somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

একান্ত নিনাদ
জানিনা কি জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেছি। হয়তো আমার ভাবনা গুলো প্রকাশ করতে চাই। হয়তো আমার না বলা কথাগুলো, অনুভূতিগুলো অজানার কাছে চিৎকার করে বলতে চাই।প্রকাশ জিনিষটা একটুও সহজ না যখন আপনি একজন ইন্ট্রোভারট। জানিনা কতোটুকু পারবো, কতোদিন পারবো।

“অ্যামেরিকার স্বপ্ন”-এর নতুন রূপ।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“অ্যামেরিকান ড্রিম” নামে একটি ধারণার প্রচলন রয়েছে, যা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মোটামুটি সারা বিশ্বের মানুষই শুনে থাকবেন এরই মধ্যে। কিন্তু কি এই অ্যামেরিকান ড্রিম বা অ্যামেরিকার স্বপ্ন? এর মানে কি কোনো ভাবে শুধু অ্যামেরিকা নামের দেশটিতে যেতে পারা? যেয়ে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট বা সিটিজেন হওয়া? নাকি স্বপ্নের এই দেশটিতে এসে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ভালো চাকরি করা? নাকি এই দেশে আছে অপার কোনো প্রাচুর্য, যা যে কাউকেই ধরা দেয়? অনেকের অনেক দ্বিধা থাকতে পারে এই অ্যামেরিকান ড্রিম ব্যপারটা নিয়ে, তাই হয়তো অনেকেই একে নিজেদের মতো করে সংজ্ঞায়িত করতে চেষ্টা করেছেন। এদেরই মধ্যে একদল মানুষ মনে করেন, অ্যামেরিকান ড্রিম আসলে একটা বিশ্বাস, যেখানে ধরা হয়, আমেরিকার যে যেখানেই থাকুক না কেন, যে শ্রেণী বা পরিবারেই তারা বেড়ে উঠুক না কেন, তাঁরা চাইলে তাদের নিজেদের মতো করে সফলতা অর্জন করতে পারে। আর এই সাফল্য তাদেরই আসবে, যারা পরিশ্রম করেন, রিস্ক নেন আর স্যাক্রিফাইস করেন সুযোগ এর আশায় না বসে থেকে।
অ্যামেরিকান ড্রিম টার্মটি প্রথম জেমস ট্রসলো অ্যাডামস নামের এক ভদ্রলোক ১৯৩১ সালে তার বেস্ট সেলিং বই “এপিক অফ অ্যামেরিকা” তে প্রথম আনেন। যেখানে তিনি এমন একটা ভূখণ্ড-এর স্বপ্ন দেখেন যেখানে উন্নত জীবন থাকবে, সবাই সাচ্ছন্দে জীবনযাপন করবে, আর সবাই সুযোগ পাবেন যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী নিজের ভাগ্য উন্নয়নের। ট্র্যাডিশনাল ধরানার এই অ্যামেরিকান ড্রিম কন্সেপ্টে আশাই করা হয় সবার মোটামুটি একটা ভালো বাসস্থান থাকবে, নিজস্ব গাড়ি থাকবে, এবং গ্রাজুয়েশন বা কলেজ ডিগ্রী নেয়ার পর সবাই একটি ভালো চাকরিতে থাকবেন যা তাকে সেটেল্ড একটা জীবন পেতে সাহায্য করবে। লেখকের এই আশাবাদের সাথে অ্যামেরিকানরা একমত হয়েছিলেন, কারন তিনি যেই ভূখণ্ডটির স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আসলে খুব অসম্ভব কিছুইনা, বরং আমরা মানুষ হিসেবে এসব কিছুই মৌলিক চাহিদা যে কারো থাকতেই পারে। তার স্বপ্ন আরও বাস্তব মনে হয়েছিল কারন, অ্যামেরিকানরা বিশ্বাস করতো জাতীয়তা যার যাই হোক, সবাই এই দেশটির উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে, কারন তারা জাতিগত ভাবে অনেক আগে থেকেই ফ্রি মার্কেট ইকোনমিতে আস্থাশীল, ট্রেড এগ্রিমেন্ট ও বিদেশী বিনিয়োগ কে তারা সবসময়ই স্বাগত জানাতো আর তথ্য ও সংস্কৃতি-এর আদান প্রদানে তারা সবচেয়ে উদার। সর্বপরি একটি বিশেষ জায়গায় অ্যামেরিকান রা সবসময়ই একমত হয় - যেখানে তাদের সরকার ও প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ গুলোর স্বার্থ জড়িত।
এই ছিল ট্র্যাডিশনাল কন্সেপ্টের অ্যামেরিকান ড্রিম। আজকের যারা অ্যামেরিকান তাদের কাছে এই স্বপ্নটা একটু অন্যরকম। ট্র্যাডিশনালদের পরে বেশ কয়টি জেনারেশন আসে, যেমন বেবি বুমারস, জেনারেশন এক্স, মিলেনিয়ালস, জেনারেশন জি। আজকের অ্যামেরিকান বলতে আমি এখানে মিলেনিয়ালস আর জেনারেশন জি-দের কে বুঝাচ্ছি। জানানোর জন্য মাত্র, মিলেনিয়ালস হচ্ছে যাদের জন্ম ১৯৮০ থেকে ১৯৯৬ এর মধ্যে আর জেনারেশন জি বলতে যাদের জন্ম তারও পরবর্তি সময়ে। তো এখনকার অ্যামেরিকানরা তেমন আর এই সাদা ফেন্সদেয়া বিশাল জায়গা নিয়ে বাড়ি চায়না। তারা এই বাড়ির মালিকানা এমনকি বিয়ে করা কেও বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার কথা মাথায় এনে দায়বদ্ধতা মনে করে। যদিও আর সব প্রজন্মের মধ্যে এই মিলেনিয়ালসদেরকে সবচেয়ে শিক্ষিত প্রজন্ম হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে শিক্ষা এদের কাছে সবচেয়ে খরুচে বিনিয়োগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।এর কারন একটাই পাস হয়ে বের হতে হতে তাদের যতটাকা স্টুডেন্ট লোণ হয়ে দাঁড়ায়, বেশির ভাগ সময়ই তারা সেই লোণ পরিশোধ করে নিজের আনুষঙ্গিক খরচের পর সাচ্ছন্দে চলার মতো জীবন দিবে এমন ভালো চাকরি পায়না। তাই তারা জীবনের এক সময়ে বড়বাসা, বিলাসী গাড়ি, সন্তান-সন্তুতি এসবের চেয়ে নিজের একান্ত ছোটোখাটো শখ পূরণ করতে পারা কেই অ্যামেরিকান ড্রিম হিসেবে ধরে নেয়। আর তাদের ৯টা-৫টা হোয়াইট কলার জব যেহেতু অনেক কিছুর জন্যই পর্যাপ্ত না, তারা এখন অনেকেই রেগুলার জবের চেয়ে ফ্রিল্যান্সিং বা কনসাল্টিং-এ আগ্রহী হয়ে উঠছে। চাকরির চেয়ে তারা তাদের অনলাইন বিজনেসটাকে নিয়েই বেশি আশাবাদী। আর যারা চাকরিও করছে, তারা চায় ফ্লেক্সিবল আওয়ার বা টেলিকমিউটিং সুবিধা। তারা মনে করছে, নিজেই নিজের মতো কাজের শিডিউল বেছে নেয়ার সুযোগ/ স্বাধীনতা তাদেরকে নিজের লাইফস্টাইল বা পছন্দের জিনিসগুলোর জন্য একটু সময় বের করার সুযোগ করে দেয়।
এই প্রজন্মের কাছে অ্যামেরিকান ড্রিমের আরেকটা মাপকাঠি রয়েছে, যা হচ্ছে আর্থিক স্বাধীনতা। এমনকি নতুন একটা মুভমেন্টের কথাও হয়তো আপনি এরই মধ্যে শুনে থাকবেন, “ফাইনেন্সিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যান্ড রিটায়ার আর্লি”, সংক্ষেপে ফায়ার। যার মূল ধারনা হচ্ছে, জীবনকে এমনভাবে ডাউনসাইজ (সংক্ষেপিত) করা যাতে তা কোনো ভাবেই খরুচে না হয়ে দাঁড়ায়, আগ্রাসীভাবে সঞ্চয় করা আর একি সাথে সেই অর্থ বিনিয়োগ করা, সব দায় (ডেবট) পে-অফ করা, নিজের এমন কিছু স্কিল বের করা বা গড়ে তোলা যাতে করে ট্র্যাডিশনাল ডিগ্রি নির্ভর হয়ে বাকি জীবন না চলতে হয়।
এসব ছেলে মেয়েদের সবারই নিজস্ব আপ্রোচ রয়েছে কিন্তু এই “ফায়ার” মুভমেন্ট এর মূল ধারনা হচ্ছে জীবনের কয়টা বছর কষ্ট করে চলা, সঞ্চয় আর বিনিয়োগ করা আর যত দ্রুত সম্ভব রিট্যায়ার করা। আর সর্বপরি পরবর্তী সময়টা নিজেকে খুশি রাখে এমন কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা – সেটা হতে পারে কোনো সেচ্ছাশ্রম (ভলান্টিয়ারিং) বা ট্র্যাভেল বা নিজের প্রিয় মানুষগুলোর সাথে টাইম স্পেন্ড করা।
তারা জীবনের এক পর্যায়ে এসে তীব্রভাবে জানার চেষ্টা করে, কোন জিনিসগুলো তার কাছে অর্থপূর্ণ আর গুরুত্ববহন করে। তারা বোঝার চেষ্টা করে তাদের জীবনের মুল্যবোধ আর লক্ষ্য। এরা ঋণখেলাপি হওয়াকে তেমন আর বুদ্ধিমানের মতো কিছু মনে করেনা বরং তারা বেশি ইন্টারেস্ট বেয়ারিং লোণটাকে আগে পরিশোধ করার প্ল্যান করে। ঋণমুক্তির পাশাপাশি তাদের সাধ্য অনুযায়ী সেইভ করে সেই টুকু অর্থ কোথাও বিনিয়োগ করতে চেষ্টা করে। নতুন যুগের অ্যামেরিকান সন্তানেরা স্মার্ট স্পেন্ডিং-এর ব্যপারে সচেতন।এদের মধ্যে যারা বাড়ি বা গাড়িও কিনে তাদের প্রথমত তারা তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দামি কিছু কিনতে চায়না, যতটুকুই কিনে, চেষ্টা করে ব্যাংক ইন্টারেস্ট না দিয়ে সাধ্য অনুযায়ী নিজের সঞ্চয়করা অর্থ দিয়ে কিনতে।
পরিশেষে, অ্যামেরিকা নামের দেশটাতে যেমন খুবই ডাইভারসিটি রয়েছে, এই অ্যামেরিকান ড্রিমটাও তেমনি আজকের অ্যামেরিকানদের কাছে নানারূপ অর্থ বহন করে। তারা এমনি একটি জীবন চায় যা তারা উপভোগ করে। সেই জীবনে বাড়িই থাকুক আর ছোট্ট কোনো এপার্টমেন্টই থাকুক।
এই লিখাটি আমার-এর আগের লিখাটির ধারাবাহিকতা হিসেবে ধরা যেতে পারে। ধীরে ধীরে আমরা আরও ভিতরে যাওয়ার চেষ্টাই করবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×