somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছবি কইবে কথা যখন আমি থাকবো না---- (উৎসর্গ : প্রথম আর দ্বিতীয় হওয়া সকল পরীক্ষার্থী)

০৪ ঠা জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[জনৈক ব্যক্তি আমায় শুধালো এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে ইতিবাচকতার ইতি টানিয়া কেন নেতিবাচকতার জোয়াল টানিতেছি ।তারই পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হইলো এই ইতিবাচকতার সন্ধান]

মাত্র পাঁচমাস আগের ঘটনা ।আমার বাল্যবন্ধু খোকন আসিয়া পড়ার ঘরে পিছনদিক হইতে আমার চোখ টিপিয়া ধরিল । কথা বলিতে বলিতে আমার খাতায় সে একটি মস্তবড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকিল , নীচে লিখিয়া দিল---

"তোমার খাতার প্রথম পাতায় এঁকে দিলাম আলপনা
আমার ছবি কইবে কথা যখন আমি থাকবো না"

লিখিয়াই আমাকে দেখাইলো । আমি জানি খোকনের জীবনটাই একটা মস্তবড় চিহ্ন । আব্বাকে হারাইয়াছে পাঁচ বছর বয়সে । বিধবা মা প্রাইমারী স্কুলে মাস্টারি করিয়া যা পান , তাতে দু'জনের সংসার চলে না । সেইজন্য খোকন সকাল বিকাল দু'টি ছেলেকে অক্ষর পরিচয় শিখাইয়া পাঁচটি টাকা পায় ।এই করিয়া সে খুব ভালো ফল করে নাই।ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আর মাত্র ১৫/২০ দিন আছে। খোকনকে কিছুটা বিচলিত দেখিলাম ।

পরীক্ষার শেষের তিনমাস বেশ আমোদেই কেটে গেল।এর ফাঁকেও খোকনের মুখে আমি দেখিয়াছি আসন্ন মেঘ ।অবশেষে সেই দিন আসিল। আমরা পত্রিকার খোঁজে রেল স্টেশনে গিয়া ভিড় করিলাম। সত্যিই অঘটন ঘটিল । আমার রোল নং দ্বিতীয় বিভাগে দেখিতে পাইলাম ।পত্রিকার কোথাও খোকনের রোল নং খুঁজে পাওয়া গেল না , খোকনকে সান্ত্বনা দেয় কার সাধ্য । মনে হইতেছিল আমি পাস না করিয়া যদি খোকন পাস করিত তাহা হইলে বিধবা মায়ের মুখের হাসি দেখিয়া আমার প্রাণ জুড়াইত ।

কাক না ডাকিতেই লোকের গন্ডগোলে জাগিয়া উঠিলাম । সুইসাইড ---- খোকন সুইসাইড করিয়াছে ।শেষ রাতে খোকন রেললাইনে মাথা দিয়া আত্মহত্যা করিয়াছে , চিৎকার করিয়া আমি কাঁদিয়া উঠিলাম ।

চুপে চুপে একদিন খোকনের একদিন খোকনের রক্তরঞ্জিত তৃণের উপর পলাশের চারা রোপন করিয়া আসিয়াছি , এককালে লোকেরা বলিবে "কি চমৎকার" । আমি জানি এ রক্তপলাশ খোকনের বুকের রক্তে রাঙ্গা ---- আমি জানি এ বসন্তের মাধুরী ।
------ (আমার জীবনের স্মরণীয় স্মৃতি রচনাটির ভাবার্থ অনুকরণ করিয়া লিখিত)

১......
না , আমার খাতায় কেউ প্রশ্নচিহ্ন আঁকিয়া দেয়নি , পরীক্ষার খাতায় কোনদিন খোকনের কথা আমায় লিখিতেও হয়নি ।আমার বয়সকাঁটা যখন ৯ এ আঁটা , এমনতর রচনা পঠন বিষন্নতার মেঘে আকীর্ন হইয়াছিল আমার মানসপট, হাহাকারে, অস্ফূট কান্নায় ঝরিয়াছিল অদৃশ্য অশ্রু। দশকের পর দশক কত সহস্র অজানা খোকনের দেহের বা হৃদয়ের প্রয়াণ হইয়াছে , আকুঞ্চিত হয়েছে কত স্বপ্ন ।

খোকন বড় অসময়ে জন্ম নিয়েছিলে তুমি । সেদিনগুলো কেবলই স্মৃতি। বিগত অর্ধযুগ ধরিয়া মেট্রিক/ইন্টারমিডিয়েটের রেজাল্টের প্রহরগুলো খোকনের জন্ম দেয় না , সব ভেদাভেদের বেড়াজাল বিলীন করিয়া সবচেয়ে পেছনের খোকন আর সবচেয়ে সামনের সুমনের পুনর্জন্ম ঘটে একই (এ+ )সত্ত্বার মাঝে।
রক্তপলাশের গাছটা অনেক বড় হইয়াছে , বসন্তাগমনে সে গাছের ক্রন্দন শুনি,
চোখ খোলো খোকন , চেয়ে দেখো , এখন আর কোন প্রাণের অপচয় হয়না , লক্ষ্ মেধাবীর সাফল্যে আজ হাসির মেলা।

২.......
বিগত সহস্রাব্দের শেষ ৫ টি বছর রাজধানীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ছাত্র হিসেবে খুব কাছে থেকে দেখিয়াছি। শিক্ষাবোর্ডে ২/১ টি স্থান পাওয়াই সে সময়টায় বিরাট সাফল্য হিসেবে যেখানে পরিগণিত হইত ,সেখানে আইডিয়াল স্কুলের ডজনে ডজনে মেধাতালিকায় স্থান প্রাপ্তিতে অসম্ভব রকমের গর্ব অনুভব করিতাম । কিন্তু সে গর্বের বাহ্যিক কোন অনুবাদ হইয়াছে , এমনটি মনে পড়ে না । রেজাল্টের সময়গুলোতে স্কুল সাড়াশব্দহীন থাকিতো , অবশ্য দেড় ক্রোশ দূরে আকাশী ইউনিফর্মের মেয়েদের স্কুলটির নৃত্য সহকারে বাদ্য বাজানোর খবর ছাড়া আর অন্য কোথাও সাড়াশব্দ মিলিতো না ।

নবসহস্রাব্দের প্রথম বর্ষ তথা পুরনো অকেজো স্টার/স্ট্যান্ড পদ্ধতির গোধুলি লগনে আমার ডাক আসিলো । ফলাফলে দেখিলাম আমি দাঁড়াইয়াও নির্বিকার রহিয়া গিয়াছি ।বছর বছর সারা দেশের মাঝে বিপুল ব্যবধানে প্রথম হওয়ার এমন সাফল্যে কেন নির্বাক রহিয়া যাইতে হয় ,হাতে কলমে সে প্রশ্নের জবাব অবশ্য মিলিলো ।

দিন বদলাইয়া যায় ,দেড় ক্রোশ দূরের বিদ্যালয়টির সাথে সাথে আমাদের বিদ্যায়তনেও এখন বাদ্য বাজিয়া উঠে । ৮৪০ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে ৭৮০ জন প্রথম আর বাকি ৬০ জন যখন দ্বিতীয় হয় , তখন আমি তৃতীয়কে খুঁজিয়া মরি ।

বড্ড বেশি পুরনো আমি , এখন আর কেউ তৃতীয় হয়না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০০৮ রাত ১১:৩২
৭২টি মন্তব্য ৬৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×