মেয়েটির নাম আনন্দ। এই নামটি তার মা রেখেছিল। হয়ত এই ভেবে যে, মেয়েটির জীবন আনন্দময় হবে, কিন্তু মেয়েটির জীবনে কেন জানি কোনো আনন্দ ই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবুও মেয়েটির জীবন চলছিলো, স্রোত বিহীন নদীর মত। হঠাৎ সেই নদী তে জোয়ার এল, ভালোবাসার জোয়ার, কিন্তু আবার তা হারিয়েও গেল, কোন সুদূরে।
ধরা যাক, মেয়েটি যে স্কুলে পড়ে, তার নাম "ম" হাই স্কুল। আন্ত: স্কুল কুইজ প্রতিযোগিতায় মেয়েটি স্কুল থেকে কুইজ প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। ৩ জনের টিম। টিম লীডার, দশম শ্রেণীর সবচেয়ে ভালো ছাত্র নেহাল। ও, বলা হ্য়নি, মেয়েটি নবম শ্রেণীর ছাত্রী। টীমের থার্ড মেম্বার মেয়েটির সহপাঠিনী, মিতুল। ভালো ভাবেই প্রস্তুতি চলছিলো। অথচ, কুইজের আগের দিন, হঠাৎ করেই নেহাল অসুস্থ হয়ে পড়ল। মিতুল আর আনন্দ কুইজ ভেন্যুতে এসে সে এই কথা ভেবে অবাক হচ্ছিল, কে তাহলে নতুন মেম্বার হিসেবে আসবে। এই প্রতিযোগিতায় জেতা ওদের জন্য খুব গুরূত্বপূর্ণ। কেননা ওরা ই হোস্ট স্কুল। অথচ ওরা এখনো জানে না, নতুন সহপ্রতিযোগী কে। অনুস্ঠানের ঠিক দশ মিনিট আগে লম্বামত এক ছেলে এসে বললো, আমি কি খুব দেরি করে ফেলেছি? আমি অন্তর।
আনন্দ খুব অবাক হয়ে গেলো। কেননা, ছেলেটি এত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুস্ঠানে অনেক দেরি করেছে। কিছুটা বিরক্ত বোধ করল ও। যাহোক ছেলেটি সিনিয়র হতে পারে ভেবে, আনন্দ কিছু বললো না। অনুস্ঠান শুরু হয়ে গেল। ওরা ভালোই করছিলো। কিন্তু শেষের দিকে, কেন জানি Buzzer Round এ সমন্বয়হীনতার অভাবে ওরা ভালো স্কোর করতে পারছিল না। এখন লাস্ট Round এ ভালো না করতে পারলে, টীম ফাইনালে কোয়ালিফাই করবে না। কিন্তু শেষ Round মাইথোলজি Round। এ রাউন্ডে আনন্দ আর নেহাল ভাই ভরসা। অথচ নেহাল ভাই নাই। তাই আনন্দ খুব প্রেশার ফিল করছিলো। অথচ, নতুন ছেলেটির কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই!
অবশেষে মাইথোলজি Round শেষ হল। খুব ভালোভাবেই ওরা ফাইনালে কোয়ালিফাই করেছে। প্রথমে আনন্দ ভালোভাবেই উত্তর দিচ্ছিল। কিন্তু শেষে, যখন ও আটকে গেলো, ঠিক তখনই অন্তর নামের ছেলেটি সব উত্তর ঠিকঠিক ভাবে দিয়ে দিল।
Lunch Break. ছেলেটি এসে আনন্দের পাশে বসল। বললো:
আপনি খুব ভালো করেছেন, আপু।
ধন্যবাদ।
আনন্দ একটু অবাক হল, ছেলেটি তাকে আপনি করে বলছে বলে। আনন্দ বললো, আপনি কি ক্লাশ টেন "এ" সেকশনের?
ছেলেটি বললো, আমি তো নাইনে পড়ি!
আনন্দ হকচকিয়ে বললো, আমিও তো!
আসলে ছেলে আর মেয়েদের শিফট আলাদা তো, তাই বুঝতে পারি নি, ছেলেটি বললো।
এরপর ছেলেটি গড়গড় করে অনেক কথা বলে গেলো, আনন্দ অবাক হয়ে শুনছিলো। ফাইনাল পরদিন হওয়ায়, Lunch Break এর পর আর কোনো কাজ ছিল না। কখন যে অনুস্ঠানের সময় শেষ হয়ে এল বুঝতেই পারে নি। হঠাৎ ছেলেটি বললো, কাল কিন্তু আমি আসব না। নেহাল ভাই আসবে। আনন্দর কেনো জানি একটু মন খারাপ হল। সে বললো, আমি কি তোমার ফোন নম্বর পেতে পারি? ছেলেটি বললো, হ্যা; কিন্তু আমার কাছে যে কোন কাগজ নেই। আনন্দ ও খেয়াল করল, ও নিজেও আজ কোনো কাগজ বা খাতা আনেনি। ছেলেটি হঠাৎ বললো, তোমার হাত দাও। হাতে লিখে দেই।
আনন্দ খানিকটা অজান্তেই হাত বাড়িয়ে দিল...।
(চলবে...)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


