পোস্টের অবতারণা নিছক কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরার জন্য নয়। সীমান্ত রক্ষা ও আত্মরক্ষার নামে প্রতিনিয়ত সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে চিত্রনাট্য অনুশীলিত হচ্ছে তার কিছু রূপ সাধারণ পাঠকের জন্য তুলে ধরার প্রচেষ্টায় এই পোস্ট।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত কতৃক নির্মিত ৪০০০ কিলোমিটার বিস্তৃত সীমানা প্রাচীর, আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে যার পরিচিতি "ভারতের প্রাচীর", স্থানীয়দের জন্য তা কেবলমাত্র "মৃত্যুর দেয়াল"। বিগত ১০ বছর ধরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে প্রায় ১০০০ মানুষ যার সিংহভাগ বাংলাদেশী নাগরিক। আর তাই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এখন দক্ষিণ এশিয়ার মৃত্যু-উপত্যকা নামে পরিচিত।
পাচারকারি সন্দেহে ২০১০ সালের মার্চে আত্মরক্ষার খাতিরে ভারতীয় সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর হাতে খুন হন আলাউদ্দিন বিশ্বাসের নিরস্ত্র ২৪ বছর বয়সের ভাগ্নে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলাউদ্দিন বিশ্বাসের বর্ণনা –
“মাটিতে আত্মসমর্পিত অবস্থায় বিএসএফ তার কপালে গুলি করে। সে যদি দৌড়ে পালাতো তাহলে তার পিঠে গুলি করা হত। ওরা তাকে নিছক হত্যা করেছে।”
কাঁটাতারে ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ তো এখন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্গনের মূর্তিত-প্রতীকি চিত্র। ২০১১ এর জানুয়ারিতে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় ১৫ বছরের ফেলানীকে হত্যা করা হয়। এর ঠিক মূহুর্ত পূর্বে ফেলানী খাতুনের বাবা নূর ইসলাম সীমানা পার হন। আইআরআইএন এর কাছে নূর ইসলামের ফেলানী-হত্যার বর্ণনা –
“আমি ওদের দেখলাম কোন রকম সতর্কতা সংকেত ছাড়াই উঠে দাঁড়িয়ে গুলি করতে। আমার মেয়েটার চিতকার শুনলাম শুধু। জানিনা কেন ওরা আমাদের সতর্ক করেনি।“
সে তুলনায় নজরুল ইসলাম কে ভাগ্যবান মানতে হবে। রাত ৩টায় তিনি সীমানা পার হয়েছিলেন তার গরু ফিরিয়ে আনতে। এক্ষেত্রেও বিএসএফ অতর্কিতে হামলা করে। নজরুলের হাতে গুলি লাগলেও এযাত্রা প্রাণে বেঁচে যান।
ভুক্তভোগীদের তালিকা থেকে শিশু-কিশোররাও বাদ যায়না। সন্তানদের ওপর বিএসএফ এর বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন এক পিতা –
“নয়জন সৈন্য আমার ছেলেদেরকে কোন কারণ ছাড়া নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে। রাইফেলের বাট, লাথি, থাপ্পড় কিছু বাদ ছিলো না। ছেলেরা মাটিতে পড়ে গেলেও রেহাই দেয়নি। তাদের বুকসহ অন্যান্য সংবেদনশীল জায়গায় ইচ্ছেমত লাথি মেরেছে।“
দিনাজপুরের সীমান্তবর্তি গ্রাম আমগাঁওয়ের নয় বছর বয়সের বাসিন্দা আনিস কাজ করে তার চাচাতো ভাই জামালের সাথে “জিরো পয়েন্টে” অবস্থিত তাদের ক্ষেতে। তার বর্ণনায় –
“দিনের মত আলো হয়ে যায় যখন ওরা রাতে ফ্লাডলাইট জ্বালায়। ওপারের খামারিদের সাথে আমরা একই জমিতে কাজ করি। কিন্তু ওদের সাথে আমাদের কথা বলতে মানা। কথা বললেই বিএসএফ অবৈধ পাচারকারি বা অবৈধ অভিবাসীদের সাহায্যের অভিযোগে অভিযুক্ত করবে।“
যেকোন সীমান্ত হত্যাকান্ডকে অপরাধ দমনের মুখোশ পরিয়ে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি মনোজ কুমার মহাপাত্র আইআরআইএন কে বলেন –
“বিএসএফ এখন আর বেসামরিক লোককে আক্রমণ করেনা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের আত্মরক্ষার তাগিদে গুলি চালাতে হয়।“
মানবাধিকার প্রশ্নে উদ্বিগ্ন ভারত সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয়ে সন্দেহজনক ভাবে উদাসীন। তাদের এ উদাসীনতা বিএসএফ কে দিয়েছে “লাইসেন্স টু কিল”। তাইতো বিএসএফ প্রধান রমন শ্রীবাস্তব নির্দ্বিধায় বলতে পারেন –
“ক্ষতিগ্রস্তরা নির্দোষ নয়। তাই তাদের জন্য দুঃখিত বোধ করার ও প্রয়োজন নেই।“
সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার অধিকার সব দেশেরই আছে। কিন্তু তাই বলে তা কাউকে নিরস্ত্র মানুষের ওপর প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের অধিকার দেয় না। সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার দাবি জানাই।
তথ্যসূত্রঃ
Click This Link
Click This Link
ছবিঃ
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৭