somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিচারণ:: সংকঁট যঁখন চঁন্দ্রবিন্দু

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালী যতই অস্বীকার করুক "চন্দ্রবিন্দু"র প্রতি তাদের গভীর প্রেমের কোন ঘাটতিই নেই। শৈশবে তারা "হাঁও মাঁও খাঁও, মাঁনুষের গঁন্ধ পাঁও" জপ করে ভূতের গল্প শোনে, যৌবনে তারা শুঁড়িখানায় যেতে চায়, হরদম শুভ্র দেবের গলার ভীষণ নাঁকি নাঁকি গান শুনে আমোদিত হয় ,আর খানিক বয়স বাড়লে ভুঁড়ি গজায়।

"চন্দ্রবিন্দু"র প্রতি আমার গভীর ভালবাসাও সেই পিচ্চিবেলার বর্ণশিক্ষার প্রথম পাঠ থেকেই।মানুষ যে কারণে আইপড ভালবাসে, যে কারণে যুগে যুগে ভোক্সওয়াগন ভালবেসেছে , ঠিক সে কারণেই আমিও চন্দ্রবিন্দুকে আমার মন দিয়েছিলাম। আকারে ছোট, ভীষণ কিউট আর চাঁদ-তারাসদৃশ মুখশ্রীই কেবল নয় , অন্য আর কোন বর্ণটি আছে যাকে বাকি বর্ণেরা মিলে মাথায় তুলেও রাখে?

বাংলা ভাষাকে মায়াবী করে তোলার পেছনেও চন্দ্রবিন্দুর অবদানের শেষ কোথায়? চন্দ্রবিন্দু বিহনে "হাতি শুঁড় তোলে"র বদলে যদি বলতে হত "হাতি সুর তোলে", কেমন লাগত বলুনতো ? সঠিকভাবে চন্দ্রবিন্দু প্রয়োগ করতে জানাটাও একরকম শিল্প , সে শিল্প ঠিকমত প্রয়োগ না করতে পারলে হতে পারে ঘোরতর সংকট।শৈশবের বাগধারা শেখার দিনগুলিতে এমনতর চন্দ্রবিন্দু সংকটে পড়ে কি বেহাল দশাটাই না আমার হয়েছিল , সেই গল্পই না হয় বলি ।


বাংলায় একটি বাগধারা আছে "গুড়ে বালি" , তা বোধ করি সবাই জানেন, (আখ/খেজুর)গুড়ে বালি থাকাটাও কতটা মর্মান্তিক তাও জানেন।শৈশবে বাগধারাটি প্রথম শেখার পর , শুধু তার অর্থই জানতাম তা নয়, সেটা দিয়ে চমৎকার বাক্যও রচনা করতে পারতাম। কিন্তু কোন এক কারণে বাগধারাটির শাব্দিক অর্থ আমার কাছে রহস্যাবৃত রয়ে গেল। কথ্য বাংলায় "গুঁড়ো" কে "গুঁড়ে" বা "গুঁড়া"ও বলা হয় । কিন্তু উচ্চারণের সময় ভূত-তাড়ানো মনোভাব থেকে নাকিসুর বর্জনের চেষ্টায় "চন্দ্রবিন্দু" টা অনেকেই উহ্য রাখেন । "গুঁড়া দুধ" তখন হয় - "গুড়া দুধ" , সোজা সাপ্টা ইংরেজি যার "Powder Milk" । যাই হোক , যেভাবেই হোক , আমি "গুড়ে বালি"র গুড়কে সোজা গুঁড়া সাব্যস্ত করে "গুড়ে বালি" কে উল্টে পাল্টে শাব্দিক অর্থটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম।ফলাফল যা দাঁড়ালো, Powder Sand থেকে "গুঁড়া বালি" আবার সেখান থেকে Powder Sand , এই বৃত্ত থেকে বেরুতেই পারলাম না।বালি তো এমনিতেই গুড়া গুড়া সেটা আলাদা করে বলার কি আছে , কিছুতেই সে কথা মাথায় খেলতো না । অনেক চেষ্টার পর জোড়াতালি দিয়ে একটা ব্যখ্যা অবশ্য দাঁড় করানো গেল। এক বিকেলে ঘরের পাশে কনস্ট্রাকশনের জন্য রাখা বালুর ঢিবি থেকে হাত ভরে এক মুঠো বালু নেয়ার পরই হাতের ফাঁক গলে সবটুকু বালি ঝরঝর করে ঝরে গেল। বাগধারার নিগূঢ় অর্থও বোধ করি সেই মুহূর্তে টলটলে পরিস্কার হয়ে গেল।ভেবে দেখলাম , বালি ভেজা হলে বিনা বাক্য ব্যয়ে আপনার হাতের মুঠোয় বন্দীদশা মেনে নেবে ।কিন্তু শুকনো "গুড়া গুড়া বালি" আপনার সমস্ত ধ্যান-জপ-সাধনা বরবাদ করে দিয়ে হুড়মুড় করে হাত গলে বেরিয়ে যাবে,ঠিক তেমনি কোন ইচ্ছা বা চেষ্টা অহেতুক/হুদাহুদি/নিরর্থক ভাবে করার নামই "গুড়া বালি" ।


চন্দ্রবিন্দু সংক্রান্ত সংকট "গুড়ে বালি" তেই সীমাবদ্ধ রইল না, আছড় পরল অন্যান্য বাগধারার উপর। এর মাঝে একটি হল "গাঁয়ে মানে না , আপনি মোড়ল" ।সেবার চন্দ্রবিন্দু আমার চোখকে ফাঁকি দিল,আমি পড়লাম "গায়ে মানে না আপনি মোড়ল"। তারপর বহু বহুদিন আকাশ পাতাল ভাবলাম , কিসে থেকে কি হল , "গা=শরীর" মানে না "আপনি=You" মোড়ল কোথেকেই বা এল , কোথায় বা গেল ? বাক্য রচনা আর অর্থ যথারীতি এটারও জানা ছিল , শুধু কোথায় যেন সংযোগ করতে পারতাম না। এটার ব্যাখ্যাটাও শেষ পর্যন্ত বের হয়েছিল । তবে সেটা বেশ নাটকীয়ই বটে, বর্ণনা করতে গেলে আপনাদের কল্পনাশক্তি মোটামুটি পরিপক্ক হতেই হবে। ধরুন , দু'জন লোক সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে, প্রথম লোকটি বেশ বিবেকবান , কর্মঠ, চেহারায় ঝড়ে পড়ছে নূরের আভা। দ্বিতীয়জন রীতিমত অকর্মণ্য , গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো কিসিমের লোক, তবে গায়ে গতরে বেশ তাগড়া , ফিক ফিক করে ভিলেনী হাসি হাসে ,খোঁচা দাড়ি বিশিষ্ট মাঝ বয়েসী। কথা ছিল, সমাজ প্রথম মানুষটিকেই সেরার সম্মান দেবে, কিন্তু "একদিন সব কিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যাওয়া" স্টাইলে দ্বিতীয় লোকটিই কোন ভাবে এলাকা জুড়ে প্রাধান্য বিস্তার করতে শুরু করল । মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিবেকবান লোকটির সমস্ত শরীর কাঁপছে বিবেকের তাড়নায় , কিছুতেই সে মানতে পারছে না , তার "গা=শরীর" মানছে না , তারপরও অনেক কষ্টে সে বশ্যতা শিকার করে দ্বিতীয় লোকটিকে বলল "স্যার আপনিই মোড়ল" । ব্যাস হয়ে গেল "গায়ে মানে না , আপনি মোড়ল"।



এই চন্দ্রবিন্দু দুর্বিপাকের ঘনঘটায় আরও বেশ ক'টি বাগধারা আমার কল্পনাশক্তি কর্তৃক নির্মমভাবে হয়রানির শিকার হল , তার মাঝে একটি না বললেই নয়, সেটি হল -- "মরার উপর খাঁড়ার ঘা" । আমি কোন এক অজানা কারণে জেনেছিলাম, "মরার উপর খোঁড়ার ঘা" । কল্পনায় যে ছবিটা আঁকতাম সেটি এমন -- "কেউ মরে গেছে , পড়ে আছে তার লাশ । কোন এক খোঁড়া লোক অবিরাম লাথি মেরে চলছে সে লাশে" -- কি বীভৎস । খোঁড়া লোক লাথিই মারতে পারবে না এমন কোন কথা নেই , তবে হাতে মারাটাই তার সাথে বেশি মানানসই। তার চেয়েও বড় কথা কিছুতেই ভেবে পেতাম না শেষ পর্যন্ত মারামারিই, বীভৎসতা আর চরম বিপদই যদি বুঝাতে হয়, তবে খোঁড়াকেই কেন আমদানি করতে হবে? তারপর নিজেকে প্রবোধ দিলাম,মনের মাঝে গড়লাম তার ব্যখ্যা, দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো-- "খোঁড়া লোকের পা ছোট , বা অকেজো , কিন্তু সেই পা-তেই তার অসীম শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে, ঠিক যেমন অটিস্টিক বাচ্চাদের মাথা ভর্তি থাকে গণিত। সেই পায়ে সে হাঁটতে পারে না বটে, কিন্তু একবার যদি পা তুলে কষে একটা লাথি মারতে পারে , তাহলে জীবন্ত মানুষের লাশ হতে সময় নেয় না" । একবার যদি সেটা ঘটেই যায় , খোঁড়া লোকের রাগ তাতেও পড়বে না , সে মেরেই যাবে , মেরেই যাবে , লোকে বলবে "মরার উপর খোঁড়ার ঘা"।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৫৫
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×