somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ফুটবল-স্মৃতি (পর্ব-২)

২৩ শে মে, ২০১১ সকাল ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"France was saved by her school elude students" ছোটবেলায় পড়া দৈববাণীটা অনেকদিন আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত।স্কুল পালালে জগত কি করে উদ্ধার হয়, সে রহস্য ভেদ করতে লেগেছিল পাকা একটি দশক।তাই বলে নিজের পালানো থেমে রইল না। আমার নিজের জীবনটাই তখন আমার জগৎ, সে জগৎ উদ্ধার করতে পারলে মন্দ কি?স্কুলে যাই না, তাতেও বা কি , সবার চোখ এড়িয়ে ঘর পালানো যে আরো বেশি রোমাঞ্চকর।

আমার বাবা সে সময়টায় কান মলায় কিংবদন্তীতূল্য। মনের সাথে যুদ্ধ করে , শেষমেশ কানের মায়া ত্যাগ করে বাসার পেছনের জানালা দিয়ে বাইরে ঝুলে পড়তাম দুপুর আর বিকেলের পালাবদলের ফাঁকে। অনেক দিন পরে বুঝলাম, জগতের কোন মঙ্গল না হলেও ,এমন করে পালানোই চোখ খুলে দিল একবার।

ঘটনার শুরুটা এভাবে-- কথা ছিল এক বন্ধুর সাথে পাহাড়ে মাশরুম তুলতে যাব। তার বাসায় গিয়ে দেখলাম তাহার মোঘলাই বাবা কোন জাদুমন্ত্রবলে ঘরে বসে আছেন।সূর্য সবে তখন পশ্চিমে হেলি হেলি করে,এমন ভরদুপুরে তার বাবার মত কর্মক্ষম লোকের ঘরে থাকাটা ভীষণ বেমানান। খাপ্পা মেজাজটা সামাল দিয়ে কি যেন কিসের নাম করে ঢুকলাম বন্ধুর বাসায়। এমনিতে বিদেশী হিসেবে আমার যথেষ্ট কদর ছিল, সুবোধ বালক হিসেবেও নাম-ডাক ভালই ছিল । ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতির প্রশ্নই আসে না, তবে আমার সৌজন্যে আংকেল তার সাথে আমাদের দু'জনার খেলা দেখার সুযোগ করে দিলেন।

দুঃখ ভুলে গেলাম নিমিষেই , এ যে আকাশী-সাদার আর্জেন্টিনা । বিপক্ষের দেশটার নাম জানি , কিন্তু তাদের খেলা কেমন তা নিয়ে কোন ধারণাও নেই আমার , জার্সির রংটাও ভাল লাগেনি। এত কিছু ভেবে কাজ কি? সারাদিন আর্জেন্টিনা-চর্চা করি, কিন্তু পুরোপুরি খেলা দেখছি তাদের সেদিনই সম্ভবত প্রথম।এত দিনের জানাশোনা থেকে শুধু জানি আর্জেন্টিনা জিতবে, আর্জেন্টিনা সবার সাথে জেতে , সব ম্যাচ জেতে।

খেলা শুরু হল , কমেন্ট্রিতে অদ্ভূত টান , তন্ময় হয়ে কমেন্ট্রি শুনছি, ভাষাটা অচেনা , ভীষণ মায়াবী। অবাক করা ব্যাপার হল , আকাশী-সাদারা খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না , ক্যাটকেটে রঙের জার্সিওয়ালারা বারবার এপাশ ওপাশ দিয়ে সাঁড়াশি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে । তারপর হঠাৎ গোল , কমেনটেটর এর ঝাড়া এক মিনিট ব্যাপী চিৎকার------ "গোওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওলললললললললল"। শেষ পর্যন্ত খেলাটা ড্র হল ১-১ এ ।

ছোটবেলায় মানুষের ভাবনাগুলো ভীষণ অদ্ভূত হয় , ঠিক সেটাই যেন ঘটল আমার বেলাতেও ।মনের ভেতর হাজার প্রশ্ন:: "আমার স্বপ্নের দলও না জিতে পারে ? ক্যাটকেটে রঙের জার্সি পড়া ছেলেগুলি কারা ? কোন দুঃসাহসে ওরা জিততে বসেছিল?কমেন্টেটর রা কোন ভাষায় কথা বলছিল ? গোলের পর কি করে পারল ওমন সুন্দর করে শ্বাস বন্ধ রেখে গোওওওল বলতে ?"

সেই শুরু , একটু একটু ভাল লাগার শুরু। ক্যাটকেটে রঙের সেই ব্রাজিল।

ফুটবল নিয়ে নেশাটা তখন তুঙ্গে উঠতে যেন শুরু করেছে , কার্টুন দেখার সময়টা ভাগ করে ফুটবলের পেছনেও দিতে শুরু করেছি । কিছুদিন পরেই ৯৩ এর জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বসল ৪ জাতি ফুটবলের আসর । ব্রাজিল,জার্মানী,ইংল্যান্ড,যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানীর শক্তিমত্তা নিয়ে আমার ধারণা বেশ উঁচুতেই ছিল , চুরি করুক আর যাই করুক , বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন বলে কথা , অজেয় আর্জেন্টিনার বাইরে বলতে গেলে বোধ হয় একটা দলকেই চিনতাম।
See video

আমার বাবা জার্মানীর ফ্যান , তাই ইংল্যান্ডকে দেখতে পারেন না মোটেও, সেখান থেকেই ফিরিঙ্গিদের নিয়ে দু'চার ছত্র শুনেছি । হাবে ভাবে বুঝলাম ইংল্যান্ড দলটাও বেশ ত্যাঁদড়। আর আছে সেই রহস্যময় ব্রাজিল । সবগুলো খেলাই সেবার সরাসরি প্রচারিত হল ইরান টেলিভিশনে।

ব্রাজিল-জার্মানীর খেলায় জার্মানী জিতবে ধরেই খেলা দেখতে শুরু করলাম। প্রথমার্ধটাও শেষ হতে পারল না, রীতিমত বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম । ব্রাজিল ততক্ষণে ৩-০ গোলে এগিয়ে গেছে । মাঠ জুড়ে ৩/৪ জন ব্রাজিলীয়ানের কারিকুরিও মস্তিষ্কে গেঁথে যেতে শুরু করেছে ততক্ষণে -- মাঝে কারেকা , একপাশে মুলার , অন্যপাশে ছোটখাট মতন বেবেতো । লিডটা যদিও ধরে রাখা গেল না শেষমেশ । শেষ ৭/৮ মিনিটে গোল খেয়ে ফলাফল হয়ে গেল ৩-৩ ।

জিতল না কেন , সে কথা তখন আমি মোটেও ভাবছি না। ভাবছি তখন অন্য কথা , কোন গ্রহ থেকে এল তবে এই ফুটবল দল ?অজেয় দল আর্জেন্টিনাকে যারা প্রায় হারিয়ে দেয় । ভীষণ স্পর্ধায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানীকে আধা ঘন্টার মাঝে দিয়ে বসে তিন গোল ? দু'টো মাত্র ম্যাচ, বাস্তবিক অর্থে আমার স্মৃতির খাতায় আঁকা প্রথম দু'টো পুরো ৯০ মিনিটের ম্যাচ , আমার পুরো দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দিল


আর পেছনে ফিরে তাকানো হল না কোনদিন , সেই যে সম্মোহিত হলাম , ব্রাজিল ছাড়া আর কারও কথা ভাবতে পারিনি।



পাদটিকা:
ইন্টারনেট ঘেঁটে পরে জেনেছি সেই ম্যাচগুলোর সময়কাল:
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচটি হয়েছিল ১৯৯৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী , বুয়েন্স আয়ের্সে আর্জেন্টাইন ফুটবলের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক টুর্নামেন্টে ।

ব্রাজিল-জার্মানীর খেলাটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে চারজাতি ফুটবল টুর্নামেন্টে । দিনটি ছিল ১০ জুন , ১৯৯৩

কারেকা ছিলেন ১৯৮৭ সাল থেকে ৯৩ সালের মাঝে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন। ন্যাপোলিতে ম্যারাডোনা যে ফুটবলে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন , সে দলটিতে কারেকার ছিল অনন্য ভূমিকা।

মুলার ছিলেন ৯০ দশকের শুরুর দিককার ব্রাজিল দলের ফরোয়ার্ড।

বেবোতোকে কি পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার আছে আর ?

আর হ্যাঁ , বলার অপেক্ষা রাখে না , প্রথম খেলার কমেন্ট্রির ভাষা ছিল স্প্যানিশ । ল্যাটিন কমেন্ট্রির ধাঁচটাই অন্য সবার থেকে সবসময় আলাদা , ইংরেজি-ফার্সি কমেন্ট্রিতে অভ্যস্ত কারও কানে ল্যাটিন কমেন্ট্রি প্রথমবার ভীষণ অদ্ভূত লাগারই কথা
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১১ ভোর ৬:৪৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×