somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোনো এক আষাঢ়ের ছোট্ট অতিথি....

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আষাঢ় মাসের কোনো একদিন। তুমি যেখানটায় বেড়ে উঠছিলে সেখানকার পরিবেশ থমথমে। যে ডুমুর গাছের ফাঁক গলে সূর্য্যের নরম আলো ছিটকে পড়তো তোমার মুখে, সেই সূর্যটা যেনো আজ ঘুমিয়ে আছে। চারপাশ জুড়ে অদ্ভুত এক নিরবতা নেমে এসেছে। সবার চোখেমুখে একই ধ্বনি- 'আর কত ঝরবে এই অঝোরধারা? এবার আলোর বন্যা চাই'। উঠোন ভরে আছে থৈ থৈ জলে। কারো কোনো দীর্ঘশ্বাস তোমার কানে ঠেকছেনা। তুমি ভিজে জবজবে এক অসহায় চড়ুই ছানাকে পুতুলের লাল কাপড়ে মুড়িয়ে রেখেছো। তোমার আন্তরিক উত্তাপে সে গা ঝাড়া দিচ্ছে। তুমি শুনিয়ে যাচ্ছো তোমার আন্তরিক অভ্যর্থনা।

এরপর ঝুম বৃষ্টি। যে বৃষ্টিতে আশেপাশের খাল বা পুকুর থেকে কৈ মাছেরা পাড়া বেড়াতে আসে আনন্দচিত্তে, ঠিক তেমনি পাড়া বেড়ানোর আমেজ যেনো তোমাতেও বিরাজ করছিলো। ভীষণ কালো মেঘে ছেয়ে থাকা আকাশটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। তুমি কাঁপছো ঠকঠক করে। তোমার গাযে শিহরণ বইছে। তোমার কাছে সেই প্রকৃতি অনন্য সুন্দর। এমন কাজল কালো পৃথিবী যেনো কোনোদিন দেখনি তুমি! ছো্ট্ট পাখিটাকে বিছানার এক কোণে যত্নে রেখে, তুমি নেমে গেলে আষাঢ় জলে। ভয়হীন চোখে অসীম আনন্দ ঢেউ খেলে যাচ্ছে। চিকমিক করছে পুরো অবয়ব। বৃষ্টির ফোটায় তোমার গা শীতল হয়ে যাচ্ছে আর তুমি গুনগুনিয়ে বিশ্বকবিকে স্মরণ করছো- 'বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এলো বান...।' আহা! এ কী প্রশান্তি!!

তুমি তোমার আগলে রাখা পাখিটাকে যত্ন করে বিছানায় রেখে এসেছিলে। ছোট্ট শরীর আবৃত ছিলো লাল কাপড়ে। তুমি জানতেনা যে, সেই ঘরের জানালাটা কখন তীব্র বাতাসে খুলে গেছে! তুমি জানতেনা, বৃষ্টির ফোটারা দানবের মত হাত বাড়িয়েছিলো সেই ঘরের বিছানায়! ভেজা পালকগুলো আর শুকানোর অবসর পায়নি। ধুকুপুকু শ্বাসটাও একনিমিষেই অনেক দূরের হয়ে গেল। ভেবে দেখো একবার, তখন তুমি কি করেছিলে! তোমার চোখের জলে আবার বৃষ্টি নেমেছিলো। সেই জলে তুমি আর নামোনি। তোমার মনের উঠোন ভিজে ভিজে একাকার। তোমার আনন্দহীন উত্তাপ সেই সময়কে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। অদ্ভুত এক মায়াতে তুমি জড়িয়েছিলে। কী প্রগাঢ় তোমার ভালোবাসা!!

আজ এতগুলো বছর পেরিয়ে এসেছো তুমি। এখন আষাঢ় নেই। সে আসবে ঘুরেফিরে। ফাগুনের শেষ হাওয়া বইছে বাতাসে। সূর্যের তেজ ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিদিন তোমার চোখে মুখে এর তেজময় দীপ্তি ছড়িয়ে থাকে। তুমি হও আহ্লাদিত। আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ব্যতিক্রম অন্যদিকে। জানালার গ্রিলে বসে থাকা ছোট্ট চড়ুই। তার গা ভেজা নয়। সূর্য্যের আলোতে তার চকমকে শরীর। কী কারণে সামান্য আহত সে। তুমি তাকে স্পর্শ করলে। সে স্পর্শে উড়ে গেলোনা। চুপটি করে বসে রইলো। এক মুহূর্তে, অনেকটা সময় পেছনে ফিরে গেলে তুমি। অতি যত্নের সেই চড়ুইয়ের গায়ে যেনো হাত বুলিয়ে দিচ্ছো তুমি! স্মৃতি রোমন্থন করতেই চোখ বেয়ে নেমে এলো আরেক আষাঢ়।

ঝাপসা চোখে তুমি তাকাও ঝকঝকে আকাশে। এ আকাশে সেই থমথমে বৈরী ভাব নেই। এখানে কেবল উড়ে যাচ্ছে লাল কাপড়ে জড়ানো হাজারো চড়ুইপাখি!! যাদের ডানা বৃষ্টিরা ছুঁয়ে যায়নি, তীব্র বাতাসে থেমে যায়নি তাদের উড়ে চলার লড়াই। প্রকৃতির সকল শক্তির সাথে ক্রমাগত যুঝে চলছে তারা। তুমি তোমার কল্পরাজ্যে, নিজেকে সেইসব পাখিদেরই একজন ভাবলে! কী এক অনাবিল আনন্দ মুহূর্তেই ছায়া ফেললো তোমার মনের উঠোনে। একরাশ ভালোলাগায় চোখের কোণে ফুটতে লাগলো রঙিন ফুলে ভরা অপার সম্ভাবনার বাগান!!
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×