somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদায় হজ্জ্বের ভাষণ নিয়ে মিথ্যাচার ! নবী কয়টা জিনিস রেখে গেছেন ? আসুন সত্যিটা জেনে নিই | প্রচলিত হাদীস পর্যালোচনা, পর্ব-১

২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সবাই জানি অর্থাৎ আমাদেরকে জানানো ও শেখানো হয়েছে যে নবী সালামুন আলা মুহাম্মাদ বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে ২টি জিনিস রেখে গেছেন, কোরআন ও নবীর সুন্নাত

"আমি তোমাদের ভেতর এমন বস্তু রেখে গেলাম, যদি সেটি আঁকড়ে ধর তাহলে তোমরা কখনো গোমরাহ হবে না: আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নত"
[মুয়াত্তা মালেক ৪৬/১.৩, মুরসাল হাদীস]

অথচ এই হাদীসটি সিহাহ সিত্তাহভুক্ত ৬টি হাদীস গ্রন্থের একটিতেও নাই !

তাইলে এই কথার সোর্স কি ??

এই বহুল প্রচলিত কথাটা আসছে মুয়াত্তা মালিকের ৪৬/১.৩ থেকে যা প্রচলিত হাদীস যাচাইবাছাই পদ্ধতির ক্রাইটেরিয়া অনুসারে একটি মুরসাল হাদীস। মুরসাল মানে হাদীসের বর্ণনায় কোন রাবীর নাম বাদ পড়া, অর্থাৎ এর বর্ণনাকারী পূর্ববর্তী কোন বর্ণনাকারীর নাম বলতে না পারলে সেটা মুরসাল হাদীস !

হাদীসের লিংক


এছাড়া আরো লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো বিদায় হজ্জের ভাষণ এতো বড় আর গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলেও টোটাল বিদায় হজ্জ্বের ভাষণের থেকে মাত্র এই এক লাইনই বর্ণনা করতে পেরেছেন রাবী ! বাকি জিনিস তার মনে নাই ! লক্ষাধিক মানুষের সামনে দেওয়া এই ভাষণের মাত্র এই ১টা লাইনই মনে আছে রাবীর, কি আশ্চর্য !

এবারে আসা যাক সিহাহ সিত্তাহয় তাইলে বিদায় হজ্জ্বের বর্ণনায় আছেটা কি !

বিদায় হজ্জ্বের বর্ণনা নিয়ে ৩টা হাদীস পাওয়া যায় যা হাদীসবিদদের কর্তৃক সহীহ সার্টিফিকেট প্রাপ্ত, সিহাহ সিত্তাহ ভুক্ত গ্রন্থসমূহে (মুসলিম, আবু দাউদ ও ইবনে মাজায়)। আসেন সেই তিনটা হাদীস দেখে নেওয়া যাক, সেখানে কয়টা জিনিস নবী রেখে গেছেন মর্মে উল্লেখ আছে


▮১▮

আমি তোমাদের মধ্যে একটি বিশেষ বস্তু রেখে যাচ্ছি। আমার পরে যদি তোমরা তা মজবুত ভাবে ধারণ কর, তবে তোমরা কখনও গোমরাহ্ হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব

রেফারেন্স
সুনানে আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
হাদীস নং ১৯০৩
সুনানে আবু দাউদের হাদীসের লিংক

হাদীসের স্ক্রিনশট





▮২▮

আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।”

রেফারেন্স
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
হজ্জ অধ্যায়
হাদীস নং ২৮২১
সহীহ মুসলিমের হাদীসের লিংক


হাদীসের স্ক্রিনশট




▮৩▮

আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব

রেফারেন্স
সুনানু ইবনে মাজাহ
হজ্জ অধ্যায় (পরিচ্ছেদ ১৯/৮৪)
হাদীস নং ৩০৭৪
সুনানু ইবনে মাজাহের হাদীসের লিংক

হাদীসের স্ক্রিনশট




অর্থাৎ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিহাহ সিত্তাহ ভুক্ত ৬টি প্রচলিত হাদীস গ্রন্থের ৩টিতেই মুহাদ্দীসগণকর্তৃক সহীহ সার্টিফিকেট প্রাপ্ত (সনদ সহীহ) বিদায় হজ্জের ভাষণের বর্ণনায় শুধুমাত্র ১টি জিনিসের উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে আর তা হলো "আল্লাহর কিতাব"


তাহলে কেন সত্যকে গোপন করে ৩টি সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে একটি মুরসাল হাদীসকে সরকারী পাঠ্যপুস্তক সহ সবখানে প্রচার করা হয় ???? এই জবাব চাই জাতীয় কারীকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের, এনসিটিবি এর কাছে; জবাব চাই ইসলামবেত্তা গণের কাছে, কেন তারা এটি প্রচার করেন না ! কেন মানুষ জানে না সহীহ সার্টিফিকেটধারী প্রচলিত হাদীসে বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে নবী কি রেখে যাওয়ার কথা বলেছে

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণীত ও তাদের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত নবম দশম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ১৮১ পৃষ্ঠায় বিদায় হজ্জ্বের ভাষণের স্ক্রিনশট

দেখেন কিভাবে সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে মুরসাল হাদীসের কথা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে



প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলে শেষ করতে চাই,

আরেকটিও বর্ণনা পাওয়া যায় প্রচলিত হাদীসে তাহলো নবী কোরআন ও আহলে বাইতকে (নবী পরিবার) আঁকড়ে ধরার কথা বলেছেন, তবে তা বিদায় হজ্জ্বের ভাষণ নয়, এটা গাদীরে খুমের (খুম্ম নামের কূপের নিকট প্রদত্ত ভাষণ) ! (উক্ত হাদীসটি দেখতে পারেন)

তাহলে এতোদিন কি জানলাম/জানানো হলো আর সত্যি সত্যি আছে কি !

সত্য প্রকাশে এতো আপত্তি কিসের !

নাম বললে কি চাকরি থাকবে না
? ;)

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:১০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×