ফৌজদারহাট পৌঁছুলাম মাত্র। কলেজের গেটটা মনে হলো নতুন। বাইরের এই পরিবর্তনটুকু ছাড়া ভেতরে কি কি বদলালো বুঝার কোন উপায়ই নেই। চিটাগাং গেটের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়। আমার শহরে ফিরলাম। "আমার শহর" নিজের মনে আওড়াতে বেশ ভালো লাগে।
কর্ণেল হাট অনেক ঘিঞ্জি। দলে দলে মানুষ সকাল-দুপুর-বিকেল বাজার করে ফিরছে। একে খান মোড় দূরপাল্লার বাসে ভর্তি। এখান থেকে আমার শহরের শুরু বললে বোধহয় ভুল বলা হবেনা। সোজা গেলে পড়বে অলংকার মোড়। বাঁয়ে বাঁক নিয়ে ফয়'স লেক পার হলাম। নতুন সাজের ফয়'স লেকের চেয়ে পুরোনোটাই আমার পছন্দ। উল্টোদিকেই ইউএসটিসি যার কারণে এই এলাকা এখন অনেক বেশি জমজমাট।
সামনে এগোতেই হাতের বাঁয়ে ভেটেরনারি ইউনিভার্সিটি। বাইরে থেকে দেখে বেশ ভালোই লাগে। এরপর শুরু খুলশী আবাসিক এলাকা, উচ্চমহলের আবাসস্থল। খুলশী ফেলে নাসিরাবাদ আর এখানেই সেই বিখ্যাত বা কুখ্যাত "এমইএস কলেজ" যাই বলেননা কেন। অল্প একটু এগোতেই জিইসির মোড়, এ শহরের বর্তমান প্রাণকেন্দ্র। সোজা গেলে প্রবর্তক মোড়, বাঁয়ে দুইনাম্বার গেট আর ডানে গেলে টাইগারপাস মোড়। ডানে ঘুরে সামনে এগিয়ে পৌঁছুলাম ওয়াসার মোড়। ডান পাশে চোখ ছিলো বলে দেখলাম গরীবউল্লাহর মাজার আর বাস স্ট্যান্ড এর পরপরই অনেক অভিজাত বিপণি বিতান অ রেস্তোঁরা। ওয়াসার মোড় ফেলে লালখান বাজার মোড়। এখানকার অবস্থাও দেখলাম জিইসির অনুরূপ।
সোজা চলে এলাম টাইগার পাস মোড়। এখন সোজা গেলে পৌঁছাবো বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ। টাইগার পাস থেকে বাঁয়ে এগিয়ে এসে এলাম স্টেশন রোড। বাস স্ট্যান্ড, পুরোনো স্টেশন ফেলে সামনে নতুন স্টেশন। আর অল্প একটু এগোলেই নিউমার্কেট - এ শহরের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রিয় বিপণি বিতান। নিউমার্কেটের ফালুদা এখন ইতিহাসমাত্র। বাঁয়ে এগোলে রিয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেন। সোজাই এগিয়ে এলাম কোতোয়ালি মোড়। সাধুর স্পঞ্জের মিষ্টির স্বাদ মুখে লেগে আছে যেনো। ডানে গেলে সদরঘাট, বাঁয়ে লালদীঘির ময়দান আর সোজা পাথরঘাটা - আমার শৈশব। আমার স্কুলের সামনে এসে দাঁড়ালাম। লালচে পাথরের বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম মনে মনে। সেই শহর, সেইসময় কিসের বিনিময়ে ফিরে পাবো?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৩