somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকার ডায়েরি :: (বিজনেস আইডিয়া)

০১ লা জুলাই, ২০১২ রাত ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক.......
ভার্সিটির গন্ডি পেরোনোর পর প্রায় ৩০ মাস সকাল সকাল অফিসে হাজিরা দিতে হত । গুলশানে অফিস হওয়ার সুবাদে গুলশান লেক পার হয়েছি প্রতিটা দিন । লেকের দুর্গন্ধের ধকল সামলানো যেন তেন কথা না , তারপরও লেকপাড়ের দালানগুলোর বাসিন্দাদেরকে একটু হিংসাই করতাম । ঢাকার চারপাশে যেখানে সামান্য একটু জলাধার অলীক স্বপ্নের মত , পুঁতি দুর্গন্ধময় গুলশান লেক অন্তত আরও ৫০ টি বছর ভরাট না হওয়ার নিশ্চয়তা তো দিচ্ছে ।

আমার মত মানুষগুলোর চিন্তা খুঁড়েই বুঝি বছর দশক আগে রিয়েল এস্টেট কোম্পানীগুলো শুরু করল তাদের তাবৎ লেক-ভিউ আর রিভার ভিউ প্রজেক্ট । শুনেছি এর বেশিরভাগ কোনদিন আলোর মুখই দেখেনি , কিংবা প্রকল্প শুরু হলেও উল্টো লেক/নদী বিলীন করে ফেলেছে চিরতরে। এর মাঝে বসুন্ধরা প্রকল্পের লেকভিউ অ্যাপার্টমেন্টগুলো দেখার সৌভাগ্য হল ঢাকায় এসে। অ্যাপোলো হাসপাতালের পাশের লেকটি হয়ত অনেকেই দেখেছেন , আদতে দেড়/দু'ফুট চওড়া একটি ড্রেন , সেটিই কিনা বসুন্ধরার লেক । সেই লেকের পাড়ে গড়ে উঠেছে একের পর এক প্রশান্তিদায়ক লেকভিউ অ্যাপার্টমেন্ট।

বসুন্ধরা থেকে বের হয়ে অ্যামেরিকান অ্যাম্বেসির দিকে এগুচ্ছি আর ভাবছি লেকভিউ প্রকল্পগুলির ভাঁওতাবাজির কথা । মাথায় মাঝে মাঝেই উদ্ভট চিন্তা ভর করে , তারই প্রতিক্রিয়ায় ভাবছি মানুষকে আরেকবার একই ঘোল কি করে রিয়েল এস্টেট প্রকল্পগুলো খাওয়াতে পারে ?

ভাবতে ভাবতেই চট করে মাথায় বুদ্ধি এল । আচ্ছা এমন কোন প্রকল্প সম্ভব যেটা একাধারে ধানমন্ডিগুলশান লেকভিউ, আবার স্কয়ারফিট মূল্য ৫০ ভাগেরও কম ?
আরে , সম্ভব তো ....... মগবাজারে যদি ২৫ তলা অ্যাপার্টমেন্ট বানাতে পারি , সে অ্যাপার্টমেন্টের উপর তলা গুলো থেকে দু'টি লেকই চোখে পড়বে , আর দামটাও হবে মগবাজারের বাজার দরে ...

আজাইরা ভাবনা ভাবতে ভাবতে বারিধারা পেরিয়ে ১/দেড় কিলোমিটার সামনে প্রায় উত্তর বাড্ডা পৌঁছে গেছে বাস । চট করে উঁচু দু'টো অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স দেখে চক্ষু চড়ক গাছ । উত্তর বাড্ডা নিবাসী এই টাওয়ার দু'টির শীর্ষে ঝুলছে তাহাদের নাম "বারিধারা ভিউ টুইন টাওয়ার"। তাইতো , একদম মিথ্যে নয় , ছাদে উঠলে ঠিক ঠিক বারিধারা দেখতে পাবার কথা ।

সেলুকাস আংকেল অযথাই ভুল ধারণা নিয়ে মরল , এই বঙ্গদেশে তিনি একাই যে সেলুকাস নন


দুই.......
একদম সময়মত দেশে এসে পড়েছি এবার , মধুমাস থেকে প্রতি বিন্দু মধু নিংড়ে নিংড়ে শুষে নিচ্ছি । পেটে কার্বাইড , ফরমালিন আর সেভেন পাউডারের কতগুলো স্তর যে জমেছে বিধাতা জানেন। ঢাকার রাস্তায় চলতে চলতে বাঙালীর বাণিজ্য সম্ভাবনায় মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। কার্বাইড বিষের উপর ভর করে জন্ম নিচ্ছে নতুন কতই না হালাল আম্রকানন । রাস্তার মোড়ে মোড়ে , ফুটপাথে , হাউজিং এস্টেটের খালি প্লটে বিশাল প্যান্ডেল টানিয়ে সর্বত্র চলছে "ফরমালিনমুক্ত আমের মেলা"। কয়েকটা দিন বেশি বেঁচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে মানুষ এখন দেদারসে আম কিনছে শামিয়ানার নিচ থেকে। বেঁচে থাকার সাধ আহলাদের লাগাম টেনে ধরা আমারও কর্ম না , আমিও ওদের কাস্টমার হয়ে হানা দিলাম । আম অবশ্য ভাল লাগেনি একদমই , একটা আমও মনে হল পোক্ত হয়নি , গাছে ধরার সাথে সাথে সম্ভবত পেড়ে ফেলা হয়েছে । মনে মনে যুক্তি খুঁজে পেয়ে ভালই লাগল "একটু পেকে গেলেই আম পচনের সম্ভাবনা বেড়ে যেত অনেক বেশি, সে কারণেই অপোক্ত আমেই সই "। একটা করে আম খাই , আর ভাবি জীবনে দু'টো অতিরিক্ত দিন বুঝি যোগ করে ফেললাম ।
কিন্তু উদ্ভট চিন্তাগুলো ঘুরঘুর করে মাথায় সারাক্ষণ । অল্প কয়েক বছরের মাঝেই যখন ঢাকার সমস্ত আম "কার্বাইড মুক্ত শামিয়ানার" নিচে ঐক্যবদ্ধ হবে তখন ? কি হবে তখন?

সংযোজন: পত্রিকা মারফত জানলাম এসব ফরমালিনমুক্ত শামিয়ানার বেশিরভাগের ইজারা দেয়া হয়েছে ছাত্রলীগকে । বাঙালীর জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ ।


তিন.......
গ্রামীণফোনের ধান্দাবাজি থেকে দূরে ছিলাম দু'টো বছর । দেশে এলাম , কাছে এলাম , এসে দেখি ছোট ভাই আমার পুরনো গ্রামীণ সিম হস্তগত করেছে। ইচ্ছে সত্ত্বেও তাই কাছে থাকা হল না , এখন আমি রবি । টুকটাক গ্রামীণের খবর অবশ্য রাখি , ওদের ধান্দাবাজিগুলো এত শৈল্পিক ছিল যে ভুলতে পারি না।
তো মনে হল , গ্রামীণ অনেক বদলেছে । দেশে এখন আড়াই টাকায় ইন্টারনেট কিনে ব্যবহার করা যায় , ভাবা যায় ? কোন প্রশ্ন না তুলে সরল মনে বাহবা দিলাম হপ্তাখানেক । কিন্তু স্বভাব কি সহজে বদলায় ? মনের ভেতর খুঁত খুঁত শুরু হল । কি করা যায় আড়াই টাকার ইন্টারনেটে । পত্রিকার পাতায় গ্রামীণই দিল তার জবাব , লুকোছাপা করেনি , ট্রান্সপারেন্সি মেনটেন করে সোজাসুজি বলে দিয়েছে -- "আড়াই টাকায় আড়াই কোটি নিউজ"।
"আড়াই কোটি ????" আড়াই কোটি খবর ? শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে আসছিল , কোন রকমে সম্বরণ করে ছোট ভাইয়ের কাছে খোঁজ লাগালাম।
ও জানালো , "মিথ্যে বলেনি গ্রামীণ, ঐ প্যাকেজ কিনলে একটা গুগল সার্চ করা যায়?"
-"কি মাত্র একটা?? ওরা না লিখেছে আড়াই কোটি না কি "
-- "হ্যাঁ , গুগলে সার্চ করলে কতগুলো রেজাল্ট আসে বলত , আড়াই/তিনকোটি , নাকি ? গ্রামীণ ওটার কথাই বলছে"
ওহ , তাই !!!! আমরা যে সব ক্রেডিট গুগলকেই দিয়ে দেই , তার অন্তরালে আসলে গ্রামীণ!!
পর্দার আড়ালে নীরবে বিলিয়ে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির কথা ভেবে শ্রদ্ধায় চিবুক কিঞ্চিত নিচু হয়ে ঝুলে পড়ল !!
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×