আমার ছাদে বাগানের আংশিক চিত্র
দুটি কথাঃ আমার শখ বাগান করা । কিন্তু জায়গা কোথায় ? কজেই শখ থাকলেও সাধ্য নেই। অবশেষে ১৯৯৯ সালে বাড়ি হল। দেরী না করে আথে সাথেই গাছ লাগালাম ছাদে। কিছু ফল এবং কিছু সব্জী। দেখলাম ছাদে আশানুরূপ সব্জী হল অল্পদিনেই। নিজেরা খেয়ে শেষ করতে পারছি না। বিধায় কিছু প্রতিবেশীকে এবং কিছু আত্মীয়দের দিলাম। মাত্র তিন বছরে ছাদ ভরে গেল বিভিন্ন ফল গাছে। তন্মধ্যে বেশ কিছু গাছে ( যে গুলো আগে লাগানো হয়েছিল ) প্রচুর ফল ধরল । নতুন লাগানো গাছগুলোও বাড়তে লাগল । তাই ছাদে কিছুটা জায়গার সংকট দেখা দিল। আর কিছুদিন পরেই শুরু হবে জাতীয় বৃক্ষমেলা- ২০০৩ । কমলাপুরের একটি নার্সারী খবর পেয়ে বেশ কিছু ফলের গাছ (যে গাছগুলোতে ফল ছিল) কিনে নিল। কিছুটা অবাক হলাম। কারণ কিছুদিন আগেও চিন্তা করেছিলাম ছাদে গাছ লাগানো নিছক শখের বিষয় । এখন দেখছি শুধু শখ নয় ইনকামেরও বিষয়। তাই আরেকটু মনযোগী হলাম। আর একটু ব্যাপক ভাবে শুরু করলাম।
বি.জি.আর.এম এর ব্যানারে শিক্ষা সফর- ২০০৯
ছাদে বাগানের সাংগঠনিক কার্যক্রমঃ রুফ গার্ডেন শুরু করার অল্পদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ রুফ গার্ডেনিং এসোসিয়েশন এর সদস্য হলাম। স্বীকার করতেই হয় আমার রুফ গার্ডেনিং এর শিক্ষার পিছনে এই এসোসিয়েশনের অবদানের কথা। তবে বেশীদিন স্বায়ী হয়নি এসোসিয়েশনের সুষ্ঠ কার্যক্রম। গ্রুপিং এর কারণে বেশ কিছুদিন নিস্ক্রিয় থাকার পর বেশ কিছু আগ্রহী রুফ গার্ডেনারকে নিয়ে ২০০৫ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ গ্রিণ রুফ মুভমেন্ট । এই সংগঠনের শুরু থেকে আমি এর সংগে জড়িত । বাংলাদেশ গ্রিণ রুফ মুভমেন্টের জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিবছর জাতীয় বৃক্ষমেলায় অংশগ্রহণ করে আসছে। সেই সুবাদে আমি নিজেও সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবছরই বৃক্ষমেলায় অংশগহণ করছি।
কেন এই উদ্যোগঃ একটা কথা সকলেই উপলব্ধি করে থাকেন । তা হল গাছ লাগানো প্রয়োজন । কিন্তু আমরা যারা শহরে থাকি গাছ লাগাবো কোথায় । খালি জায়গা নেই । আবার অধিকাংশ লোকের ছাদও নেই। যে কয়টা আছে তাও আবার ফাঁকা । তাহলে আমাদের অবস্থাটা কি হবে একবার ভাবুন তো ? হয়তো নিজে এতোটা প্রয়োজন মনে করছি না । কিন্তু সবাই যদি এমনটাই ভাবে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কি হবে ? তাই আসুন যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যমত গাছ লাগাই । যাদের ছাদ নেই তারা বেলকনিতেও দু-চারটা গাছ লাগাতে পারি।
১২ ইঞ্চি টবে থাই মিষ্টি কামরাংগা
ছাদে বাগান করার পূর্বে যা করনীয়ঃ আপনি ছাদে বাগান শুরু করবেন ভাবছেন। তাই হুট করে নার্সারীম্যান যা বলে তাই বিশ্বাস করে গুটিকয়েক চারা, দশ /বার রকমের সার আর কীটনাশক নিয়ে আসবেন না । জেনে নিন যে চারাটি কিনছেন সেটি আপনার কাংখিত চারা কিনা। এদেশের মাটি উর্বর, এবং আবহাওয়া গাছের উপযোগী । অযথা কেন এতোসব ছাই পাশ ব্যবহার করবেন । আর যে গাছটি আপনি কিনবেন সেটি অবশ্যই কলমের চারা হতে হবে । ভিজিট করুন আমার এই সাইটটি । অধিকাংশ নার্সারীওয়ালাদের কথার যে কোন ঠিক নেই তা বুঝবেন, দুই- তিন বছর কষ্টের পর। ওরা বলবে কলমের চারা দুই বছর পর বুঝবেন এটি ছিল বীজের চারা। ওরা থাই পেয়ারা বলে যে চারাটি আপনাকে দিল, ফল ধরবে দেশী পেয়ারা । আর যদি বলে মিষ্টি মাল্টা । দেখবেন কয়দিন পর ঐ গাছে ধরেছে লেবু । শুধুমাত্র নিজেদের বিক্রির স্বার্থে দশ প্রকারের সার, কীটনাশক দিবে। অথচ শুরুতে যদিও এত সারের প্রয়োজন হয় না। নতুন বাগান শুরু করার ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন অতি সহজেই হয় এমন কয়েকটি ফলের গাছ। যেমন - লেবু, পেয়ারা,আমড়া, থাই মিষ্টি কামরাংগা, ডালিম, করমচা ইত্যাদি । যদি শাক-সব্জীর চাষ করতে চান তাহলে প্রথমেই বেছে নিন করলা, ঢেঁড়শ, চিচিংগা, ঝিংগা,পুঁই শাক, চালকুমড়া, কলমীশাক, এবং টমেটোকে ।
পরিশেষেঃ আমার ছাদে বাগানের যত কথা সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই । সেই সাথে প্রতিটি গাছের সহজ চাষ পদ্ধতি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরতে চাই । এতে যদি কেউ উপকৃত হয় তাহলেই আমি গর্বিত বোধ করব। নতুন ব্লগার হিসাবে সকল ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আশা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:২০