somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিকাগোর জার্নাল: এলোমেলো বাক্যমালা-৩

১৩ ই জুন, ২০১১ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হোটেলের রুমে ঢুকে আমার 'রুমমেট' (যাকে আমি সাধারণত মর্টনের ছেলে বলি। টীকা: ১ ), বলল বাহ মাইক্রোওভেন তো আছে দেখছি। আমি ভুল ভাঙিয়ে বললাম, আসলে ঐটা ওভেন না, ঐটা সিন্দুক। ইলেকট্রনিক সিন্দুক তাই সামনে এত বাটন X((

বিকেলে ভাল লাগছিল না। আমি ভাবলাম কিছু শুকনা খাবার কিনে আনি। অন্যরা কেউ রাজি না হওয়ায়, (তারা শুকনার ভক্ত না) আমি একাই বের হলাম। ভাবলাম অনেকদূর গেলাম, কোন ওয়ালমার্ট (আমেরিকার আগোরা) পেলাম না। তারপর, একটা গলিতে ঢুকে উল্টো দিকে ফেরত আসা শুরু করলাম, এবং পথ হারিয়ে ফেললাম:-/:-/:-/ যে পথে এসেছিলাম, সে পথে অনেকটাই এসেছিলাম, কিন্তু কোন একসময় ভুল করে অন্য পথে ঢুকে গেছি। গাড়িতে জিপিএস ও নাই:((

আন্দাজের উপর ভিত্তি করে প্রায় আধাঘন্টা ঘুরলাম। উপায় না দেখে আমার 'আদার হাফ' কে ফোন দিলাম। আমি বললাম আমি অমুক জায়গায় আছি, তুমি ইন্টারনেটে ম্যাপ দেখে আমাকে রাস্তা বাতলাও। বেচারি অনেক চেষ্টা করল সাহায্য করার কিন্তু জন্মসূত্রে আমি দিক ঠাহর পাইনা। আমি তাকে বলছি যে আমি অমুক এবং তমুক জায়গার মাঝে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু ডান না বাম বুঝতে পারছি না। গাড়ির তেলও শেষ হবার পথে:-/। যাইহোক, এক জায়গায় তেল কিনে, দোকানে ঠিকানা জিজ্ঞেস করলাম, কোন কিছুও বলতে পারলো না সে। কিছুক্ষণ পর পর আমি খালি নদী পার হচ্ছি ব্রিজ ধরে, মানে একই নদী পার হলাম অনেক বার ডানদিক থেকে আর বামদিক থেকে। মাঝে মর্টনের ছেলে জানাল যে তার ক্ষুধা পেয়েছে। আমি বললাম, আমি দুঃখিত, আমি আপাতত হারিয়ে গিয়েছি, ফিরে আসলেই তোমাকে নিয়ে বের হব। অবশেষে, মনে হল ঠিক রাস্তায় আছি। ফোনে কথা বলে নাম মিলিয়ে নিলাম, এখন সমস্যা হল ঐ রাস্তাতেই আমি গন্তব্যের দিকে যাচ্ছি না আরও দূরে সরে যাচ্ছি বোঝার উপায় নেই। হঠাৎ করেই এসে পরলাম জায়গামত, তবে উল্টো দিক থেকে। মানে, ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে তবেই ফিরলাম। :)

বাংলাদেশে থাকতে টেলিকমে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। এমনকি, বিদ্যুত নেই এমন জায়গাতেও গিয়েছি। তখন যে সুবিধাটা ছিল, লোকাল অফিসের লোকেরা রাস্তা বলে দিত, আর সাথের ড্রাইভার লোকাল অফিসের ড্রাইভারের থেকে রাস্তা বুঝে নিত। তারপরও, হারিয়ে গিয়েছি অনেকবার। বাংলাদেশে সুবিধা হল, পথে পথে চায়ের টং দোকান পাওয়া যায়, বা রাস্তায় পথচারী পাওয়া যায় যাদের পথ জিজ্ঞেস করলে কিছুটা হদিস পাওয়া সম্ভব। এখানে পথচারী মনে হয় দিনে ১ জনও হাঁটে কিনা সন্দেহ।

রাতে খাবারের জন্য এবার বের হবার পালা। অন্য সহযাত্রী (যাকে আমি জরিনা বেগম বলি), জানাল তার খাওয়ার ইচ্ছা নাই। তো আমি আর মর্টনের ছেলে বের হলা খাদ্যের সন্ধানে। আমার আসলে সন্ধানের দরকার ছিল না। আমি জানি কোথায় কোথায় ডলার মেনু আছে। কিছু দোকানে এক ডলারে একটা করে খাবার পাওয়া যায়। তবে কোয়ালিটিও সেইরকম। কারণ, ঐ দোকানেই ৪ বা ৫ ডলার দামের বার্গার বিক্রি হয়, ১ ডলারে খুব ভালো জিনিস দিলে তাদের ঐ দামী জিনিস কেউ কিনবে না। আর, ১ ডলারে খুব বেশি কিছু দেয়া সম্ভবও না তাদের পক্ষে। তারা বার্গার বলে যেটা বেচে, অনেক সময় সেটা খেলে মনে হয় দুটো বনরুটির মাঝে আরেকটা ভাজা বনরুটি। ম্যাকডোনাল্ডস আর ওয়েন্ডিতে ডলার মেনু পাওয়া যায়। মর্টনের ছেলে বলল, এখানে গাড়ি থামও, ডানে পিৎজার দোকানে ঢুকব। আমি ততক্ষণে এগিয়ে গেছি অনেকটা। তারপর সে আরেকটা দোকান পছন্দ করল যার নাম chipotle, সে আরও জানাল এর পাশে একটা Jamba JUice ও(একটা চেইন যারা জুস বেচে) আছে। তারপর, ঢুকলাম chipotle এ। মেক্সিকান দোকান মনে হয় এবং মেনু দেখে বেশ দামি মনে হল। মর্টনের ছেলেকে বললাম, তুমি এখানে খাও আমি বাইরে খেয়ে নিচ্ছি। বাইরে তেমন কিছু পেলাম না, হাঁটাহাঁটি করে সময় খরচ করলাম। মর্টনের ছেলে আসলে বেশ ক্ষুধার্ত ছিল বলে মনে হয়। বাইরে থেকে দেখলাম গোগ্রাসে খাচ্ছে সে। বেচারার বয়সও হয়নি খুব একটা বেশি, সে ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার শেষ করল মাত্র। সে বের হয়ে বলল, তার জাম্বা জুস খাওয়ার ইচ্ছা আছে। (মনে মনে বললাম, আমাদের দেশের জাম্বু ভাইরে তো দেখনাই, তারে দেখলে বুঝতা)। আমি বললাম, তথাস্তু, চল কিন্তু আমি অন্য দোকানে থামব। ফেরার পথে ওয়েন্ডিতে থেমে ১ ডলারের বার্গার আর ১ ডলারের তথাকথিত চিকেন (!) র‌্যাপ (শর্মা টাইপের) কিনে ফিরলাম। কাল অনেক কাজ আছে।

( টীকা ১: অন্য বাঙালিদের সাথে কথা বলার সময়, আমার সুপারভাইজারকে আমি মর্টন বলি। আশেপাশে অন্যরা থাকলেও যেন বুঝতে না পারে, সেজন্যে এই বুদ্ধি। স্বাভাবিকভাবেই তার ছেলেকে মর্টনের ছেলে বলা যায়, তাই না?)

পর্ব ২
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১১ রাত ১২:০৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×