somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন নিজের সংস্কৃতিকে বলাৎকার করি ... ... [১]

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"বাংলা" আমাদের ভাষা - এটা সত্যি নয়।আমরা দীর্ঘদিন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে উপভোগ করেছি, এরপর বাংলাকে উলঙ্গ করে নাচিয়েছি , আর এখন উলঙ্গ বাংলাকে প্রতিনিয়তই ধর্ষন করে চলেছি । হয়ত রফিক-শফিকরা বেঁচে থাকলে ওরা আর একবার চেষ্টা করত ওদের ভাষাকে বাঁচানোর জন্যে ... ...


---------------------------------------
১.
ঢাকার ৪০০ বছরের ইতিহাসে যে অপূর্ণতা ছিল, তা পূরণ হল এইতো মাত্র কিছুদিন আগে। অবিভক্ত সাংস্কৃতিক ভারত (বাংলাদেশ এবং ভারত) - এর বাদশাহ শাহরুখ খান ঢাকায় এসে আমাদের রাজধানী ঢাকার ইতিহাসকে ধন্য করে গেলেন। শাহরুখকে একটা কারণে অবশ্যই ধন্যবাদ দেই, তিনি আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে আমরা কিভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধর্ষন করছি । শাহরুখ ঢাকায় শো করে গেছেন - এটা কি শাহরুখের দোষ ? আমরা সেই শো দেখতে হাজার টাকার টিকেট করেছি - এটা কি দোষের কিছু ? দুটোর উত্তরই "না" ... ...

আমার দেশের মাটিতে দাড়িয়ে শাহরুখ হিন্দীতে পুরো শো চালিয়ে যেতে পেরেছেন, এটা মোটেই শাহরুখের দোষ নয়, বরং এটা শাহরুখদের সফলতা: তারা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ভারতের সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন পৃথিবীর মাঝে । পারিনি আমরা ... নিজেদেরটা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া তো দূরে থাক, নিজেরাই নিজেদেরটা ধরে রাখতে পারিনি ... ... অথচ আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি । কোন কিছুকে "নিজের" বলে দাবী করতে হলে তার প্রতি কিছু দায়িত্ববোধ থাকতে হয়; আসুন নিজেকে একবার প্রশ্ন করি, বাংলা ভাষার প্রতি এমন কী দায়িত্ববোধ আছে আমার যাতে আমি বাংলাকে নিজের ভাষা বলে দাবী করতে পারি ???

"বাংলা" আমাদের ভাষা - এটা সত্যি নয়। বাংলা রফিক-শফিক-ছালাম-বরকতদের ভাষা। ওদের মৃত্যুর পরে আমরা দীর্ঘদিন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে উপভোগ করেছি, এরপর বাংলাকে উলঙ্গ করে নাচিয়েছি , আর এখন উলঙ্গ বাংলাকে প্রতিনিয়তই ধর্ষন করে চলেছি । হয়ত রফিক-শফিকরা বেঁচে থাকলে ওরা আর একবার চেষ্টা করত ওদের ভাষাকে বাঁচানোর জন্যে ... ...

২.
২/৩ বছর আগে কোন এক ঈদের কথা। ঈদের সময় মাইক-টাইক সারাদিন একটু গরমই থাকে। গান-বাজনা ছাড়া কি আর ঈদ হয় ! কিন্তু সেবার ঈদে প্রতিটি মাইক-স্পিকারই একই গান গাইছে, আর সেটা সে সময়ের সারা জাগানো ভারতীয় গান, "হরে কৃষ্ণা, হরে রাম ... ..." ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে চিন্তা করলে "ঈদ"এর দিনে কিছুতেই "কৃষ্ণ-রাম"-এর গান বাজতে পারে না । আর আমাদের যে তরুন প্রজন্ম এই গানের মূল শ্রোতা ছিল, তারা কিন্তু "ঈদ-কৃষ্ণ-রাম" এসব কিছু চিন্তা করে ঐ গান শুনেনি। তাদের কাছে "ঈদ" একটি "জাতীয় উৎসব" , আর "হরে কৃষ্ণা, হরে রাম ... ..." গানটি ছিল "উৎসবে বিনোদনের মাধ্যম।" আমাদের দেশে "ঈদ" এখন আর শুধু ধর্মীয় উৎসব হিসেবে সীমাবদ্ধ নেই, এটা এখন আমদের উৎসব; আমার হিন্দু বন্ধুদের অনেকেই আমাকে ঈদের দিনে SMS পাঠায় "ঈদ মুবারক" আর পূজার দিনে পাঠায় "শুভ বিজয়া" কিংবা "শুভ দশমী" ... আমিও এমনই। এ দেশে ধর্ম আমাদের কোন কাজে বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি কোনদিনই। তাইতো আমরা রোজা-পূজা পালন করতে পেরেছি একই সাথে। যাই হোক , যা বলছিলাম, উৎসব আর উৎসবের আনন্দ । আমাদের জাতীয় উৎসবে বাজছে "ভারতীয় গান।" তাও আবার কোন বিশেষ গোষ্ঠীর মাঝে নয়, পুরো দেশ জুড়ে ... ... জয়তু ভারতমাতা ... ...

৩.
এইতো সেদিন, গত ১৫, ১৬ এবং ১৭ ডিসেম্বরে গেলাম ক্যাডেট কলেজের পূণর্মিলনীতে। ১৫ তারিখ রাতে কনসার্টে অংশ নিতে ঢাকা থেকে এল দুই নারী-কণ্ঠশিল্পী । এদেরকে Lady Singer বললেই এদের মাহাত্ম্য ভাল করে বোঝা যায়। একেবারে ভাজে-ভাজে সৌন্দর্য্য !!! যাই হোক, ১৫ ডিসেম্বর রাতের কনসার্ট, স্বভাবতই এরা "দেশের গান" দিয়ে শুরু করল ... কিন্তু হায়, ২/১ টি গান যেতেই সবাই "শিলা ... ... শিলা ..." বলে চিৎকার ... ... মানে তাদেরকে "শিলা" গেয়ে শোনাতে হবে। "শিলা কী" - এটা যারা জানেন না, তাদের জন্য বলি, "শিলা হচ্ছে ডিসেম্বর ২০১০ এ বাজার মাতানো ভারতীয় সিনেমার গান যেখানে ক্যাটরিনার কোমর দোলনো আপনাকে মুগ্ধ করবেই !!!" যাই হোক, ডিসেম্বর মাস, তাও আবার ১৫ ডিসেম্বর রাত, অনুষ্ঠানের আয়োজক BEXCAএর পক্ষ থেকে কিছুতেই হিন্দী গানের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু আইন করেতো আর কাউকে শ্রদ্ধাশীল করা যায় না, তাই দর্শক-শ্রোতাদের মুহূর্মুহু অনুরোধের কারণে হিন্দী গানের অনুমতি পেতে সময় লাগল না ; আর যায় কোথায় ... অনুমতি পাওয়া মাত্রই শুরু হল জনপ্রিয় সব হালের হিন্দী গান ... ... নাচছে Lady Singer, দুলছে শ্রোতা ... ... মাত্র ১৫/২০ মিনিট পরেই আমাদের "জাতীয় বিজয় দিবস" ... ... ... জয়তু ভারতমাতা, জয়তু রাজা হিন্দুস্তানী ... ...

৪.
আমাদের কোন অনুষ্ঠানই এখন আর হিন্দী ছাড়া জমে না। সেটা বিয়ে, জন্মদিন, কিংবা কোন জাতীয় উৎসব - যাই হোক না কেন । আমাদের ঘরে ঘরে চলছে হিন্দী সিরিয়ালের মহড়া ... ... এমনকি এখন ক্লাস ৫/৬ এর ছেলেমেয়েরাও চরম হিন্দী বলতে পারে টেলিভিশন নামের এই অদ্ভুত যন্ত্রটির কল্যাণে।

আচ্ছা, আমাদের তরুন প্রজন্ম যে দিনে দিনে হিন্দী-প্রেমিক হয়ে যাচ্ছে - এটা কি ওদের দোষ ???
বিদেশী ভাষার গান শোনা, মুভি দেখা কি অপরাধ ???
শাহরুখ খানরা এদেশে আসলে তার শো এর টিকিট কেনা কি অপরাধ ???
এমন আরও অনেক প্রশ্ন আসে মনে ... ...
সবাই খালি "না , না ..." উত্তর দেয়, সবাই এসকে ধিক্কার জানায়, কিন্তু সবার বাসায়ই টিভি খুললেই চলছে হিন্দী সিরিয়াল ... ... ...

৫.
পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফালগুন,২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর - এগুলো এখন আমাদের জাতীয় আনুষ্ঠানিকতায় পরিনত হয়েছে। বছরে সারা মাস জুড়ে বাংলা ভাষাকে বলাৎকার করে ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই "আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানো ..." একটা গান গেয়ে আমরা আমাদের সারা বছরের বলাৎকারের পাপমোচন করি। ২২ শে ফেব্রুয়ারি থেকে আবার পুরো উদ্যমে শুরু করি বলাৎকার ... ... ... বছর জুড়ে নিজের সংস্কৃতিকে ধর্ষণ করার পরে পহেলা বৈশাখ কিংবা পহেলা ফাল্গুন এলেই আমাদের বাঙালিয়ানা উপচে পড়ে ... ... আমরা একদিনের জন্যে বাঙালি হই ... তবে যেহেতু এগুলো আমাদের জাতীয় উৎসব, তাই সেদিন বেশি দূরে নয় যখন পহেলা বৈশাখেও আনন্দ করার মাধ্যম হিসেবে মাইকে মাইকে বাজবে হালের কোন হিন্দী গান ... ...

৬.
ভারত আমাদের দেশকে তাদের প্রদেশ বানাতে বানাতে পারবে কিনা - এই রাজনৈতিক প্রশ্নে যেতে চাই না। তবে বর্তমান অবস্থা বজায় থাকলে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক দিক থেকে খুব সহজেই ভারতের সাথে মিশে যেতে খুব বেশিদিন আর লাগবে বলে মনে হয় না ... ... দু:খ হচ্ছে রফিক-শফিকদের জন্যে ... বেচারা জীবন দিয়ে একটা জাতির জন্যে কেবল মাত্র একটা জাতীয় উৎসব নিয়ে আসলেন ... ... আর তরুন প্রজন্মের দোষ দিয়ে লাভ নেই , দায় তরুনদের নয়, কারণ নিজের ভাষাকে কিভাবে চর্চা করতে হয় - সেটা তাদের শেখানো হয়নি ... ... "মা" যদি সারাদিন টিভিতে হিন্দী সিরিয়াল নিয়ে পড়ে থাকে , তাহলে তার মেয়ে বড় হয়ে বাংলা গানের ভক্ত হবে - এটা আমরা আশা করতে পারি না ... ... আমরা নিজেদের সংস্কৃতি অন্যের মাঝে ছড়ি দেয়াতো দূরে থাক, নিজের ঘরেই নিজের সংস্কৃতির চর্চা করতে পারিনি - এ দোষ কি শাহরুখ খানের ??? আমাদের RJ-রা প্রতিনিয়ত রেডিওতে বাংলা ভাষাকে উলঙ্গ করে নাচাচ্ছে - এ দোষ কি হিন্দী গানের ??? পৃথিবীর সব দেশই তার ভাষা, তার সংস্কৃতি অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায়। আমরা উদার জাতি, আমরা চাই অন্যেরটা গ্রহণ করতে ... ... ... আসুন প্রতিদিন নতুন করে বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতিকে বলাৎকার করার নতুন নতুন পদ্ধতি বের করি ... ... ... আর দিন শেষে গাই :

তোমরা একতারা বাজাইও না, দোতরা বাজাইয়ো না, একতারা বাচাইলে মনে পইড়া যায় - একদিন বাঙালি ছিলামরে ... ... ... একদিন বাঙালি ছিলামরে ... ... ...

[বি.দ্র. আমরা যারা বাংলায় গান গাই, আমরা যারা বাংলার গান গাই, তাদের কাছে অনুরোধ :শুধু সমালোচনা নয় নিজের সুচিন্তিত মতামত দিন, কীভাবে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব ।]

[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১২:২৯
১৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×