১৯৭৫ সালে ১১ জানুয়ারি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান বলেনঃ একাডেমীর অধ্যক্ষ ও আমার ক্যাডেট ভাইয়েরা, আপনারা সকলেই আমার আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন। বহুকাল সংগ্রাম করেছিলাম বাংলাদেশে মিলিটিরি একাডেমি হউক ।কিন্তু আমরা পারিনি তখন। আজ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। সেই জন্যই আজ বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশ সামরিক একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি স্মরণ করি সেই সমস্ত শহীদ ভাইদের, যারা স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে, আত্মাহুতি দিয়েছে। আমি স্মরণ করি বাংলার ৩০ লক্ষ মানুষকে, যারা রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছে। আজ সত্যি গর্বে আমার বুক ভরে যায় । তাদের জন্যই বাংলাদেশের মালিক আজ বাংলাদেশের জনসাধারণ। তাদের জন্যই সম্ভব হয়েছে আমাদের নিজেদের মাটিতে একাডেমী করা । আমি আশা করি, ইন্শাল্লাহ, এমন একদিন আসবে, যখন এই একাডেমী শুধু দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়াই নয়, সারা দুনিয়াতেই সম্মান অর্জন করবে।
তোমাদের মনে রাখা উচিত ক্যাডেট ভাইয়েরা। আজ তোমাদের ট্রেনিং শেষ করলা। এক পর্যায়ে শেষ আর এক পর্যায়ে শুরু এ পর্যায়ে দায়িত্ব অনেক বেশি। আজ তোমরা ট্রেনিং সমাপ্ত করে সামরিক বাহিনীর কর্মচারি হতে চলেছো।
জাতির উপর তোমার দায়িত্ব । জনগণের উপর তোমার দায়িত্ব ।দেশের উপর তোমার দায়িত্ব। যে সমস্ত সৈনিক এর তোমরা আদেশে উপদেশ দিবা তাদের উপর তোমাদের দায়িত্ব ।তোমার কামান্ডার উপর তেমাার দায়িত্ব। তোমার নিজের উপর তোমার দায়িত্ব। তোমাদের দায়িত্ব জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। তা না হলে জীবনে মানুষ হতে পারবানা। শৃঙ্খলা ছাড়া কোনো জাতি জীবনে বড় হতে পারে নাই। আমি নিশ্চয় বিশ্বাস করবো। একাডেমি আমাদের কিছুই নাই ধরতে গেলে। আমি সামান্য কিছু নিয়ে শুরু করেছিলাম।অনেক অসুবিধার ভিতরে তোমাদের ট্রেনিং নিতে হয়েছে। সবকিছু তোমাদের আমরা দিতে পারি নাই।তোমাদের কামান্ডারেরা অনেক কষ্ট করে তোমাদের ট্রেনিং দিয়েছে। কিন্তু আজ আমি যা দেখলাম তাতে আমি বিশ্বাস করতে পারি, যদি পূর্ণ সুযোগ সুবিদা দেওয়া যায়।
আমার ছেলেদের যে শক্তি আছে যে কোনো দেশের যেকোনো সৈনিকের সাথে মোকাবেলা করতে পারে। তবে একদিনে কিছুই হয়না। এই তিন বছর হলো স্বাধীনতা পেয়েছি। যতটুকু দরকার চেষ্টার ত্রুটি করা হয় নাই । এমনকি নিজে চেষ্টা করেও জোগার ইঃ কাজ শুরু হয়েছে। তোমরা জানো না তোমরা ছোট ছিলা স্কুলে পড়তা বা তোমরা বাচ্চা ছিলা। পাকিস্তানে দুনিয়াকে বুঝিয়ে ছিলো বাঙালিরা নাকি যুদ্ধ করতে জানে না সেই জন্য বাঙালিকে সৈন্য বাহনীতে নিতো না। আমার মনে আছে বহু আগে পাকিস্তান আয়ুব খান কামান্ডার এসেছিলেন গোপেনে সৈনিক সার্কুলার দিয়েছিলো- আর বাঙালি যেন ২% বেশি লোক না নেওয়া হয়। এই কাগজ আমি যেভাবে পেয়ে যাই। আমি তোলপাড় শুরু করি। সেই হুকুম তারা উইথরো করেন। তারা ছলে বলে কৌশলে দাবিয়ে রেখেছিল। বাঙালিরা সামরিক বাহিনীতে যুদ্ধ করতে পারে না। বাঙালিরা কাপুরুষ, বাঙালিরা যুদ্ধ করতে জানে না। পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলার মাটিতে দেখে গেছে। কেমন করে বাঙালিরা যুদ্ধ করতে পারে।মুক্তি বাহীনি ভয়েতে বড় বড় শক্তিআলা ভুঁড়ি আলা জান শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা বাঙালিরা যা হতে পারি কাপুরুষ নই। আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসতে পারি।যুগ যুগ ধরে বাঙালিরা পরাধীন ছিল। দুইশ বছর ইংরেজের আমরা পরাধীন ছিলাম। পঁচিশ বছর প্রর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যালঘু দল। ছলে বলে কৌশলে আমার বাংলার মাটিকে দখল করে শোষণ করেছিল। এই ক্যান্টারমেন্ট বাঙালির কোন স্থান ছিল না।যাওয়ার সময় বাঙালিদের রাস্তায় অপমান করা হতো। আমাার ইয়ে জানা আছে । যখন আমি এইখান কোন সময় দিয়ে গাড়ি নিয়ে পাস করেছি। সমস্ত শরীর আমার জ্বলে উঠতো। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম । বাংলার মাটিতে দুশমন উৎখাত করতে হবে। অনেক ব্যথা অনেক দ্বন্ধ অনেক জুলমু অনেক মামালার আসামী, অনেক কারাগারে নির্যাতন আমি শুধু নয়।হাজার হাজার কর্মী সহ্য করে বাংলার মাটিতে মুক্ত করার জন্য সংগ্রাম করেছে।
তোমাদের কাছে একটা জিনিস মনে রাখা দরকার দেশ যখন আমাদের আছে। মাটি যখন আমাদের আছে। বাংলার সোনার মানুষ যখন আছে।যদি আমার সোনার ছেলে পয়দা করতে পারি। ইনশাল্লাহ আমার যে স্বপ্ন সোনার বাংলা একদিন হবে। আমি দেখে না যেতে পারি কিন্তু ইনশাল্লাহ একদিন হবে। আজ ইনশাল্লাহ বাংলার সম্পদ আর কেউ লুট করে নেবার পারবে না। বাংলার মাটিতে বাংলার সম্পদ থাকবে। বাংলার মানুষ ভোগ করেব। যে জাতি তিরিশ লক্ষ লোক রক্ত দিতে পারে। স্বাধীনতার জন্য সেই জাতি দরকার হলে কোটি লোকের জীবন দেবে আমার স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য। ছেলেরা আামর নতুন জীবনে যাচ্ছো,মনে রেখো তোমরা এক এক জন সামরিক কর্মচারী। যাদের নীচে থাকবে সমাজ- বাহিনী। তাদের থেকে অনেক শেখার আছে।তাদের সঙ্গে মিশতে হবে। তাদের জানতে হবে।তাদের দুঃখের সময় দুঃখের সময় দাঁড়াতে হবে। মনে রেখো শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে। তুমি যখন শাসন করবা সেহাগ করতে শিখো। তাদের দুঃখের দিনে পাশে ।তাদের ভালোসো কারণ তোমার হুকুমে সে জীবন দিবে । তোমাকে শ্রদ্ধা অর্জন করেত হবে।। সে শ্রদ্ধা অর্জন কতে হলে শৃঙ্খলা শিখতে হবে। নিজকে সৎ হবে।দেশকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালোবসাতে হবে । চরিত্র ঠিক রাখতে হবে। তা না হলে কোনো ভালো কাজ করো যায়না। মনে রেখো তোমরা আজ আমার প্রথম ক্যাডেট। বাংলাদেশের মিলিটেরি একাডেমি। তোমাদের দেখবে যারা ভবিষৎ ছেলেরা যারা আসবে। তোমাদের কাছে তারা শিখবে।
আমার মুখ কালা করো না কারণ দেশের মুখ কালা করো না। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুখ কালা করো না। তোমরা আদর্শ বান হও
সৎ পথে থেকো । মনে রেখো মুখে হাসি বুকে বল তেজে ভরা মন, মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন।মাঝে মাঝে আমরা অমানুষ হয়ে যাই। এত রক্ত দেওয়ার পর যে স্বাধীনতা এনেছি চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয়নাই।
এখনো ঘুষ খোর দুর্নীতে বাজ চোরা কারবারি, মুনাফাখোরি বাংলার দুঃখী মানুষের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে।
দীর্ঘ তিন বছর প্রর্যন্ত এদের আমি অনুরোধ করছি আবেদন করেছি। হুমকি দিয়েছি। চোরা নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী কিন্তু আর না।
বাংলা দুঃখী মানুষের জন্য জীবনের যৌবন আমি করাাগারে কাটিয়ে দিয়েছি। এই মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই। কাইল যখন আমি আসতে ছিলাম ঢাকা থেকে এত দুঃখের মধ্যে না খেয়ে কষ্ট পেয়েছে। গায়ে কাপড় নাই কত অসুবিধার মধ্যে বাস করতেছে। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে দেখবার জন্য। আমি মাঝে মাঝে প্রশ্ন করি তোমরা আমায় এত ভালোবাসো কেনো? কিন্তু সেই দুঃখী মানুষসদিন ভরে পরিশ্রম করে। তাদের গায়ে কাপড় নাই পেটে খাবার নাই। তাদের বাসস্থানের বন্দোবস্ত নাই।
লক্ষ লক্ষ বেকার। পাকিস্তানিরা সর্বস্য লুট করে নিয়ে গেছে। কাগজ ছাড়া আমার কাছে কিছু রেখে যায়নি। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমাকে আনতে হয়। আর এই চোরের দল আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ লুটতরাজ করে খায়। আমি শুধু এমারজেন্সসি নেই নাই।
এইবার আমি প্রতিজ্ঞা করেছি।
যদি পঁচিশ বছর পাকিস্তানী জালেমদের বিরুদ্ধে লড়তে পারি, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ থেকে আরম্ভ করে গোলাম মোহাম্মদ, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আইয়ুব খান আর ইয়াহিয়া খান পর্যন্ত সবার সাথে বুক টান করে সংগ্রাম করতে পারি, ৩০ লক্ষ লোকের জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি, তাহলে দূর্ণীতি, ঘৃষখোরি, মুনাফাখোরি আর চোরাচালানও নিশ্চয়ই নির্মূল করতে পারবো। – আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, তোমরাও প্রতিজ্ঞা করো । বাংলাদেশের জনগণও প্রতিজ্ঞা করুক। আমার আর সহ্য করবার শক্তি নেই।
এসবের জন্যতো আমি জীবন-যৌবন নষ্ট করিনি। এসবের জন্য শহীদরা রক্ত দিয়ে যায়নি। পার করে দিয়ে আসে, জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়। খাবার জিনিস গুদামে মজুদ করে মানুষকে না খাইয়ে মারে। তাদের উৎখাত করতে হবে বাংলাদেশের বুক থেকে । আমি দেখবো, তারা কি করতে পারে । এবার প্রমাণ হয়ে যাবে, চোরের শক্তি বেশী, না ইমানদারের শক্তি বেশী। অন্যায়ের কাছে আমি কোনদিন মাথা নত করিনি। বারবার পাকিস্তানীরা আমাকে ফীসি দিতে চেয়েছে।
কিন্তু আমি সব সময়ই বুক টান করে দীড়িয়ে থেকেছি। কারণ, আল্লাহ আমার সহায় ছিল। আমার জন্য বাংলাদেশের জনগণের দোয়া ছিল। এখনও সেই দোয়া আছে। তোমাদের সাহায্য, তোমাদের সহানুভূতি পেলে এবারও ইনশাআল্লাহ আমি জয়ী হবো। তোমাদের কাজ দেশের জনগণকে ভালবাসা । আর ইমানদার মানুষের সহযোগিতায় এই দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করতে হবে। আর এক দল মানুষ আছে, যারা বিদেশীদের অর্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে চায়। তারা রাতের অন্ধকারে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে।
একটি লোক কেমন করে যে পয়সার লোভে মাতৃভূমিকে বিক্রি করতে পারে- তা ভাবলে আমি শিউরে উঠি। যারা বিদেশের আদর্শ বাংলাদেশে চালু করতে চায়, এদেশের মাটিতে তাদের স্থান হবে না। মনে রেখো, তোমাদের বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের শেষ করতে হবে। অজ্ঞানুবর্তিতা চাই আমার ছেলেরা, তোমরা আর একটি কথা মনে রেখো । জীবনে তোমরা যে কাজে নেমেছ, এটা তার জন্য জরুরী। ওপরের যারা তোমাদের হুকুম দেবেন, তাদের কথা মানতে হবে। এর জন্য তোমরা এখনই ওয়াদা করো ।
তোমরা যদি তাদের হুকুম না মানো, তোমাদের অধীনস্থ কেউ তোমাদের হুকুম মানবে না। এই জন্যই তোমাদের ওপরওয়ালার হুকুম মানতে হবে ।ধানমন্ত্রী হিসেবে একথা বলছি না, তোমাদের জাতির পিতা হিসাবে আদেশ দিচ্ছি- প্রধানমন্ত্রী অনেক হবেন, অনেক আসবেন, প্রেসিডেন্টও অনেক হবেন, অনেক আসবেন কিন্তু জাতির পিতা একবারই হন, দু’বার হন না। জাতির পিতা হিসেবেই যে আমি তোমাদের ভালবাসি, তা তোমরা জানো।
রি আমি তোমাদের আবার বলছি, তোমরা সৎ পথে থাকবে, মাতৃভূমিকে ভালবাসবে ।মনে রেখো, তোমাদের মধ্যে যেন পাকিস্তানী মনোভাব না আসে। তোমরা পাকিস্তানের সৈনিক নও, বাংলাদেশের সৈনিক। তোমরা হবে আমাদের জনগণের। তোমরা পেশাদার বাহিনী নও। কেবল সামরিক বাহিনীও নও। দরকার হলে তোমাদের আপন হাতে উৎপাদন করে খেয়ে বাচতে হবে।
এদিকে তোমাদের খেয়াল রাখা দরকার । আর তোমরা ন্যায়ের পক্ষে দীড়াবে। যেখানে অন্যায়:-অবিচার দেখবে, সেখানে চরম আঘাত হানবে । তোমরা যদি গুরুজনকে মেনে, শৃঙ্খলা রক্ষা করে সৎ পথে চলো, তাহলে জীবনে মানুষ হতে পারবে ।এসব কথা তোমাদের ভূললে চলবে না।
একটি বিষয়ে আমি আজ গর্বিত। সামরিক বাহিনীকে আমি চোরাচালান বন্ধ করবার হুকুম দিয়েছিলাম। পঁচিশ বছরে চোরাচালান বন্ধ হয়নি কিন্তু এবার আমার সামরিক বাহিনী, রক্ষী বাহিনীর সাহায্যে শতকরা ১৫ ভাগ চোরাচালান বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। জনগণের সাহায্য তোমাদের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু জনগণ কারা? তোমাদের বাপ, তোমাদের ভাই। একথা তোমরা মনে রেখো ।
তোমাদের মাইনে কোথেকে আসে? বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের ট্যাক্স থেকে। এখানে যত সামরিক-বেসামরিক কর্মচারী আছেন, তাদের মাইনেও এই ট্যাক্স থেকে আসে। তোমরা সেই দুঃখী মানুষদের মালিক নও, সেবক। তাদের অর্থে তোমাদের সংসার চলবে। সুতরাং তাদের শ্রদ্ধা করতে ও ভালবাসতে শেখো। তোমরা অবশ্য অন্যায় দমন করবে কিন্তু খেয়াল রেখো, নিরপরাধ লোকের প্রতি যেন অন্যায় কিছু না হয়। তোমাদের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইলো ।
আজ তোমরা কিছু বুঝতে পারবে কিনা আমি জানি না। আমার মনে যে আজ কি আনন্দ, তোমাদের আমি তা ভাষায় প্রকাশ করে বলতে পারবো না। যখন আমি আগরতলা মামলার বন্দি ছিলাম, যখন পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী জেলে বন্দি ছিলাম, তখন ভাবতে পারিনি যে, একদিন এখানে তোমাদের প্যারেড হবে । অবশ্য বাংলাদেশে সামরিক একাডেমী হবে, এ বিশ্বাস আমার ছিল কিন্ত আমি দেখে যাব, এটা আমি ভাবিনি ।
তবে আল্লাহ আমাকে দেখিয়েছেন । নর কিন্তু আমি আরও দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই সোনার বাংলা । আমি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই । আমি আরও দেখতে চাই, এদেশের দুঃখী মানুষ পেট ভরে খেতে পাচ্ছে। তাদের গায়ে কাপড় আছে। “ অত্যাচার-অবিচার বন্ধ হয়ে গেছে। এইজন্য আজ আমি তোমাদের এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সামরিক বাহিনী, বেসামরিক বাহিনী, জনগণ-সকলের কাছে আবেদন জানাবো, সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে অভাব, অত্যাচার আর অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুন।
দেশ গড়বার কাজে আত্মনিয়োগ করুন। কলে-কারখানায় কাজ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। কাজ করবো না, কিন্তু পয়সা নেব-এমন কথা বলা আর চলবে না। তিন বছর আমি এসব সহ্য করেছি, আর নয়। দেশের সম্পদ না বাড়লে দেশের মানুষ বাচতে পারে না।
আমি জানি, এই একাডেমীতে তোমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। অনেক অসুবিধার মধ্যে তোমাদের ট্রেনিং নিতে হয়েছে। তোমাদের কমাপ্তাররা বহু কষ্ট করে তোমাদের ট্রেনিং দিয়েছেন কিন্ত একদিনে সব জিনিস হয় না। এখানে সামরিক বাহিনীর পুরোনো মানুষ যারা আছেন, তীদের জিজ্ঞাসা করো ৪৭ সালে বাংলাদেশে কি ছিল? সে যুগে আমাদের টাকা দিয়ে পাকিস্ত নে যে সামরিক একাডেমী হয়েছিল, তার অবস্থাই বা দশ বছর পর্যন্ত কি ছিল? করতে পেরেছি, সকলের জন্যই করতে পেরেছি। এরজন্য আমি আনন্দিত।
সামরিক একাডেমী একদিনে গড়ে ওঠে না। তারজন্য অনেক দিন লাগে, অনেক জিনিসের প্রয়োজন হয়। ইনশাল্লাহ সবই হবে এবং ভালভাবেই হবে । এমনভাবে হবে যে, আমার বিশ্বাস সারা দুনিয়ার মানুষ আমাদের এই একাডেমী দেখতে আসবে । তোমাদের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইলো । আমার আদেশ রইলো আর রইলো আমার গ্নেহের আবেদন। আমি তোমাদের জন্য দোয়া করবো।
বাংলাদেশের জনগণ তোমাদের জন্য দোয়া করবে। তোমরা প্রথম দল। কাল থেকে তোমরা সামরিক অফিসার হয়ে যাবে। তোমরা আদর্শ সৃষ্ট করো, যাতে তোমাদের পরে যারা আসবে, তারাও যেন আদর্শবান হয়। তোমাদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আমি তোমাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের চীফ অব স্টাফ আর কমাগ্ডারদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের, খারা ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন এবং যারা সহযোগীতা করেছেন।
আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। এ স্বাধীনতা নিশ্চয়ই টিকে থাকবে । একে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না । তবে, বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারলে এ স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে। এজন্য তোমাদের কাছে আমার আবেদন রইলো, তোমরা সৎ পথে থেকো। খোদা নিশ্চই তোমাদের সাহায্য করবে । এই কথা বলেই আমি বিদায় নিচ্ছি। খোদা হাফেজ
১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি মূল ভাষণ আমি এখান থেকে তার কথা তুলে ধরলাম।
[বাকশাল ছিল স্বাধীন দেশের দ্বিতীয় জাতির মুক্তির সনদ।