মুসলিমদের মাঝে খুব জনপ্রিয় টার্ম সুন্নাত বা সুন্নাহ !
কথায় কথায় সুন্নাত ! সব কাজেই শুধু সুন্নত !
তো এই সুন্নত আসলো কোত্থেকে ??
শাব্দিক অর্থে সুন্নাত বা সুন্নাহ মানে রীতি, পদ্ধতি, নিয়ম, Way, Rule ইত্যাদি
প্রচলিত ইসলামের "ফিকহের পরিভাষায়" সুন্নাত মানে হলো নবীর যেসব কাজ আমরা অতিরিক্ত সওয়াবের জন্য চাইলে করতে পারি আবার মন চাইলে ছেড়েও দিতে পারি সেটা হলো সুন্নাত। তবে সুন্নাত অস্বীকার করা চলবে না
আবার প্রচলিত হাদীসের পরিভাষায় সুন্নাত শব্দের অর্থ হলো রাসূল মুহাম্মাদ সালামুন আলাইহির বিভিন্ন কাজ করার তরিকা বা পদ্ধতি !
এই পর্যন্ত সবই আপনারা জানেন, তো যেটা জানেন না সেটা নিয়ে আলোচনা করবো এখন।
আপনি জানেন কি এই সুন্নাত শব্দটা কুরআনে কয়েকবার আল্লাহ ব্যবহার করেছেন।
সুন্নাত হলো শুধুমাত্র আল্লাহর । সুন্নাত মানে রাস্তা আর রাস্তা দেখায় আল্লাহ । আল্লাহ কোরআনে সুন্নাত শব্দটা শুধুমাত্র নিজের জন্য ইউজ করেছেন । আপনি নিচের আয়াতগুলোর তিলাওয়াত শোনেন আরবিতে, আপনিও বুঝবেন
(সূরা আল আহযাব, ৩৩: ৩৮)
مَّا كَانَ عَلَى النَّبِيِّ مِنْ حَرَجٍ فِيمَا فَرَضَ اللَّهُ لَهُ سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلُ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ قَدَرًا مَّقْدُورًا
আল্লাহ নবীর জন্যে যা নির্ধারণ করেন, তাতে তাঁর কোন বাধা নেই পূর্ববর্তী নবীগণের ক্ষেত্রে এটাই ছিল আল্লাহর চিরাচরিত বিধান। আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত, অবধারিত। [সুরা আহযাব - ৩৩:৩৮]
(সূরা আল আহযাব, ৩৩: ৬২)
سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلُ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا
যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না। [সুরা আহযাব - ৩৩:৬২]
(সূরা ফাতির, ৩৫:৪৩)
اسْتِكْبَارًا فِي الْأَرْضِ وَمَكْرَ السَّيِّئِ وَلَا يَحِيقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ إِلَّا بِأَهْلِهِ فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا سُنَّتَ الْأَوَّلِينَ فَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَبْدِيلًا وَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَحْوِيلًا
পৃথিবীতে ঔদ্ধত্যের কারণে এবং কুচক্রের কারণে। কুচক্র কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে। তারা কেবল পূর্ববর্তীদের দশারই অপেক্ষা করছে। অতএব আপনি আল্লাহর বিধানে পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর রীতি-নীতিতে কোন রকম বিচ্যুতিও পাবেন না। [সুরা ফাতির - ৩৫:৪৩]
(সূরা গাফির, ৪০:৮৫)
فَلَمْ يَكُ يَنفَعُهُمْ إِيمَانُهُمْ لَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا سُنَّتَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ فِي عِبَادِهِ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْكَافِرُونَ
অতঃপর তাদের এ ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করল। আল্লাহর এ নিয়মই পূর্ব থেকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে প্রচলিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে কাফেররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। [সুরা মু’মিন - ৪০:৮৫]
(সূরা আল ফাতহ, ৪৮:২২-২৩)
سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلُ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا
এটাই আল্লাহর রীতি, যা পূর্ব থেকে চালু আছে। তুমি আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না। [সুরা ফাতাহ - ৪৮:২৩]
(সূরা আল ইসরা, ১৭:৭৬-৭৭)
سُنَّةَ مَن قَدْ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِن رُّسُلِنَا وَلاَ تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحْوِيلاً
আপনার পূর্বে আমি যত রসূল প্রেরণ করেছি, তাদের ক্ষেত্রেও এরূপ নিয়ম ছিল। আপনি আমার নিয়মের কোন ব্যতিক্রম পাবেন না। [সুরা বনী-ইসরাঈল - ১৭:৭৭]
কোরআনে কোন "সুন্নাতে রাসূল", "সুন্নাতে নবী" বা "সুন্নাতে মুহাম্মদ" বলে কোন শব্দই নাই। অথচ কয়েকবার আছে "সুন্নাত আল্লাহ" বা আল্লাহর সুন্নাত।। মুসলিমদের জন্য সুন্নাত শুধুমাত্র আল্লাহর। আমরা আল্লাহর রীতি পদ্ধতির অনুগামী। কুরআনে রাসূলের সুন্নাত নামে যেহেতু কোন জিনিস আল্লাহ আনেন নাই তাই রাসূল এই কাজ করতে পারেন তা ভাবনার ওপারে !
মূলত ইসলামের নামে উমাইয়া আব্বাসীয় খলিফারা নানা রকম উদ্ভট আদেশ নিষেধ ও কাজকর্ম জায়েজ করতে এগুলো "রাসূলের সুন্নাত" নামে নতুন টার্মিনোলজির উদ্ভাবন করে চালিয়ে দেয় !
(রাসূলের উত্তম চরিত্র কেমন তা কোরআনের আলোকে কেমন সে নিয়ে একটা পোস্ট আসছে)
এছাড়া আরো অবাক হবেন আমাদের প্রচলিত মোল্লা সমাজ নিজেদেরকে মুফতি (যে ফতোয়া দেয়) বানিয়ে ফেলেছে ! অথচ কুরআনে এই ফতোয়া দানের অধিকার শুধুমাত্র আল্লাহর, আল্লাহই একক বিধানদাতা।
কুরআনে মানুষের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আল্লাহ এর ফতোয়া বা সমাধান দিয়েছেন, আল্লাহ কখোনই কুরআনে বলেন নাই হে মুহাম্মদ লোকরা ফতোয়া জানতে চাইছে, তুমিই ফতোয়াটা দিয়ে দাও....নাই...কোথাও নাই কুরআনে
আসুন দেখি আল্লাহর ফতোয়া দানের আয়াতগুলো
وَيَسْتَفْتُونَكَ فِي النِّسَاء قُلِ اللّهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ وَمَا يُتْلَى عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ فِي يَتَامَى النِّسَاء الَّلاتِي لاَ تُؤْتُونَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَتَرْغَبُونَ أَن تَنكِحُوهُنَّ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الْوِلْدَانِ وَأَن تَقُومُواْ لِلْيَتَامَى بِالْقِسْطِ وَمَا تَفْعَلُواْ مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللّهَ كَانَ بِهِ عَلِيمًا
তারা আপনার কাছে নারীদের বিবাহের ফতোয়া চায়। বলে দিনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে ফতোয়া দেন এবং কোরআনে তোমাদেরকে যা যা পাট করে শুনানো হয়, তা ঐ সব পিতৃহীনা-না রীদের বিধান, যাদের কে তোমরা নির্ধারিত অধিকার প্রদান কর না অথচ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার বাসনা রাখ। আর অক্ষম শিশুদের বিধান এই যে, এতীমদের জন্যে ইনসাফের উপর কায়েম থাক। তোমরা যা ভাল কাজ করবে, তা আল্লাহ জানেন। [সুরা নিসা - ৪:১২৭]
يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلاَلَةِ إِنِ امْرُؤٌ هَلَكَ لَيْسَ لَهُ وَلَدٌ وَلَهُ أُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَ وَهُوَ يَرِثُهَا إِن لَّمْ يَكُن لَّهَا وَلَدٌ فَإِن كَانَتَا اثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا الثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَ وَإِن كَانُواْ إِخْوَةً رِّجَالاً وَنِسَاء فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الأُنثَيَيْنِ يُبَيِّنُ اللّهُ لَكُمْ أَن تَضِلُّواْ وَاللّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট ফতোয়া বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত। [সুরা নিসা - ৪:১৭৬]
কোরআন থেকে কেউই নবীর সুন্নত, রাসূলের সুন্নাত বা মুহাম্মাদের সুন্নত অথবা আল্লাহর রাসূলদেরকে ফতোয়াদাতা তথা মুফতি হিসেবে একটা আয়াত দেখাাতে পারবে না, যদি কেউ পারবেন বলে মনে করেন তাহলে খুঁজে দেখতে পারেন, কেয়ামত পর্যন্ত সময় দেয়া হলো !
মানুষ এসব আল্লাহর টাইটেল নিজেদের ও আল্লাহর রাসূলের পাশে বসিয়ে উনাদেরকে ডামি গড বানাচ্ছেন, যা সুষ্পষ্ট শিরক
মুসলিমদের জন্য আল্লাহর প্রেরিত একমাত্র ফরজ বিধান হলো কোরআন
যিনি আপনার প্রতি কোরআনের বিধান পাঠিয়েছেন, তিনি অবশ্যই আপনাকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন। বলুন আমার পালনকর্তা ভাল জানেন কে হেদায়েত নিয়ে এসেছে এবং কে প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে আছে। [সুরা কাসাস - ২৮:৮৫]
আল্লাহর কিতাবের পথে আসুন, এর দাঁড়াই আল্লাহর রাসূল সালামুন আলা মুহাম্মদ মানুষকে উপদেশ দিতেন, আল্লাহর পথে ডাকতেন
তারা যা বলে, তা আমি সম্যক অবগত আছি। আপনি তাদের উপর জোরজবরকারী নন। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন। [সুরা ক্বাফ - ৫০:৪৫]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২১