বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে গণমাধ্যমগুলো ও লোকমুখে জাতীয় সংসদের সম্মানীত সদস্য ইলিয়াস আলীর রহস্যজনক নিরুদ্দেশ নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আমরা একদল এ বিষয়ে সরকারী দল কে দায়ী করছি, অন্য দল বিরোধী দল কে। যারাই এর পেছনে থাকুক না কেন আমাদের মনে রাখতে হবে এটি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে হুমকির সম্মুখীন করছে এবং সাথে সাথে দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যনের মতে সাম্প্রতিক সময়ে এনফোরসড ডিসাপিয়ারেন্স বা'গুম' এর ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। আইন ও সালিস কেন্দ্রের এক পরিসংখানে দেখা যায় যে ২০১২ সালে তারা ২২ টি এনফোরসড ডিসাপিয়ারেন্স এর ঘটনার তথ্য পেয়েছেন যার মধ্যে ৭টি ঘটনার সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সম্প্রিক্ততার অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’এর হিসেবে ২০০৯ সালে এ ধরনের এনফোরসড ডিসাপিয়ারেন্স ঘটেছে ২টি, ২০১০ সালে ১৮টি, ২০১১ সালে ৩০টি এবং ২০১২ সালে এ পর্যন্ত ৮টি। এনফোরসড ডিসাপিয়ারেন্স শব্দটির সাথে আমরা প্রথম পরিচিত হই ২০০৮ সালে । ২০০৮ সালের ২২ জুলাই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার তুশার ইসলাম টিটুকে RAB প্রকাশ্যে অপহঅপহরন করে। নড়াইলের লোহাগড়া থানার লুটিয়া গ্রামের আমিনুর ইসলাম ব্যাবসা ও সচিবালয় কেন্দ্রিক তদবিরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১১ সালের ৩১শে অক্টোবর রাত ১১টায় তিনি তোপখানা রোডের নিউইয়র্ক হোটেলের সামনে থেকে হারিয়ে যান। পরবর্তীতে পুলিশ জানতে পারে তার মুঠোফোন টি আশরাফ নামের একজন সেনা সদস্য অন্য সিম দিয়ে ব্যাবহার করছে। সর্বশেষ ইলিয়াস আলী এক সপ্তাহেরও বেশী নিখোঁজ থাকার পরেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এখনো তার কোন সন্ধান বের করতে পারেনি। এই ঘটনাগুলো নির্দেশ করে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কতটা অসহায় (কিংবা অকার্যকর)।
বিষয়টি নিয়ে দিন দিন রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলছেন সরকার এবিষয়ে কিছু জানেনা। সরকার এর জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করছে। প্রধান বিরোধী দল বলছে সরকারই ইলিয়াস আলীকে অপহরন করেছে। বাতাসে গুজব সরকার ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে পরোক্ষভাবে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য শর্ত দিয়েছে। আবার শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান পত্রিকার খবর, ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ১০০ ক্যাডারকে খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে ছয়মাস মেয়াদি কমান্ডো ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে৷ গত জুন থেকে দেরাদুনের ট্রেনিং নেওয়া এসব (ছাত্রলীগ বা যুবলীগ) ক্যাডারদের গুপ্তহত্যা ও অপহরণের কৌশল শেখানো হয়েছে । 'ক্রুসেডার-১০০' ছদ্ম নামে পরিচিত এসব ক্যাডার রাজনীতিবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের হত্যা ও গুম করার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী৷ এসব ক্যাডার ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে থেকে ২০১০ সালের জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারতের সেনাবাহিনীর কমান্ডো প্রশিক্ষণ নেয়৷প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে আসার পর আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদ, মিডিয়া কর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের একটি তালিকা দেওয়া হয়৷এ তালিকায় ৮৩ ব্যক্তির নাম রয়েছে, যাদের ক্রুসেডার-১০০ 'সাফ' করবে৷ বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ১০০ ক্রুসেডারকে ঢাকার গুলশান ও বারিধারা এলাকার কিছু ভবনে রাখা হয়েছে৷ এছাড়া অপহরণ ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তা সম্পরকে জানা যায় যিনি এই ঘটনার সাথে একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সম্প্রিক্ততার কথা জানান। বর্তমানে প্রান ভয়ে তিনি নিশ্চুপ আছেন।
এই ধরনের পরস্পর বিরোধী কথা ও গুজব দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করছে আর আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে আক্রমণাত্মক করে তুলছে। বিরোধী দল এর মধ্যেই কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত তার অবস্থান জনগনের সামনে খোলাসা করা।