somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনারা যারা পোষাকের দোহাই দিয়ে রেপিং যৌক্তিক বলতে চান; এবং আপনারা যারা সব পুরুষের চোখে সমস্যা খুঁজে পান।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি শুরুতেই দুঃখ প্রকাশ করছি এত বড় একটা শিরোনাম মাথায় নিয়ে শুরু করার জন্যে। ব্লগের কিছু বিতর্কপ্রাণ নিকের জন্যে মূলত কখনোই কোন বিতর্কিত কিছু নিয়ে মন্তব্য করতে যাই না। নীরব দর্শকের নপুংসক দায়িত্বটাই তাই সবসময় মাথা নুইয়ে পালন করে যাই।
আজকের লেখাটা খুব কষ্ট এবং যথেষ্ট পরিমান ক্ষোভ থেকে লেখা। সাম্প্রতিক রেপিং এবং এ নিয়ে অসংখ্য মতামত আর তর্কবিতর্ক। আর দশটা মানুষের মত, আমারও হাত মুঠো হয়ে আসে যখন শুনি, কোথাও আরেকটা এরকম পাশবিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলো বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মানুষ হিসেবে আমি এখনও কতটা অকার্যকর।

কিন্তু আরো কষ্ট হয় তখন, যখন দেখি কিছু মানুষ(!) এ ঘটনাগুলোকে শুধু পোষাকের দোহাই দিয়ে রেপিং-এর পক্ষে একটা যুক্তি দাঁড় করাতে চেষ্টা করে। আরো একটা ঘটনা যেটা আরো দুঃখজনক, আমি এমন কিছু লেখা দেখেছি যে পুরুষ মাত্রেই পাশবিক; মেয়েরা লাগলে খালি গায়ে ঘুরুক, যদি পুরুষের চোখ ঠিক থাকে, তাহলেই ঠিক।

অদ্ভুত, আমি এই প্রশ্নটা নিয়ে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে যেতে পারিনা; আপনারা কিভাবে একজন নির্যাতিতা-র কষ্টকে নিজের ব্যক্তিগত একগুঁয়ে মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহার করেন? লজ্জা করেনা? নাকি বুঝতেই পারেন না? সমবেদনা অনুভব করা কি এতই কঠিন?

শোনেন, একজন মেয়ে-একজন মানুষ; একজন মেয়ে অথবা পুরো নারী জাতি যাই করুন; কোনভাবেই কি রেপ-কে আপনি জাস্টিফাই করতে পারেন? হ্যাঁ অথবা না উত্তর দিন। হ্যাঁ আমি জানি, অসংখ্য সামাজিক পরিবর্তন আজকের অনেক সমস্যার জন্য দায়ী। কিন্তু এই দায়ের কথা তুলে আজকে এই সমস্যাটাকেই কি আপনি সাপোর্ট করছেন না? আরব, ইউরোপ প্রসঙ্গ টানবেন না। আমাদের সমস্যা আমাদের, এটার সমাধান আমাদের করতে হবে। প্রসঙ্গ যদি প্রাসঙ্গিক হয়, পরিসংখ্যান টানুন। কিন্তু আপনাকে যৌক্তিক সমাধান দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। কোন নির্যাতনকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করবেন না। অশালীনতা একটি সমস্যা। কিন্তু একটা রেপিস্ট একটা পশু, মানসিক বিকারগ্রস্ত পশু। একটা বোরকা সেই পশুকে আটকাতে পারবে সেই নিশ্চয়তা আপনি শতভাগ দিতে পারবেন না।

এই প্রসঙ্গে আসি, আমি এমন কিছু পোস্ট দেখলাম যেখানে বলা আছে পোষাক কোন সমস্যা না। সমস্যা চোখে। কথাটা আমি পুরোপুরি মানতে পারিনা। আমি একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে আশা করতেই পারি যে আমার সামনের মানুষটা উৎকট কিছু করবে না। অশালীনতা একটা সমস্যা। এটাকে যদি আপনি জোর করে স্বাভাবিক বানাতে চান, তাহলে আমি বলবো আপনি কালকে আমার কানের কাছে ক্রমাগত জোরে চিৎকার করার জন্য একটা যুক্তি দাঁড় করাতে চাইবেন। হ্যাঁ, চোখের সামনে উগ্র পোষাক, কানের পাশে জোরে চিৎকার কিংবা নাকের কাছে উৎকট আবর্জনার দুর্গন্ধ আমার কাছে একই রকম মনে হয়। কোন ক্ষেত্রেই আপনি আমাকে বলতে পারবেন না, "এড়িয়ে যাও, নাহলে বুঝবো তোমার সমস্যা আছে"। তবে হ্যাঁ, আবারো বলছি; পোষাকের উগ্রতা একটা সমস্যা, কিন্তু কোন ধরনের রেপ বা টর্চারকে এই দিয়ে জাস্টিফাই করা যায় না। পৃথিবীর কোন কিছু দিয়েই এসব পাশবিক আচরনের পক্ষে দাঁড়ানো যায়না।

মিডিয়া সেন্সরশীপের ব্যাপারে কেউ বলেছেন, আমি ব্যাপারটা অনেকার্থেই সমর্থন করি। ভেবে দেখেন, কিছুটা সমস্যা কিন্তু মিডিয়াতে আছে। শোবিজ, এই পুরো ব্যাপারটাই কিন্তু বানিজ্য নিয়ে। আপনার বা আমার দৈনন্দিন, স্বাভাবিক জীবন নিয়ে সবক্ষেত্রেই এরা সহনশীল হয়ে ভাববে তা কিন্তু না। পাশবিক ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে মিডিয়ার হাত নেই বলতে চান? জাপানের বিখ্যাত এনিম "ডেথ নোট" সম্প্রচার হবার পরে সেখানে অবৈধ হত্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিলো। এজন্য নিতান্তই একটা কল্পকাহিনী হবার পরেও এই এনিম সিরিজটি নতুনভাবে আবার ফিরিয়ে আনা হয় যেখানে অপরাধী শেষ পর্যন্ত শাস্তি পায়। "ডেক্সটার" নামের একটা বিখ্যাত টিভি সিরিজও এই ধরনের একটা ছাপ ফেলে যায়। এরকম উদাহরন একটা না, আরও আছে। অত্যন্ত নিখুঁত এবং বিশদভাবে খুন/রেপিং-এর প্ল্যানিং করে দেখানো এই টিভি প্রোগ্রামগুলো কিন্তু মানুষের চিন্তাভাবনায় ভালোরকম প্রভাব ফেলে। অত্যন্ত বিখ্যাত একটা টিভি সিরিজ "গেম অব থ্রোন্‌স" সোজা ডিলিট করে দিলাম শুধু প্রথম পর্বে মেয়েদের পণ্য হিসেবে দেখানোর কারনে। পরে কি হবে/হয়েছে জানিনা। শুধু প্রথম দিকের এই ছোটখাট ব্যাপারগুলোতেই আর রুচি পেলাম না। তবু যত যাই হোক, টিভি বন্ধ করে ফেলার ব্যাপারটা পুরোপুরি হিসাবের বাইরের একটা বিষয়, কিন্তু এখানে আরো কিছু ব্যাপার থাকা উচিৎ যেখানে আসলে একজন মানুষকে ভালো আর খারাপ নিজে বিচার করতে শেখাবে। এই ব্যাপারগুলো ছেলে, মেয়ে সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

অসম্ভব রকমের কিছু ব্যাপার এর পরেও মানুষের চোখের আড়াল হয়ে থাকে। অসংখ্য শিশু, কোন কোন ক্ষেত্রে কিশোর; ছেলে কিংবা মেয়ে হোক, নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যাটা শুরু হয় আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের কারো থেকে। খেয়াল রাখুন। এই বাচ্চাগুলো বড় হবে, দুনিয়ার কালো দিকটা থেকে এদের আপাতত আড়ালে রাখুন। এই ব্লগে আমার বাস্তব জীবনের পরিচিত কিছু বন্ধু আছে, তাই ব্যাপারটা বেশী ভাঙ্গালাম না। কিন্তু হ্যাঁ, আমি আন্দাজে এই কথাগুলো বলছিনা। আমার শৈশব-কৈশোরের কিছু অসম্ভব তিক্ত এবং দুঃখজনক ঘটনা থেকে ব্যাপারগুলো শেখা। সাথে এও শিখেছি যে সমস্যার অসম্ভব তলানী থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আশা যায়। শুধু দরকার আশপাশের মানুষের গ্রহণযোগ্যতা। বেশী কিছু লাগেনা, মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করুন; পুরুষ কিংবা নারী হিসাবে নয়। শরীরের বাঁককে যেমন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেখেছি, তেমনি বাসে ভীতসন্ত্রস্ত মহিলাকে দেখেছি অসংখ্য উৎসাহী চোখ এবং স্পর্শ এড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে।

এরপরে কোথাও বাঁকা চোখ দেবার আগে অথবা নিজের বাঁকগুলো স্পষ্ট করার আগে, অথবা কাউকে নিয়ে বাঁকা মন্তব্য করার আগে, অথবা দু'চোখ বুঁজে কাউকে দোষ দেবার আগে ব্যাপারটা একবার ভাববেন।
১২টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×