পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, কূটনীতিক, রাজনীতিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মীর ব্যবহার করা ৫০ হাজার ফোন নম্বরের গোপন তথ্য চুরি করা হয়েছে।
অনলাইন বিবিসি ও গার্ডিয়ান বলেছে, কর্তৃত্ববাদী ও বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্পেষণমূলক কিছু শাসকগোষ্ঠী ইসরাইলে তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে তার সমালোচক, বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে।
কানাডার সিটিজেন ল্যাব লিখেছে, ৪৫টি দেশে তারা ৩৬টি অপারেটরের মধ্যে ৩৩টির সঙ্গে সন্দেহজনক ‘পেগাসাস ইনফেকশন’ সনাক্ত করতে পেরেছে। এসব দেশের মধ্যে আছে-
বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রাজিল, কানাডা, কোস্টারিকা, মিশর, ফ্রান্স, গ্রিস, ভারত, ইরাক, ইসরাইল, জর্ডান, কাজাখস্তান, কেনিয়া, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লাতভিয়া, লেবানন, লিবিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, পোল্যান্ড, কাতার, রোয়ান্ডা, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, টোগো, তিউনিশিয়ান, তুরস্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উগান্ডা, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, উজবেকিস্তিান, ইয়েমেন ও জাম্বিয়া। এই শনাক্তকরণে ব্যবহার করা হয়েছে ডিএনএস সার্ভার।
এশিয়ায় ৫টি এমন অপারেটর শনাক্ত করতে পেরেছে সিটিজেন ল্যাব। এগুলো হলো গ্যাংস, চ্যাঙ, মারলিয়ন, তুলপার ও সিরদারিয়া। বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের জুন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ, ব্রাজিল, হংকং, ভারত ও পাকিস্তানে আড়ি পাতার কাজ করছে গ্যাংস নামের অপারেটর। এক্ষেত্রে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
অপারেটর গ্যাংসয়ের সন্দেহজনক সংক্রমণের স্থান হলো বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), সারা দেশ। চ্যাং নামের অপারেটর থাইল্যান্ডে চোখ রেখেছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে। কাজাখস্তানে ২০১৭ থেকে এখন পর্যন্ত সক্রিয় অপারেটর তুলপার। কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুরস্কে সক্রিয় ২০১৬ থেকে এখন পর্যন্ত সিরদারিয়া নামের অপারেটর।
তবে বাংলাদেশে কোনো ধরনের ‘অসঙ্গতি পাওয়া যায়নি’ মন্তব্য করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, সরকার এ বিষয়ে ‘সতর্ক রয়েছে’।
বাংলাদেশ পেগাসাস সফটওয়্যার কিনেছে কিনা জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, এ রকম সফটওয়্যার কেনার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টা ভালোভাবে বলতে পারবে।
তাহলে এবার প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, সরকার এ প্রযুক্তি না কিনলে বাংলাদেশে কারা ব্যবহার করছে এই স্পাইওয়্যার? তাহলে কি সরকারের বাইরের কোনো গোষ্ঠীর হাতে পড়েছে এ প্রযুক্তি? সেটা হলে তো ভয়ংকর কথা। নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বলতে তো আর কিছুই রইল না।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সাইবার জগতে সব সময় নিরাপদ থাকতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। আজ পেগাসাস নামে স্পাইওয়্যার আলোচনায় এসেছে, কয়েকদিন বাদে হয়তো আরেকটি বিষয় সামনে আসবে। আমাদের বিডিসার্ট (কম্পিউটার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম ফর বাংলাদেশ) অন্যান্য দেশের সাথে এসব বিষয়ে তথ্য আদান প্রদান করে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
পেগাসাস সফটওয়্যার সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুন- পেগাসাস সফটওয়্যার : ইসরাইলি প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্বজুড়ে গোপন নজরদারি
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১:৪১