একদিন হযরত ঈসা (আ) পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এমন সময় শয়তান তার সামনে আসলো। হযরত ঈসা (আ) কে সে বললো, তুমি ত ক্ষুধার্ত এই পাথরগুলো বলো রুটি হয়ে যেতে।
ঈসা বললেন 'মানুষ শুধু রুটিতেই বাঁচেনা, মানুষ বাঁচে ঈশ্বরের কথাতে। '
এর পর শয়তান ঈসাকে বললেন, যদি তুমি সত্যই ঈশ্বরের প্রদত্ত হও তবে এই পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ো, কেননা ঈশ্বর বলেছেন তিনি তার পবিত্র প্রেরিতদের বিপদে ফেরেস্তা দিয়ে ধরে রক্ষা করবেন।
হযরত ঈসা (আ) বললেন "দূর হও শয়তান, পাক কিতাবে এটাও লিখা আছে যে তোমরা ঈশ্বরকে পরীক্ষায় ফেলোনা বরং নিজে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষা দাও।"
>> কিছুদিন আগে মওলানা আমির হামজা তার এক মাহফিলে বলেছেন "যারা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরে কোরআন তেলাওয়াত করে তাদের ভিতর করোনা ঢুকতে পারেনা। আমি দায়ী থাকবো তোমার করোনা ঢুকলে, যদি করোনা কোন মুসলানকে ধরে কোরআন মিথ্যা হয়ে যাবে! "
তার এই ওয়াজ এদেশের মানুষ এতই গ্রহণ করেছে যে যারা মসজিদে যাচ্ছে, নামাজ পড়ছে বা মোখে দাড়ি রেখেছে তারা বেশিরভাগ আর মাস্ক পরছেনা।
তাদের বিশ্বাস মাস্ক পরে কি হবে আল্লাহ আমাদের কিছু করবেনা। কারণ মিজানুর রহমান আজহারী বলেই দিয়েছেন করোনা আল্লাহর সৈনিক, মুফতি ইব্রাহিম বলেছেন করোনা সাক্ষাতকার দিয়েছে। করোনা ক্বাফেরদের রোগ, মুসলিমদের কিছু হবেনা।
এই গুঁয়ার মুসলিমদের মাঝে কিছু বক্তা আর মুসল্লি আসলে আল্লাহকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। শয়তান যেমন বলেছিল ঈসা (আ) কে যে তুমি পাহাড় থেকে লাফ দাও, আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন, তেমনি শয়তানের মতো এই বক্তারা মসলিমদের বলছে তোমরা মাস্ক পরোনা, স্বাভাবিক ভাবে চলো। এটা মুসলিমদের রোগ না।
তাই এই শ্রেণীর মুসলিম জনগোষ্ঠী মাস্ক না পরে, ঠাসাঠাসি মসজিদে গিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করে মূলত পাহাড় থেকে লাফ দেবার মতো আল্লাহকে পরীক্ষায় ফেলেছে। কিন্তু যদি এরা প্রকৃত জ্ঞানী হতো, যদি আহলে কিতাব কিছু জানা থাকতো তবে এমন কাজ বা বক্তৃতা করতে পারতো না।
আজ বিশ্বে বহু মুসলিম প্রধান দেশে করোনা আক্রমণ করেছে, সৌদিতে উমরাহ বন্ধ হয়েছে , বহু দেশে মসজিদ বন্ধ করেছে । সামনে হজ্ব বন্ধ হতে পারে । দিল্লিতে পরহেজগার তৌহিদী জনতার তাবলীগের মাহফিলে ১০২৩ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলো । করোনা যদি মুসলিমদের রোগ নাই হবে ত মওলানা সাদ (র) কেন আক্রান্ত হলেন ? আর এতো মুসলিম মরছে কেন ?
মালয়েশিয়াতে থেকে যে আজাহারী ঘোষণা দিলেন করোনা হলো আল্লাহর সোলজার , কিছুদিন পর ফেসবুক লাইভে এসে জানালেন তিনি করোনার ভয়ে গৃহে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন । তাহলে তার কথা অনুসারে বলতেই হয় তিনি যদি আল্লাহর সোলজারের ভয়ে গৃহে লুকিয়ে আছেন কেন ? আল্লাহর সোলজারদের ত শুধু শয়তানই ভয় পেয়ে গৃহে লুকিয়ে থাকার কথা ।
এদিকে সরকার বলছে করোনা নিয়ে যারা গুজব ছড়াবে তাদের পাকড়াও করা হবে । তাহলে এই যে বাঙালী মুসলীম বক্তারা এতো বিভ্রান্তি ছড়ালেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন একশন নেই?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫