somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

Sajjad Hosen
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে খুব বেশি ভালবাসি তাই সব সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে পড়ে থাকি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। ফেইবুকে আমি।

আমরা বিয়ে করেছি। কিন্তু বাসায় জানে না। বাসায় জানলে ৩ টা সমস্যা হবে। সংগ্রহ করা...

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা বিয়ে করেছি। কিন্তু বাসায় জানে না। বাসায় জানলে ৩ টা সমস্যা হবে। আব্বু আম্মু মাইর লাগাবে। দ্বিতীয় সমস্যা, বাসা থেকে বের করে দেবে। তখন সবে ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট সেমিস্টার। বাসা থেকে বের করে দিলে কোথায় থাকবো, কি খাবো?
তৃতীয় সমস্যা সবচেয়ে ভয়ংকর। পুলিশ। আমি যখন বিয়ে করি, তখন সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমার বয়স ১৯। বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেরা দারুন বৈষম্যের শিকার। ২১ বছর না হলে তাদের বিয়ে বেআইনি হয়ে যায়। কাজেই বাসায় যদি জানে যে আমরা বিয়ে করেছি এবং ছেলে নাবালক, তাহলে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যাবে।

এজন্য আমি আর মিতু বিয়ে করলাম। কিন্তু বাসায় জানালাম না।যে যার বাসায় থাকি। ইউনিভার্সিটিতে আসি। মিতুকে আমি বলি, বউ। মিতু বলে, ওগো আমার স্বামী। আমরা ক্লাসে পাশাপাশি বসি। ক্যান্টিনে গিয়ে চা খাওয়ার সময় মিতু ওড়না দিয়ে চায়ের কাপ মুছে দিয়ে স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে। পরীক্ষার হলে মিতুকে আমি খাতা দেখিয়ে স্বামীর দায়িত্ব পালন করি। অতি সুখের সংসার।

ক্লাস শেষ হলে আমরা দুজন গাছতলায় বসি। মিতুকে আমি কথা দিয়েছিলাম, বিয়ের পর দুচোখ যেদিকে যায়, চলে যাবো। গাছের তলায় ঘর বাঁধবো।

কাজেই গাছের তলায় বসতে পেরে মিতু খুবই খুশি। তার স্বামী প্রতিশ্রুতি রেখেছে। বিয়ের পর গাছতলায় সংসার ফেঁদেছে।

এর মধ্যে মিতুর বাসায় কি যেন এক ঝামেলা হলো। মিতুর বাবা ঝাড়ি মেরে ওকে বলল, আমার খাও, আমার পড়ো, আর আমার সাথে বেয়াদবি ?

বিয়ের পর মেয়েরা আসলেই পর হয়ে যায়। এই সামান্য কথায় মিতু দারুনভাবে আহত হলো। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলো। সে আর পিতার অন্ন মুখে তুলবে না। ক্লাসে এসে বলল, বাজার করে দাও।

আমি আকাশ থেকে পড়লাম। বাজার মানে? টাকা পাবো কোথায়? প্রথম আলোতে লিখে তখন কয়েকশত টাকা পেতাম। সেই টাকা তোলা হলো। কারওয়ান বাজার থেকে দুই কেজি চাল, আধা কেজি আলু এবং ডাল কেনা হলো। মিতু ব্যাগ ভর্তি করে বাজার নিয়ে বাসায় চলে গেলো। নিজে রান্না শুরু করলো। ভাত, আলু ভর্তা, ডাল। নিজেই রান্না করে, নিজেই খায়। সে এক কঠিন ব্রত।

আমি ভেবেছিলাম, এইভাবে মিতু একদিন মারা যাবে। না মিতু মারা যায়নি। বরং অতি সাধাসিধে খাওয়াদাওয়ার চর্চা করায় মিতু অল্প দিনেই শুকিয়ে গেলো। রাতারাতি তাকে অপ্সরীর মতো লাগতে লাগলো।

মিতুকে কখনো বলিনি, মিতু যতদিন ডালভাত কর্মসূচী চালিয়েছে, আমিও বাসায় মাছ মাংস ঠেলে সরিয়ে শুধু ডাল ভাতই খেতাম। আমার মা বলতেন, তোর কি হইছে?

আমি চোরের মতো মাথা নিচু করে বলতাম, কিছুই না, কিছুই না।

মাকে আমার বলতে ইচ্ছে করতো মিতুর কথা। কে বলে মেয়েরা লাজুক হয়? আমি যখন প্রথম আম্মুকে মিতুর কথা বলি, তখন আমি লাইট নিভিয়ে বলেছিলাম, আম্মু , আমার সাথে একটা মেয়ে পড়ে, ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তুমি আর আব্বু একটু যাবা, ওদের বাসায়?

আমার কথা শুনে আম্মু লাফ দিয়ে উঠলো। চট রুমের লাইট জ্বালিয়ে বলল, কোন মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তাতে তোর কি? এসব তুই কি কইতাছোস? তোর কি মাথা খারাপ হইয়া গেছে?

আমি যখন বাসা থেকে পালালাম। একটা ফার্মেসি থেকে মিতুদের বাসার ল্যান্ড ফোনে কল দিলাম। মিতুকে বললাম, মিতু তুমি চলে এসো। আমি বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি।

মিতু ছোট্ট করে বলল, আচ্ছা।

সব মিলিয়ে ১৫ সেকেন্ড।

টিএসসিতে আমি দাঁড়িয়ে আছি। তখন মোবাইল ফোনের যুগ না। অস্থির হয়ে বার বার ঘড়ি দেখছি। মিতু আসবে তো? দেরি করছে কেন? কখন আসবে? আমার চোখ জ্বালা করছে। সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। পকেটে একটা টাকাও নেই। মাঝে মাঝে মায়ের কথা মনে পড়ছে। মাথার রগ টন টন করছে। চোখ অকারণে আর্দ্র হচ্ছে।

এমন সময় হুড তোলা রিকশায় করে মিতু আসলো। রিকশা থেকে নেমেই আমাকে দেখে হাসলো।

আমার ১৫ সেকেন্ডের একটা অনুরোধে একটি মেয়ে সব ফেলে চলে এসেছে। তার ১৮ বছরের বাবা, মা, ভাই, বোন। সবকিছু। কোথায় যাবে জানে না, কি খাবে, সেটাও জানে না।

কিন্তু রিকশা থেকে নেমেই এমন উজ্জলভাবে হাসলো ... যেন সে সব পেয়েছে। যেন সে পুরো বিশ্ব জয় করেছে।

আমি ভ্যালেন্টাইন ব্যাপারটা ঠিক বুঝিনা। ভালবাসা, প্রেম এগুলোও ঠিক মাথায় ঢোকে না।

আমার কাছে প্রেম মানে, ওই উজ্জল, নির্মল, সুখী একটা হাসি। কি পরম নির্ভরতাই না ছিল সেই হাসিতে। কি গাঢ় বিশ্বাসে মাখা ছিলো সেই হাসি।

এটাই আমার ভালবাসা। আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারবো, আমি নিজের চোখে ভূত দেখিনি, কিন্তু ভালবাসা দেখেছি। কে বলে ভালবাসা বলে কিছু নেই? ওই এক মুহুর্তের হাসিই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।

পুনশ্চ: আমি আর মিতু একসাথে ১৫ অথবা ১৬ বছর ধরে সংসার করছি। আগে বছর গুনে মনে রাখতাম। এখন গোণাগুনির ঝামেলায় যাই না। ওই হবে একটা। প্রতিদিন ঝগড়া করি, সপ্তাহে একদিন কথা বন্ধ থাকে, মাসে একবার ডিভোর্সের চিন্তা করি।

কিন্তু কিছু করতে গেলে, ওই হাসিটাই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০০
১৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×