somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সংস্কৃতি হলো একটি দেশের মানুষের আচার-আচরণের সমষ্টি, মানুষের জাগতিক নৈপুণ্য ও কর্মকুশলতা। তার বিশ্বাস, আশা-আকাঙ্খা, নৈতিকতা, রাজনীতির ভাষা, কলা, মূল্যবোধ সবকিছুই একটি দেশের সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলায় বিচিত্র মানুষ, বিচিত্রভাবে বসবাস করে। এটাই এদেশের সংস্কৃতি। সময়ের পরিক্রমায় অনেক গ্রহণ, বর্জন, পরিবর্তন, পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের সংস্কৃতিতে অনেক নতুন উপাদান যুক্ত হয়েছে, আবার হারিয়ে গেছে অনেক উপাদান।
বাংলার সংস্কৃতিই আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয় আমরা বাঙালি। বাংলাদেশের সংস্কৃতির রয়েছে গৌরবময় ঐতিহ্য। প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ, আধুনিক যুগ, একেক যুগে একেক ধমের্র শাসকগোষ্ঠী এই দেশকে শাসন করে গেছে। যেমন প্রাচীন যুগের শাসকরা হিন্দু ও বৌদ্ধধমের্র অনুসারী ছিলেন। সে সময়ে মেয়েরা শাড়ি, ছেলেরা ধুতি পরতো। যানবাহন ছিল নৌকা, গরুর গাড়ি ও পালকি। ধান, ডাল, যব, তুলা, সরিষা ও পান চাষ হত। মধ্যযুগ থেকে মুসলিম শাসনের সূচনা হয়। তখন মেয়েরা শাড়ি পরতো, হিন্দু ছেলেরা ধুতি, চাদর, পায়ে খড়ম পরতো, মুসলমান ছেলেমেয়েরা পায়জামা-পাঞ্জাবি, ধুতি, লুঙ্গি পরত। নৌকা, জাহাজ, কাগজ, মসলিন কাপড় বানানো ও রপ্তানি শুরু হয় ঠিক তখন থেকেই। আধুনিক যুগের শুরু ইংরেজরা আসার পর। তখন থেকে যোগাযোগ, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হয়।
বাংলার সংস্কৃতির ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। এখানে বাস করে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ আরো অনেক ধর্মের মানুষ। এখানে প্রাণ খুলে তারা তাদের প্রাণের ভাষায় ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। একের অনুষ্ঠানে অন্যেরা আমন্ত্রিত হয়ে একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে। আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যের মধ্যে ধর্মীয় রীতিনীতি, উৎসব, লোকসাহিত্য, সঙ্গীত, ঋতুভিত্তিক উৎসব, বিভিন্ন প্রত্মতাত্তি¡ক নিদর্শন, খেলাধুলা, সামাজিক প্রথা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত। এদেশে মুসলিম শাসক মোহাম্মদ-বিন-তুঘলক প্রকাশ্যে হিন্দুদের সঙ্গে হোলি খেলতেন। পালাগান, যাত্রাগান, লোকসাহিত্য প্রভৃতি বাঙালিদের হৃদয়ের কথাই বলে। এখানে বাঁশির সুর কর্মক্লান্ত অবসর মুহূর্তগুলো গ্রাম্য সুর-মূর্চ্ছনায় মুখরিত হত। কবিগান, চম্পাবতী, লাইলী মজনু, শিরি ফরহাদ, আলো মতি, বেদের মেয়ে, চন্ডিদাস, রজকিনী মানুষ প্রাণ ভরে দেখত। গ্রামেগঞ্জে একদিকে যেমন ওয়াজ মাহফিল হতো, আবার যাত্রাপালাও হতো, কীর্তন হতো, পূজা-পার্বণ হতো। কথায় আছে বার মাসে তের পার্বণ। সবই ছিল সৌহাদ্যপূর্ণ যা এখন কম মাত্রায় বিদ্যমান।
ধর্ম আর রাজনীতি ছিল এসবের বাইরে। মধ্যযুগে মুসলমান শাসকরা যখন এই ভূখন্ডে ক্ষমতায় আসে, তখনও কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় কিংবা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে দিতেন না। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মানুষের মমত্ববোধ বাড়ে, ভেদাভেদ ভুলিয়ে দেয়, দেশপ্রেম বাড়ায়। বাংলার গান পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, আধুনিক, রবীন্দ্র-নজরুল সঙ্গীত আমাদের হৃদয়ে দোলা দেয়, তেমনি বাংলার সাহিত্য, খেলাধুলা, উৎসব আমাদেরকে এক কাতারে সামিল করে। সকল ধমের্র মানুষকে একসূত্রে গেঁথে দেয়। রবী›ন্দ্রনাথসহ অন্যান্য কবি-সাহিত্যিকরা আমাদের সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে হাজির করে সম্মানের স্থানে আসীন করে গেছেন। বাংলার স্বাধীকার আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। একাত্তরে সশস্ত্র সংগ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক সংগ্রামকেও জাগরণের অস্ত্র হিসেবে তুলে ধরে ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। সাতচল্লিশে দেশ ভাগের পর পাকিস্তান সরকার প্রথম আঘাত হানে পূর্ব বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর। বাঙালির নিজস্ব ভাষার উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চেয়েছে ঊর্দূ ভাষা। সে সময় নিজেদের জাতি সত্তা রক্ষায় রাজনৈতিক সংগ্রামে পাশাপাশি শুরু হয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। শুরুতে প্রান্তিক, অগ্রণী, ধুমকেতু, বুলবুল ললিতকলা একাডেমির মতো সংগঠনগুলো গণসঙ্গীত ও নাটকের মাধ্যমে মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সংঘবদ্ধ করেছে। গড়ে তুলেছে দাঙ্গা বিরোধী আন্দোলনও।
১৯৬১ সালে সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রবীন্দ্র জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় ছায়ানট। গণসাংস্কৃতিক আন্দোলনে আরেক গুরুত্বপূর্ণ নাম উদীচী। অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করতে জাগরণের গান, কবিতা, নাটক, কথিকার মতো বিষয়গুলোকে উপজীব্য করে মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। একাত্তরে নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে বাঙালি পৃথিবীর বুকে যে মানচিত্র পেয়েছে তার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে দীর্ঘদিনের গণসাংস্কৃতিক আন্দোলন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় চিহ্নিত করণের ইতিহাস। এই ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নির্মম ও নৃশংস অত্যাচারের কাহিনী। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম বাঙালি জীবনে শ্রেষ্ঠতম গৌরবের অধ্যায়। আলোর মশাল জ্বেলে পাক দোসরদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিকামী বাঙালি। নিরস্ত্র-নিরীহ বাঙালি কোথায় পেল এত সাহস! স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে সহায়ক মুক্তিযুদ্ধের অনেক গান, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক নির্মিত হয়েছে। যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে শিক্ষক, শিল্পী, কবি, সাংবাদিক, নাট্যকার, সাংস্কৃতিক কর্মীর অবদান অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্দোলনে সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সত্যপ্রকাশে প্রণোদনা জাগিয়েছে।
সেদিন বাংলার নিরীহ মানুষদের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অমানবিক শোষণ, অত্যাচার, জোর, জুলুম এবং নানা ব্যভিচারি কর্মকান্ডে সবাই বিষিয়ে ওঠে। কিন্তু প্রতিবাদের সাহস ও সামর্থ্য কোনোটাই ছিল না শান্তিপ্রিয় বাঙালির। এমনি পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এক হয়েছিল পুরো জাতি। সেসময়ে এদেশের সংস্কৃতিকর্মীরা সঙ্গীত, কবিতা, নাটক, যাত্রাপালাসহ শিল্পের আলোয় সাংস্কৃতিক নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে মুক্তিকামী বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জুগিয়েছিল অদম্য সাহস আর শক্তি।
দেশমাতৃকার মুক্তি অর্জনে জীবন বিসর্জন দেয়ার নির্ভীক চেতনাকে শাণিত করতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ভূমিকা চিরস্মরণীয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধই নয়- ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুথানসহ সকল রাষ্ট্রীয় সংকটে সাংস্কৃতিক কর্মীরা সবসময় থেকেছে সোচ্চার। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের দেশাত্মবোধক গান ও রক্তে আগুন ধরা কবিতার ঝাঁঝালো বাণীতে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছিল বাঙালির আবেগের গভীরে। কবিতার মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীকে যুদ্ধের প্রতি আগ্রহ ও চেতনা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করত, আর সঙ্গীত করত আবেগকে প্রাণিত-শাণিত। অল্পবিস্তর হলেও সেসময় নাটকও মানুষের মনে জুগিয়েছিল অদম্য সাহস। যুদ্ধকালীন এসব নাটক মুক্তির স্বপ্নে বিভোর বাঙালিদের উজ্জীবিত করে। বেশিরভাগ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে যোগ করেছে দেশপ্রেমের একটি স্বতন্ত্র মাত্রা। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীনতাকে অবলম্বন করে নির্মিত হয়েছে বহু পথনাটক। সেসময় অকুতোভয় নাট্য ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা পথে-প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে তেজদ্দীপ্ত সংলাপ আর কবিতা-গানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে উজ্জীবিত করে তোলে। সেসময় স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত জ্বালাময়ী গান ও চরমপত্র পুরো জাতির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল বিজয়ের স্বপ্ননেশা।
বাংলাদেশের কবিদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল স্পষ্ট। ফলে কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন ঘটেছে অবধারিতভাবে নানা বৈচিত্র্য নিয়ে। চিত্রকলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে প্রণোদনাদানকারী অন্যতম একটি উপাদান। চিত্রকলার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের জন্য প্রচুর কাজ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অডিও-ভিডিও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অমূল্য উপাত্ত। যা পরবর্তী সময়েও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রণয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সর্বস্তরের সকল বাঙালির জন্যই অনেক বেশি অহংকারের। কেবল দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল লাখো বাঙালি। পরিবার পরিজন ছেড়ে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ একটা সংগ্রামী জীবনে পাড়ি দেওয়ার মতো দুঃসাহস এই বীরের জাতির জন্যই হয়তো সম্ভব হয়েছে। দেশ কবে স্বাধীন হবে, আর স্বাধীন হলেও প্রিয়জনের মুখটা আর কখনো দেখা হবে কি না, এমনি অনিশ্চয়তার মধ্যে সবাইকে এক সুরে বেঁধে রেখেছিলো সে সময়কার অনবদ্য দেশাত্মবোধক গানগুলো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাঙালির জীবনের অন্যতম একটি চালিকা শক্তি ছিল সেই গানগুলো।
শৃঙ্খলাবদ্ধ দেশ-মাতার মুক্তির জন্য যুদ্ধকে বিশ্বাস করেই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে গেছেন নিঃশঙ্কচিত্তে নির্ভীকভাবে। এই গানগুলো প্রচারে শত বাধাবিপত্তি থাকলেও তাদের একাগ্রতার কারণে গানগুলো ঠিকই পৌঁছে গেছে কোটি-কোটি মুক্তিকামী মানুষের কানে, পৌঁছে গেছে যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের পুরনো ভাঙ চোরা রেডিওতে। চারপাশে যখন গণহত্যার খবর, তখন বাঙালিদের ভেঙ্গে পড়তে দেয়নি এই গানগুলো, বরং আরো বেশি সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে উজ্জীবিত করেছে বারবার। প্রিয়জন হারানোর খবর পাওয়া হৃদয়ভাঙ্গা যোদ্ধার মনকে ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা দিয়ে পরের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছে এই গানগুলো।
বাংলাদেশের যুদ্ধ নাড়া দিয়েছিল সারা পৃথিবীর অসংখ্য শিল্পী হৃদয়কে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল সারা বিশ্বে। নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে প্রায় ৪০,০০০ দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত, বিটল্স সঙ্গীতদলের লিড গিটারবাদক জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতীয় সেতারবাদক রবিশঙ্কর কর্তৃক সংগঠিত দুটি বেনিফিট কনসার্ট বিশ্বকে ভাবিয়ে তোলে। সেদিন বিশ্বেও বিপ্লবী শিল্পীদের মন কেঁদেছিল বাঙালিদের জন্য। তাদের গানগুলো বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের কানে পৌঁছে দিয়েছিল বাংলাদেশের রক্তাক্ত জন্মের কাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গানগুলো যেমনি মুক্তিকামী বাঙালিদের অস্ত্রহাতে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে, তেমনি কোনো গান নিয়ে গেছে অসহায় শরণার্থী শিবিরে। এই অসাধারণ সব গানই ছিল বাঙালির সাহস আর এগিয়ে চলার মূল উৎস। এই গানগুলোই অস্থির মনকে সান্তনা দিয়েছে যে- বাঙালিরা বেঁচে আছে, যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে, মুক্তি একদিন আসবেই। এভাবেই আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন অস্তিত্ব আদায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে অসামান্য কৃতিত্বের অংশীদার।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়। যে আবেগ, বিশ্বাস, চিন্তা একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখায়, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে শেখায়, ধর্মান্ধতা ও সা¤প্রদায়িকতামুক্ত, ভবিষ্যৎমুখি, অভিন্ন জাতিসত্তায় প্রণোদিত করে তাকেই বলা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই চেতনার একটি ধারাবাহিক ইতিহাস আছে; আছে হাজার বছরের সংগ্রাম এবং লক্ষ মানুষের রক্তে রাঙানো কাহিনী। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বাঙালি প্রথম নিজেদের ‘আমরা বাঙালি’ আত্মপরিচয়ে শনাক্ত করতে পেরেছিল। এই আত্মপরিচয় বাঙালিকে অস্তিত্ব সচেতন করে তোলে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন নবীর আবির্ভাব!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪০



গত ২৫ ডিসেম্বর প্রবল বন্যায় পৃথিবী ধ্বংস হবার কথা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ঘনার এক স্বঘোষীত নবী। বন্যার হাত থেকে ভক্তদের বাঁচাতে নূহ নবীর মত নৌকা বানাতে ভক্তদের কাছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×