somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্যা লাস্ট ডেইজ অফ মিস্টার হাসান (একজন ব্যর্থ মানুষের শেষ জীবন এবং একটি সত্য-কঠিন বাস্তবতা)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গল্পের প্রথম পর্ব
গল্পের দ্বিতীয় পর্ব

কলিং বেল বেজে উঠল। পারভিন আক্তার ফিরেছেন।
হাসান সাহেব ঘড়ির দিকে তাকালেন। ১২টার মতো বাজে। একটু পর ওষুধ খাওয়ার কথা। তাকে অবশ্য এই ব্যাপারগুলো নিয়ে মোটেই চিন্তার করতে হয় না। তার স্ত্রী খুব সচেতনতার সাথে এসব ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখে।
কিছুক্ষণ পর পারভিন আক্তার হাসান সাহেবের পাশে এসে বসলেন। ছোটখাটো কথাবার্তা বললেন স্বামীর সাথে।

-কেমন লাগতেসে এখন?

-ভালোই তো।

-ওষুধ খাওয়ার কথা খেয়াল আসে?

-আসে।

-তোমার ছেলের তো পরীক্ষা। বেশি দিন নাই।

-হুঁম। জানি।

-ছেলেটা ভাল করে পড়াশোনা করতে পারতেসে কি না কে জানে। আমার খুব চিন্তা লাগে। কে জানে কি রকম রেজাল্টা হয়।

-আল্লাহ ভরসা।

-তা ঠিক।

এরপর কিছুক্ষণ দুজনই চুপচাপ বসে থাকেন। ছেলের পরীক্ষা নিয়ে তারা চিন্তিত। হাসান সাহেব মনে মনে ছেলের জন্য দোয়া করেন। তার এখন অবশ্য নামাজ পড়ারও সামর্থ্য বা সুযোগ নেই।

-আমি তোমার ওষুধ রেখে যাইতেসি। ঘড়ি দেখে খেয়ে নিও।

-আচ্ছা।

-তুমি কি একটু শুবা এখন? শুয়ে থাকতে পার। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে ভাল লাগবে।

হাসান সাহেব কিছু না বলে অবোধ শিশুর মতো শুয়ে পড়েন। পারভিন আক্তার স্বামীর গায়ে চাদর টেনে দেন। তার চোখ সামান্য ছলছল করছে। হাসান সাহেবের চোখে ঘোলাটে শূণ্য দৃষ্টি। তাদের মধ্যে আর কোন কথা হয় না।

হাসান সাহেব শুয়ে আছেন। তার চোখের পাতা ভারি হয়ে আসছে। তিনি কি ঘুমিয়ে যাচ্ছেন? ঘুমানোর কথা না। এই অসময়ে তার ঘুম আসাটা অস্বাভাবিক।
হাসান সাহেব চোখ মেলার চেষ্টা করছেন। তার কষ্ট হচ্ছে। তিনি ছেলের কথা চিন্তা করা শুরু করলেন। ছেলেটার এস এস সি পরীক্ষা সামনে। প্রথম দিন কি পরীক্ষা? তিনি কি জানেন? হাসান সাহেব চিন্তা করলেন। মনে করতে পারলেন না। আচ্ছা, প্রথম পরীক্ষার দিন তিনি কি ছেলের সাথে যেতে পারবেন? অবশ্য পারার কোন কারণ নেই। তিনি যে প্রায় অচল।

হাসান সাহেব বিচিত্র ব্যাপার লক্ষ করলেন। তার হাত পা কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে। হাত পা আছে বলে অনুভূতি হচ্ছে না। তার চোখের পাতা অসম্ভব ভারি। স্ত্রীকে ডাকতে চেষ্টা করলেন। মুখটা সামান্য ফাঁক হল। কিছু বলতে পারলেন না। তিনি কি মারা যাচ্ছেন? নাকি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন? এটাই কি মৃত্যু? এত সহজ? নাকি তার ভুল?

ঘড়িতে প্রায় একটা। হাসান সাহেব এখন আর পার্থিব অনুভূতির মাঝে নেই। তিনি জীবন মৃত্যুর সীমারেখার মাঝে অবস্থান করছেন। তার চোখ বন্ধ। হাত পা সম্পূর্ণ স্থির। শুধু বুকটা উঠানামা করছে। তবে তা স্বাভাবিক নয়। বুকের ওঠানামা দেখেই বোঝা যায়, তিনি ঠিক প্রচলিত অর্থে নি:শ্বাস নিতে পারছেন না।

পারভিন আক্তার স্বামীর ঘরে এলেন। সামান্য বিস্মিত। তার স্বামীর ওষুধ খাওয়ার সময় হয়েছে। অথচ তিনি ঘুমাচ্ছেন।

-এই ওঠ।
কোন প্রত্যুত্তর নেই।

-এই, ওঠ ওঠ। ওষুধ খাওয়া লাগবে এখন।
সব চুপ।

পারভিন আক্তার স্বামীর কপালে হাত রাখলেন। কপাল ঠান্ডা। তিনি সামান্য চমকালেন। স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে জাগানোর চেষ্টা করলেন। না। কোন জবাব নেই।

-সাইফ। আই সাইফ।

-জ্বি আম্মা।

-এদিকে আয় তো।
সাইফ বাবার ঘরে আসে। পারভিন আক্তারের মুখ ভয়ানক গম্ভীর।

-দেখ তো তোর বাপ ঘুম থেকে উঠতেসে না ক্যান। এতক্ষণ ধরে ডাকতিসি।

সাইফ তার বাবার পাশে এসে বসে। ডাকতে থাকে আস্তে আস্তে।

-আব্বা, ও আব্বা। আব্বা। উঠেন। ওষুধ খাইতে হবে।
কোন প্রতিক্রিয়া নেই।

সাইফ বাবার হাত ধরে চুপচাপ বসে থাকে। পারভিন আক্তার ভয়ানক শংকিত। তিনি মেয়েদের ফোন করলেন। কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীস্বজনকেও জানালেন ঘটনার কথা। কিছুক্ষণের মধ্যে অনেকে হাজির হল।

সবাই হাসান সাহেবের ঘরে এসে স্থির হয়ে যায়। কারণ তখন তার ঘরের দৃশ্যটা এরকম-
তিনি বিছানায় শোয়া। তার চোখ বন্ধ। হাত পা নিথর। মুখ সামান্য ফাঁক করা। বুকটা অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে। কখনো ওঠানামা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যখন মনে হয় ওঠানামা বন্ধ হয়ে গেছে, তখনই আবার শুরু হচ্ছে। হাসান সাহেবের হাত ধরে তার পাশে স্থির হয়ে বসে আছে তার একমাত্র ছেলে। তার চোখে স্রোতস্বিনীর স্রোত। সে কোন কথা বলছে না। বলতে পারছে না।



Death is a Dialogue between
The Spirit and the Dust.
"Dissolve" says Death -- The Spirit "Sir
I have another Trust" --

Death doubts it -- Argues from the Ground --
The Spirit turns away
Just laying off for evidence
An Overcoat of Clay.


Death is a Dialogue between
By Emily Dickinson


চলবে.........
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১২:০৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×