তখন বয়স সবে ১৬তে নদীর পাড়ে ঘুড়তে গিয়ে জলন্ত সিগারেট কুড়িয়ে পাওয়া ডানে বায়ে খেয়াল করেই মুখো ধোয়া নেয়া একটু গরম কাশি আর বুক জুড়ে ব্যাথা আজব এক অনুভূতিতে প্রথম স্মোক করা। এর পর থেকেই মাঝে মাঝে বাসার ছাদে, গলির মোড়ে, বাথরুমের অন্তঃঘরে চলতে থাকে টুকটাক স্মোকিং।।
এভাবেই কাটে বছর দুই ততদিনে কলেজে পা পড়ে মাখনের।
কলেজ লাইফ থেকেই চলে রেন্ডমলি সিগারেট খাওয়ার অনুশীলন, ঘুমের আগে, খাওয়ার পরে, আধার রাতের হাতটি ধরে কত রকম পায়তারা কখন যে মাখন স্মোক করবে সর্বদাই থাকে দিশেহারা...
চলে গেল কলেজ লাইফ, মাখন এখন একজন চেইন স্মোকার। ঘর থেকে বের হতে হতেই ছোট্র মালবোরো ব্রান্ডের লাইটার আর পকেট থেকে জন প্লেয়ার বের করে জ্বালিয়ে দেয় আগুন আর অনুভুতি জুড়ে চলতে থাকে শান্তিময় ফাগুন।
এখন আর কোন পিছুটান নেই, কোন বাধা নেই। সিগারেট জ্বলছে জলুক, মাখনের মানসিক প্রশান্তির অস্ত্রের ব্যবহার অবিরতই চলুক...
মাখনের স্মোকিংজোন বলে কিছু নেই, ইচ্ছে হলেই জ্বালিয়ে দেয় সিগারেট ঘরে হোক আর বাইরে- স্মোক ছাড়া মাখনের রুটিনে আর যেন কিছু নাইরে।
মাখনের বাবাও একজন সেই লেবেলের সিগারেট খোর। ছোট থেকেই মাখন তার বন্ধুসুলভ বাবার কারুকার্যময় স্মোকিং দেখে অভ্যস্ত।
এখন তো সেই নাটক চলে মাখনের ঘরে,
মাঝ রাতে চলতে থাকে বারান্দা দখলের খেলা- মাখনের বাপ সিগারেট খেয়ে কখন ঘুমোতে যাবে আর কতক্ষনে মাখনের বারান্দা দখল করা হবে এভাবেই চলছে ঘরের কোনে প্রতিটি রাতের গল্প।।
মাখনের সিগারেট না থাকলেই বাপের সিগারেট চুরি আর বাপের সিগারেট না থাকলে মাখনের সিগারেট চুরি,
মাখনের মা তো এগুলো দেখতে দেখতে প্রায় ১বছর যাবৎ অভ্যস্ত। সকালে ঘুমের চোখে কখনো মাখনের বাপের মুখে সিগারেট চুরির অভিযোগ আবার কখনো মাখনের চোখেও চলে এক ই অভিযোগ। আর মাখনের মায়ের মুখের বুলি থাকে-
বাপ বেটা দুইটাই চোর। কে কার সিগারেট চুরি করে তা শুধু তারা দুজনেই জানে!!!
সিগারেট চুরি নিয়ে প্রায় ই চলে বাপ বেটার অভিযোগমুখর রাগারাগি, তবে তা নিতান্তই বাপ বেটার চোখাচোখি আর নিরবতায় আবদ্ধ ঠাকে, যতটুকু সোরোগোল তা ফুটে থাকে মাখনের মায়ের মুখে সে কি আল্লাদি কথা-
বাপ বেটা যেন পাল্লা দিয়া সিগারেট খাওয়া ধরছে....
এই হল মাখনের ঘরের অবস্থা।।
আর বাইরে মাখনের হাটতে চলতে যেন একটাই বন্ধু তা হল জন প্লেয়ার।
মাখনের ধারনা সে যতদিন বেচে থাকবে একমাত্র জন প্লেয়ার ই নাকি তাকে সঙ্গ দিবে, জন প্লেয়ার নাকি কখনোই ই তাকে একা থাকতে দেয় না, বরং সর্বদা তার বিষন্নতা আর একাকীত্বে সঙ্গী হয়ে থাকে।
বড়ই আজব মাখন বড়ই অদ্ভুত তার স্মোকিং প্রচেষ্টা। সিগারেটের পয়সা বাচাতে ফোনে রিচার্জ আর রিক্সায় যাতায়াত বন্ধ। একটি সিগারেট জ্বালিয়েই ১৫টাকার রিক্সা ভাড়া হেটে যাতায়াত করে থাকে প্রতিনিয়ত,
সবচেয়ে অবাক বিষয় হল মাখনের খাবার ম্যানু তে ফেভারিট বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে নাকি জন প্লেয়ার এর নাম ই শুরুতে থাকতো।।
এভাবেই ঘরে হোক আর বাইরে স্মোকিং নিয়েই চলে মাখনের জীবন। এখন মাখনের বয়স ষাট এর ঘরে এখন আর তার বাবাও নেই তাই সিগারেট চুরির নাটকও নেই,
তবে এখন মাখনের দেহে বাসা বেধেছে জন প্লেয়ারের বংশধর যাকে আমরা নাম ব্ল্যাড ক্যান্সার নামেই চিনি। তবে মাখনের মতে স্মোক তাকে ছাড়বেনা কখনো একা রাখবেনা তাই নাকি তার দেহে জনপ্লেয়ারের বংশধর রোগ নামে বসত করতেছে,
মাখনেরও এক কথা জন প্লেয়ার কে সে ছাড়বে না যতদিন বেচে থাকবে জন প্লেয়ার নিয়েই বেচে থাকবে।
এক কথা এক নীতি বুড়ো মাখন এখন শুধুই স্মৃতি।।
মাখন এখন মৃত। আজব এক চেইন স্মোকার ছিল মাখন। মৃত্যুকালে তার ছেলে আর বউ কে বলে গিয়েছিলো যে তার কবরে যেন প্রতি সন্ধ্যায় আগর বাতি জ্বালিয়ে দেয়া হয়, যেন সে মরে গেলোও তার পাশে স্মোক পায়,
শুধু প্রার্থক্য এতটুকুই-
জীবিত মাখনের সিগারেটের স্মোক থেকে মৃত মাখনের আগর বাতির স্মোক সঙ্গতা!!!
এখনো প্রতি রাতে মাখনের ছেলে বাবার কবরে স্মোকের ব্যবস্থা করে দেয়, বাবার শেষ ইচ্ছে বলে কথা,
আজ প্রায় তিন বছর যাবৎ মাখনের বড় ছেলে '"লালন'" প্রতি রাতে বাবার কবরে আগর বাতি জ্বালিয়ে দেয়। লালনও বিশ্বাস করে যে স্মোক ই তার মৃত বাবার একমাত্র সঙ্গী।
আসলেই আজব মাখনের অদ্ভুত বন্ধু স্মোক।
মৃত্যুর পরেও দুইজন প্রতি রাতে ঠিক ই একসাথে সাক্ষাত করে চলেছে, ৪৫বছরের বন্ধুত্ব বলে কথা-
ঠিক এমন নিবিঢ় সম্পর্কই গড়ে ওঠে থাকে স্মোক আর স্মোকারের মাঝে। কেবল একজন স্মোকার ই বুজে একটি জলন্ত সিগারেটের গুরুত্ব, যা নন স্মোকারদের কাছে সর্বদাই অনর্থক ই থাকে।
বিঃদ্রঃ-সতর্কীকরন ধুমপান সাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর।।।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬