somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঙ্গিত শিল্পী "সাদি মহম্মদ"এর আত্মহত্যা এবং মানসিক বিশ্লেষণ !

১৬ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই পৃথিবীতে আট বিলিয়ন মানুষ, অথচ শত কোটি মানুষ নিজের কষ্ট এবং মানসিক বিষাদ প্রকাশ করার জন্য বিশ্বস্ত মানুষ খুঁজে পায় না। নিজের ভাই/বোনকে বলতে পারে না, বন্ধুকে বলতে পারে না, নিজের সঙ্গিকেও না। অবাক করার বিষয়! তাই না? যে মানুষটাকে আপনি আজ হাসতে দেখছেন, কাল হয়ত সে আত্বহত্যা করল। আপনি অবাক হয়ে চিন্তা করলেন, কি এমন কষ্ট ছিল তার মাঝে, যে নিজেকেই শেষ করে দিল। এটা আপনার আর আমার অযোগ্যতা যে, আমি এবং আপনি চলে যাওয়া মানুষটার কথা শোনা বা তাকে মানসিক ভাবে সাহায্য করার জন্য তার সামান্য আস্থাও অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। অথচ আমরা তার বন্ধু ছিলাম, ভাই ছিলাম, বোন ছিলাম। সবাই খুব ব্যস্ত ছিলাম।

সঙ্গীত শিল্পী "সাদি মহম্মদ" এর আত্যহত্যা নিয়ে নৃত্য শিল্পী "শিবলী মহম্মদ" এর বক্তব্য শুনলাম। পুরো বক্তব্যে সম্মান এবং পুরুস্কার না পাওয়ার একটা হাহাকার ছিল। ওনার বিষয়ে দুই লাইন পড়ে মনে হল, মানুষটার এমনিতেই ছোটবেলা থেকে না পাওয়ার বেদনা আছে, চোখের সামনে বাবা, চাচা, ভাই সহ একাত্তরে অনেকের নৃশংস হত্যা দেখার ট্রমা আছে। যাইহোক, "সাদি মহম্মদ" BIT Khulna বা বর্তমান KUET এর Civil Engineering এ ২ বছর পড়া লেখা করার পর ছেড়ে দেন এবং বৃত্তি নিয়ে শান্তিনিকেতন এ যান। এরপর বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ইন্জিনিয়ারিং ছেড়ে সঙ্গিত নিয়ে বেঁচে থাকার সাহসই বলে দিচ্ছে যে সঙ্গীত ওনার জীবনে কতটা পূজনীয় ছিল। কি এমন কষ্ট নিয়ে আত্ত্বহত্যা করলেন?

ওনার মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। জীবনে একেক জনের কাছে সাফল্যের সংগা একেক রকম। মানুষের সফল হওয়ার উপলব্ধির উপর তার মানসিক সুস্ততা অনেকাংশে নির্ভর করে। কেউ খুব বেশি অর্জন না করেও সুখি। কেউ অনেক কিছু করার পরেও সুখি নয়। কারন কারও কারও সাফল্য অনুভব করার জন্য অন্যের বৈধতা বা ভ্যালিডেশন দরকার হয়। কারও কারও লাগে না। যাদের লাগে না, তারা নিজের সুখ নিজের ভেতর খুঁজে পায়। যাদের অন্যের বৈধতা বা ভ্যালিডেশন লাগে, তাদের সুখ এবং দুঃখ অন্যের দেয়া স্বীকৃতির উপর নির্ভর করে।

"সাদি মহম্মদ" এর বয়স ৬৬। মানুষ বয়সের সাথে সাথে, দুরন্তপনা, সরলতা, শারিরিক শক্তি এবং যৌবন হারিয়ে ফেলে। এই হারিয়ে ফেলা জিনিসের বিপরীতে ধিরে ধিরে টাকাপয়সা, সম্মান, ক্ষমতা এবং সফলতার প্রাপ্তি ঘটে। এই ট্রেডঅফ যাদের ক্ষেত্রে মসৃন হয়, তারা কম নস্টালজিক হয়। টাকাপয়সা, সম্মান, ক্ষমতা এবং সফলতা উপভোগ করতে করতে একদিন এই মায়াময় পৃথীবি ছেড়ে বিদায় নেয়। যারা আজকের দুনিয়ার সঙ্গা অনুযায়ী সফল না, বা ক্ষমতাধর হতে পারেন নাই। তারাও তো বয়সের সাথে সাথে দুরন্তপনা এবং যৌবন হারিয়ে ফেলেছেন। এই হারিয়ে ফেলা সবকিছু এবং কিছু অর্জন না করার অনুভুতি থেকে বুড়ো বয়সে ডিপ্রেশন আসতেই পারে। এছাড়া অবিবাহিত ছিলেন। জীবনে বৈচিত্র কম ছিল। আমার কাছে তার আত্তহনন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এজন্য বয়স্ক মানুষকে বেশি বেশি সম্মান এবং সমাদর করুন, ভালবাসুন, সম্ভব হলে ওনাকে পুরস্কৃত করুণ। "সাদি মহম্মদ" এর , রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি আত্মোৎসর্গ এবং অবদান অনুযায়ী অবশ্যই পুরস্কৃত করার দরকার ছিল। শেষ বয়সে মানুষ নিজের অর্জনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই বাকি জীবন পার করে দেন।

যাইহোক, বার বার কাছের মানুষটিকে জিজ্ঞেস করুন--আপনি ভাল আছেন, কোন চিন্তা করবেন না, আমরা সবাই আপনার পাশে আছি। নিঃসঙ্কচে আপনি নিজের কষ্টের কথা বলতে পারেন। মানসিক কষ্ট এমন এক জিনিস, যা আপনাকে শেষ করে ফেলবে।

এ জন্য ইসলামের অনেক জিনিস আমার বেশ ভাল লাগে। নিজের কষ্ট স্রষ্টার কাছে ট্রানসফার করার অনকে উপায় আছে। প্রচুর রেওয়ার্ডিং সিস্টেম আছে। দুনিয়ায় কিছু না পাওয়াকেই ইসলাম বরং পুরস্কৃত করে। পরকালের সফলতাকেই প্রকৃত সফল হিসেবে গন্য করা হয়। দুনিয়ায় আপনি যেন যত গরিব, যত কম অর্জন করলেন, যত কম ক্ষমতাবান, ইসলামে আপনি ততটাই সফল। কষ্ট পাওয়া, রোগ হওয়াতেও ইসলাম আপনাকে পুরস্কৃত করার উপায় রেখে দিয়েছে। সর্ব অবস্থায় আল্লাহর প্রসংসা করতে বলেছে। এই জিনিস গুলির মানসিক ফজিলত কত বেশি তা প্রকৃত মুসলিমরা বুঝতে পারে। অন্যধর্মের ক্ষেত্রেও আমি বলব, প্রকৃত ধার্মিক মানুষের মানসিক বিষাদ খুব কম থাকে। পৃথিবীর সকল মানুষ ভাল থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ৮:১৭
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×