somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোবেল পুরস্কার কি ছেলের হাতের মোয়া ( বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম )

১৬ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ কিছুদিন ধরে সারাদেশে নোবেল বিজয়ী ইউনূসকে নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এক সময় তার ক্ষুদ্র ঋণের সূত্র সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আজো ক্ষুদ্র ঋণের একটি বাস্তব প্রভাব বাংলাদেশে তো বটেই সারা পৃথিবীতেও ফেলে দেওয়ার মতো ব্যাপার নয়। তাই বলতে গেলে ক্ষুদ্র ঋণের জনক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে যেভাবে টানা- হেঁচড়া হচ্ছে তাতে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের উপর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় কিনা বা প্রভাব পড়ে কিনা তা গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সত্যিকার অর্থেই খুব একটা ভালো নয়। তার উপর মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা যেভাবে খারাপ হচ্ছে তাতে আমাদের আর বেশি চুলকিয়ে ঘা করা ঠিক হবে না।

আওয়ামী লীগেরই খুবই প্রভাবশালী নেতা, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একটি মারাত্মক বোমা ফাটিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অধ্যাপক ইউনূস ওয়ান-ইলেভেনের সময় একটি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য ৮০ জনের একটি তালিকা করেছিলেন। তাতে দোষের কি আছে? যে কেউ রাজনৈতিক দল করতে পারেন। আশরাফ চাইলে তিনিও করতে পারেন। আর যদি হঠাৎ তার রাজনৈতিক দল গঠন করার শখ হয় তাহলে কাকে কাকে সঙ্গে পাবেন তার একটি তালিকা তিনি নিশ্চয়ই করবেন। একটা বিয়ে-সাদির দাওয়াতের জন্যও তো তালিকা করতে হয়। এখানে তালিকা করায় দোষ, না রাজনৈতিক দল গঠনের ইচ্ছা করায় দোষ? রাজনৈতিক দল গঠনের ইচ্ছা তো কোনো চুরি-চামারি নয়। সবাই করতে পারেন। তাই এক্ষেত্রে তিনি কি বুঝাতে চাইলেন দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হলো না। একটু স্পষ্ট করার অনুরোধ রইল।

'পড়ছে দেশে কলিকাল, ছাগলে চাটে বাঘের গাল' প্রবাদটি যখন প্রায় সত্যে পরিণত হতে যাচ্ছে, তখন অনেক ক্ষেত্রে নিজেকে খুবই ছোট মনে হয়। তবে বাঙালি জাতির এক গৌরবের দিন ৭ই মার্চ একেবারে প্রাণের টানে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের রিট পিটিশনের সওয়াল জবাব শুনতে হাইকোর্টে গিয়েছিলাম। সেখানে ১৬ নম্বর কক্ষে রিটের উপর সম্পূরক সওয়াল জবাব হচ্ছিল। বেলা পৌনে তিনটার দিকে আমি যখন যাই তখন তিল ধারণের জায়গা ছিল না। দরজার কাছাকাছি হলে দু'একজন সরে সরে ভিতরে যাওয়ার রাস্তা করে দিলেন। তিন-চার মিনিটের মধ্যে বিচারালয়ের মাঝামাঝি পেঁৗছে গেলাম। খুব সম্ভবত তৃতীয় সারিতে হবে_ তিন, চারজন উঠে বসতে আহ্বান করলেন তাদের মধ্যে দু'জনই মহিলা। বললাম, না, মহিলাদের উঠিয়ে বসবো না। তারা বললেন মহিলাদের উঠতে হবে না আপনি বসুন। একজন দু'জন নয় প্রায় সবাই পরম যত্নে কখন যে আইনজীবীদের আসনে বসিয়ে ছিলেন ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। আইনজীবীদের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মান প্রদর্শন ও ভালোবাসায় সেদিন হৃদয় জুড়িয়ে গিয়েছিল। কারণ ইদানীং যখন বিচারকের দরজায় লাথি মারা হয় তখন স্বাভাবিক কারণেই কোর্ট কাচারির অসম্মানজনক আচার ব্যবহার নিয়ে মনটা বড় বেশি বিক্ষুব্ধ ছিল। কিন্তু বাঙালি জাতির সবচেয়ে স্মরণীয় দিন ৭ মার্চে হাইকোর্টের ১৬ নম্বর বিচারালয়ে আইনজীবী ও অন্যদের সহমর্মিতায় আমার সমস্ত হৃদয় মন গভীর ভালোবাসা ও মমতায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।

আমি যখন ছিলাম তখন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে শুনানি করছিলেন। একের পর এক যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। সেদিন তার সওয়াল জবাব ছিল অসাধারণ, বড়ই চমৎকার। প্রথম প্রথম নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখিনি। আমি ড. কামাল হোসেনকে খুঁজছিলাম। সামনের কাতারেই তার থাকার কথা। কিন্তু তাকে পেলাম না। হঠাৎ দেখলাম আমার সামনের আসনে চার-পাঁচজনের পরে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বসে আছেন। এর আগে কখনো তাকে কোর্টে দেখিনি। চিরাচরিত সাধারণ পোশাকে একটু মাথা নিচু করে বসে থাকা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে যিশু খ্রিস্ট কি ওইভাবে আসামির কাঠগড়ায় ছিলেন! কি অদ্ভুত ব্যাপার! বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকার মেয়াদ বারো বছর আগে তার শেষ হয়ে গেছে। অথচ আইনের দ্বারা গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ বলছে পরবর্তী ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকবেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা, বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা নয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাখা না রাখা, বানানো না বানানো এটা সম্পূর্ণই পরিচালনা পর্ষদ বা বোর্ডের ব্যাপার। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগও করে না, বাতিলও করে না। কারণ সে ক্ষমতা তাদের আইন দেয়নি।

তবে যদি বয়সের কথা আসে রাস্তা-ঘাটে অনেকেই বলছেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বয়স ৮০ না ৮৭। তিনি যদি অর্থমন্ত্রী হতে পারেন মানে সব ব্যাংকের এমডির এমডি। তাহলে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি থাকায় সমস্যা কি। আর একই পদে অনেক বছর থাকার প্রশ্ন যদি আসে তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও তো এ ব্যাপারে পথিকৃৎ। সব রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রেই প্রতি দু'বছর পর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতা বা দলীয় কর্মকর্তা নির্বাচনের নিয়ম রয়েছে। আমাদের মহাজোট নেত্রী তিরিশ বছর, চারদলীয় জোট নেত্রী সাতাশ-আটাশ বছর, জাতীয় পার্টির নেতা তিনিও ওরকম। আমিও একটা ছোটখাটো দল করেছি তারও সভাপতি পদে এগারো বছর। এতো আর নতুন কিছু নয়। এ সবই পুরনো রেওয়াজ। তাহলে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রাণপুরুষ, তার প্রতিষ্ঠাতা তিনি থাকলে দোষ কি? এতদিন তাকে নিয়ে কোনো কথা হলো না এখন কেন? নিশ্চয়ই ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। মূল কথা কোনো বয়স নয়, মূল কথা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সরাতে হবে। তা সরান কিন্তু একটু সুন্দরভাবে সরান। মানুষতো কেউ অমর নয়। আজ হোক কাল হোক তার স্থলে অবশ্যই কেউ না কেউ আসবেন। সেই আসা-যাওয়াটা একটু ভালোভাবে হলে কি ভালো হতো না, সুন্দর দেখাতো না? আমাদের প্রবীণ অর্থমন্ত্রী ব্যাপারটাকে একটু গোলমাল করে ফেললেন না তো? বিজ্ঞজনেরা বলবেন আইনের চোখে সবাই সমান। তাহলে টুঙ্গীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান কি সমান। দু'জনের মান-মর্যাদা, গুরুত্ব সবই কি সমান? সেদিন লিবিয়ায় নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী হাসিনা আর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নামে নামে মিল থাকলেও তারা কি সমান? কেউ আইনের ঊধর্ে্ব নয় কথাটা মুখে বললেও আইন সবার ক্ষেত্রে একইভাবে কি চলে? চলে না। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষ। ১৬ কোটিই কি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী? মন্ত্রী অনেক হলেও প্রধানমন্ত্রী তো একজনই হয়। রাষ্টপতিও একজন। দেশে স্বাভাবিক অবস্থা থাকলে পাঁচ বছর পর পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারলেও পাঁচ বছর পর পর কি নোবেল পুরস্কার পাওয়া যাবে? আমার তো মনে হয় আমরা যা করছি তাতে আগামী একশ' বছরেও আর নোবেল পাওয়া হবে না। কারণ আমাদের নোবেল পুরস্কার দিয়ে নোবেল কমিটি আসামি হবে নাকি?
প্রথম বাঙালি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শেষ বাঙালি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দু'হাতে বুকে চেপে বলতেন আমার ইউনূস নোবেল বিজয় করে বাংলার, বাঙালির সম্মান বৃদ্ধি করেছে। কি দুর্ভাগ্য তাকে হেনস্থা করতে আজ ষড়যন্ত্রকারীরা উঠেপড়ে লেগেছে। কেউ কেউ তাকে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলার চেষ্টা করছেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতিতে কোনোভাবেই জননেত্রী শেখ হাসিনার সমকক্ষ নন। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার কাছে তিনি পাঠশালার ছাত্র। যদি কখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে নোবেল পুরস্কার কেউ পায় তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কত বড় বড় রাজনৈতিক নেতাকে ধরাশয়ী করে কারো দয়ায় নয়, তার যোগ্যতার বলে রাজনীতিতে মুকুটহীন সম্রাজ্ঞীর আসনে আজ আসীন। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, আমীর হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ.স.ম. আব্দুর রব, শাজাহান সিরাজ কেউ তার কাছে হালে পানি পায়নি। তিনিই আজ সব। একেবারে একদলে যেমন কোনো খেলা হয় না, তেমনি একদলে রাজনীতি হয় না বলে শুধু তারই জন্য আওয়ামী লীগ-বিএনপি বা চারদলীয় জোট আর মহাজোট। আসলে দল একটাই সিক্সটি-ফরটির দল।

'৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সীমান্তে ঝাড়ে জঙ্গলে যখন বাস করতাম তখন আমার পিতৃসম কথা-সাহিত্যিক শওকত ওসমান ঙঃযবৎ ংরফব ড়ভ ঃযব ঐরষষ নামে জেনারেল গিয়াফের একটি বই দিয়েছিলেন। বইটি হয় আমাকে চৌকানা না হয় ভীতু করেছে। পাঁচ-ছয়শ' পৃষ্ঠার বইয়ের প্রতি পাতায় পাতায় শত্রুপক্ষ কি ভাবছে, কি তারা করছে, কি তারা করবে, তাদের কলাকৌশল কি? এর খুঁটিনাটি তাতে লেখা আছে। আমার মনে হয় প্রতিটি রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমরবিদদের ওই অমূল্য বইটি পড়া দরকার। সেই কারণেই বলছি, রাজনীতির ব্যাপারে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শিশু হলেও বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বাংলাদেশের সব নেতা-নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য রাষ্ট্রপতিসহ আমরা সবাই শুধু শিশু নই। আমার দুই মেয়ের মতো কুঁড়ি, কুশি। একটু ভেবে দেখা দরকার আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিনি যত বড়ই হোন আমেরিকায় গেলে একজন উপসচিব তাকে রিসিভ করে। এই ক'দিন আগে কি এক পুরস্কার নিতে সুইডেন গিয়েছিলেন, তাকে একজন প্রটোকল অফিসার রিসিভ করেছেন। সে যাত্রায় তিনি আবুধাবীও গিয়েছিলেন। ছবিতে দেখলাম একজন হ্যাট-কোট পরা মিলিটারি রিসিভ করছেন। ব্রিটেনেও তাই। কিন্তু নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রেসিডেন্ট ওবামার বৈঠকখানায় গিয়ে বসতে আমাদের কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না। তাই বলছি, যে মানুষটি আমার জাতির সম্মান বৃদ্ধি করেছে, আমাদেরকে আলোকিত করেছে তাকে কি একটু সম্মান করা আমাদের কর্তব্য ছিল না? তাহলে কেন এইতো সেদিন ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করায় ক্রিকেট প্লেয়ারদের গাড়ি-বাড়ি, টাকা-পয়সা দিয়ে সরকার পুরস্কৃত করল? সেদিন চট্টগ্রামে আমাদের ক্রিকেট দলের চরম দুঃসময়ে শুধু দু'জন বোলার কেমন সিনা টান করে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে সমগ্র জাতিকে এক নির্মল আনন্দ সাগরে অবগাহনের সুযোগ করে দিল, দেশ ও জাতিকে সম্মানিত করল এসবই তো গৌরবের একটি অংশ। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল বিজয় কি ক্রিকেট খেলায় বিজয়ের চাইতে কম না বেশি সম্মানের? ব্যাপারটা একটু নিরাসক্তভাবে কি ভেবে দেখা যায় না?

কি জঘন্য অভিযোগ! ১২ বছর ধরে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অবৈধ? তাহলে যেদিন মেয়াদ শেষ হয়েছিল, সেদিন বলা হয়নি কেন? গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারি পরিচালকরাও তো ছিল। তারা সেদিন কি করেছে? যারা মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ১২ বছর পর্যন্ত বুঝতে পারে না তাদেরকে দিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকগুলো পরিচালনার কারণে সব কয়টি যখন সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে লিমিটেড কোম্পানি করা হয়েছে, তখন গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার মানে কি? তার মানে ওই ১২ বছরের মধ্যেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার গ্রামীণ ব্যাংক শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। সেই নোবেল পুরস্কারটাই অবৈধ। এ রকম মানসিকতা কি খুব ভালো? অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই আগামী এপ্রিলে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় নিতে চেয়েছেন। মাত্র একটা মাস আমরা অপেক্ষা করতে পারলাম না? আমরা পিছু ছুটে তাকে অপমান করলাম। জাতির জন্য যে এতো বড় সম্মান বয়ে আনলেন তাকে নানাভাবে কলঙ্কিত করে প্রকারান্তরে আমরা নিজেরাই কলঙ্কিত ও ছোট হলাম। আমরা বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করিনি, তাকে সপরিবারে হত্যা করেছি। যিনি আওয়ামী লীগের জন্ম দিয়েছিলেন সেই জননেতা শামসুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সম্মান করিনি। পরমাণু বিজ্ঞানী আমার দুলাভাই ড. ওয়াজেদ মিয়া উপযুক্ত পরিবেশ ও সেবাযত্ন পেলে আইনস্টাইন হতে পারতেন কিনা বলতে পারবো না কিন্তু অবশ্যই আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর সমপর্যায়ের বিজ্ঞানী হতেন এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। পিছু ধাওয়া করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অপমানের কালিমা আমাদের ললাটেই লেপিত হলো। চিৎ হয়ে থুথু ছুড়লে তা বুকেই পড়ে। তাই আমাদের এখনই সাবধান হওয়া উচিত। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সযত্নে সম্মানের সঙ্গে চলতে দেওয়া হোক_ এটা দেশবাসী আশা করে।

দেশবাসী খুবই অবাক ও বিস্মিত হয়েছে সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা শুনে। আসলে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাপারটা গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে নয়, ব্যাপারটা নোবেল পুরস্কার নিয়ে। তা না হলে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম তো নোবেল কমিটির কেউ নন। আর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস হাইকোর্টে নোবেল পুরস্কারের বৈধতা নিয়েও যাননি। গিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের বৈধতা নিয়ে। হাইকোর্ট তার রিট খারিজ করেছে। কি কি যুক্তির ওপর করেছে তা তিনি বিবিসিতে আরও দু'ঘণ্টা বলতে পারতেন। কারো কোনো আপত্তি থাকত না। কিন্তু তিনি হঠাৎ করে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বললেন, বাংলাদেশে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কাউকে যদি দিতে হয়, তাহলে সেটা দু'জনকে দেওয়া উচিত ছিল। তার একজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্যজন সন্তু লারমা। বাহ! চমৎকার কথা! সন্তু লারমা আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমান করতে বা আরও নিচে নামাতে অ্যাটর্নি জেনারেলই যথেষ্ট। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তির জন্য যদি প্রধানমন্ত্রীকে পুরস্কার দেন তাহলে যিনি চুক্তির স্বাক্ষর করেছেন সেই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে কি দেবেন? শান্তিচুক্তিতে কিন্তু জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করেননি। আমি তখন সংসদে ছিলাম। অ্যাটর্নি জেনারেলের চাইতে এব্যাপারে অনেক ভালো জানি। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন সন্তু লারমা আর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার ইচ্ছাতেই ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু তাই বলে পার্বত্য শান্তিচুক্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দিলে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জায়গা কোথায়? মনে হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের জানা নেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের হাতে ৩০ লাখ বাঙালি মারা গেছে, বঙ্গবন্ধু বেঁচে না থাকলে এবং দেশে না ফিরলে স্বাধীনতার পর আরও ৬০ লাখ পাকিস্তানপন্থি দালাল-রাজাকার মারা যেত। আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ, আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে আমিও ১ লাখ ৪ হাজার অস্ত্র জমা দিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর নোবেল পুরস্কার কই? বঙ্গবন্ধু নোবেল পুরস্কার পেলে আমি তার খাপটা তো পেতে পারতাম। কারণ সেই সময় বঙ্গবন্ধুর পাওয়া পুরস্কারের খাপ রাখার আমার চাইতে উপযুক্ত কেউ ছিল না। মহান ভারতের জনক মহাত্মা গান্ধীর নাম নিশ্চয়ই অ্যাটর্নি জেনারেল শুনেছেন। তিনিও নোবেল পুরস্কার পাননি। সর্বোদয় নেতা জয় প্রকাশ নারায়ণ বিহার, উত্তর প্রদেশ ও মধ্য প্রদেশে প্রায় পঞ্চাশ বছরের অরাজকতা, ডাকাতি, খুন-খারাবি বন্ধ করেছিলেন। ফুলন দেবী, মালখান সিংসহ আরও অনেক দুর্ধর্ষ ডাকাতকে সরকারকে দিয়ে সাধারণ ক্ষমা করিয়ে লাখ লাখ কোটি কোটি মানুষের শান্তিতে বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন সেই সর্বোদয় নেতা জয় প্রকাশ নারায়ণ_ তিনিও কিন্তু নোবেল পুরস্কার পাননি। পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী অতো বড় বড় বিজয় অর্জন করলেও তাদের নাম নোবেল কমিটিতে প্রস্তাব হয়নি। শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এদেরকে নিয়ে নোবেল কমিটি পুরস্কার দেওয়ার কথা চিন্তা করেনি। অ্যাটর্নি জেনারেল এতো জোর দিয়ে কি করে বললেন, শান্তিতে যদি নোবেল পুরস্কার দিতে হয় তাহলে পুরস্কার পাওয়ার একমাত্র অধিকারী দু'জন। একজন জননেত্রী শেখ হাসিনা, অন্যজন সন্তু লারমা। কোন বিচার বিবেচনা থেকে তিনি অমন করে কথটি বলেছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমি শুধু বলতে পারি, অনেক খুন-খারাবির জন্য দায়ী এক সময় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত একজন সন্ত্রাসীর সঙ্গে নোবেল পুরস্কারের নাম জড়িয়ে দেশবাসীসহ বিশ্বের কাছে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আর কেউ এতো ছোট করতে পারেনি। যা অ্যাটর্নি জেনারেল করেছেন। এভাবে একজন প্রধানমন্ত্রীকে ছোট করা, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, দেশবাসীর চিন্তা ও চৈতন্যে আঘাত করা মোটেই ভালো কাজ নয়। তবে কি অহেতুক নোবেল পুরস্কারের কথা বলে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে আইনমন্ত্রী হতে চান? দেখাই যাক ভবিষ্যতে কি হয়। এ ধরনের চাটুকার লোকজন সরকারের সর্বস্তরে বসে আছে বলেই আজ দেশের এই দুরবস্থা। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকেই অনুরোধ করছি, এসব অপরিণামদর্শীদের কার্যকলাপ বন্ধ করুন। এরা আপনার সর্বনাশ করছে।

তিনি শুধু আমাদেরকেই সম্পদ নন তিনি আজ সারা বিশ্বের সম্পদ। তাই দেশবাসীর আশা-আকাক্সক্ষাকে বুকে লালন করে কিছু দিন আগে বলেছিলাম, ১ ফেব্রুয়ারি আমাদের মানিকগঞ্জে জন্ম নেওয়া বিশ্ব নাগরিক অমর্ত্য সেনকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একুশের বইমেলার শুভ উদ্বোধন করেছেন। সেখানে আমাদের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যথাযথ সম্মানে উপস্থিত থাকলে কি ক্ষতি হতো? ১ ফেব্রুয়ারি ভাষার মাসে একদিকে অমর্ত্য সেন অন্যদিকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস_ এই দুই বাঙালির মাঝখানে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি বসতেন তাহলে ছবিটা কত সুন্দরই না হতো। আমরা আর কি কখনো এমন নির্মল সুন্দর ছবি দেখতে পাব?

লেখক : রাজনীতিক।
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×