ছেলের ছবি হাতে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের মা


বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধি স্থল


এইভাবেই সমাধি স্থলের চিহ্নিত করা আছে রাস্তার মোড়ে

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): ‘বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৪০তম শাহাদৎবার্ষিকী আজ। দিনটি পালনে আমাদের কোনও কর্মসূচি নেই।’

বাংলানিউজের প্রশ্নের জবাবে আখাউড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শহিদুল ইসলাম বলেন কথাগুলো।

মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে নিঃশেষে প্রাণ দান করে যাওয়া মহান ৭ বীরশ্রেষ্ঠর একজনের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটি সবার অলক্ষ্যে এভাবে পার হয়ে যাচ্ছে কোনও আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই!

অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল যে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের শাহাদৎ বার্ষিকী তা তেমন আবেদন রখতে পারছে না এমনকি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছেও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আখাউড়া উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ স্থানীয় কোনও রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনই দিনটি উৎযাপনের জন্য এগিয়ে আসেনি।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে ১৮ এপ্রিল আখাউড়ার দরুইন রণাঙ্গণে পাকি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এক বীরত্বপূর্ণ সম্মুখ সমরে শহীদ হন সিপাহী মোস্তফা কামাল। পরে দরুইন গ্রামেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর সমাধিতে সরকার নির্মাণ করেছে ভাবগএক স্মৃতিসৌধ।

তবে দরুইন গ্রামের সেই সমাধি সৌধে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা সরকারের পক্ষ থেকে কেউ যায়নি ফাতেহা পাঠ বা ফুল দিতে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আজ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের শাহাদৎবার্ষিকী আমি জানি না। কেউ আমাকে এ বিষয়টি জানাননি। বাংলানিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর জানলাম। এখন কী করা যায় দেখছি।’

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের গ্রামের বাড়ি দ্বীপজেলা ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে। তবে নদীভাঙ্গণের কারণে ১৯৮২ সাল থেকে তার পরিবার ভোলার সদর উপজেলার আলীনগর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, শাহাদত বরণের স্থানের মত তাঁর জন্মস্থানেও আজকের দিনটি নিয়ে নেই কোনও আনুষ্ঠানিকতা।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বশির আহম্মেদ বলেন, ‘তার পরিবার থেকে আমাদের জানানো হয়নি। তারা জানালে আমরা উদ্যোগ নিতাম।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এ উপলক্ষে কোনও অনুষ্ঠান করেনি।’

কিন্তু তারা কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন কি না প্রশ্ন করলে তিনি জানান, বিকালে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।

সদর উপজেলা ইউএনও সেলিম ফকির এ ব্যাপারে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন থেকে আমরা দিবসটি পালন করছি না। জেলা প্রশাসন থেকে পালন করা হচ্ছে কি না তাও জানি না।’

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মেসবাহুল ইসলাম ‘আমরা সরকারিভাবে কোনও মেসেজ পাইনি’ উল্লেখ করে উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘আজ যে তাঁর শাহাদাত বার্ষিকী এ বিষয়ে কি আপনারা নিশ্চিত?’

আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বশির আহম্মেদ বলেন, ‘তাঁর পরিবার থেকে আমাদেরকে জানানো হয়নি। তারা জানালে আমরা উদ্যোগ নিতাম।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেল চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এ উপলক্ষে কোনও অনুষ্ঠান করেনি।

তারা কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন কি না প্রশ্ন করলে জানান, বিকালে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

সদর উপজেলা ইউএনও সেলিম ফকির বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন থেকে আমরা দিবসটি পালন করছি না। তবে জেলা প্রশাসন থেকে পালন করা হচ্ছে কি না তাও জানি না।’

জেলা প্রশাসক মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরকারিভাবে কোনও মেসেজ পাইনি।’

উনি উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘আজ যে তাঁর শাহাদাত বার্ষিকী এ বিষয়ে কি আপনি নিশ্চিত?’

শাহাদাত বার্ষিকী পালনের ব্যপারে ভোলা জেলা মুিক্তযোদ্ধা কমান্ডার দোস্ত মাহমুদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে কোনও কর্মসূচি পালন করা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে বীরশ্রেষ্ঠ’র পরিবার চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে। তাদের অভিযোগ এমন একজন বীর সৈনিকের শাহাদাত বার্ষিকী কবে তা জেলা প্রশাসন কিংবা মুক্তিযোদ্ধারা কেউ বলতে পারছে না। এ কারণে কোনও স্থানেই এই বীরশ্রেষ্ঠ’র শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হয়নি।

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের বড় ভাইয়ের ছেলে শাহিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ কোনও সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তাফা কামালের শাহাদাত বার্ষিকী পালন করেনি। আমাদের খোঁজও নেয়নি কেউ। এটি খুবই দুঃখজনক।’

তবে তাদের পরিবারের উদ্যোগে এ দিনটি পালন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

আলীনগর এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক সামসুল আলম বলেন, ‘এমন একজন মহান মানুষের শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হচ্ছে না । এটা খুব দুঃখজনক। দেশ, মুক্তিযোদ্ধা তথা বীরশ্রেষ্ঠদের প্রতি আমাদের আরো শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।’

উল্লেখ্য, সিপাহী মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাবিবুর রহমান। ১৯৮২ সালে মেঘনার গ্রাসে বসত বাড়িটি বিলীন হয়ে গেলে তার পরিবার ভোলা সদরের আলীনগর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে চলে আসে। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাধিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে ৯২ শতাংশ জমির ওপর একতলা ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হয়। বাড়িটির নাম দেওয়া হয় ‘শহীদ স্মরণিকা’।

Click This Link