somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তর থেকে তেরো-আমাদের যুক্তিবাদী সমাজ।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। দেশের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগ নিয়ে শুরু মুক্তিযুদ্ধকে এক শ্রেণী ১৯৭১ সালে বর্জন করলো। যুক্তি, এইসব পোলাপান অযথাই লাফায়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ভারতের চক্রান্তে ভেঙ্গে যাবে? কি বেদাতি কথা !

২। শুধু তাই না, এরা দেশের মানুষের ঘর পুড়িয়ে দিলো, হত্যা করলো অসংখ্য মানুষকে, টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলো এ দেশের লক্ষ কন্যা, জায়া, জননীকে। যুক্তি, এরা গণিমতের মাল। এদের কোন বিচার নাই।

৩। দেশ স্বাধীন হলো। যুদ্ধজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা বাসায় ফিরে এলেন। অনেকে এসে দেখলেন, তাদের জীবনে একটা চিরস্থায়ী গহ্বর তৈরী করে দিয়ে গেছে এরা। মুক্তিযুদ্ধের পর এই শ্রেণীর লোকজনগুলোকে নানাভাবে ক্ষমা/মুক্তি/নির্বাসন দেয়া হলো। যুক্তি, বাঙ্গালী ক্ষমা করতে জানে। আরো কিছু রাজনৈতিক যুক্তি আছে হয়তো, আমি অনেকটাই জানিনা; এবং যতটুকু জানি, কোনটাই বুঝিনা।
কভু আশীবিষে দংশেনি যারে...

৪। স্বাধীনতার একচল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে। একাত্তরের সময় সেই হিংস্র হয়ে ওঠা লোকগুলো এখনো বাংলাদেশে, শেকড় ছড়িয়ে বসেছে এরা। ঘটনাক্রমে বিভিন্ন সময়ে এই পরগাছাদের আশ্রয় দিয়ে বড় করা হয়েছে। যুক্তি, রাজনৈতিক প্রয়োজন।

৫। নতুন প্রজন্মের একটা অংশ এদের অনুসরন করে। এদের বলা হয় "শিবির"। স্বাধীন বাংলাদেশে এদের পেছনে কেন ? যুক্তি, এরাই দেশের রাজনীতিতে ইসলামের ধারক-বাহক। এরা আল্লাহ্‌-র পথের সৈনিক।

৬। বিভিন্ন রাজনৈতিক কূটচালের ফলাফল আসে, শতাধিক হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটতরাজ প্রমাণ হবার পরও আসামীকে চূড়ান্ত শাস্তি থেকে বিরত রাখা হয়। যুক্তি, এদের বাঁচিয়ে রাখলে একটা Political Leverage আছে।

৭। নতুন প্রজন্ম জেগে ওঠে। ঘুণপোকা এখনো এদের কাছে আসতে পারেনি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বারের মতো, প্রথম বারের মতো ভালোবাসা থেকে একটা আন্দোলন গড়ে উঠলো, পচে যাওয়া যুক্তি থেকে না। এর বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য কিংবা এর মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য আবার এক শ্রেণী উঠে দাঁড়ালো। কেউ বলে "পোলাপান অযথাই লাফায়", কেউ বলে "এভাবে সাধারন মানুষ আইনের বিরোধিতা করতে পারেনা", কেউ বলে "কাদের সিদ্দিকী রাজাকার", কেউ বলে "এরা নাস্তিক", আর কেউ বলে, "এটা সাজানো নাটক" । মানুষের ভালোবাসার স্লোগানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়, "জবাই কর"। এখানেও যুক্তি আছে, অজস্র কণ্ঠের ভীড়ে এই যুক্তিগুলো মিশে যায়।

৮। এই যুক্তিবাদী লোকগুলা একদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষনা দিয়ে মানুষের প্রতিবাদের সময় বেঁধে দেয়। নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের একবার জিজ্ঞেস করার কথা এদের মনে থাকেনা। যুক্তি, যুক্তি আছে।

৯। ঘোষনার দিনেই জামাত-শিবির হরতাল কর্মসূচী ডেকে বসে। হরতালের দিন মানুষ রাত দশটায় রাজপথ ছেড়ে চলে যাবে? রাজনৈতিক যুক্তি থেকে আড়ালে ঘাঁপটি মেরে বসে থাকা এই নেকড়েদের সুযোগ করে দেয়া হয়।

১০। নৃশংসভাবে খুন হলেন ব্লগার রাজীব। যুক্তি, তিনি নাস্তিক। চোখের সামনে একাত্তরের সেই "গণিমতের মাল"-এর কথা মনে আসে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী পরিণত করার চেষ্টা করা হয় আস্তিক-নাস্তিক লড়াইয়ে। ধর্মযুক্তিতে ইসলাম, শিবির, জামাতকে এক সমতলে আনতে হবে না? সুযোগে আরেক দল ইসলাম ধর্মকে এক হাত দেখিয়ে দেয়। দেশের প্রতি মানুষের বাঁধভাঙা ভালোবাসা এসব তুচ্ছ করে ফেলে।

একাত্তর থেকে ২০১৩ - এই যুক্তিবাদী মানুষগুলা আমাকে আশংকিত করে তোলে। মানুষের মৃত্যু এদের বিচলিত করে না, মৃত্যুতে এরা ব্যবসা, রাজনীতি খুঁজে পায়। জনগনের ব্যাপারে এরা Apathetic না। এরা ধূর্ত। এরা আমাদের দূর্বলতার জন্য অপেক্ষা করে।

সবচেয়ে নির্মম ব্যপার এই যে, এরা ছাড়া আমাদের কোন Alternative নাই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×