১। দেশের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগ নিয়ে শুরু মুক্তিযুদ্ধকে এক শ্রেণী ১৯৭১ সালে বর্জন করলো। যুক্তি, এইসব পোলাপান অযথাই লাফায়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ভারতের চক্রান্তে ভেঙ্গে যাবে? কি বেদাতি কথা !
২। শুধু তাই না, এরা দেশের মানুষের ঘর পুড়িয়ে দিলো, হত্যা করলো অসংখ্য মানুষকে, টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেলো এ দেশের লক্ষ কন্যা, জায়া, জননীকে। যুক্তি, এরা গণিমতের মাল। এদের কোন বিচার নাই।
৩। দেশ স্বাধীন হলো। যুদ্ধজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা বাসায় ফিরে এলেন। অনেকে এসে দেখলেন, তাদের জীবনে একটা চিরস্থায়ী গহ্বর তৈরী করে দিয়ে গেছে এরা। মুক্তিযুদ্ধের পর এই শ্রেণীর লোকজনগুলোকে নানাভাবে ক্ষমা/মুক্তি/নির্বাসন দেয়া হলো। যুক্তি, বাঙ্গালী ক্ষমা করতে জানে। আরো কিছু রাজনৈতিক যুক্তি আছে হয়তো, আমি অনেকটাই জানিনা; এবং যতটুকু জানি, কোনটাই বুঝিনা।
কভু আশীবিষে দংশেনি যারে...
৪। স্বাধীনতার একচল্লিশ বছর পার হয়ে গেছে। একাত্তরের সময় সেই হিংস্র হয়ে ওঠা লোকগুলো এখনো বাংলাদেশে, শেকড় ছড়িয়ে বসেছে এরা। ঘটনাক্রমে বিভিন্ন সময়ে এই পরগাছাদের আশ্রয় দিয়ে বড় করা হয়েছে। যুক্তি, রাজনৈতিক প্রয়োজন।
৫। নতুন প্রজন্মের একটা অংশ এদের অনুসরন করে। এদের বলা হয় "শিবির"। স্বাধীন বাংলাদেশে এদের পেছনে কেন ? যুক্তি, এরাই দেশের রাজনীতিতে ইসলামের ধারক-বাহক। এরা আল্লাহ্-র পথের সৈনিক।
৬। বিভিন্ন রাজনৈতিক কূটচালের ফলাফল আসে, শতাধিক হত্যা, ধর্ষণ এবং লুটতরাজ প্রমাণ হবার পরও আসামীকে চূড়ান্ত শাস্তি থেকে বিরত রাখা হয়। যুক্তি, এদের বাঁচিয়ে রাখলে একটা Political Leverage আছে।
৭। নতুন প্রজন্ম জেগে ওঠে। ঘুণপোকা এখনো এদের কাছে আসতে পারেনি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বারের মতো, প্রথম বারের মতো ভালোবাসা থেকে একটা আন্দোলন গড়ে উঠলো, পচে যাওয়া যুক্তি থেকে না। এর বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য কিংবা এর মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য আবার এক শ্রেণী উঠে দাঁড়ালো। কেউ বলে "পোলাপান অযথাই লাফায়", কেউ বলে "এভাবে সাধারন মানুষ আইনের বিরোধিতা করতে পারেনা", কেউ বলে "কাদের সিদ্দিকী রাজাকার", কেউ বলে "এরা নাস্তিক", আর কেউ বলে, "এটা সাজানো নাটক" । মানুষের ভালোবাসার স্লোগানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়, "জবাই কর"। এখানেও যুক্তি আছে, অজস্র কণ্ঠের ভীড়ে এই যুক্তিগুলো মিশে যায়।
৮। এই যুক্তিবাদী লোকগুলা একদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষনা দিয়ে মানুষের প্রতিবাদের সময় বেঁধে দেয়। নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের একবার জিজ্ঞেস করার কথা এদের মনে থাকেনা। যুক্তি, যুক্তি আছে।
৯। ঘোষনার দিনেই জামাত-শিবির হরতাল কর্মসূচী ডেকে বসে। হরতালের দিন মানুষ রাত দশটায় রাজপথ ছেড়ে চলে যাবে? রাজনৈতিক যুক্তি থেকে আড়ালে ঘাঁপটি মেরে বসে থাকা এই নেকড়েদের সুযোগ করে দেয়া হয়।
১০। নৃশংসভাবে খুন হলেন ব্লগার রাজীব। যুক্তি, তিনি নাস্তিক। চোখের সামনে একাত্তরের সেই "গণিমতের মাল"-এর কথা মনে আসে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী পরিণত করার চেষ্টা করা হয় আস্তিক-নাস্তিক লড়াইয়ে। ধর্মযুক্তিতে ইসলাম, শিবির, জামাতকে এক সমতলে আনতে হবে না? সুযোগে আরেক দল ইসলাম ধর্মকে এক হাত দেখিয়ে দেয়। দেশের প্রতি মানুষের বাঁধভাঙা ভালোবাসা এসব তুচ্ছ করে ফেলে।
একাত্তর থেকে ২০১৩ - এই যুক্তিবাদী মানুষগুলা আমাকে আশংকিত করে তোলে। মানুষের মৃত্যু এদের বিচলিত করে না, মৃত্যুতে এরা ব্যবসা, রাজনীতি খুঁজে পায়। জনগনের ব্যাপারে এরা Apathetic না। এরা ধূর্ত। এরা আমাদের দূর্বলতার জন্য অপেক্ষা করে।
সবচেয়ে নির্মম ব্যপার এই যে, এরা ছাড়া আমাদের কোন Alternative নাই।