somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মার্ট কুরিয়ার

১১ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফাস্ট-ফরোয়ার্ড কুরিয়ার: পর্ব - দৈত্যাকার প্যাকেজের ডেডলাইন
​স্থান: ফাস্ট-ফরোয়ার্ড কুরিয়ার, সদর শাখা (ব্যস্ত শহরের একটি কাঁচ-ঢাকা, আধুনিক কিন্তু জনাকীর্ণ কুরিয়ার অফিস)।
চরিত্র:
​রতন : শাখা ব্যবস্থাপক, যিনি কর্পোরেট কেপিআই (KPI) এবং ডেলিভারি ডেডলাইন মেটাতে গিয়ে স্ট্রেসে ভোগেন।
​চঞ্চল : নিরাপত্তা প্রহরী/অফিস সহকারী, যিনি অফিসের কাজ ফেলে সর্বক্ষণ মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত।
​মিস. মনিরা : স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, যিনি প্রতিটি ঘটনাকে তার 'স্মার্ট সিটি' ক্যাম্পেইনের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেন।
​কচি : কৌতূহলী ও উৎসুক ডেলিভারি রাইডার, যিনি একটি ভাইরাল কন্টেন্টের সন্ধানে থাকেন।
​দৃশ্য ১: সকালের ধড়ফড় - 'অসাধ্য' কেপিআই
​**(রতন, তার ছোট ডেস্কে বসে আছেন। ল্যাপটপে তার দৈনিক ডেলিভারি ড্যাশবোর্ড দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ মেট্রিক্স লালে। চঞ্চল, চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে হেডফোন কানে TikTok দেখছেন, মাঝে মাঝে হাসছেন।)
​রতন: (মাথায় হাত দিয়ে, স্বগতোক্তি) সর্বনাশ! সর্বনাশ! ডেলিভারি রেট এখনো ৬০% এ! বস ফোন দিলে তো আজ আমার চাকরি কাবার! এই শহরে শুধু জ্যাম আর অজুহাত ছাড়া কিছু চলে না! একটা পার্সেল ঠিকমতো বের করতে পারি না!
চঞ্চল: (হেডফোন খুলে, আলস্যে) রতন ভাই, চাপ নিয়েন না। 'টেনশন নিলেই টেম্পার লস'। আমার একটা ভিডিওতে এইমাত্র এক হাজার লাইক পড়ল! পার্সেল ডেলিভারি ইজ টেম্পোরারি, রিল ইজ পার্মানেন্ট। লাইফে ফোকাস করেন।
​**(হঠাৎ, একটি বিশাল, আধুনিক কাঠের ক্রেট অফিসের কাঁচের দরজার সামনে বিকট শব্দ করে এসে থামে। এটি অফিসের প্রবেশ পথ পুরো আটকে দেয়। ক্রেটটি দেখতে আধুনিক, কিন্তু দৈত্যাকার—প্রায় একটি ছোট ফ্রিজের সমান, এবং তাতে চকচকে 'জরুরি ডেলিভারি' স্টিকার লাগানো।)
​কচি: (বাইক থেকে লাফিয়ে নেমে, উত্তেজনায় চিৎকার করে) রতন ভাই, দেখেন! এইটা কী পার্সেল? কোনো এলিয়েনশিপ? এইটা ডেলিভারি করতে তো ট্রাক লাগবে, বাইক না! ভেতরের জিনিসটা যদি লাইভ করা যায়, তাইলে ইনস্টাগ্রামে আমার ফলোয়ার ডাবল হবে!
রতন: (কম্পিউটার থেকে চোখ তুলে, চিৎকার করে) এইটা কী! কে পাঠাইছে এইটা? আমাদের সিস্টেমে এই সাইজের কোনো ইনভয়েস নাই! এইটা তো অফিসের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিল! আজকের সমস্ত পিকআপ ডেডলাইন মিস হবে! জরিমানা! জরিমানা হবে!
​দৃশ্য ২: কাউন্সিলরের 'স্মার্ট পিআর' তত্ত্ব
​**(পথচারী ও অন্যান্য ডেলিভারি রাইডাররা পার্সেলটি ঘিরে ভিড় করেছে। মিস. মনিরা, তার সহকারী এবং একটি রিং-লাইট হাতে লাইভ-ক্যামেরাসহ এগিয়ে আসেন। তিনি লাইভে কথা বলছেন।)
​মিস. মনিরা: (ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে) হ্যালো শিমুলতলী! আমি আপনাদের কাউন্সিলর মনিরা! দেখুন! এই পার্সেলটা কী! এইটাই হলো 'স্মার্ট বাংলাদেশ'-এর স্বপ্ন! বিদেশে অর্ডার দেওয়া কোনো হাই-টেক সার্ভার বা ডাটা সেন্টার! এইটা আমাদের এলাকার উন্নয়নের প্রতীক!
রতন: (বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে) ম্যাডাম! এটা কোনো সার্ভার না! এটা একটা ডেলিভারি! আর এটা আমাদের কাস্টডি! এইটা রাস্তায় থাকলে আমাদের সব কাজ বন্ধ! প্লিজ, এইটা সরাবার ব্যবস্থা করেন!
মিস. মনিরা: (হাত নেড়ে রতনকে থামিয়ে) রতন, ডোন্ট বি নেগেটিভ! এটা আন্তর্জাতিক ব্যাপার! আপনার কাছে কি 'বৃহৎ আকারের মালের জন্য দ্রুত ডেলিভারি প্রোটোকল' বা এই প্যাকেজিংয়ের জন্য কোনো অফিশিয়াল 'সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট' আছে?
রতন: (প্রায় কেঁদে ফেলে) সাসটেইনেবিলিটি না ম্যাডাম! আমার কাছে শুধু একটা ফেইলড কেপিআই-এর রিপোর্ট আছে! আর একটা ভাঙা স্ক্যানার! এইটা সরালে বাঁচি!
চঞ্চল: (ফোন হাতে পার্সেলটির কাছে গিয়ে) রতন ভাই, চিল! ম্যাডাম, পার্সেলটা এমন অ্যাঙ্গেলে রাখেন, যাতে রিং লাইটের আলোটা ঠিকমতো পড়ে। আমি একটা রিল বানাই! ক্যাপশন হবে: 'রহস্যময় পার্সেল: স্মার্ট সিটি চ্যালেঞ্জ!'
​দৃশ্য ৩: পার্সেল ভাঙার 'পরীক্ষামূলক উন্মোচন'
​**(পার্সেলটি রাস্তা আটকে রাখায় মানুষের চলাচল বন্ধ। গ্রামের লোকজন আরও ক্ষিপ্ত ও কৌতূহলী।)
​কচি: (চিৎকার করে) আর অপেক্ষা না! ভাইসব! ভেতরে মনে হয় কোনো বিদেশি গুপ্তধন আছে! নয়তো এত হাই-টেক সেফটি ক্যান? চলেন, ওপেন করি! যদি ভেতরে সত্যি গোল্ড থাকে, তাইলে সেই টাকা দিয়া আমাদের অফিসের এসি লাগাবো!
রতন: (কাঁদতে কাঁদতে) না! না! তোমরা সবাই কর্পোরেট মামলা খাবা! জেল! এইটা কুরিয়ারের কাস্টডি! মালের গায়ে আঁচড় পড়লে আমার চামড়া তুলব!
মিস. মনিরা: (বক্তৃতার ভঙ্গিতে, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে) স্থির! জনগণের আবেগের বহিঃপ্রকাশে আমি বাধা দিতে পারি না। তবে এটা ভাঙা যাবে না। শুধু 'পরীক্ষামূলক উন্মোচন' করা হবে। রতন, আপনি ফোন বের করে ছবি তুলতে থাকেন। ভেতরের মালের 'কর্পোরেট ডকুমেন্টেশন' করতে হবে! আমরা প্রিমিয়াম প্যাকেজিংয়ের সাক্ষী হইতেছি!
​**(কাউন্সিলরের কথায় সাহস পেয়ে, কচি ও চঞ্চল অন্যান্য রাইডারদের সাথে আধুনিক কাঁচি, হাতুড়ি আর ব্লেড দিয়ে পার্সেলটির কাঠ ভেঙে ফেলল। একে একে মোট সাতটি স্তর খোলা হলো—কাঠ, দামী রাবার ফোম, আল্ট্রা-প্রোটেক্টিভ এয়ার-ব্যাগের মোড়ক, এরপর ফাইবার শিট... হতাশা বাড়তেই থাকল।)
​দৃশ্য ৪: রহস্যের যবনিকাপাত - Aromatic Ending
​**(ভিড় আরও বেড়ে গেছে। তারা একের পর এক সাতটি স্তর উন্মোচন করল। অবশেষে শেষ, অতি-ছোট, স্টাইলিশ ডিজাইনের একটি প্যাকেজ খোলা হলো। ভেতরে পাওয়া গেল—একটি সিঙ্গেল সার্ভিং-এর হাতে তৈরি, বাসি 'আর্টিজান' কফি বিন।)
​সকলে: (বিস্ময়ে নয়, চরম বিরক্তি ও হতাশায়) কীহ্! এইডা কী! এক প্যাকেট কফি বিন? সিঙ্গেল?
রতন: (ধীর পায়ে কফি বিনটির কাছে যান। প্যাকেটটি তুলে ধরে, প্রায় ফিসফিস করে) কফি... শুধু কফি! এই প্যাকেজের ওজন ছিল পঞ্চাশ কেজি! আর আমার সরকারি জীবনের ওজন চল্লিশ বছর! চল্লিশ বছরের কেপিআই, রেটিং, বসকে খুশি করা... এই সামান্য কফি বিনের কাছে সব হার মানলো!
*(রতন হঠাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন। কিন্তু তাঁর কান্নাটা করুণ নয়, হাস্যকরভাবে হতাশ।)
রতন: আমারে বাঁচাও! এই কুরিয়ার সার্ভিস আমারে হার্ট অ্যাটাক করাইবো! এই কফি বিনটা আমারে দেখাইয়া দিল, কর্পোরেট জীবনে বড় কিছু করার চেষ্টা করাটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল!
​**(কচি কফি বিনের প্যাকেটের নিচে একটি ছোট প্রিন্টেড কার্ড পেল।)
​কচি: (কার্ডটি পড়ে) "প্রিয় রতন ভাই, আপনার কর্পোরেট জীবনে প্রথম কফি ব্রেক-এর জন্য! ভুলে এই প্যাকেজে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এটা আমাদের নতুন ক্লায়েন্টের 'প্রিমিয়াম প্যাকেজিং'য়ের ডেমো। প্যাকিং কেমন হয়েছে জানাবেন! - আপনার হেড অফিসের টেনশন-মুক্ত টিম।"
রতন: (কথা বলার শক্তি হারিয়ে, কেবল মাথা নেড়ে) ডেমো... শুধু ডেমো...
মিস. মনিরা: (কচিকে সরিয়ে কার্ডটি কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন, লাইভ ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে) মিথ্যা কথা! এইটা ষড়যন্ত্র! এই কফি বিন হইলো আমগো শিমুলতলী অঞ্চলের প্রতীকী সম্পদ! এই সাতটা প্যাকেজিং প্রমাণ করে যে, ছোট জিনিসকেও প্রিমিয়াম করার ক্ষমতা শুধু আমারই আছে! এটাই হইলো 'স্মার্ট প্যাকেজিং, স্মার্ট ডেলিভারি'!
​চঞ্চল: (হেডফোন পরে, হাই তুলে) রতন ভাই, চাপ কম নেন। এইডা হইলো জীবন। এতো প্যাকিংয়ের পর যদি একটা ব্র্যান্ড নিউ স্মার্টফোনও আসত, তবুও তো চার্জে দিতে হইত! (কফি বিনটি পকেটে ভরে) আমার ছুটি দরকার। আমার আজকের রিলটা ভাইরাল হইছে, এখন নতুন ভাইরাল কন্টেন্টের স্বপ্ন দেখতে হইব।
​**(চঞ্চল আবার দেওয়ালে হেলান দিয়ে চোখে ফোন ধরে হাসতে লাগল। রতন কেবল কফি বিনটির দিকে তাকিয়ে ডেস্কে মাথা গুঁজে রইলেন। কাউন্সিলর মনিরা জনতাকে নিয়ে চলে গেলেন, ভাঙা ফোমের স্তূপ দেখিয়ে 'সাসটেইনেবিলিটি'র নতুন দিক ব্যাখ্যা করতে করতে।)
সমাপ্ত

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নতুন নবীর আবির্ভাব!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪০



গত ২৫ ডিসেম্বর প্রবল বন্যায় পৃথিবী ধ্বংস হবার কথা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ঘনার এক স্বঘোষীত নবী। বন্যার হাত থেকে ভক্তদের বাঁচাতে নূহ নবীর মত নৌকা বানাতে ভক্তদের কাছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×