কিছু কথা লিখতে চাই,
১১ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলো আজ । আওয়ামীলীগ বিপুল ব্যবধানে জয়ের পথে অন্যদিকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শয্যাশায়ী অবস্থা ।
আসলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দেশের সব ডেভেলপমেন্ট এর দায় কিন্তু সরকারের একার না । এতে বিরোধীদলেরও ভূমিকা আছে । সরকারি দল ক্ষমতা পেয়ে যাতে বেপরোয়া না হয়ে যায় সেটা কন্ট্রোলের দায়িত্ব বিরোধী দলেরও । একই সাথে সরকারের ভালো উদ্যোগে সহায়তা করা আর জনবিরোধী উদ্যোগে ন্যায়সঙ্গত উপায়ে বাধা দেয়াটাই হলো তাদের কাজ ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতাসীন দল সবসময়ই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে এসেছে । যেটা এই বিএনপি জামাতও খুব ভালোমতোই করে এসেছে । যেমন ২০০৬ এ ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে তারা দেড় কোটি ভুয়া ভোটার নিবন্ধন করেছিল । সেনাপ্রধান নিয়োগ করা হয়েছিল খালেদা জিয়ার এলাকার লোক(ফেনীর) জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদকে । একই সাথে তত্বাবধায়ক সরকারের নিয়মে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা সেই হিসেবে জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা কিন্তু তারা তাকে চায়নি । তারা বিচারপতিদের অবসরের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে দেয়(৬৭ থেকে ৬৯ এ উন্নীত করে) ফলে জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার সুযোগ রইলো না, সে পদে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো তার অব্যহীত আগের প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানের । এই কে এম হাসান এক দিকে ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমদের আত্মীয়। আরেক দিকে ছিলেন কর্ণেল সৈয়দ ফারুক রহমান (অব) এবং কর্ণেল আবদুর রশিদের (অব) এর আপন ভায়রা। !!!
চিন্তা করেন অবস্থা !!!
এগুলো ছিল সরাসরি পদক্ষেপ এছাড়া ছাত্রদলের ও শিবিরের কর্মীদের নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ সহ ক্ষমতায় যাওয়ার ফুল সেটআপ তারা করে রেখেছিল ।
এত কিছুর পরেও আওয়ামীলীগের প্রবল আন্দোলনের মুখে সব ভণ্ডুল হয়ে যায় । বঙ্গবন্ধুর খুনীর আত্মীয়কে প্রধান উপদেষ্টা করার এই ষড়যন্ত্র আওয়ামীলীগ ও মানুষ মেনে নেয়নি ।
এরপরেও বিএনপি জামাত জোট রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়ে পাতানো নির্বাচনের সর্বশেষ চেষ্টাটা করেন । কিন্তু আওয়ামীলীগ এর আন্দোলন সংগ্রামের মুখে সেটিও ব্যর্থ হয় ।
যদি আওয়ামীলীগ এসব আন্দোলন করতে ব্যর্থ হতো তাহলে কি হতো বলুন তো !
এজন্যই দেশের স্বার্থে শক্তিশালী ও দায়িত্বশীল বিরোধীদলের প্রয়োজন । এটা ডেভেলপমেন্ট ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার জন্য অনেক বেশি দরকার ।
কিন্তু বিএনপি বরাবরই বিরোধী দল হিসেবে তাদের দায়িত্ব উপেক্ষা করেছে । ৯ম সংসদের সিংহভাগ সময়েই তারা সংসদ বয়কট করেছিল । সংসদেই যদি তারা না থাকে তাহলে দেশের ব্যাপারে তাদের ভূমিকা কোথায় ?
রাজপথেও তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে । কতো গণ ইস্যু ছিল, যেমন তেলের দাম , গ্যাসের দাম বাড়ানো , গ্যাসের লাইন না দেয়া, গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি ইত্যাদি এগুলোর একটি বিষয় নিয়েও তারা বলার মতো কোন আন্দোলন করেনি ।
গ্রেফতার বা আইনি ঝামেলার কথাটি আসতে পারে কিন্তু রাজনৈতিক দলের এগুলো মোকাবেলা করেই রাজপথে টিকে থাকতে হয় । আওয়ামীলীগের উপরে কি কম অত্যাচার ও পুলিশি হয়রানি করেছিলেন উনারা ???
। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, রাজপথে তোফায়েল, আমু, রাজ্জাক, নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো নেতাকে পিটিয়ে পুলিশ রাস্তায় শুইয়ে দিয়েছিল । আওয়ামীলীগ এর ঢাকামুখী কর্মসূচিতে এক মিছিল থেকেই ৮০০০ জনকে গ্রেফতারের রেকর্ড ছিল । শিবিরের সন্ত্রাসীরা গ্রামকে গ্রাম আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের এলাকাছাড়া করেছিল, সংখ্যালঘুদের উপরে নেমে এসেছিল অত্যাচারের করাল গ্রাস, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল শিবির আর ছাত্রদলের দখলে ।
২১ শে আগস্টে গ্রেনেড হামলার পরে তারা আহত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের হাসপাতালেও পর্যন্ত যেতে বাঁধা দিয়েছিল, রক্ত সহ হামলার এভিডেন্স ধুয়ে ফেলেছিল । তাতে কি আওয়ামীলীগ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল ??? হয়নি । বাংলাদেশের এই অরাজনৈতিক দমন পীড়নের মুখেও টিকে ছিল আওয়ামীলীগ । এর কারণ জনমুখী আন্দোলন ও ডেডিকেটেড নেতাকর্মী ।
বিএনপি ২০০৯-১৪ পর্যন্ত বিরোধীদলে থাকাকালীন হরতাল , অবরোধ এসব করেছিল ১৯৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য । এটা পাবলিক ভালোভাবে নেয়নি । গ্যাস, পানি , গাড়ি ভাড়া নিয়ে কয়টা হরতাল অবরোধ দিয়েছিলো বিএনপি ??
স্মরণ করে বা নেটে খুঁজেই দেখুন। আর নিজেই অবাক হোন । মানুষের ইস্যুতে না থেকে রাজাকারের ইস্যুতে মাঠে নামলে কিভাবে জনসমর্থন থাকবে।
আর বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝেও এতোটা ডেডিকেশন নেই দলের ব্যাপারে । কথাটি শুনে বিএনপির সমর্থকরা কষ্ট পেলে বা রাগ হলেও করার কিছুই নাই, এটাই বাস্তবতা। বিভিন্ন দলের পল্টিবাজ, ডিগবাজিবাজ , বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক আমলারা হলো এদের বড় বড় নেতা । রাজনীতি এসবে হয়না । ডেডিকেটেড লোকজন লাগে এতে । যারা তৃণমূল থেকে রাজনীতির মাধ্যমে উপরে উঠে এসেছেন তাদের মূল্যায়নটা সবার আগে করা উচিৎ ছিল ।
এছাড়া আগুন সন্ত্রাসে মেতে ওঠা ও পারিবারিক ও জামাতি ইস্যু নিয়ে হরতাল অবরোধ দিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা আরো কমিয়ে দিয়েছে । এখন হরতালকে কেউ আর বেইল দেয় না । হরতালও যে এককালে একটা বড় প্রতিবাদের ভাষা ছিল সেটা মানুষ ভুলেই গেছে ।। জন ইস্যু এড়িয়ে ব্যক্তিগত ইস্যুতে লাফালাফি করলে এমনটাই হওয়া বাস্তব ।
এছাড়া জামাতের সাথে এত কিসের খাতির । এই জামাতের কারণে বিএনপির অর্ধেক সর্বনাশ হয়েছে । জামাতের কারণে তারা একেতো দেশের মানুষের কাছে নিন্দিত একইসাথে বিদেশি শক্তিগুলোর কাছে । এই জামাত শিবির ও জঙ্গি সংশ্লিস্টতা তাদেরকে বিভিন্ন দেশগুলোর কাছে কম গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে । একথা কোনভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের দেশের রাজনীতির একটি বড় প্রভাবক । তাদের সাথেও এই জামাতের কারণে তাদের সম্পর্ক ভালো না। এই কারণে আওয়ামীলীগ একচেটিয়া সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে ।
এনিওয়ে,
এসব নানা কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা কমে যাচ্ছে । সামনের দিনেও যদি তারা নিজেদের না শোধরাতে পারে তাহলে তারা একেবারে অস্তিত্ব সংকটে পরে যাবে সেটা ১০০% নিশ্চিত । দেশ যত এগিয়ে যাবে মানুষ ততই শান্তি চাইবে । যেমন কোন ব্যবসায়ীর কাছে তার ব্যাবসাটাই আগে প্রাধান্য পাবে, পরে রাজনৈতিক বা দলীয় ইস্যু । তাই সামনে আন্দোলনের কৌশল যদি এরকম মারামারি , কাটাকাটি, আগুন সন্ত্রাস হয়ে থাকে সেটা তাদের আরো জনবিচ্ছিন্ন করে দলকে ইতিহাসের পাতায় নিয়ে যেতে পারে । তাই বিরোধীদল হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণ করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা এবং জন ইস্যু নিয়ে সরব হলেই তারা ফিরে আসতে পারে মূলধারায় । একইসাথে জামাত শিবিরকে ত্যাগ করে , বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উপহাস বাদ দিয়ে সত্যিকার অর্থে দেশের স্বাধীনতার মূলনীতিকে মাথায় রেখে রাজনীতি করাটাই তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পারে ।
আর ক্ষমতাসীন দল অর্থাৎ আওয়ামীলীগ যদি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পারে এবং দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নেয় এবং দলের মধ্যে উশৃঙ্খল ও দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের ব্যাপারেও কঠোর অবস্থান নেয়া সেটা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যেমন ভূমিকা রাখবে একইসঙ্গে তাদেরকে জনপ্রিয় হিসেবে ধরে রাখার জন্যেও যথেষ্ট হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪১