ভারতে জামায়াতে ইসলামীকে আগামী ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে । জামায়াতে ইসলামী জম্মু এবং কাশ্মীর শাখার কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে ।
১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া জামায়াতে ইসলামী ১৯৪৭ সালের পর দুই দেশে বিভক্ত হয়ে যায়, জামায়াতে ইসলামী হিন্দ এবং জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান । ১৯৭১ সালের পর পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী দলটি ১৯৭৮ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে পুন:গঠিত হয় ।
এর মধ্যে ভারতে জামায়াতে ইসলামী হিন্দু থেকে কাশ্মীরের অংশটি কাশ্মীর নামে আলাদা সংগঠন করে জামায়াতে ইসলামী জম্মু এবং কাশ্মীর নামকরণ করে । তার পর থেকেই, কাশ্মীরে হিংসাত্মক কার্যক্রমে জামায়াতে ইসলামী জম্মু ও কাশ্মীর অংশটি সক্রিয় হয় উঠে । এই দলটি, হিজবুল মুজাহেদিন, জেইশে মুহাম্মাদ, হরকাতুল জিহাদ, লশকরে তৌয়বা, আল বদর নামের বিভিন্ন মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে সক্রিয় ভারত বিরোধী সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে থাকে ।
কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধীতা, স্কুল ছাত্রদের মগজ ধোলাই করে তাদের জঙ্গিবাদে অংশগ্রহণ করাতে থাকে । কাশ্মীরের বিভন্ন অঞ্চলে এদের ট্রেনিং দিয়ে বর্ডার ক্রস করে আনা হাতিয়ার তুলে দেয়া হয় হিন্দুস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে একশন নিতে ।
তারই ধারাবাহিকতায় কয়েকদিন আগে ভারতীয় সেনাদের উদ্দেশ্য করে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এবং তাতে ৪০ জন ভারতীয় জওয়ানের প্রাণ চলে যায়, এটি ছিল সম্পূর্ণ জামায়াতে ইসলামী দ্বারা সৃষ্ট জঙ্গিদের আক্রমণ । আর এদের ইন্ধন দাতা হিসেবে লাইন অব কোন্ট্রোল পার থেকে আসা পাকিস্তানী সন্ত্রাসী বাহিনীর সহায়তা ।
সব মিলিয়ে জামায়াতী ইসলামী দলটি হল ওয়াহাবী ধারার একটি দল যারা সৃষ্টি থেকে সকল স্থানে অশান্তি তৈরিতে ব্রত ।
পাকিস্তানে তারা ১০ হাজার কাদিয়ানী মুসলীমদের পুড়িয়ে হত্যা করার মধ্য দিয়ে তাদের স্বশস্ত্র রাজনীতির অভিশেক ঘটায় । বাংলাদেশে ১৯৭১ সাল থেকেই শুরু করে বাঙালী উপর অত্যাচার । মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতের যে ভূমিকা তা সবার জানা । বাংলাদেশ স্বাধীনের পর পর পলাতক রাজাকার আলবদর সেনারা মিয়ানমারের আরাকানে আশ্রয় নেয় । ঠিক তার পর পরই আরাকানে শুরু করে পাকিস্তানের সহায়তায় রহিঙ্গাদের প্রণোদনা দেয়া, মিয়ানমার বিরোধী কার্যক্রম এবং মিয়ানমারের সাথে স্বশস্ত্র যুদ্ধের উস্কানী । মিয়ানমারে শান্তি বিনষ্টের পেছনে যদি কারণও হাত থাকে তা হল এই জামায়াতে ইসলামীর । কারণ, পাকিস্তানের ইরাদা হল তারা বাংলাদেশের তিন পার্বত্য অঞ্চল, মিয়ানমারের আরাকান এবং ভারতের কিছু পাহাড়ী অঞ্চল নিয়ে আলাদা রাস্ট্র গঠন করা । অপর দিকে, বাংলাদেশের রাস্ট্র ক্ষমতায় একক ভাবে আসীন হয়ে রাস্ট্রকে মিনি পাকিস্তান বানানো এবং ভারত থেকে কাস্মীরকে আলাদা করে পাকিস্তানের সাথে জুড়ে দেয়া বা আলাদা রাস্ট্র গঠন ।
জামায়াতে ইসলামী আবু আলা মওদুদীর দর্শনে এই জামায়াতে ইসলামী শুধু মাত্র যে এই ভারত উপমহাদেশেই আছে তা কিন্তু নয় । বিশ্বের বহু দেশে আলাদা নামে গঠিত হয়েছে এই দলটি, দর্শন তাদের একটাই ''মওদুদীবাদ'' ।
বাংলাদেশে এমন কোন অপকর্ম নেই যা জামায়াতে ইসলামী দ্বারা সংঘটিত হয়নি । বাংলাদেশেও যতগুলো জঙ্গি সংগঠন জন্ম নিয়েছে , তাদের মাতা হিসেবে জামায়াতের ভূমিকা পরিলক্ষিত । এমন কি দেশে কোন স্থানে কোন জঙ্গি ধরা পড়লে তার কাছ থেকে মওদুদী গোলাম আজমের বই আর সাইদীর ওয়াজের ক্যাসেট মিলেছে ।
মিসরে ইসলামী ব্রাদারহুড নামের দলটিও মওদুদিবাদেরই দর্শনে সৃষ্টি , যারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল এবং মিসরে অশান্তি স্থাপনের নজির দেখিয়েছে । শেষমেষ তাদের নেতা রাস্ট্রপতি থেকে সরাসরি মৃত্যুদন্ড সাজা পেয়ে জেলখানায় বন্দী হয়েছে ।
'জামায়াতে ইসলামী' নামক দলটি পৃথিবীব্যাপী অশান্তি স্থাপনের জন্য জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে দেখা দিয়েছে । আল-কায়েদার মত এই দলটি বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ হওয়া প্রয়োজন । এবং আন্তর্জাতীক ভাবে এই দলের সকল নেতাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গণগ্রেফতার ও সাজার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৫০