রে হাত লাগতেই হঠাৎ সেটা সচল হয়ে ওঠে। অতপর তিনি টাইম মেশিনে চড়ে গিয়ে হাজির হন মেশিনের আবিষ্কারকের কাছে। তারপর?

বুমেরাং : চরিত্রলিপি................................
প্রত্নতত্ত্ববিদ তারেক:
বিজ্ঞানী ইলতুমি:
আক্কাস:
নিতাই:
এলা :
শ্রমিক-১:
শ্রমিক-২:
রাজা :
মন্ত্রী :
যুবক-১:
যুবক-২:
ঘোষক:
মাস্কি :
সৈন্য-১:
সৈন্য-২:

দৃশ্য-০১
দিনের বেলা
শ্রমিক-১,২ তারেক, আক্কাস, নিতাই

দুই শ্রমিক কোদাল আর শাবল হাতে গান গাইতে গাইতে আসে।
কোরাস : হেইয়া হো হেইয়া হো হেইয়া হো
হেইয়া হো হেইয়া হো হেইয়া হো রে
আমরা কাম করি আর খাই
আমরা শ্রমিক মজুর ভাই
মোদের চিন্তা ভাবনা নাই
আমরা কাম করি আর খাই
আমরা তাইরে নাইরে নাই
আমরা অন্তরের গীত গাই।
হেইয়া হো হেইয়া হো হেইয়া হো
হেইয়া হো হেইয়া হো হেইয়া হো রে
শ্রমিক দু’জন এসে দাঁড়ায়।
শ্রমিক-১: এই যে, মাথার ঘাম পায়ে ফালাইয়া মাটি খুঁড়ি কত দামি দামি জিনিস বাইর হয়। কিন্তু অনেক কিছু বেহাত হইয়া যায়। কিছু চুরি হইয়া যায়। দ্যাশের কোনো কামে লাগে না। বড় আজব দ্যাশ।
শ্রমিক-২: এইখানে অনুমতি ছাড়া ঢোকা নিষেধ কিন্তু তারপরও কেমনে জানি সব উধাও হইয়া যায়।জনি পরী আসে নাকি এইখানে? শুনছি এইগুলি নাকি জনগণের মানে দেশের সম্পদ। বড়ই আজব।
শ্রমিক-১: আরে ভেতরের লোক ছাড়া বাইরের লোক কিছু করতে পারে না। চোর তো ঘরের ভেতর। কথায় আছে না ঘরের শত্রু বিভীষণ।
শ্রমিক-২: হুম, বুঝতে পারছি। কিন্তু আমরা খাইটা খাওয়া মানুষ আমরা কি করতে পারি।
এসময় চারদিক পর্যবেক্ষণ করতে করতে তারেক আসে। ওরা সালাম দেয়।
তারেক: কি খবর তোমাদের?
শ্রমিক-১: সার, দুই নম্বর ব্লক খোঁড়া শেষ। দরজাটার সামনে একটু কাজ বাকী।
তারেক: তাহলে তোমরা ওই কাজটা আগে শেষ করো।
শ্রমিক-২: জ্বী।
তারেক: কিছু পেলে আমাকে জানিও।
ওরা ভেতরের দিকে চলে যায়। তারেক চারদিক পরীক্ষা করে দেখে।
তারেক:এ আমার দেশ। হাজার হাজার বছর আগে এখানে বসত গড়েছে মানুষ। কত রাজা মহারাজা শাসন করে গেছে এই দেশ। কত সম্প কত নগর মহানগর লুকিয়ে আছে এই মাটির নিচে। হাজার বছর ধরে পথ হাঁটিতেছি আমি পৃথিকীর পথে। কত না প্রাচীন সম্পদ ছড়িয়ে আছে এদেশের পলিমাটির নিচে। আমি ড. তারেক মাহদী। একজন প্রত্নতত্তবিদ ও ভাষা গবেষক। এই রাঢ় বঙ্গে এসেছি এক অতি প্রাচীন স্থাপত্যের সন্ধানে-
এসময় ভেতর থেকে চিৎকার আসে। তারেক সচকিত হয়।
শ্রমিক-২:৩ নম্বর ব্লকে আজব একটা ঘর পাওয়া গেছে।
তারেক দৌড়ে ভেতরে যায়। একটু পর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে
তারেক, আক্কাস হুজুর, শ্রমিক, নিতাই অন্যান্য।
তারেক:অদ্ভুত আকৃতির একটি ঘর। পাঁচ হাজার বছর আগের যে স্থাপত্য আমরা উদ্ধার করছি, তার সাথে কোনো মিলই নেই, আশ্চর্য!
আক্কাস:আমার মনে হয় স্যার ওইটা একটা ইবাদতখানা। বাদশাহী ইবাদতখানা। বাদশাহ ফিরোজের। ভেতরে সোনা রূপায় ভরা।
নিতাই:আমার তো মনে হয় শিব মন্দির। মহারাজা শিবরাজের আমলের। ভিতরে শিবের মূর্তি বসানো আছে। কষ্টি পাথরের। খুব দামী।
তারেক:এত অনুমান করে লাভ নেই। দরজাটা খুলতে পারলেই বোঝা যাবে ভেতরে কি আছে।
সবাই :ঠিক, ঠিক।
একজন শ্রমিক এসে জানায় তারা দরজা খুলে ফেলেছে। তারেক ভেতরে যায়। একটু পর ভেতর থেকে দুই শ্রমিক একটা যন্ত্র এনে রাখে।
সবাই এসে যন্ত্রটাকে ঘুরে ঘুরে দেখে। আক্কাস আর নিতাই ফিসফাস করে।
তারেক:কোনো সোনা রূপাও মিলল না, শিবের মূর্তিও না, মিলল একটা যন্ত্র। অদ্ভুত যন্ত্র। কিসের যন্ত্র এটা?
সবাই নিরব। একজন শ্রমিক একটা প্রাচীন বই নিয়ে আসে
শ্রমিক:স্যার। এই বইটা যন্ত্রটার পাশে ছিল।
তারেক:কই দেখি দেখি।
তারেক পড়তে শুরু করে। সবাই তার দিকে তাকিয়ে।
তারেক:দু’হাজার বছর আগের সেরা পদার্থ জ্যোতিরসায়নবিদ বিজ্ঞানী ইলতুমির অনেক কথা লেখা এ বইতে। লেখা আছে অনেক অব্যক্ত যন্ত্রণা। টাইম ট্রাভেল মেশিন! হ্যাঁ, মিথ্যা নয় সত্যি কথা। দু’হাজার বছর আগে! এই বিজ্ঞানী বিদেশের কোনো এক জায়গা থেকে এসেছিলেন শুধু নিরিবিলি টাইম মেশিন তৈরি করার জন্য। ভাগ্যক্রমে মিলে যায় এই জায়গাটা। দু হাজার বছরের পুরানো এই প্রাসাদের ভেতর তিনি তৈরি করেন ল্যাবরেটরী। মানুষের স্বপ্ন, কল্পনাকে বাস্তব করে সফলতার সাথে তৈরি করেন টাইম মেশিন। কিন্তু ভ্রমণ তার সুখকর ছিল না। অতীত বর্তমান ভবিষ্যত ভ্রমণ করে তিনি দেখেছেন পৃথিবী ধ্বংসের আলামত।
আক্কাস:বিজ্ঞানী সাব, কিছু মনে কইরেন না। এই যে টাইম মেশিন, এইটা দিয়া কি তৈরি হয়? কোন ধরনের মাল? আটা ময়দা সুজি..
নিতাই:হ, টাইম বোমার কথা শুনছি কিন্তু টাইম মেশিন।
তারেক হাসে।
তারেক:টাইম মেশিন হচ্ছে একটি চতুর্মাত্রিক কাল্পনিক যন্ত্রযান যা আমাদের এই ত্রিমাত্রিক জগতের যে কোন জায়গায় যে কোন সময়ের সাপেক্ষে চলতে পারে। সোজা ভাষায়, অতীত বা ভবিষ্যতের যে কোন সময়ের যে কোন জায়গায় আপনি চলে যেতে পারেন এই টাইম মেশিনে চড়ে । আরো সোজা করে বললে আমরা যেমন মাঝে মাঝে কল্পনা করি বা ভাবি-ইস যদি দু হাজার বছর পেছনে যেতে পারতাম-ইস যদি একটু ভবিষ্যতটা দেখে আসা যেত।
নিতাই আক্কাসকে এককোণে নিয়ে যায়।
নিতাই:গুরু, এই মাল হাত করতে পারলে জিন্দেগী পুরা কালারফুল। খালি ভাড়া দিয়া খামু। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা ভাড়া। কি কন?
আক্কাস:হুম ঠিকই কইছস। রেডি থাক। রাইতের বেলা কাম সারতে হইব।
তারেক:আমরা তাহলে দেখি টাইম মেশিনটা চালানো যায় কি না। এ ব্যাপারেও তার কিছু কথা লেখা আছে। টাইম মেশিনটি সচল থাকবে হাজার হাজার বছর। কিন্তু এটা চালু করতে পারবে শুধু নীতিবান মানুষেরা। এই তো হলো মুশকিল। নীতিবান বলতে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন? তিনি আসলে বলতে চেয়েছেন এই টাইম মেশিনটা যে সময়ে বা যে কালেই মানুষের হাতে পড়ুক তার নীতির মানদণ্ড হবে সততা, বিশ্বাস, আস্থা এবং সহমর্মিতা। আশ্চর্য না? যে সময়কালে মানুষ নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারে না। সেখানে এমন লোক। কে আছে এমন মানুষ? আমি এখানে দু’জন মানুষকে দেখতে পাচ্ছি যারা নীতিবান, আদর্শবান, ধার্মিক এবং বিশ্বাসী হিসেবে এখানে পরিচিত।
সবাই এ ওর দিকে তাকায়।
তারেক:এ অঞ্চলের দু’জন সুপরিচিত ব্যবসায়ী সমাজসেবক আক্কাস হুজুর ও নিতাই রায়, যাদের প্রায়ই এখানে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। আসুন আপনাদের দিয়ে আজ এক নতুন ইতিহাস রচিত হোক। প্রথমে আক্কাস হুজুর।
আক্কাস জোর আপত্তি জানাতে থাকে। তারেক তাকে মেশিনের সামনে নিয়ে যায়। অদৃশ্য গাট্টা খেয়ে আক্কাস লুকানোর চেষ্টা করে।
আক্কাস: উহ্ গাট্টা মারে কে? আমারে বাচান। আর গাট্টা মাইরেন না। মইরা যামু। না না আমি আসলে সৎ না, আমি ভালো না।
তারেক:তার মানে ধর্মের নাম দিয়ে এতদিন যা করেছেন সব মিথ্যে।
আক্কাস:মিথ্যে মিথ্যে। আর করব না। আর কোনোদিনই মিথ্যে বলবো না। আর বলব না, আর বলব না।
আক্কাস ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ে। নিতাইয়ের পালা আসে। নিতাইকে কে যেন সুড়সুড়ি দেয়। নিতাই হাসতে হাসতে সত্য কথা বলে দেয়।
নিতাই:না, না আমি তো পরে আসছিÑ হ্যাঁ, হ্যাঁ এ পর্যন্ত ১৮টা মূর্তি চুরি করেছি; আরো কয়েকটা বাকী আছে। হা...হা...হা জয়গুরু।
তারেক:কি বলছেন আপনি! আপনাকে তো জানি একজন সৎ ধার্মিক লোক হিসেবে। মানুষজনকে যেভাবে ধর্মের ব্যাখ্যা দেন তাতে তো বোঝার উপায় নেই আপনি এমন একজন মানুষ। হ্যাঁ এখন বেশিরভাগ মানুষেরই এই অবস্থা। ওপরে এক ভেতরে আরেক। মুখ দেখে ভুল কর না মুখটা তো নয় মনের আয়না।
হতাশ হয়ে একে একে সবাই বেরিয়ে যায়।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০২
রাতের বেলা
তারেক, নিতাই, আক্কাস

তারেক একা বসে আছে। উঠে পায়চারী করে। কি মনে করে বাইরে যায়। পা টিপে টিপে ঢোকে নিতাই আর আক্কাস। ওরা মেশিনটা নিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এরই মধ্যে তারেকের গলার আওয়াজ পেয়ে ওরা লুকিয়ে যায়। তারেক আপন মনে কথা বলতে বলতে ঢোকে।
তারেক:আশ্চর্য! মেশিনটা টাইম ট্রাভেল করল না। কিন্তু লাই ডিটেক্টর এবং ইনভিজিবল আর্মস হিসেবে হিসেবে কাজ করলো। তার মানে এটার মাল্টি ফাংশনাল ভ্যালু আছে। আশ্চর্য!
তারেক মেশিনটার কাছে যেতে মেশিনটা আওয়াজ করে। অবাক হয় তারেক। চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে যায়
কিন্তু মেশিনটা স্পর্শ করতে তারেককে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। নিতাই আর আক্কাস ঘটনা দেখে ভীত হয়ে বেরিয়ে আসে।
আক্কাস : নিতাইরে ঘটনা সুবিধার মনে হইতাছে না। চল ভাইগা যাই। বড় আজব কারবার। কথা তো সত্যই।
নিতাই : হ গুরু ঠিকই কইছো। তয় ভুতের ব্যাপার স্যাপার মনে হয়। ওরে বাবারে।
ওরা দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০৩
রাতের বেলা
বিজ্ঞানী ইলতুমি, তারেক

বিজ্ঞানী ইলতুমি তারের চশমা চোখে একটা যন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত। এসময় তারেক টাইম মেশিনে চড়ে হাজির হয়।
ইলতুমি:কি সৌভাগ্য আমার, আমারই আবিষ্কার করা যন্ত্রে চড়ে বর্তমানের মানুষ এসেছে অতীত ভ্রমণে। তাও আবার আমার কাছে। স্বাগতম স্বাগতম। দু হাজার বছরের পুরনো অতীতে।
তারেক:আপনিই তাহলে সেই মহান ব্যক্তি! যিনি এই টাইম মেশিন আবিষ্কার করেছেন। সৌভাগ্য তো আমার যে আপনার সাক্ষাত পেয়েছি।
ইলতুমি:আমি কখনো ভাবিনি; আমি চলে আসার পর এটা কেউ চালু করতে পারবে। কারণ মানুষ সভ্যতার নামে যেভাবে নষ্ট হচ্ছিল তাতে দু’হাজার বছর পর হিংস্র প্রাণী হিসেবেই মানুষকে গণ্য করতে হবে।
তারেক:এখনো স্যার মানুষ অতটা নষ্ট হয়নি তবে হতে বেশি বাকী নেই।
ইলতুমি:হ্যাঁ পৃথিবীর জন্য মায়া হয়, মানুষের জন্য মায়া হয়।
তারেক:স্যার, অনেক কিছু জানবার আছে আপনার কাছে। কিন্তু আপনার লেখা বইটা পড়ে একটা ব্যাপারে আগ্রহ খুব বেশি।
ইলতুমি:কোন ব্যাপারটা বল তো?
তারেক:আপনার লেখা যে বইটি আমরা পেয়েছি তাতে আপনি লিখেছেন পৃথিবী ধ্বংসের আলামত আপনি দেখেছেন। যাতে একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে পুরো মানবজাতি।
ইলতুমি:তুমি কিন্তু তোমার পরিচয় আমাকে দাওনি।
তারেক:আমার নাম তারেক, আমি একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ। সম্প্রতি পাঁচ হাজার বছরের পুরনো একটি স্থাপত্য আমি খুঁজে পেয়েছে যেখানে আপনি গবেষণাগার বানিয়েছিলেন।
ইলতুমি:ইয়েস ইয়েস। কিন্তু তোমার প্রশ্নটা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। পৃথিবীতে মানুষ বলতে কিছু থাকবে না।
তারেক:কারণ?
ইলতুমি:মানুষের এত দুঃখ-কষ্ট, মান-অভিমান, হাসি-কান্না ভরা এই জীবনগুলো সব ধ্বংস হয়ে যাবে? পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে সময়ের আগেই!
তারেক:কেন স্যার?
ইলতুমি:মানুষের নিজেদের গোয়ার্তুমি, বোকামী আর স্বার্থপরতার জন্য। আমি যেখানে ল্যাবরেটরী বানিয়েছিলাম তারও তিন হাজার বছর আগের ওই স্থাপত্য। রাজার রাজত্ব ছিল, মানুষ ছিল, জন ছিল। ছিলো শহরকেন্দ্রিক বিশাল লোকালয়। কিন্তু তারও আগে কি ছিল? ছিল সবুজ বনানী ঘেরা পাহাড়ি এলাকায় বনের ভেতর সাধারণ মানুষের বাস। কিন্তু- সে এক করুণ কাহিনী। চল, গল্প না বলে দেখে আসি কি ঘটেছিল সেসময়।
দু’জন টাইম মেশিনে চলে যায়।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০৪
দিনের বেলা
এলা, নীনা
এলা পাহাড়ী সুরে নাচতে নাচতে আসে।
এলা: আমি বনফুল গো
ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে...
নীনা :কি রে এলা এত খুশি কিসের? কিসের এত আনন্দ?
এলা :আহ কি আনন্দ। আমার মনের মানুষটাকে নিজের করে পাবো। এই তো আর কতটা দিন। তারপরই তো বিয়ের উৎসব। আনন্দ তো আমারই হবে নাকি।
নীনা: হুম, সে তো বুঝতেই পারছি।
এলা :নীনা তুমি খুশি হওনি?
নীনা:বলিস কি! খুশি হবো না মানে। তোর বিয়ের জন্য আমি তিন রাত নাচের আয়োজন করেছি। কিন্তু তুই এখানে একা একা কি করছিস?
এলা:সবাইকে বলছি আমার মনের কথা। ওই যে বটের ঝুরি ওই যে জলের নুড়ি ওই যে ফুলের মাঠ ওই যে নদীর ঘাট ওই যে আকাশ এই যে বাতাস। আহা কি আনন্দ.
নীনা:কিন্তু কাল যে তোমার ভালোবাসার মানুষটি শিকারে যাচ্ছে, জানিস তো?
নীনা:হ্যাঁ, কাল শিকারে যাবে সবাই। ওই দুর পাহাড়ে। এই যে বন বনানী নদী নালা পাহাড়ী ঝরণা বনের পশুপাখি সবাই আমাদের চেনে। সবাই আমাদের ভালোবাসে। আমরা তো অকারণে কারো ক্ষতি করি না। চল নীনা, পাহাড়ের ওই ঢাল থেকে ঘুরে আসি।
এলা আর নীনা পাহাড়ী সুরে নাচতে নাচতে গায়।
এলা: আমি বনফুল গো
ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে...
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০৫
দিনের বেলা
একজন ঘোষণা দিয়ে যায়। রাজা-মন্ত্রী প্রবেশ করে পায়চারী করছে।
রাজা:ও মন্ত্রী। এদিকেই কোথাও তাবু ফেলো। মরুভুমির তপ্ত হাওয়া আর গরম বালুর তাপ খাইতে খাইতে সিদ্ধ হইয়া গেছি। মনে হইতাছে এদিকেই ভালো শিকার মিলবে। কি চমেৎকার পরিবেশ। খাওয়াদাওয়াটাও হজম হবে ভালো। কি বলো ঠিক কি না মন্ত্রী?
মন্ত্রী:ঠিক ঠিক আমি অক্ষণি সব ব্যবস্থা করতেছি রাজাধিরাজ।
রাজা:জায়গাটা খুবই চমেৎকার। ঠিক কি না, কি বল মন্ত্রী।
মন্ত্রী:ঠিক মহারাজ, আপনের ওই মরুভ‚মির থিকা এইখানকার আবহাওয়া খুবই চমেৎকার। কিভাবে যে ওই গরমের মধ্যে মানুষ হইছেন আমি ভাইবা অবাক হই মহারাজ। আহা দুনিয়া কি বিচিত্র।
রাজা:তাই যদি বুঝতিরে মনা তাইলে তো তুইই রাজা হইতি। তাইলে তো এখানেই আমার গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হওয়া উচিত কি বল?
মন্ত্রী:হি হি হি মহারাজ যা বলেন।
রাজা:অমন ঘোড়ার মতন হাইসো না তো। দেখার মত একটা রাজপ্রাসাদ হতে হবে এখানে কি বল? সুন্দর জায়গায় সুন্দর একটা বাড়ি।
মন্ত্রী:মহারাজ, আপনি যা কন।
রাজা: আগামী এক মাসের মধ্যে এইখানে আমি আমার স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ দেখতে চাই। সেইরকম একখান কি বল?
মন্ত্রী:কিন্তু মহারাজ প্রকৃতি বড়ই উদার, মায়াময় ছায়াময় কিছু দিন চলে যায় কিছু কথা থেকে যায়।
রাজা:ধুত্তোরি তোমার এই কাব্যচর্চা বাদ দিয়া আসল কি কথা বলো?
মন্ত্রী:মহারাজ অতি দ্রুত এখানে প্রাসাদ নির্মাণ করতে গেলে কয়েক সহস্র শ্রমিক লাগবে। নকশাকার লাগবে। রাজমিস্ত্রী লাগবে। শত শত গাড়িঘোড়া লাগবে। প্রয়োজন পড়বে হাজার হাজার স্বর্ণমুদ্রার।
রাজা:এই তোর কথা। ফকিরের পুত ফকিরই রইয়া গেলি। তরে কেন যে মন্ত্রী করছিলাম। শোন মদনা। এ কাজের জন্য রাজকোষ উন্মুক্ত রাখা হলো। তোমার যত প্রয়োজন খরচ করবে মহারাজ অনুপলের রাজভান্ডার রাজভান্ডরই খাকবো কখনো শূন্য হবে না। আরে ব্যাটা পয়সা তো জনগণের। আমার কি। যা কাম শুরু কর।
মন্ত্রী:মহারাজের জয় হোক। সবই ঠিক আছে মহারাজ তয় কিনা কথা আরেকটু বাকী থাইকা যায়। মাইন্যবর, কথা যত বলে যাই তবু না ফুরায় কথা তো হয় না শেষ।
রাজা:বেশ বেশ। বলো।
মন্ত্রী:প্রাসাদ নির্মাণ করতে গিয়া মহারাজ অসংখ্য পাহাড় কাটা যাইব, অসংখ্য বৃক্ষ লতা পাতা কাটা পড়ব। প্রকৃতি বড়ই নির্মম। এই যে চারদিকে এত সবুজ শ্যামল সুন্দর দেখতাছেন, এত সবুজ শ্যামল কিন্তু থাকব না।
রাজা: তাতে কিছুই আসে যায় না। শত শত নগর গেরাম মানুষ গাছপালা নদী নালা ধ্বংস করতে করতে এতদুর আইছি আর আমারে শোনাও পরকিতির কথা। শোন ব্যাটা উল্লুক আমি হইলাম মহারাজা আমার কি সম্পদের স্বর্ণমুদ্রার অভাব আছে? আর মুদ্রা খরচ করলে কি না হয়। দরকার হইলে সবুজ বানাইয়া নিমু রে মদনা। তাতেই না সুখ। খালি সবুজ কেন লাল নীল বেগুণি সব হবে।
মন্ত্রী:কিন্তু মহারাজ প্রকৃতি বড়ই নিষ্ঠুর। এই ধাক্কায় কয়েক সহস্র মানুষ উদ্বাস্তু হইয়া যাইব মহারাজ।
রাজা: হউক গা। তাতে আমার কি? আমার কোনো ক্ষতি হইব কি না সেইটা ক ব্যাটা। তুই আর মানুষ হইলি না।
মন্ত্রী:না মহারাজ আপনের কিছু হইব না কিন্তু মহারাজ, ওরা কোথায় যাইব?
রাজা: আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে। এখান থেকে যতদূর চোখ যায় ততদূর অনুপল রাজার নগর প্রতিষ্ঠা হবে। কোনো মানুষের চেহারা দেখতে চাই না।
মন্ত্রী:তাইলে ট্যাকসো দিব কে? মাল কইথিকা আসপো?
রাজা:অরাই দিব। না দিতে চাইলে গলায় পারা দিয়া আদায় করবি। পাহাড়ের ওই ঢালে নিয়া অগো ব্যবস্থা কর। যত্তোসব।
মন্ত্রী:যথা আজ্ঞা মহারাজ।
রাজা:মন্ত্রী আমি আবারো কই। কি থাকলো আর কি থাকলো না আমি শুনতে চাই না। পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর নগর আমার চাই।
রাজা বেরিয়ে যায়। পেছনে মন্ত্রী।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০৬
দিনের বেলা
নীনা, এলা, যুবক-১,২ ঘোষক

আনন্দ করতে করতে দুই যুবক আসে।
যুবক-২:ব্যস ব্যস, অনেক হয়েছে এবার থামো।
যুবক-১:শিকার উপলক্ষে আজ রাতে উৎসব হবে। জমজমাট উৎসব।
যুবক-২:হ্যাঁ, নাচ হবে। শিকারের গল্প হবে।
এলা আসে।
এলা:সবাই এসেছো। কিন্তু আমার সাতো কোথায়?
যুবক-১:সাতো ফিরবে আরো দু’দিন পর।
নীনা:আরে ওতো তোর জন্য সবচে বড় শিকারটা করে আনবে।
এসময় ঘোষক ঘোষণা দিয়ে যায়।
ঘোষক : ঘোষণা, ঘোষণা, ঘোষণাÑ
আগামী দুইদিনের মধ্যে এই এলাকা খালি করতে হবে।
রাজার আদেশ। অমান্য করলে কঠিন শাস্তি। ঘোষণা
এলা:কি বলছে?
যুবক-২:কারা এরা?
নীনা:হয় তো নতুন কোনো প্রভু।
যুবক-১:এ জায়গা থেকে আমরা চলে যাবো?
নীনা:না।
যুবক-১:তাহলে আমরা কি করব?
এলা: লড়াই করবো। এক হাত জায়গাও আমরা দেব না।
সবাই :হ্যাঁ, আমরা লড়াই করবো।
ওরা চিৎকার করে বেরিয়ে যায়।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০৭
দিনের বেলা
রাজা, মন্ত্রী

রাজা-মন্ত্রী পায়চারী করছে।
রাজা: ও মন্ত্রী। খবর কি?
মন্ত্রী: রাজাধিরাজ।
রাজা: অমন গাঁইগুঁই কর কেন? ব্যাপার কি? কাজ শুরু করছো?
মন্ত্রী: জ্বী না মহারাজ।
রাজা: কেন? সমস্যা কোথায়?
মন্ত্রী:পরিবেশ বড়ই উত্তপ্ত। মসতিসকো বড়ই উত্তাল।
রাজা: মানে কি?
মন্ত্রী:রাজাধিরাজ।
রাজা: ধ্যাত্তেরিকা। ব্যাটা খুইলা ক। কি হইছে?
মন্ত্রী: মহারাজ, এখানকার লোকজন গাছপালা কাটায় বাধা দিচ্ছে।
রাজা: আর তুমি বইসা বইসা আঙুল চুষতাছো। বেক্কল কোনহানকার।
মন্ত্রী: মহারাজ সবই ঠিক আছে কিন্তু নারীরা যে সামনের কাতারে। কঠিন যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা। বড়ই বিচিত্র ধরণী।
রাজা:তাই নাকি! বড় চমৎকার বিষয়। ধইরা নিয়া আসো কথা কই। মাইয়া মানুষ বইলা কথা।
মন্ত্রী:যথা আজ্ঞা মহারাজ।
রাজা: আর শোনো, বিনা অনুমতিতে ঘোরাঘুরির অপরাধে যে ছেলেটারে ধরছো। অর একটা ব্যবস্থা কর।
মন্ত্রী:যথা আজ্ঞা মহারাজ
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০৮
রাতের বেলা
এলা, যুবক-১

এলা বসে আছে।
এসময় এক যুবক এসে খবর দেয়।
যুবক-১:এলা, সাতোকে রাজার সৈন্যরা ধরে নিয়ে গেছে।
এলা: বলিস কি!
এলা আর যুবক দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০৯
রাতের বেলা
এলা
এলা সাতোকে খুঁজছে।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-১০
রাতের বেলা
এলা, যুবক-১, নীনা, সৈন্য

ক্লান্ত ওরা এসে বসে।
এলা আসে।
এলা:সাতোকে ওরা ধরে নিয়ে গেছে।
যুবক-১:রাজার এত এত সৈন্যদের সাথে লড়াই করে আমরা পারবো?
নীনা:আমাদের অনেক মানুষ মারা গেছে। তোমরা থামাও তোমাদের পরিবেশ ধ্বংসের অপকর্ম। আমরা এ মাটির এই প্রকৃতির উপাদান, আমরাও বাঁচতে চাই। কি অপরাধ আমাদের?
যুবক-১:আমরা ক্লান্ত।
এলা:না আমাদের ক্লান্ত হওয়া যাবে না। এই যে সুনীল আকাশ, ওই যে সবুজ বন ওই যে বিস্তৃত রঙিন ফসলের মাঠ সব ধ্বংস হয়ে যাবে? আমরা মেনে নেবো?
যুবক-২:এতদিন তো আমাদের কোনো রাজা ছিল না। আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি স্বাধীনভাবে আমাদের মত।
যুবক-১:রাজা থাকতে হয় না। আপনিই হয়ে যায়। শক্তির কাছে মাথা নত করে সবাই। যে শক্তিমান সেই রাজা।
যুবক-১:তাহলে আমরা কি করব?
এলা:এ মাটি আমাদের এ বন আমাদের আমরা তা ধ্বংস হতে দেব না।
সবাই :হ্যাঁ ধ্বংস হতে দেব না।
এর মধ্যে দুই সৈন্য এসে ওদের ধরে নিয়ে যায়।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০৯
দিনের বেলা
রাজা, মন্ত্রী, এলা, সৈন্য

রাজা-মন্ত্রী পায়চারী করছে।
রাজা:ও মন্ত্রী, খবর কি?
মন্ত্রী:খবর খুবই ভালো মহারাজ।
রাজা:যাক এতদিনে তুমি কাজের কাজ করছো।
মন্ত্রী:আজ্ঞে মহারাজ।
রাজা:বল তাইলে
মন্ত্রী:মহারাজ, ছেলেটাকে শুলে চড়ানো হয়েছে।
রাজা:বাহ, বেশ বেশ। আর মেয়েটা। সুন্দরী মহারানী।
মন্ত্রী:তারও ব্যবস্থা হয়েছে মহারাজ।
মন্ত্রী হাততালি দিলে একজন সৈন্য হাত বাঁধা এলাকে রেখে যায়।
রাজা :এই যে সুন্দরী, তোমার এত সাহস। দুই চাইরজন পোলাপান নিয়া আমার সৈন্যবাহিনীর সাথে লড়াই করো।
এলা:আমাদের একজন মানুষও যদি বেঁচে থাকে এ লড়াই চলবে।
রাজা:ওরে বাবা তেজ কি। অনেক হইছে। এইবার তোমারে আমি ১৯ নম্বর রানী বানামু। আহা কি আনন্দ।
এলা:থু।
রাজা:তুমি তোমার লোকজনরে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলো।
এলা: থু। তুমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে হত্যা করেছো। শত শত মানুষ হত্যা করেছো। তুমি প্রকৃতিকে ধ্বংস করছো। নরপশুর বিরুদ্ধে আমাদের এ লড়াই চলবে।
রাজা:নরপশু। এইটা আবার কে?
মন্ত্রী:মহারাজ আপনারে বলছে।
রাজা: তাই নাকি। এতবড় সাহস তর ছেমরি। আমারে চিনে নাই ছেমরি আমি যে কি বোঝে নাই। মন্ত্রী, যাও ওরে নিয়া সবচে বড় গাছের সাথে বাইন্ধা চার হাত পায়ে গজাল দিয়া ঝুলাইয়া রাখো। অর লোকজন দেখুক শিখুক।
মন্ত্রী এলাকে নিয়ে যায়। যেতে যেতে এলা চিৎকার করে।
এলা:আমরা বার বার ফিরে আসবো। তুই বাঁচবি না।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-০৯
দিনের বেলা
বিজ্ঞানী ইলতুমি, তারেক

বিজ্ঞানী আর তারেক ঢোকে।
তারেক:শেষটা না দেখেই চলে এলাম?
ইলতুমি:হ্যাঁ, শেষটা আসলে দেখার মত না। ভয়ংকর সে হত্যাযজ্ঞ। জানো, একটা মানুষও সেদিন রাজার সৈন্যদের সাথে লড়াই করে বেঁচে ফেরেনি। এরপর রাজ আদেশে কাটা পড়েছে ওই অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ গাছ। উজাড় হয়েছে বনভূমি। বিশাল জায়গা জুড়ে হয়েছে রাজপ্রাসাদ। কিন্তু আর কেউ কিছু না বললেও প্রকৃতি কিন্তু বড় নির্মম। সে তার প্রতিশোধ নিতে ভোলেনি। সমুদ্র স্রোত এসে ডুবিয়ে দিয়ে গেছে সব। ভূমিকম্পে একসময় দেবে গেছে পুরো শহর। দুঃখজনক কি জানো, এভাবে যুগের পর যুগ মানুষ ধ্বংস করে চলেছে পৃথিবীকে। মানুষ আগেও বুঝতে চায়নি এখনও বোঝে না।
তারেক:হুম।
ইলতুমি:তাহলে চল এবার একটু ভবিষ্যত থেকে ঘুরে আসি। দু হাজার বছর পর কি হবে দেখে আসি।
দু’জন বেরিয়ে যায়।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-১০
দিনের বেলা
তারেক, ইলতুমি, মাস্কি

পিঠে ছোট সিলিন্ডার ঝুলানো মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো একটা মেয়ে আর একটা ছেলে আসে। ওরা গুটি গুটি পায়ে হাঁটছে। এসময় ইলতুমি আর তারেক এসে হাজির হয়।
তারেক: ওরে বাব, এ কোথায় এসে পড়লাম। গাছপালা কিছু নেই।
ইলতুমি:হ্যা বিরান ভুমি। দেখো দু হাজার বছর পরের অবস্থা।
দুজনকে দেখে মাস্কি চিৎকার করে ওঠে। ওরা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে।
তারেক:তোমরা কারা?
মাস্কি: আমরা মানুষ।
ইলতুমি:মানুষ হলে তোমাদের এই অবস্থা কেন?
মাস্কি: কিন্তু তোমরা কারা?
তারেক:আমরা মানুষ
ইলতুমি:হ্যা আমরা মানুষ।
মাস্কি: মিথ্যে কথা। তোমরা নিশ্চয়ই ভিনগ্রহের মানুষ।
তারেক:না না আমরা এই গ্রহেরই মানুষ।
ইলতুমি:হ্যা আমরা মানুষ।
মাস্ক:তাহলে তোমাদের মুখে মাস্ক নেই কেন?
তারেক:এই প্রশ্ন তো আমাদেরও তোমরা পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে মুখে মাস্ক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছো কেন?
প্রশ্ন শুনে ওরা হাসে।
মাস্কি: কোথাকার গবেট তোমরা। মানুষ তো এমনই। গত পাঁচশো বছর ধরে তো মানুষ এভাবেই চলে আসছে।
ইলতুমি:বলো কি!
মাস্কি: কিন্তু তোমরা কোন জায়গার মানুষ?
ইলতুমি:আমরা কয়েক হাজার বছর আগের মানুষ।
মাস্কি: বলো কি! কিন্তু এখানে এলে কি করে?
ইলতুমি:টাইম মেশিনে করে।
মাস্কি:টাইম মেশিন! বলো কি? এতো আগে টাইম মেশিন আবিষ্কার হয়েছে? আমরা তো জানি টাইম মেশিন বলে কিছু নেই।
ইলতুমি:হ্যা, সে অনেক কথা সময় থাকলে শোনাবো।
মাস্কি:কিন্তু তখন মানুষ এত জীবন্ত ছিলো?
ইলতুমি:হ্যা, এখানে যে মানুষটিকে দেখছো, সে আমাদেরই উত্তরসূরী। ভবিষ্যৎ মানুষের এই পরিণতির জন্য মানুষই দায়ী।
তারেক অক্সিজেনের অভাবে কাতরাতে শুরু করে।
তারেক:আহ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্লীজ তাড়াতাড়ি চলুন।
ইলতুমি: হে ভবিষ্যতের মানুষ। তোমার জন্য একটা প্রশ্ন রেখে গেলাম। ভেবে দেখো।
মাস্কি : কি প্রশ্ন রেখে গেলেন অতীতের বিজ্ঞানি?
বিজ্ঞানী তারেককে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়।
ওরা দুজনও বেরিয়ে যায়।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-১১
দিনের বেলা
ইলতুমি, তারেক

বিজ্ঞানী তারেককে নিয়ে প্রবেশ করে। দুজনেই চিন্তিত, বিষন্ন।
ইলতুমি: মানব সভ্যতা ও পৃথিবীর সংকট বাড়ছে। কি হবে? কি হবে হে মানব। কোথায় যাবে তুমি? কোথায় লুকাবে? কোন গর্তে? কোন বিন্ধ্যাাচলে? অথবা কোন গভীর সাগরতলে? কোন হিমাচল তোমাকে আশ্রয় দেবে। হে মানব কে তোমাকে নেবে? প্রাগৈতিহাসিক কাল পেরিয়ে আদিম যুগ প্রস্তর যুগ লৌহ যুগ, তাম্র যুগ পেরিয়ে সভ্যতা চলেছে ছুটে আলোর গতিতে। তবুও দিনশেষে করাত কলে বৃক্ষের আর্তনাদ ভেসে আসে মাতাল বাতাসে। অলক্ষ্যে বিষন্ন হাসি মহাশূন্যে ম্রিয়মান তারকা জ্যোতির। হে মানব এখনো হিসাব কষো দু’আনার লেনদেন লাভ আর ক্ষতির? অনুভব করো উপলব্ধি করো হে মানব, ভিসুভিয়সের জ্বালা পৃথিবী জঠরে।
বিজ্ঞানী ইলতুমি বেরিয়ে যায়। বিষন্ন তারেক। তারেক টাইম মেশিনে চড়ে চলে যায়।
দৃশ্যান্তর

দৃশ্য-১২
দিনের বেলা
তারেক, শ্রমিক-১,২

পুরনো জায়গায় ফিরে আসে তারেক। কিন্তু কিছুই আর খুঁজে পায় না। শ্রমিক-১, ২ আসে।
তারেক:কি ব্যাপার আমি ঠিক আছি তো। ঠিক জায়গায় এসেছি তো?
শ্রমিক-১:সার, আপনে কই গেছিলেন। সর্বনাশ হইয়া গেছে।
তারেক:কি হয়েছে বলো তো?
শ্রমিক-২:সার জীবনে এত ভয় পাই নাই।
তারেক:কি হয়েছে বলো তো?
শ্রমিক-১:সার ভূমিকম্পের মতন সব কাপা শুরু করলো। এরপর দেখি সব মাটির নিচে তলাইয়া গেলো।
শ্রমিক-২:আমরা কোনোমতে বাইচা গেছি।
তারেক চিন্তিত।
তারেক:পৃথিবীও প্রতিশোধ নিতে জানে। কত সুন্দর এই পৃথিবী, কত রঙের গাছপালা, কত বিচিত্র প্রাণীর সমাহার, সাথে ৭০০ কোটির ও বেশি মানুষের বসবাস এই পৃথিবীতে। পৃথিবী তোমার জন্ম ঠিক কত তারিখ, সঠিক তথ্যটা আমার জানা নেই। তবে তুমি যেদিন জন্ম নিয়েছিলে সেই দিনটাতে পরিবেশ নামক একটি শব্দও জন্ম নিয়েছিলো। যাকে ইংরেজিতে বললে দাঁড়ায় এনভায়রনমেন্ট।
আমাদের জীবনের চলার প্রত্যেকটি ধাপে পরিবেশ শব্দটি মিশে আছে। আহ! মানুষ, আমরা আমাদের পৃথিবীকে ইচ্ছা মত ব্যবহার করছি। সভ্যতার প্রতিশ্রুতিতে মানুষ আজ ব্যস্ত তাদের সৌখিন জীবন নিয়ে। তারা একবারো ভাবে না, এই সুন্দর পৃথিবীকে নিয়ে। তারা ভাবে না তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে। আজ কত নদী আর কাঁদে না, কারণ তাদেরকে আমরা আর ব্যথা দেই না, যত অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, সবকিছু নদীর বুকে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি, এই বিরাট ভাগাড়ে সে নিশ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারছে না, আর সাথে বুকে সব কষ্ট চাপা পড়ে যাচ্ছে ফলে কষ্টের অভাবে, নদীগুলো আজ কাঁদে না, শুকিয়ে গেছে তাদের চোখের পানি, সমস্ত কষ্টগুলো আবর্জনা হয়ে চাপা পড়ে গেছে। অকালে প্রাণ যাছে এই জীব-জগতের এসব কিছুর জন্য আমরা দায়ি। আমরা সভ্য, কিসে সভ্য,ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা চিন্তা করে না তার কখনো সভ্য হতে পারে না।



সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন নবীর আবির্ভাব!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪০



গত ২৫ ডিসেম্বর প্রবল বন্যায় পৃথিবী ধ্বংস হবার কথা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ঘনার এক স্বঘোষীত নবী। বন্যার হাত থেকে ভক্তদের বাঁচাতে নূহ নবীর মত নৌকা বানাতে ভক্তদের কাছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×