somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রিয় রা.বি আবার কবে প্রাণ ফিরে পাবে?

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যায়যায়দিন ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এস এম নাদিম মাহমুদ তার ফেইসবুকে একটি স্টাটার্স শেয়ার করেছে। তার সেই স্টাটার্সটি আমাদের বন্ধুদের জন্য শেয়ার করা হলো।

********রাবির ঘটনা আমার চোখে********

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রিয় ক্যাম্পাসে কেটেছে। আজকের এই দিনটি আমার জীবনে না আসলেই খুশি হবো। সকাল ১০ টার দিকে ক্যাম্পাসে পা রাখতেই দেখলাম বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকালিন কোর্স বাতিলের দাবীতে কয়েক হাজার সাধারন শিক্ষার্থী আগেরে দিন রাতে আবাসিক হলগুলোতে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় কিছু দুবৃত্তরা। তাই ভেবেছিলাম আজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হয় জোরদার হবে নতুবা কমে যাবে। প্রথমই টা ঠিক হলো। সকাল ১১ টার কিছু আগে হঠাৎ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অদৌরে দুইটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ শিক্ষাথীদের ওপর আকশনে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমাদের উপস্থিতির কারনে তা ভেস্তে যায়। দুপুর পৌনে ১২ টার ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস পদক্ষিণ শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জমায়াতে পাশ কেটে চলে যায়। আমরা তখন সকল সাংবাদিক পশ্চিম পাশ থেকে পূর্বে দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর ছেলে-মেয়েদের কান্নাকাটি দৌড়যাপ। লক্ষ্য করলাম শিক্ষার্থীদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলির ছ্বটা আর হাতবোমা, কাদুনে গ্যাস। লক্ষ্য করলাম শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ছে। দুইদিকের আক্রমনে শিক্ষার্থীরা দ্বিগদিগ হয়ে ছুটাছুটি করছে। আমি তখন প্রশাসন ভবনের পূর্বে পাশ্বে একটি মাইক্রোর পাশে আশ্রয় নিলাম। সেখান থেকে লক্ষ্য করলাম বিভীষিকাময় দৃশ্য। ভয়ে ছিলাম কখন আমার বুকে গুলে লাগে। এরপর দৌড় দিলাম কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের দিকে। তখন দেখলাম এক সহকারি প্রক্টর শিক্ষার্থীদের গুলি করতে নিদের্শ দিচ্ছে। দিচ্ছে লিড। সাধারন শিক্ষার্থীরা তখনই দৌড়াচ্ছে পশ্চিম পাড়ার দিকে। ছাত্রলীগের মিছিল চলছেই। পুলিশ দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্যগুলো মনে হয় অবলোকন করছে। দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রক্তচক্ষু। হাজারের উপর শিক্ষার্থী প্রাণ ভয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ভিতরে আটকা পরে। মেয়েরা রিডিং রুমে আর ছেলেরা নীচে। এক সহকাআমরা সাংবাদিকরা সবাই তখন লাইব্রেরীর সামনে অবস্থান নিলাম। পুলিশের উপ-কমিশনার প্রলয় চিচিম তখন আমাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। আমি স্বাভাবিকভাবে আমার পেশা দারিত্বের জন্য উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম হামলার এই ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য কি? উনি তখন বলতে শুরু করলো আমি কিছু জানি না। পুলিশ কিছু বলবে না। আমার সহকর্মীরা তখন উত্তপ্ত। অনেক সাংবাদিককে কাঁদতে দেখলাম। প্রলয় চিচিম আমাদের কাছ থেকে সরিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের তুই তুকারি করে তাদের ওপর চড়া হয়। সাংবাদিকরা তো অবাক। আমি প্রলয় দাকে বললাম এতো ক্ষিপ্তার প্রয়োজন ছিল না। আমরা প্রথমত ছাত্র তারপর সাংবাদিক। তাই বন্ধুর বুকে যখন গুলি লাগে তাই স্বভাবত ইমোশনাল হওয়াটাই স্বাভাবিক। এরপর আমার কয়েকজন সহকর্মীদের ধাক্কা দেয় পুলিশ সদস্যরা। আমি তখন বললাম এটা কিন্তু ঠিক নয়। তখন এক পুলিশ সদস্য আমার পা কে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে আমি পাটা উপরে নেয়া সেই গুলির ছ্বটা গিয়ে লাগে ছোট ভাই ও নিউএজের নাজিম মৃধার পায়ে। পুলিশ লাঠি দিয়ে তখন আঘাত করে শীর্ষ নিউজের জাকির হোসেন তমাল। চড়াও হয় মাছরাঙ্গা টিভির গোলাম রা্ব্বানী Golam Rabbani ওপর। এরপর বন্ধু Shakir Ikram ও আমার বুকে বন্ধুক তাক করে। আহত হয় আরো কয়েকজন শহরে সাংবাদিক। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ সেখান থেকে সরে পরে। আবাসিক হলগুলো থেকে ফের দুপুর দেড়টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসলে গ্রন্থাগারে সামনে ফের পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ভিতরে লক্ষ্য করে কাদুনে গ্যাস দেয় পুলিশ। আমি কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে অনুরোধ করলাম প্লিজ আমার ভাইদের মারেন না।েএক পুলিশ সদস্য বলল লাইব্রেরীর ভিতর থেকে ইট মারা হয়েছে। আমি বললাম লাইব্রেরীকি ইট ভাটা যেখানে বইগুলো ইট হয়ে গেল? তখন পুলিশ নিশ্চুপ। এরপর আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে শুরু করলাম। দৌড়ঝাপ শুরু সাংবাদিকদের। সংবাদ বাদ দিয়ে আহতদের উদ্ধারে। উপাচার্যকে ফোন দিয়ে অনুরোধ করলাম স্যার যা হবার হয়েছে এখন একটু শান্ত হতে দিন। অনেক সন্তানই আহত হয়েছে। তখন তিনি বললন আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক পাঠালে কাজে আসছে না। তাই পুলিশেই শান্ত করবে। আমি কথাগুলো শুনে হতবাক। এই সময় একদল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তাদের হলে ফিরে যেতে বলে। উত্তিজিত শিক্ষার্থীরা তা না করে দিলে ওই শিক্ষকরা পুলিশকে ফের বলে আপনারা আকশনে যান। আমরা অপমানিত হয়েছি। দুপুর ২ টার কিছুপর আন্দোলনকারী ফের গ্রন্থাগারের আসতে শুরু করলে পুলিশ তৃতীয় দফায় চড়াও হলেও এক পর্যায়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি পুলিশ পিছু হঠতে বাধ্য হয়। শিক্ষার্থীরা পরবর্তী কমসূচি ঘোষণা করে বিকেল সাড়ে ৩ টায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। আমি যখন গ্রন্থাগারের উত্তর পাশ দিয়ে হাটছি দেখলাম ছোপ ছোপ রক্ত। কান্নায় চোখে কোনে জল দেখতে পেলেও তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। শ্রদ্ধীয় স্যারদের অবস্থান দেখে মনের ভিতর এইটুকু অভিব্যক্তি জাগলো খোদাতালা যেন আমাকে কোনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না করেন। দেখলাম অসময়ে রসুনের পিচ্ছুর মতো সবার মুখ এক জায়গায়। দেখলাম সাদা, নীল, সোনালী একাকার। একদিকে সাধারন শিক্ষার্থী অন্যদিকে শিক্ষকদের মুখোমুখি অবস্থান। আমরা সাধারন শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেয়ার শিক্ষকরা আমাকে গালি দিতে লাগলো। অনেকে বলতে লাগলো এই সাংবাদিকরাই এই আন্দোলনকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি শুধু িএইটুকু বললাম সাধারন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থাকা প্রত্যক সাংবাদিকদের নৈতিক দায়িত্ব। যদি আপনাদের কোন বক্তব্য পত্রিকায় না আসে সেটা জানাতে পারেন। কিন্তু না তা আর বলতে পারলো না। সবচেযে বেশি অবাক হলাম রাত ৯ টার পর সিণ্ডিকেটের বৈঠকের সিদ্ধান্থে। যে শিক্ষার্থীরা এতো মার খেল সেই শিক্ষার্থীদের দাবী সিণ্ডিকেটে উঠেনি। বরং তাদের পুরস্কারস্বরুপ একটি থানায় ডায়েরী ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের যে ধারণা জন্মালো তা ক্ষয় কবে হবে তা দেখার বিষয়। আজ যে হামলার ঘটনা ঘটলো তাতে কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি খুব উপকৃত হলেন? যারা হামলা করলেন তারা কি খুব বেশি উপকৃত হলেন? সারা বিশ্বের মানুষগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন চোখে দেখবে? আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজ্জিত হরণ যারা করলো তারা কি নিজেদের ইজ্জিত রাখতে পারছেন তো? আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হলো সাধারন শিক্ষার্থীরা। তাদের বুকে সঞ্চয় হলো আন্দোলনের নতুন বীজ। সঞ্চালিত হলো দাবী আদায়ের কৌশল। ক্যাম্পাস যখন খুলবে তখন এই শিক্ষার্থীরা কি অবস্থায় যাবে তবে আমার বোধগম্য নয়। তবে এইটুকু বলতে পারি এরপর সুদূর প্রসারী এগিয়ে গেল। আমি চাই শান্তিপূর্ণ ভাবে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরুক। ফিরে আসুক মতিহারের এই সবুজ চত্ত্বরের উচ্ছ্বসতা।

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×