somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন কোথায় জানি হারিয়ে গেছিলাম!!!!

০৩ রা মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকক্ষণ ধরে গাছ থেকে হলুদ হয়ে থাকা আমটা পাড়তে চেষ্টা করছিলাম। ব্যর্থ হয়ে সামনের দিকে এগুতেই দেখি ধবধবে সাদা সুন্দর একটা রাজহাঁস লেকের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। আমি কাছে যেতেই রাজহাঁসটা বলে উঠল,"পুত্তুম স্বাগতম। আমি রাজসোহান ।" আমি বললাম, "ধন্যবাদ।" এরপর সে আমাকে এই এলাকার নাড়ী-নক্ষত্র সব জানাতে থাকল। তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমি হাটতে শুরু করলাম। হঠাৎ দূর থেকে লক্ষ করলাম একটা বিড়াল হেলতে দুলতে এগিয়ে আসছে। একটু কাছে আসতেই দেখলাম এটা বিড়াল নয়, বড়সড় একটা বাঘ। কিন্তু তখন আর আমার দৌড়ে পালানোর মত কোন উপায় ছিলনা। তাই সেখানেই স্ট্যাচুর মত দাড়িয়ে পড়লাম। আরে বাঘের গায়ে দেখি আবার এপ্রোন পড়া! গলায় ঝুলানো একটা স্টেথোস্কোপ আর বুকে লাগানো নেমপ্লেটে লেখা ডঃ বড় বিলাই । বুঝতে পারলাম ইনি একজন ডাক্তার। কাছে আসতেই আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু একি! সে হালুম না বলে একটু মুচকি হেসে বলল,"টারজানের কি যেন হয়েছে, যাচ্ছি তাকে দেখতে। পরে কথা হবে.."

আমি বড় রকমের একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার হাটা শুরু করলাম। ততক্ষনে একটু ক্ষিধে লেগে গেছে। আমি আশেপাশে কোন ঘরবাড়ি দেখা যায় কিনা দেখছিলাম। হঠাৎ দেখলাম উস্কখুস্ক কাচাপাকা চুলের একটা লোক হাটছে আর বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। দেখে মনে হল কিছু একটা হিসাব করছে। আমি খাবারের আশায় লোকটার কাছে গেলাম। বললাম,"জনাব, আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে। আপনার কাছে কি কোন খাবার...."
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে লোকটা বলল, "আগে দেখতে হবে ক্ষিধের পরিমান কতটুকু, সেটা আমার সঞ্চিত খাবার অপেক্ষা কম না বেশি..."
আরো কি কি যেন বলতে বলতে সে একটা ঘরের ভেতর ঢুকল। ঘরের সামনে লেখা ম্যাভেরিক এর বাড়ি। সে তখনো আমার ক্ষিধের পরিমান আর তার খাবারের পরিমানের একটা তুলনামূলক পরিসংখ্যান করে যাচ্ছিল। আমি এর মাঝেই তার ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম দেয়ালে শুধু অংক আর অংক। আমি তার হিসেবের মাঝখানেই আবার বলে উঠলাম," জনাব, ক্ষিধে.." তখন সে বলল," আসছি আসছি ক্ষিধের প্রসঙ্গে আসছি।
এখন ধরি , ক্ষিধে = x
আর সঞ্চিত খাবারের পরিমাণ= y
তাহলে......"
আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। ক্ষিধে-টিধে চুলোয় যাক, কিভাবে এই গণিতবিদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় তাই ভাবতে লাগলাম। হঠাৎ দেখলাম ঘরের মেঝেতে ছোট্ট একটা গর্ত আর সেই গর্ত থেকে উকি দিল ছোট্ট একটা ইঁদুর। আমার চোখে চোখ পড়তেই সে চোখ টিপে তার কাজ শুরু করে দিল। জনাব ম্যাভেরিক তখনো তার ক্ষিধে ও খাবারের পরিমান সংক্রান্ত অংকটি করে যাচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম ইঁদুরটি গর্তটা অনেক বড় করে ফেলেছে আর আমাকে হাত ইশারা করে ডাকছে গর্তে ঢুকার জন্য। আমি জনাব ম্যাভেরিকের চোখ ফাকি দিয়ে ঢুকে পড়লাম গর্তে। জানতে পারলাম খুব সুন্দর আর পরোপকারী ইঁদুরটার নাম জেরী। সে আমাকে অন্য আরেকটা গর্ত দিয়ে বাইরে বের করে দিল। আমি বাইরে এসে হাপ ছেড়ে বাঁচলাম। হাটতে হাটতে দেখলাম চতুষ্কোণ একটা ঘর। কারো সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকে একটা মেয়েকে দেখে তার কাছে খাবার চাইলাম। মেহবুবা নামের মেয়েটি জানাল তার কাছে কোন খাবার নেই।তবে একটা বিছানা আছে, চাইলে আমি বিশ্রাম করতে পারি। ভাবলাম খাবার যখন পেলামইনা একটু ঘুমিয়ে নেই। সে আমাকে গর্দানা দিতে চাইল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। পরে জানলাম গর্দানা মানে বালিশ।;)
বালিশে মাথা রাখতেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে দেখলাম স্বর্গরাজ্য থেকে এক অপ্সরা অনেক অনেক খাবার নিয়ে নেমে এল আমার কাছে। আমি খেতে থাকলাম। খেতে খেতেই একটা কিছু ভাঙ্গার শব্দে হঠাৎ জেগে উঠলাম। মেহবুবা বলল, "পালাও, জলদি পালাও। ভাঙ্গন আসছে, ভাঙ্গন। এক্ষুনি এই ঘর ভেঙে পড়বে। আমি একছুটে বাইরে বেরোতেই দেখি একটা লোক কবিতা পড়তে পড়তে আর লাফাতে লাফাতে সামনে যাচ্ছে। আমি তার কবিতাটা পুরোপুরি শুনতে পারলামনা। শুধু এটুকু শুনলাম, "লালসালু আমি,
সবার থেকে অনেক বেশি দামি...."
তাকে পাশ কাটিয়ে আমি একটা পাহাড়ের নিচে এসে দাড়ালাম। আর মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকলাম পাহাড়ের কান্না , সবাই যাকে বলে ঝরণা। এই ঝরণার জল খেয়ে ঠান্ডা হয়ে আমি আবার বেরোলাম খাবারের খোঁজে। হঠাৎ দেখলাম একটা গাছে একটা বাঁদর কলম মুখে দিয়ে কি যেন এক গভীর চিন্তায় মগ্ন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "কি ব্যপার? তোমার হাতে কলার বদলে কলম কেন? কাব্য -টাব্য লেখো নাকি?" সে মুখটা বেজার করে বলল, "ভাল হওনের টেরাই মারছিলাম। কিন্তুক...!!" তার ব্যথায় আমি সমব্যথি হবার চেষ্টা করতেই সে দু'হাত কানের কাছে নিয়ে জিভ বের করে একটা ভেংচি কেটে দিল। আমি বিপদ বুঝে দৌড়ে পালালাম। দৌড়াতে দৌড়াতেই দেখলাম একট মোটাসোটা লোক, একটা সুন্দরী মহিলা আর একটা ছোট্ট মেয়ে হেটে যাচ্ছে। আমি খাবারের আশায় তাদের কাছে গেলাম। মোটাসোটা লোকটা বলল, "আমি এই রাজ্যের রাজা। নাম হোদল। সবাই আমাকে হোদল রাজা বলে ডাকে। আর এই আমার রানী আর এটা আমার ছয় বছরের ছোট্ট রাজকন্যা।" আমি যতটা সম্ভব বিনয় দেখিয়ে আমার ক্ষিধের কথা তার কাছে পেশ করলাম। মনে মনে ভাবলাম এবারও বুঝি হতাশ হতে হবে। কিন্তু কি আশ্চর্য! ক্ষিধের কথা বলতেই দয়ালু রাজা ভেউ ভেউ করে কেঁদে দিলেন আর আমাকে নিয়ে চললেন তার প্রাসাদে। প্রাসাদে এসে দেখলাম আমার মত আরো অনেকেই দয়ালু রাজার অতিথি! এমনই একজন অতিথির নাম সামিউর , সে আমার ভাই। প্রাসাদে পেট ভরে খেয়ে আবার রওনা দিলাম। হঠাৎ শুনলাম অদ্ভুত সুন্দর এক বাঁশির সুর! কে বাজায়? আরে এযে দেখি হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা! তার অদ্ভুত বাঁশির সুর শুনতে শুনতে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎঅন্যরকম একটা সুরে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখি আমি আমার বিছানাতেই বাবুকে কোলে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম! আর অন্যরকম সুরটা হল তার কান্না। তার ক্ষিধে লেগেছে। তাকে এখন খেতে দিতে হবে.....


(এটা নিছকই একটা স্বপ্নে পাওয়া গল্প। কেউ সিরিয়াসলি নিয়েন না প্লিজ।)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:৪৬
৬৪টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×